বিগত দিনগুলির চেয়ে আজ আমি বেশী পরিশ্রান্ত।
তুমি যতোটা মনে করো তারচেয়েও বেশী।
আজ এ বাতায়নে বসে এক অদ্ভুদ চোখে চেয়ে আছি আমি জীবনের পানে। কি অদ্ভুদই না লাগে জীবনের পানে তাকাতে। এই তো ছোট এক জীবন। অথচ কতো তার পথ চলা। ঘূর্ণায়মান জীবনের পরিক্রমায়, শিশু থেকে কিশোরী, কিশোরী থেকে এই এখন এক পরিনত বয়সে এসে পৌছে গেছি। উচ্ছল সেই দিনগুলি পিছনে ফেলেছি। সন্ধ্যা রাতের বুকের মাঝে পরিণত জীবন আমার গোধূলী লগনের মতো একাকার হয়ে আছে। রক্তিম এ সূর্য রাতের অন্ধকারে মিশে যাবে পৃথিবির নিয়ম মেনে অন্য পৃথিবীর অন্য পৃষ্ঠে আলো দিতে।
এইতো ডুবে গেলো সূর্য। আমার এ ঘরে আলো দিতে হবে এখন আমাকেই।
চারদেয়ালের এই ছোট বাসাটাতে এখন একেবারেই একা এক পরিণত মধ্যবয়সি নারী সুফি। সন্তানরা পড়ছে বাইরে। ইদানিং কতো কি যে ভাবনাগুলো ভীড় করে সুফির মনে! জীবনের এই প্রান্তে এসে দুজনই শুধুমাত্র দুজনেরই সংগী। সময়ের প্রবাহে এটাই হয়ত নিয়ম। এক সময় ভরপুর জীবন ছিল তার। আত্নীয় স্বজনে ভরা থাকতো বাসাটা তার। সবার সব সমস্যাতে অর্থ ও শ্রম দিয়ে পাশে থাকার চেষ্টা করত। এই মে মাটির খাঁচার মাঝে যে অন্তর আত্নাটি তার, তাকে বোঝাতে চেয়েছে মনই মন্দির মনই মসজিদ। এই ভুবনের আলো ও আধারের মাঝে এসেছে যতো মনিষী পাপী তাপী মানুষ সবাই এই মাটিতেই মিশেছে। জন্মতরে নাম মিলেছে। কর্মগুনে নামের মাঝেই কুখ্যাতি নামের মাঝে সুখ্যাতি।
সুফি অল্প বয়সেই স্বামীর হাত ধরে চলে এসেছিল এক নতুন পরিবেশে। সেই পরিবেশে তার স্বামীই ছিল একমাত্র সংসারের হালধরার মানুষ। অর্থাৎ অর্থনৈতিক ভাবে চালক ব্যাক্তি। অল্প বয়সেই শিখেছিল সুফি সংসার মানে ত্যাগ। ছোটবেলায় তাকে কে যেন বলেছিল,”ভোগের থেকে ত্যাগেই শান্তি”। আত্নতৃপ্তি নাকি অনেক। তবে এই এখন এই বয়সে কেন এতো অতৃপ্তি! তবে কি তার সব ত্যাগ অপাত্রে ছিল?
সুফি জানে, সংসারে একেকটা মানুষ একেকরকম। ঝগড়া মান অভিমান নিয়েই জীবন। সুফি সবই সহ্য করতে পারে, কারো ধোকাবাজি সহ্য করতে পারে না। তা সে যতো আপনই কেন না হোক। ক্ষমা সহজে করতে পারে না। আসলে কিছু কিছু অন্যায় ক্ষমা করা যায়ও না। যে বোনকে সে তার সর্বস্ব দিয়ে সাহায্য করল, সেই বোনই তার সব বিশ্বাস ভেঙে চুরমার করে দিল। সুফির তাই মা বলে ডাকেনি কাউকে অনেকদিন। মা সুফির সম্পত্তিও তার বোনকে দিয়ে দিল। মা বাবাও সন্তানকে দুই চোখে দেখে। এটাই হয়ত পৃথিবীর আর এক নিয়ম।
নাহ! বুড় গেল তো গেলো কোথায়? এখনো আসছে না! মাথায় কি যে সব না পাওয়া চেপে বসেছে আজ।
অনেক বেশী অভিমান এই বুড়োর। সতৎ থেকেছে আজীবন। আত্নীয় স্বজন এই নিয়ে তীরষ্কার করেছে আজীবন। সবার কাছ থেকে তাই নিরব থেকেছে। কেমন যেন চুপসে গেছে এই বুড়ো। বাচ্চাদের মতো হয়ে গেছে একটুতেই তার অভিমান।
এখন শুধু প্রতিক্ষা একটা শেষ ঠিকানার।
১৬টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
চমৎকার বক্তব্য জীবন এমনি সব শেষে বিদায়ের অপেক্ষা।
মৌনতা রিতু
তা ঠিক। তবে এই বিদায়টা যেন সন্মানের হয়। এটাই কামনা থাকে সবার। এই ছোট জীবনে মানুষ হাজারটা পথ পাড়ি দেয়।
ভাল থাকবেন। সোনামনিদের অনেক অনেক আদর।
ছাইরাছ হেলাল
লেখায় সুফির জীবনের কঠিন করুণ টানাপোড়ন উঠ্বে এসেছে,
আসলে জীবনের হিসাব হয়ত আমাদের নিয়মের বাইরে থেকেও উঠে আসে,
সে হিসাব হয়ত আমরা জানি না, বুঝিও না, সে বড়ই জটিল,
আমাদের স্বল্পেরজীবনে কতকিছুই না ঘটছে সময়ের নিজ গতিতে, আমরা শুধুই সাক্ষী হচ্ছি মাত্র।
লেখায় ফিরছেন দেখে আনন্দিত বোধ করছি।
মৌনতা রিতু
পৃথিবীতে কিছু মানুষ আসেই শুধু কর্তব্য করতে। তবে আমি ব্যক্তিগত ভাবে এদের বোকা বলিনা। কারন এটাই পৃথিবীর শৃঙ্খল। নতুবা সব নিয়ম ভেঙে যেতো। যারা এই কর্তব্যের মান রাখতে পারেনি, এটা তাদের ব্যার্থতা।
ভাল থাকবেন ভাই।
নীরা সাদীয়া
“সুফি সবই সহ্য করতে পারে। কারো ধোকাবাজী সহ্য করতে পারেনা।” মিলে গেল। পুরোটা বেশ লাগল।
মৌনতা রিতু
সত্যি, ধোকাবাজি সহ্য করা যায় না।
ভাল থেকো সোনা। গল্প চালিয়ে যাও। ভাল হচ্ছে। সবাই কিন্তু পারে না গল্প লিখতে। এই আমি কিন্তু পারি না। চেষ্টা করি।
নীলাঞ্জনা নীলা
শান্ত-সুন্দরী এ কি লিখছো? এতো বিষণ্ণ করিয়ে দিচ্ছো মন, আমি যে কষ্ট পাচ্ছি।
তবে তোমার লেখার তুলনা নেই।
আপু ভালো থেকো। -{@
মৌনতা রিতু
মিশরকন্যা, এটাই তো জীবনের এক অন্য অধ্যায়।
গল্প লেখার চেষ্টা করছিলাম। কেন পারছি না বলো তো তোমাদের মতো চমৎকার লিখতে ^:^
শুধু বাস্তবতা চলে আসে।
নীলাঞ্জনা নীলা
বাস্তবতা আর কল্পনার মিশেলেই তো গল্প সৃষ্টি হয়।
তোমাকে দিয়েই হবে। অনেক চমৎকার গল্পই হবে, জানি আমি শান্ত-সুন্দরী। -{@
অলিভার
দারুন লেখা জীবনের দেনা-পাওনা আর অপূর্ণতা নিয়ে। জীবনের দৃষ্টিভঙ্গীতেই প্রকাশ পায় তার জীবন কতটা ত্যাগের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। “এইতো ডুবে গেলো সূর্য। আমার এ ঘরে আলো দিতে হবে এখন আমাকেই”, দারুন একটা লাইন ছিল। ঐ দুটো লাইনই যেন হাজার লাইনের গল্প বলে গেছে।
শুভ কামনা জানবেন 🙂
মৌনতা রিতু
এমন করে উৎসাহ পেলে আনন্দিত হই। লেখার লোভ বেড়ে যায়। এই সোনেলার সদস্যরাই পারে এমন অধমকে এতো ভালোবাসা দিতে।
অনেক ভাল থাকুন। লিখুন বেশী বেশী। আমরা আরো সবাই সবার হাত ধরে এগোতে থাকি।
মোঃ মজিবর রহমান
বড় ভারাক্রান্ত মনে সুফির জীবন বহমান নিয়ে লিখেছেন। আসলেই আপু জীবন পদ্ম পাতার জল এই আছে এই নায়, মানঅভিমান নিয়েই চলে।
সত্য জীবন কস্টেই চলে।
আপনার লেখায় ভারীমান বর্তমানে। ভাল থাকুন।
মৌনতা রিতু
অনেক ধন্যবাদ ভাই। কেমন আছেন সবাই? সব সময়ই ভাল থাকুন। অনেক শুভকামনা ও শুভেচ্ছা রইল।
মোঃ মজিবর রহমান
আপনিও ভাল থাকুন।
রুম্পা রুমানা
এগুলোই বাস্তবতা । কতো জনের জীবনেই এই গল্প রয়েছে। ভালো লিখেছেন , আপু ।
মৌনতা রিতু
অনেক ধন্যবাদ। জীবনের বাস্তব দিকগুলি এমন কঠিনই হয় হয়ত।
শুভকামনা রইল।