একজন মানুষের পরিচয় তার নাম দিয়ে। বাবা-মা কতো আদর করে, ভালোবাসা দিয়ে সন্তানের নাম রাখেন। সেই পরিচয়টুকু নিয়েই সন্তানরা তাদের নিজেদের পৃথিবী গড়ে তোলে। তবে ওই পৃথিবীতে নারীদের বাসের জায়গা আছে, কিন্তু মালিকানা নেই। পরিচয় নেই। পেশা দিয়ে নারীদের পরিচয়টুকু যদিও কিছুটা আলোকিত হয়, কিন্তু নামটা হারিয়েই যায়। সারা পৃথিবীর নারীদেরই এই একই অবস্থা।
এই প্রবাসে নতূন কারো সাথে পরিচয় হলেই মহিলারা ভাবী বা বৌদি বলে সম্বোধন করে থাকেন। ভাবী বলে সম্বোধন করা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তথাকথিত ভাইয়ের মুখও দর্শন করা হয়নি কোনোদিন। আমি জাপানে যখন ছিলাম, তখন নতূন চাকরীতে ঢুকেছি। একজন এসে বললেন ‘ওহ ভাবী কতোদিন হলো এসেছেন এখানে? সাথে সাথেই আবার বললেন, ওহো আপনি তো বৌদি হবেন।’ বললাম আমায় নাম ধরে ডাকুন নয়তো আপা/দিদিও বলতে পারেন, আপত্তি নেই। সাথে সাথেই বলে বসলেন ‘স্যরি, স্যরি। আপনার বুঝি…’ বললাম না আমি ডিভোর্স দেইনি, স্বামী আমার সাথেই আছে। কিন্তু ভাবী মানে তো ভাইয়ের স্ত্রী। যে ভাইকে দেখেননি, তার স্ত্রী কিভাবে আপনার ভাবী হলো আপা? আমার কথা বলার ধরণে কোনো বিশ্রীরকম আচরণ ছিলোনা। হেসে হেসেই মজা করে বলেছিলাম। ভদ্রমহিলা বললেন, ‘আসলে দিদি এটা অভ্যাস। কেউ কখনোই এমন করে বলেনা।’ আবার বেশ কিছু নারী আছেন যাদেরকে আপা বলে ডাকলে উল্টে এসে ভাবী বলে ডাকতে বলেন। বিবাহিত মানেই কি নিজস্ব নামকে কেটে ফেলা? বিয়ের পর একজন কন্যা সন্তানকে তার বাবার পদবী থেকে স্বামীর পদবীতে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর নামের জায়গায় পরিচয় হিসেবে এসে দাঁড়ায় মিসেস+স্বামীর নামসহ পদবী। আজ এই ব্যাপারটা নিয়েই কথা হচ্ছিলো ম্যাসাজথেরাপিষ্ট জেন-এর সাথে। সেও একই কথা বললো নিজের নামকে কেন ফেলে আসতে হবে? হুম সে বলতেই পারে, কারণ সে এ দেশের। এ দেশেও নামের মৃত্যু হয়, কিন্তু অনেকেই নিজেদের নামকে বাতিলের খাতায় ফেলে রাখেনা। এই লেখাটা যখন শুরু করেছিলাম, মামনির সাথে কথা হচ্ছিলো এই বিষয় নিয়ে। মামনিও বললো একই কথা। তবে মামনির নাম মীরা চন্দ হয়নি, মীরা দাস-ই থেকে গেছে।
আমরা সহজেই সমাজ-পরিবেশকে দোষারোপ করে থাকি এই বলে যে সমাজটা পুরুষতান্ত্রিক। এও বলি স্বামীরা বিভিন্নভাবে ডোমিনেট করে থাকে। কথাটা মিথ্যে নয়, কেইবা না চায় অন্যকে নিজের অধীনস্থ করে রাখতে? কিন্তু আমি যদি বলি নারীরা অধীনস্থ হিসেবে থাকাকে মানিয়ে নিয়েছে। আমার কথা হলো নিজস্ব স্বকীয়তা থেকে কেন বিচ্ছিন্ন করতে হবে নিজেকে? কেন নিজের নামটা বিয়ের পরেই একেবারে মুছে যাবে? শ্বশুরবাড়ীতে যাবার পরে অনেক মেয়েদের জন্য আলাদা নাম ধরে ডাকা হয়। সেটাকে আমি মনে করি আদর করেই একটা নাম দেয়া। আমার নামে আপত্তি নেই, কিন্তু ভাবী/বৌদি, স্বামীর নাম+পদবীর আগে মিসেস এসবে আপত্তি। নারীরা বলুক আমার নাম অমুক। বলুক আমাকে নাম ধরে ডাকুন, নয়তো আপা বা দিদি বলুন। ভাবী/বৌদি শুধু শ্বশুরবাড়ীর ননদ-দেবরদেরই, আর কারো জন্য নয়। নারীরা যেদিন নিজেকে একটি নাম হিসেবে দাঁড় করাতে পারবে, সেদিন অনেক সমস্যারই সমাধান হয়ে যাবে। মিসেস অমুক, মিসেস তমুক তো অনেক হলো, এবারে নয় নামের আগে মিসেস নামক লেজটা কেটে ফেলে দেয়া হোক। যদিও অনেক কঠিন কাজ আমাদের দেশীয় মানসিকতায়। তাহলে এমন তো হতে পারে মিসেস রহমান বা মিসেস রায় নয়, মিসেস রোকশানা বা মিসেস রমিতা? বাবা-মায়ের দেয়া এই একটা পরিচয়, আদরের ওই নামটা সকল নারীরা ধরে রাখুন, এটা আমাদের অধিকার।
হ্যামিল্টন, কানাডা
৩১ জানুয়ারী, ২০১৭ ইং।
৩৯টি মন্তব্য
নিহারীকা জান্নাত
নামের বদল!!! কাভি নেহি। বিয়ের আগে যা ছিলো পরেও তাই।
আমার নাম, আমার অহংকার 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
আমার ক্ষেত্রেও তাই। এমনকি আমার মামনিও বদল করেনি।
এই নামটুকুতেই তো বাবা-মায়ের স্নেহ-আদর লেগে থাকে।
ভালো থাকুন। 🙂
মিষ্টি জিন
আপু এই যে সবাই আমাকে যে নামে জানে আসলে তা কিন্তু আমার আসল নাম না। আমার ছোট একটা নাম যা এই মিষ্চি নামের দৌরাত্ব্যে হারিয়ে গেছে।
এর পর তো মিসেস আলম নাম নিয়ে কাটিয়ে দিলাম এতটা বছর।
তবে কি জান আমি কাছের মানুষ ছাডা কারে মুখে ভাবী ডাকা পছন্দ করি না। ভাললাগেনা শুনতে ।
আর একজন মুসলিম হিসাবে মেয়েদের পরিচয় হবে বাবার নাম দিয়ে স্বামীর নাম দিয়ে নয় তা আমি ইরাকে গিয়ে প্রখম জানতে পারি। হাসপাতাল বা যে কোন জায়গায় পরিচয় দিতে গেলে বাবার নাম জিজ্ঞাস করে। স্বামীর কঁথা কখনই জিজ্ঞাস করে না।
অনেক ভাল একটা পোষ্ট আপু।
নীলাঞ্জনা নীলা
মিষ্টি আপু নিজের দেবর-ননদের থেকে ভাবী/বৌদি সম্বোধন নেয়া যায়। কিন্তু যখন অন্যরা সবাই ডাকে আমার অসহ্য রাগ হয়।
ইরাকে বুঝি বাবার নাম দিয়ে পরিচয়? জানো আমার ইন্টারনেশনাল পাসপোর্ট করা হয় সেই ১৯৯০ সালে। বিয়ের পর ২০০৩ সালে যখন জাপান যাবো, পাসপোর্টে স্বামীর নাম ছাড়া ভিসা দিতে নাকি বেশ ঝামেলা করে। বাবার নাম সরিয়ে স্বামীর নাম। কিন্তু তরুণকে বললাম আমার ফ্যামিলি নেইম বদলাতে পারবো না। অবশ্য সেও এ নিয়ে কখনোই কিছু বলেনি। মিষ্টি আপু যার সাথেই পরিচয় হয় আমার বলে দেই নাম ধরে ডাকলে কোনো সমস্যা নেই। তবে ভাবী/বৌদি না।
আসো গলাগলি করি। \|/
মিষ্টি জিন
শুধু ইরাকে না লেবানন সহ এরাবিক দেশ গুলোতে নারী/পুরুষ দুজনকেই বাবার নামে পরিচিত হতে হঁয় কারন এটা ইসলামের নিয়ম। কিন্তু আমাদের দেশে সেটা মানে না।
পাসপোর্ট করার সমঁয় বিবাহিত নারীদের স্বামীর নাম দিতে হবে কারন এটা আমাদের দেশের নিয়ম।
বিশেষ ক্ষেত্রে যেমন স্বামীর বস,কলিগ রা ভাবী ডাকলে আমার কোন আপত্তি নেই এছাডা আপা বা ম্যাডাম শুনতেই আমি সাচ্ছ্যন্দ বোধ করি। নাম ধরে ডাকলেও আপত্তি নাই।
আর তোমার দাদাভাই যখন গাড়ীর দরজা খুলে উঠুন ম্যাডাম, ডিনার ডেইটে চেয়ার এগিয়ে বসুন ম্যাডাম, এলিভেটর উঠতে , আপনি উঠুন ম্যাডাম বলে .,শুনতে খুব একটা খারাপ লাগেনা।
:p
গলাগলি করলাম। 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
মিষ্টি আপু আমাদের দেশটা জগাখিচুড়ি মার্কা নিয়ম নিয়ে চলছে। পৃথিবীর এমন কোনো দেশ নেই যেখানে বাংলাদেশী নেই। কিন্তু বাঙ্গালী আর মানুষ হলোনা। তরুণের কলিগরা ভাবী/বৌদি বললে মেনে নিতেই হয়। কিন্তু যারা তরুণকে দেখেইনি, সেইসব মানুষেরা যখন আমাকে বৌদি/ভাবী বলে প্রচন্ড রাগ হয়।
দাদাভাই বুঝি ম্যাডাম, ম্যাডাম করেন? :p
আমি তো উল্টো, বিয়ের পর পর মজা করে তরুণকে স্যার, স্যার বলে ডেকে মজা করতাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তো, তাই! এখন আর বলিনা। তীর্থ ক্ষ্যাপায়। 😀 তীর্থকে বলেছি আসুক তোর গার্লফ্রেন্ড তখন দেখবো তুই কি করিস! 😀
এই আপু তুমি আরবীয় নারীদের জীবন নিয়ে লেখোনা কেন? তাড়াতাড়ি লেখা শুরু করো তো!
রিমি রুম্মান
আমারও দেখি সেইম। নাম ধরে ডাকলে কিংবা আপু, দিদিতে স্বাচ্ছন্দ্য লাগে। মনের কথাটি কি সুন্দর করেই না বললে, নীলা’দি।
ভাল থেকো । -{@ (3
নীলাঞ্জনা নীলা
রিমি আপু আমি পারতপক্ষে কাউকে ভাবী/বৌদি বলে ডাকিনা। তাই নিজেও চাইনা আমাকে কেউ ডাকুক।
আমরা নারীরা মনের দিক থেকে তো এক-ই আপু। তাইতো মিলে যায়।
অনেক ভালো থেকো। -{@ (3
মৌনতা রিতু
ঠিকই তো আমাদের হাদিসে অবশ্য উল্লেখ আছে, কেয়ামতে মায়ের নামেই সন্তানকে ডাকা হবে।
তবে অফিসিয়ালী মিসেস অমুক না বললে, অনেকেই বিভ্রান্তিতে পড়ে।
তবে মজার কথা আমরা সৈয়দপুরে একটা গ্রুপ ছিলাম সবাই সবার নাম ধরেই ডাকতাম।
নীলাঞ্জনা নীলা
শান্তসুন্দরী ধর্ম কি আমরা আদৌ মেনে চলি? শরীর একটা কাঠামো, সেই কাঠামোকে শক্ত-পোক্ত করে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। আর সেই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে চালিত করে মস্তিষ্ক। বুঝেছো নিশ্চয়ই কি বলতে চেয়েছি? প্রথমত আমরা মানুষ, তারপর ধারণ করা হয় জ্ঞান, সবশেষে হলো ধর্ম। কিন্তু আমরা প্রথমেই ধর্মকে সামনে নিয়ে আসি নিজের মতো করে। আর তাই অনেকেই মানেনা হাদিসের কথা। নিজের মতো করে সাজিয়ে নেয়। কিন্তু যারা জ্ঞানের মাধ্যমে ধর্মকে গ্রহণ করে, তারা সত্যিটা জানে এবং মানেও। যাক বেশী পটর-পটর ভালো না। 😀
কথা হইলো গিয়া অফিসিয়ালি হইলেও মানতে পারিনা। আমি বড়ো ঝামেলাদায়ক মানুষ। ^:^
মোঃ মজিবর রহমান
সুন্দর একটি পোষ্ট আপু। আসলে কি আমাদের দেশে কে বা কারা এটা প্রচার করেছে জানিনা। আমার ভয়ানক বিরক্ত এটাই।
ইলেকশনের সময় একদিন খবরে শুনি মিসেস সাবের হোসেন, আমার মাথা ভুল নষ্ট এটা কি ধরনের ভন্ডামী। ঐ ভদ্র মহিলার নামের একটু অংশ ও নায় যা মিডিয়া বলে, মিসেস সাবের হোসেন। কিছু হল!!!
নীলাঞ্জনা নীলা
মজিবর ভাই আপনাদের মতো বড়ো মনের মানুষেরা সমাজে আছেন বলেই এখনও এসব দেখে-শুনে বিরক্তি প্রকাশ করেন।
অসংখ্য ধন্যবাদ।
মোঃ মজিবর রহমান
আপু কিছু মাইন্ড করবেন না কিছু কিছু মহিলা আছেন তারাও এটা নিজেরাই আবআর পছন্দ করে।
নীলাঞ্জনা নীলা
এখানে আমি সে কথাও লিখেছি মজিবর ভাই।
আমার প্রধান কথাটাই হলো পারিবারিক নাম, মানে ফ্যামিলি টাইটেল বদলে ফেলা আর মিসেস অমুক(স্বামীর নাম) বলে ডাকা।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
স্বকিয়তাবোধ জাগ্রত না হলে নারীর পথচলা কণ্টকাকীর্ণই থেকে যাবে। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের সাথে সাথে নারীর মত প্রকাশের স্বাধীনতাও অর্জিত হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে পুরুষতান্ত্রিক ধ্যান-ধারনায়ও পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। এক্ষেত্রে ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবোধই যদি জাগ্রত না থাকে তবে পার্থক্যটা যে থেকেই যাবে। নিজের আমিত্বকে খুঁজে বের করতে পারলে পুরুষতান্ত্রিকতার জগদ্দল পাথরটা আস্তে আস্তে এমইতেই সরে যাবে।
নীলাঞ্জনা নীলা
রুবা’পু অসাধারণ একটি মন্তব্য করেছো। মন ভরে গেলো তোমার কথায়।
এই কথাটাই নারীদেরকে বোঝানো যায়না। জানো এমন কিছু মহিলাদের সাথে দেখা হয়েছিলো বৈশাখী মেলায়, আমায় জিজ্ঞাসা করলেন ভাবী আপনি দেখছি নতূন? বললাম আমি নীলা, হুম হ্যামিল্টনের বৈশাখী মেলায় এই প্রথম এলাম আর কি! নীলা ভাবী তা ভাই কোনজন? বললাম আমাকে ভাবী ডাকছেন, আর নিজের ভাই কে সেটা জানেন না আপা?
আমি সবার সাথে মিশিনা রুবা’পু যদি না মনের সাথে মিলে। অনেক মজা করতে পারি, কিন্তু যদি কাউকে আমার পছন্দ না হয় সামনে বসে থাকবো(যদি থাকতেই হয়), কিন্তু সেভাবে কথা বলবোইনা। আর হাসিটা তো আমার এমনিতেই থাকে, উফ কি যে জ্বালা! দুঃখেও কেউ বোঝেনা গো আমি আনন্দে নাই, কষ্টে আছি। ;(
মারজানা ফেরদৌস রুবা
এই মহিলারা আসলে মাথা খাটায়ই না। অবশ্যই এমন হলে প্রশ্ন ছুড়ে দিবে। অথবা মেজাজ খারাপ লাগলে আমি রেসপন্সই করি না।
এইসব হাউজ ওয়াইফদের কাছে এটা যেনো একটা ফ্যাশন! আমার খুব হাসি পায়। অই যে ষাটের দশকে বিত্তবান পরিবারের নারীরা বিয়ের পরই নিজের নামের লেজ কেটে স্বামীর নাম লাগিয়ে নিজেকে ধন্য মনে করতো! আহা কতো আনন্দ! সে মিসেস হয়েছে। আর এই আনন্দে আহ্লাদিত হয়ে ভ্যানিটিব্যাগ দুলাতে দুলাতে স্বামীর সাথে পার্টিতে যেয়ে ভাব নিতো আমি মিসেস অমুক :p
ফালতু ^:^ ^:^ ^:^
নীলাঞ্জনা নীলা
ঠিক বলেছো আপু। বিয়ের পরেই এরা নিজেদের নামটাকেও একেবারে দান করে দেয়।
মেজাজ গরম হয়ে যায়।
আচ্ছা রুবা’পু আমি জানি মিসেস কি অমুক? ভুলে গেছি। 😀
জিসান শা ইকরাম
যে ভাইকে জীবনেও দেখেনি, অথচ তার স্ত্রীকে ভাবী বলে ডাকা,
এটি কোন মতেই সমর্থন যোগ্য নয়,
নাম ধরে ডাকাই উচিৎ।
তোর নানীকে তার বান্ধবীরা প্রায় সবাই ভাবী ডাকে, অথচ আমাকে চেনেই না,
এমনও হয়েছে দু একজনের সাথে আলাপ হলে হেঁসে বলেন, ও আচ্ছা ভাইয়া আপনিই বিউটি ভাবীর বর! ( ইচ্ছে হয় বলি যে বিউটি তাইলে ভাবি হইল কেমনে? ভাইরেই তো চিনলি না )।
নীলাঞ্জনা নীলা
নানা কও না কেন তাহলে?
নানীর নাম বুঝি বিউটি? ওয়াও! নানী কি যে সুন্দরী! একেবারে পারফেক্ট নাম। :c
মানুষটার ভাগ্যই খারাপ, বাঁদরের গলায় মুক্তার মালা হয়ে ঝুলে আছে। 🙁
তা ঘুরুন্ডি শেষ হবে কবে? আমার গিফট কিনেছো? 😀
ভালোমতো ঘুরো আর অনেক অনেক শপিং করো। অপেক্ষায় আছি। \|/
আবু খায়ের আনিছ
কে করেছে এই সিষ্টেম? কেন মেনে নেয় এই পরিচয়? কেউ কি জোর করে এই পরিচয় দিতে বাধ্য করে? নারী জাগরণের অগ্রদুত কি করেছিলেন?
অনেক প্রশ্ন আছে, সমাধানও আছে।
স্বাভাবিক ভাবে ছেলে হলে ভাবি বা আপা ডাকবে, কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা বলে মেয়েদের আপা বললেই সমস্যা, এক লাইন এগিয়ে গিয়ে বুঝে থাকে।
নাম পরিবর্তন করে স্বামীর ছায়ায় নিজেকে দেখার জন্য নাকি অন্য কোন কারণে তা বুঝতে পারি না, মনস্তান্তিক বিষয়। কিন্তু নাম পরিবতনে কেউ বাধ্য করেছে বলে শুনি নাই জানিও না। আইন আছে বলেও শুনি নাই, বরং মেয়েদের নিজেদের নাম ঠিক রাখার জন্য উৎসাহিত করা হয়।
নীলাঞ্জনা নীলা
আনিছ ভাইয়া তাহলে তো দেখছি আপনার ভাগ্য অনেক ভালো এসব শোনেননি।
আমি এতো বেশী দেখেছি অনেক জায়গায়, অনেক দেশে, বহু শিক্ষিত-অশিক্ষিতদের মধ্যে। আর তাই এই নিয়ে লিখলাম।
এই যে লেখাটা আজকের নয়, প্রকাশিত হয়েছে আজ। কিন্তু ভাবনার মধ্যে বহু বহুবছর থেকেই ঘুরপাক খাচ্ছে।
আর বুঝলাম না মেয়েদের আপা বললে কি সমস্যা করে?
আপনার মন্তব্যের মধ্যে খুঁজে পেলাম সবটুকুই যেনো নারীদের কারসাজির উপর হচ্ছে।
আশা করি মন্তব্যটা আরেকটু খোলাসা করে লিখবেন। তাহলে সব বুঝে নিতে পারতাম।
ধন্যবাদ।
আবু খায়ের আনিছ
ধন্যবাদ আপু।
একটা ছোট ঘটনার কথা বলি, এক মেয়ে হেয়ার কালার করেছে, তাকে একজন শিক্ষক প্রশ্ন করল তুমি কেন এমন করলে? মেয়েটার উত্তর আমার ভালো লাগে তাই। স্যার আবার প্রশ্ন করলেন, কেন তুমি চুল কালার করেছো? এতে রোগ হওয়ার ঝুকিঁ থাকে। মেয়েটা এবার উত্তর দিলো, আমার বয়ফ্রেন্ড পছন্দ করে তাই।
সাধারণত মেয়েদের মনস্তান্তিক দিকগুলো বুঝা অনেক কঠিন, একই প্রশ্নের উত্তর মেয়েরা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে দেয়। কিছুদিন আগে একটা গবেষণা করা হয় ছেলে এবং মেয়েদের আচরণ এবং চিন্তা ভাবনা কেমন হয় তা নিয়ে। ফলাফলে দেখা যায় মেয়েরা পরিশ্রম করতে পছন্দ করে বেশি কিন্তু জটিল এবং মনস্তান্তিক বিষয়গুলোর জন্য ছেলেদের উপর নির্ভর করতে পছন্দ করে।
বাস্তবতার নিরিখে বলছি, আপনি খুব কম সংখ্যক মেয়েই নিজেকে স্বামী বা বয়ফ্রেন্ড কে আলাদা স্বত্তা ভাবে, বরং তারা ভাবে স্বামী হচ্ছে তাদের জন্য শুধু নিরাপত্তা,সম্মান নয় বরং তাদের জন্য উৎসর্গীয় এক প্রাণ (যদিও বাস্তবতা ভাবনার ঠিক বিপরীত হয় অনেক সময়) আর এখানে দাড়িঁয়ে মেয়েরা নিজেদের কে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে চায়, এবং তাদের এই স্বামীর প্রতি ভালোবাসা এক অনন্য নির্দশন হয়ে থাকে।
এবার আমার একটা অভিজ্ঞতার কথা বলি, একদিন বাসে করে যাচ্ছি, কিছু বাচ্চা ছেলেমেয়ে হিন্দিতে কথা বলছে, গান গাইছে এবং বির্তক করছে। প্রথমে আমি তাদের ভারতীয় বা হিন্দি ভাষাভাষী ভেবেছিলাম, কিন্তু পরক্ষনেই বাচ্চাদের গার্জিয়ানদের কথা শুনে বুঝতে পারি বাংলাদেশি এরা। বাস থেকে নামার পর আমি তাদের ডেকে বললাম, আপা বাচ্চাদের এভাবে বিদেশি সংষ্কৃতি আর ভাষার প্রতি জোকতে দিবেন না, ভাষা শিক্ষা একটা ভালো কাজ কিন্তু সেটা যেন নিজের ভাষাকে ছাড়িয়ে না যায়। উনি আমার দিকে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বললেন, কোন দৃষ্টিতে তোমার আমাকে আপা মনে হল? নূন্যতম সম্মান দিতে পারো না। অথাৎ উনার বক্তব্যটা হলো উনাকে আন্টি বলতে হবে বা ভাবি।
আবার বিপরতী চিত্রও আছে, আমাকে পোলাপান আংকেল ডাকলে আমার বন্ধুরা আমাকে ক্ষ্যাপায়, কিন্তু কোন মেয়েকে আপা না বলে আন্টি বললেই সর্বনাশ।
আপনার পোষ্টটি তাদের দেখানো উচিৎ যারা নিজেদের মাইন্ড পরিবর্তন করে না, মেয়েরা যদি মেয়েদের নিজেদের নাম ধরে ডাকে আর নিজেদের নাম পরিবর্তন না করে তাহলে আমার বিশ্বাস কেউ জোর করে কখনো এটি করতে পারবে না।
নীলাঞ্জনা নীলা
আনিছ ভাইয়া আমাদের সময়ে শিক্ষকেরা ক্লাশ করানোর মধ্য দিয়েই কথা বলতেন। জিজ্ঞাসাও করতেন পরিবারের কথা, ভাই-বোন। কিন্তু এখন সম্পর্ক হয়েছে ব্যবসায়িক, কোচিং, স্কুল, টিউশনি। কয়জন শিক্ষক তার নিজের ছাত্র-ছাত্রীর সম্পর্কে জানেন? সেখানে একজন শিক্ষক জিজ্ঞাসা করেছেন ছাত্রীকে চুলে কেন কালার করেছে, এটা তো আমি নিজেও মেনে নিতাম না, এ সময়ে যদি ওই শিক্ষকের ছাত্রী হতাম!
দ্বিতীয় প্যারায় আসি। অল্প করে নারীদের মনস্তাত্ত্বিক দিকের কথা বলি। একজন নারী, নারী হয়ে ওঠার আগে অনেকগুলো ধাপ পার হতে হয়। পুরুষও পার হয়। কিন্তু ভাইয়া একটি মেয়েকে কতোজনের মন বুঝে যে চলতে হয়! বহু বাধা-নিষেধ, পোষাকে, ব্যবহারে কতো কি! খেয়াল করে দেখবেন যতো ধরণের জোকস তৈরী হয়, সবই নারীদের নিয়ে আর তা পুরুষেরা তৈরী করে। আমরা হেসেই উড়িয়ে দেই। তারপর বললেন না জটিল ও মনস্তাত্ত্বিক বিষয়গুলোর জন্য পুরুষের উপর নির্ভর করে? আমি জানিনা কোন গবেষণা থেকে উঠে এসেছে এটা। তবে আমি যে সরকারী হোম হেলথে কাজ করি, ৯৯% নারী। পুরুষ আছে তবে তারা বস নয়। আরোও অনেক উদাহরণ আছে, এটুকুই থাক।
আপনার তৃতীয় প্যারা বুঝিনি।
আমি নিজেও পছন্দ করিনা অন্যের ভাষায় কথা বলতে। আগে নিজের ভাষা, তারপর অন্য ভাষা। তবে হ্যা আমি হিন্দী, ইংরেজী গান শুনি, গাইও। জাপানে থাকতে জাপানি গানও শেখার চেষ্টা করেছি। তবে অবশ্যই বাংলাকে বাদ দিয়ে নয়। ছোট্ট একটা উদাহরণ দেই আমার ছেলেকে বলা আছে বাসায় কোনো ইংরেজী চলবে না। শুধুমাত্র বাংলা। এমন অনেক মহিলা আছেন যারা নিজেরা ঠিক জানেন না আসলে উনারা কি চান! আন্টি বললেও বিপদ আবার আপা বললেও। তা বলে সবাই না। আমায় কেউ যদি নাম ধরে ডাকে আমার কিছু যায় আসে না। অবশ্য আমার নিজেকে দিয়ে উদাহরণ দিলেই তো হয়না, আমি বুঝি সেটা। আনিছ ভাইয়া এমন জ্বালায় আমিও পড়েছিলাম বিয়ের পরে। এমনই বয়ষ্ক মানুষ তরুণের কলিগ, উনাকে ভাই বলে ডাকতে হতো। উনি কারো মুখেই আঙ্কেল ডাক নিতেই পারতেন না। 😀
এই যে ব্লগে দেখুন তো আমরা কেউ কি কাউকে ভাবী/বৌদি বলে ডাকি? আপা/দিদি বলি। আর জোরের কথা নয়। বিয়ের পরে মিসেস অমুক(স্বামীর নাম ও টাইটেল) বলে ডাকা হয়। নারীরাই শুধু নারীদের ডাকেনা, পুরুষরাই মিসেস অমুক বলে।
আপনার মন্তব্যটা খুবই সুন্দর হয়েছে। তাই ভাগ করে করে লিখলাম। আশা করি এভাবেই আগামীতে বিশ্লেষণমূলক মন্তব্য করবেন, আমার ভালো লাগবে। ভালো থাকুন ভাইয়া।
অপার্থিব
অপরিচিত মেয়েদেরকে ছেলেরা সাধারণত ভাবী ডাকে না, আপু/আপা বলে সম্বোধন করে। এটা সাধারণত মেয়েরাই করে। ভাবী ডাকের মধ্যে সাধারণত কোন সিনিওরিটি থাকে না ফলে দুই পক্ষের মধ্যে দ্রুত খাতির তৈরীর চান্স থাকে। পাশের বাসার ভাবীদের আড্ডার কথা নিশ্চয়ই শুনে থাকবেন। আড্ডা দ্রুত জমাতে ভাবী ডাকের কিন্ত একটা ভূমিকা আছে।
নীলাঞ্জনা নীলা
অপার্থিব আমি বিবাহিত নারীদের কথা বলেছি। বিবাহিত নারীদেরকে মিসেস অমুক(স্বামীর নাম ও টাইটেল) বলে ডাকা হয়, আর সেটা করে থাকেন পুরুষেরা। এ লেখায় আমি নারীদের প্রতিবাদহীনতার কথাই তুলে ধরেছি। নিজেদের নামকে স্বামীর পদবী আর নামের নীচে ফেলে রাখে। কেন তারা বলেনা নিজের নাম? আমি কিন্তু নারীদেরকেই দোষ দিয়েছি, খেয়াল করে দেখুন। আর পুরুষদের কথায় বলেছি আমাদের দেশে অধিকাংশ নারীদের পদবী স্বামীদের থেকে পাওয়া।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। তা আজকাল লেখা দেখছি না যে!
ইঞ্জা
অসাধারণ একটা পোষ্ট দিলেন প্রিয় আপু সাথে আপনার প্রতিটি বাক্যের সাথে একমত পোষণ করছি, শুধু মুখে নয় ব্যাক্তিগত জীবনে আমার বউ নিজ নাম ছাড়া আমার নাম ব্যাবহার করেনা, আমারও এই বিষয়ে সায় নেই আর এইসব আমাদের দেশ ছাড়া আর কোথাও নেই বলেই আমি জানি।
নীলাঞ্জনা নীলা
হ্যান্ডপাম্প ভাই আপনাদের মতো পুরুষেরা আছে বলেই এই পদবী নিয়ে লিখতে পেরেছি। আমার বাবার পদবী বা নাম মিসেস করুণাময় চন্দ হিসেবে আমার মায়ের উপর বর্তায়নি। বিয়ের কার্ড বা জন্মদিনের কার্ড যা-ই আসতো, লেখা থাকতো মিঃ করুণাময় চন্দ ও মিসেস মীরা দাস। তেমনি তরুণও কোনোদিন কখনোও আমাকে তো বলেনি পদবী বদল করতে, বা কেউ মিসেস তরুণও বলেনি। বরং কেউ ভাবী/বৌদি বললেই আমি বলতাম আমি নীলাঞ্জনা।
আমার ভাই আপনি, একই মানসিকতার তো হবারই কথা। 🙂 \|/
ইঞ্জা
সুন্দর মন আমার বোনের, ধন্যবাদ।
নীলাঞ্জনা নীলা
খুব খুশী হয়েছি আমি হ্যান্ডপাম্প ভাই। 😀 -{@
ছাইরাছ হেলাল
সহজ করে বললে বলতে হয়,
নিজের উচ্চতা যদি নিজে না জানি অন্যের দোষ দিয়ে লাভ নেই,
নিজের পা মাটিতে রেখে দাঁড়ানো-ই আসল কথা,
নীলাঞ্জনা নীলা
কুবিরাজ ভাই ঠিক কথা বলেছেন। তবে এখানে আমি কাউকে দোষ দিলেও সেটা নারীদেরকেই দেয়া হয়েছে।
আমারই দোষ বুঝিয়ে লিখতে পারিনি। সাধে কি আর বলি গন্ডমূর্খ? 🙁 ;(
নীলাঞ্জনা নীলা
**সাধে কি আর নিজেকে গন্ডমূর্খ বলি? 🙁 ;(
দুঃখিত! একটা শব্দ অজান্তে বাদ পড়ে গেলো এখুনি দেখলাম। ভুল বুঝবেন না যেনো।
ছাইরাছ হেলাল
ব্যাপার না, আমারা তো আমরাই,
নীলাঞ্জনা নীলা
না, তারপরেও। সত্যি খুব খারাপ লেগেছিলো।
বড়ো এক ভাইকেও সেদিন ভুলের চোটে ভাই লিখিনি। খেয়াল করিনি। আজ দেখে কি যে খারাপ লেগেছে! 🙁
আবারও দুঃখিত এমন একটি ভুলের জন্য। 🙁
অনিকেত নন্দিনী
কেনাকাটা করতে মার্কেটে গেলে দোকানিরা ভাবী বলে ডাকলে ওদিক আর মাড়াইনা। খুবই বিরক্তিকর ব্যাপার। নামের আগে মিসেস জুড়ে দেয়াটাও ভাল্লাগেনা। খুবই বিরক্ত লাগে। যারা হুটহাট করেই ভাবী বলে তাদের জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে, “এই যে আপনি আমাকে হুট করে ভাবী ডাকছেন, আমি যদি আপনাকে দুলাভাই ডাকি তাহলে ব্যাপারটা কীরকম দাঁড়াবে? আপনার ভালো লাগবে?”
অ.ট. দিদি, শিরোনামটা সম্ভবত এমন হবে, “নারী, তোমার কী পরিচয়?” কি এবং কী তো এক জিনিস না, আলাদা।
নীলাঞ্জনা নীলা
নন্দিনীদি বাঁচিয়ে দিলেন। সত্যি খেয়াল করিনি গো। কি আর কী-এর মধ্যে যে বিরাট দ্বন্দ্ব হয়ে যায় শুধু একটা ই-কার আর ঈ-কারের জন্য। একটা কথা মনে পড়ে গেলো। ক্লাশ নিচ্ছিলাম আর বোর্ডে লিখলাম প্রশ্ন। আর বললাম আমি একটা ভুল করেছি, সেটা ধরিয়ে দাও। সেই প্রশ্নটা মনে নেই, তবে “কি”-এর কথা মনে আছে।
যাক বহুদিন পর আপনার মন্তব্য আমার লেখায়। শুনুন জিজ্ঞাসা করে নেবেন, তাহলেই ওইসব মানুষেরা ঠিক হবে, তা নইলে নয়।
অনেক অনেক ভালো থাকুন।
শুন্য শুন্যালয়
এতো সহজ নারীকে বদলানো!!! 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
মোটেও সহজ না।
আচ্ছা শোনো লেখালেখির কি হলো? কবে পাচ্ছি নতূন লেখা?
শোনো মেয়ে লেখা যদি না দেও, তাহলে আমি তোমায় তিলোত্তমা ভাবী বলে ডাকবো। ঠিক আছে? 😀