রান্নার মরশুম চলছে। একদিকে ঈদ গেলো, অন্যদিকে পুজোও আসছে। শরৎ কাল মানেই রোদ-বৃষ্টির এক অপূর্ব সংযোগ। তাইতো আমার বুড়ো লিখে গিয়েছিলো,
“পিছনে ঝরিছে ঝরো ঝরো জল, গুরু গুরু দেয়া ডাকে–
মুখে এসে পড়ে অরুণকিরণ ছিন্ন মেঘের ফাঁকে।”——সত্যিই তো তাই। শারদীয়ার আগমন হলো। এ উপলক্ষে ভুঁড়ি-ভোজন তো অবশ্যই চাই। কথা না বাড়িয়ে এবার তবে যাওয়া যাক রান্নাঘরে।
বাহারী পকৌড়াঃ-
এমন পকৌড়া হয়তো সকলেই তৈরী করেন বিকেলের জলখাবার হিসেবে। আমি আবার ভাতের সাথে পাতলা ডাল ও এমন পকৌড়া ভাঁজা করি রাত অথবা দুপুরের খাবারের সাথে। এখানে স্ন্যাক্স তো সেভাবে খাওয়া হয়না, একসাথে সন্ধ্যে সাতটায় ডিনার। তাই এমন অবস্থা আর কি! কিছু নেই রান্না ঝটপট করে এটা বানিয়ে নেয়া যায়। আমি পরিমাণ উল্লেখ করিনি, পেশাদার নই তো! আপনারা আন্দাজ মতো নিয়ে নেবেন।
উপকরণ – বেসন কিংবা ময়দা, পালং শাক মিহি করে কাটা, বেসন/ময়দা, তিল, ডিম একটা, আদা বাটা অল্প পরিমাণে, কালোজিরা, ধনেপাতা, কাঁচামরিচ, লবণ, জল এবং ভাঁজার জন্য তেল।
পালং শাক প্রথমে ধুয়ে নেবেন খুব ভালো করে। দেশে অনেক ধূলো-বালু থাকে। তারপর একেবারে মিহি মিহি করে কেটে রাখুন একটা বাটিতে। ওর মধ্যে বেসন/ময়দা,জল, ডিম ফেঁটিয়ে দিয়ে মাখুন। তারপর এক এক করে অল্প আদা বাটা, কালোজিরা (প্রথমে তেলে আলাদা করে ভেঁজে নেবেন, তাহলে ঘ্রাণ ছড়াবে), কাঁচামরিচ-ধনেপাতা (কুঁচি কুঁচি করে কাটা), লবণ এবং সবশেষে তিল(শাক এবং ময়দার পরিমাণ অণুযায়ী) দেবেন। এবারে চুলোয় পাত্র বসিয়ে গরম হবার পর তেল ঢালুন। তারপর ওদিকে একসাথে মেখে নিন। তেল গরম হলে সেই ডুবোতেলে পকৌড়ার সাইজে ভাঁজতে থাকুন। অবশ্য যাঁদের ব্লাড সুগার কিংবা বিপি হাই তাঁদের জন্য ডুবোতেলে না ভেঁজে ডিমের ওমলেট ভাঁজতে যতোটুকু তেল লাগে সেভাবেও ভেঁজে দিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ঢেকে দিতে হবে এক মিনিটের জন্য, তারপর হাল্কা আঁচে ভাঁজতে থাকবেন। সময় লাগবে মচমচে পকৌড়া হতে। তবে এটুকু জানি সুস্বাদু হবেই। জলখাবারে পকৌড়ার সাথে চাটনী লাগে। কেচাপের ভেতর কাঁচামরিচ কুঁচি, লেবুর রস, ধনেপাতা বাটা দিয়ে মেখে নিন। এমন চাটনী এই মাথা থেকে অনেক কষ্ট করে বের করতে হয়েছে। মনে হয়না মন্দ লাগবে।
রাই-সরিষা শাক ভাঁজিঃ-
ভাতের সাথে শাক কিংবা ভর্তা আমাদের সকলের চাই-ই চাই। বিশেষ করে আমার মামনিকে দেখেছি বিভিন্ন ধরণের শাক রাখতোই প্রতিদিনের খাবারে। আর রাই শাক খুব প্রিয় আমার। বিশেষ করে রাই শাকের ভর্তা কিংবা রাই শাক দিয়ে মাছের ঝোল, অথবা সরিষা বাটা দিয়ে ভাঁজা। তবে আজ আমি বলবো সাধারণভাবে ঝটপট করে রাই-সরিষা শাক কিভাবে ভাঁজতে হয়!
উপকরণ – কালোজিরা, শুকনো মরিচ, হলুদ, লবণ, রাই-সরিষা শাক, ধনেপাতা, কাঁচামরিচ এবং তেল।
প্রথমেই শাক ধুয়ে নিয়ে জল ঝরিয়ে নিন। জল ঝরে গেলে পর কুচিকুচি করে কেটে রাখুন। চুলোয় ফ্রাইপ্যান গরম হতে দিন, তারপর তেল ঢালুন। অনেকে করে কি ফ্রাইপ্যান গরম হবার আগেই তেল ঢেলে দিয়ে একসাথে গরম করেন। অমন ঠিক না। রান্নার স্বাদ কিন্তু তেলের উপর নির্ভর করে। যাক তেল গরম হবার পর শুকনো মরিচ ফোড়ন দিন। তারপর কালোজিরা দিয়ে সাথে সাথেই একটু লবণ ছিটিয়ে দিন। এবারে শাক ঢেলে দিন, অল্প পরিমাণে হলুদ ও লবণ ছিটিয়ে দিন। নেড়েচেড়ে ভাঁজতে থাকুন। তারপর হাল্কা আঁচে ঢেকে দিন। শাকের জলে শাক নিজেই সেদ্ধ হয়ে যাবে। সেদ্ধ হলে ঢাকনা সরিয়ে নিয়ে জল শুকিয়ে ফেলে ফালি করে কাটা কাঁচামরিচ ও ধনেপাতা কুচি ছড়িয়ে দিন। ব্যস হয়ে গেলো রাই-সরিষা শাক ভাঁজি। এই রান্নায় সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে খুব বেশী হলে পনেরো মিনিট লাগে।
লেবুডিম্বঃ-
ডিম আমরা কতোভাবেই না রান্না করি। আর সবচেয়ে সহজ রান্না কিন্তু ডিম। হঠাৎ করে বাড়ীতে কোনো অতিথি এলে মাছ-মাংস কিছু নেই, কিন্তু ডিম দিয়ে চালিয়ে নেয়া যায়। ডিম ভুণা, ডিমের ঝোল, ডিমের কোর্মা আরোও কতো কি! এসবের সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। কিন্তু লেবুপাতা দিয়ে ডিম মাখা একেবারে অন্যরকম স্বাদ। আমি যাদের খাইয়েছি তারা আমার রান্নার প্রকৃত সমালোচক। তাদের যখন ভালো লেগে যায় আমার কোনো রান্না, তখন আমি নিশ্চিন্ত হই। একটা কথা জানিয়ে রাখি আমি কোনো রান্নায় শুকনো মরিচ গুড়া ব্যবহার করিনা। বরং কাঁচামরিচ তীর্যকভাবে কেটে কেটে রান্নার মধ্যে একবার দেই, এবং সবশেষে আরেকবার দিয়ে থাকি।
উপকরণ – সেদ্ধ ডিম চারটি(সংখ্যায় বাড়াতে পারেন চাইলে), অল্প আস্ত সাদাজিরা, জিরা-ধনে-হলুদ পাউডার(ছোট্ট একটা বাটিতে অল্প জল দিয়ে মেখে নেবেন), আদাবাটা, লবণ, তেল, কাঁচামরিচ (ফালি করে কাটা), গন্ধরাজ লেবুপাতা।
আলাদা হাঁড়িতে ডিমগুলো সেদ্ধ করে নিন এবং সেদ্ধ হবার পর ডিমগুলোর খোসা ছাড়িয়ে নিয়ে ডিমের গায়ে চাকু দিয়ে হাল্কা পোচ দিন এবং তারপর হলুদ-লবণ দিয়ে মাখুন। তাতে মশলগুলো ভেতরে ঢুকতে পারবে। আর অন্যদিকে ফ্রাইপ্যান গরম করে তেল দিন। সেই তেলে ডিমগুলো ভেঁজে আলাদা পাত্রে তুলে রাখুন। এবারে ওই তেলে আস্ত সাদাজিরা দিয়ে ওরই মধ্যে অল্প লবণ ছিটিয়ে দিন। এবার অল্প পরিমাণে আদাবাটা এবং জল দিয়ে মাখানো মশলা দিন প্যানে। তারপর নাড়াতে থাকুন, হাল্কা বাদামী রঙ হলে অল্প জল ছিটিয়ে দিন। ওই জল শুকিয়ে গেলে এবার ভাঁজা ডিমগুলো দিয়ে জল দিয়ে দিন। হাল্কা আঁচে রাখুন। মাখা মাখা হয়ে গেলে কাঁচামরিচ ফালি এবং লেবুপাতাগুলো দিয়ে দিন। লেবুপাতা কয়েক সেকেন্ডেই সেদ্ধ হয়ে যাবে। নামিয়ে নিন চুলা থেকে। ওহ লেবুপাতা দিয়ে চুলোয় বেশীক্ষণ রাখতে যাবেন না, রান্না একেবারে তেতো হয়ে যাবে কিন্তু।
ডাটা দিয়ে ইলিশ মাছের ঝোলঃ-
রান্না আমরা করি সকলেই। অনেকেই জানেন না কোনটার পর কোন পদ খেতে হয়। সব্জী-ডিম-মাছ-মাংস এভাবেই খাবার নিয়ম। তাতে হজম হতে সুবিধে হয়। আমরা সব একসাথে নিয়ে খাই, আর ওদিকে হয় বদহজম, এসিডিটি, স্টমাক ফ্লু ইত্যাদি। আর বলতে থাকি ইস রে কেন যে খেলাম! তাই সাবধান! যাক, নাম দেখে নিশ্চয়ই অনেকের জিহবায় জল চলে এসেছে? আমার কিন্তু এসে গেছে। খুবই প্রিয় একটি মাছ আমার। এ রান্না খুবই সহজ। এ দেশে মাছ তো কেটে দেয়, শুধু আঁশ ছাড়াতে হয়।
উপকরণ – কালোজিরা, হলুদ পাউডার(জল দিয়ে মেখে রাখুন), কাঁচামরিচ, ইলিশ মাছ (মাথা ছাড়া), ডাটা, লবণ, তেল।
ইলিশ মাছ খুব বেশী ধুতে নেই। আঁশ ছাড়িয়ে এমনভাবে ধুয়ে নিতে হবে, যাতে রক্ত না থাকে। বেশী ধুলে ইলিশের গন্ধ চলে যাবে। তারপর জল ঝরিয়ে নিয়ে হলুদ-লবণ দিয়ে মেখে অল্প তেলে হাল্কা ভেঁজে নিতে হবে। ইলিশ মাছে প্রচুর তেল থাকে তাই তেল বেশী না দেয়াই ভালো। তারপর সেই তেলেই কালোজিরা ফোঁড়ন দিন, তাতে অল্প লবণ ছিটিয়ে দিন। এবারে মাখানো হলুদ ছেড়ে দিয়ে হাল্কা ভাবে ভেঁজেই ডাটা, লবণ এবং ফালি করা মরিচগুলো দিন। তারপর ভাঁজা ভাঁজা হলে ওর মধ্যে জল ঢেলে দিন। জ্বাল কমানোর প্রয়োজন নেই। পাত্র ঢেকে দিন, ডাটা সেদ্ধ হলে মাছের টুকরোগুলো ঢালুন। আবার পাঁচ মিনিটের জন্য ঢেকে দিন। যদি দেখেন ঝোলের পরিমাণ বেশী, তাহলে ঢেকে দেবেন না। ঝোল কমে যাবে এবং আঁচে মাছও সেদ্ধ হয়ে যাবে। তারপর আবার ফালি করা কাঁচামরিচ দিয়েই নামিয়ে ফেলুন। ব্যস হয়ে গেলো ডাটা দিয়ে ইলিশ মাছের পাতলা ঝোল।
চিকেন ইষ্ট-ওয়েষ্ট ফিউশনঃ-
নামখানা আমারই দেয়া। কারণ রেসিপিটা একান্ত আমার নিজস্ব। হঠাৎ করে মাথায় এলো এভাবে রান্না করলে কেমন হয় তো দেখি! সাথে সাথেই রেডি হয়ে বোনলেস চিকেন কিনে নিয়ে এলাম। এটি করতে অনেক সময় লাগে। কারণ আগের রাতে মেখে রেখে দিতে হয় বারো ঘন্টার জন্য। চাইলে ছয় কিংবা আট ঘন্টাও রাখতে পারেন, তবে আমার ধারণা নেই এমন স্বাদ হবে কিনা। আমি আমার বন্ধুর মেয়েকে খাইয়েছি, ও সহজে সব খাবার পছন্দ করেনা। কিন্তু কাঁকন বলেছে দারুণ হয়েছে, একেবারে অন্যরকম স্বাদ। তাই এই রেসিপিটা আপনাদের জন্য দিলাম।
উপকরণ – বোনলেস মুরগী(একেবারে ছোট ছোট টুকরো করে কাটা। আলু যেভাবে কিউব করে কেটে ভাঁজা হয়, তেমনি), ইতালিয়ান সিজনিং, লেমন পিপার সিজনিং, জিঞ্জার সল্ট(এর উপরেও কিন্তু স্বাদ নির্ভর করে, এটি বাসায় বানানো যায়না। কারণ এমন অনেক কিছু থাকে যা একমাত্র ম্যানুফেকচার করা হয়), পাপরিকা, কোরিয়েন্ডার পেষ্ট(টম্যাটো পেষ্ট, জালাপিনো, ভিনেগার, তেঁতুল, ধনেপাতা, লেবুর রস, ক্যানোলা অয়েল, কাঁচামরিচ, রসুন-পেঁয়াজ, কর্নস্টার্চ, লবণ, চিনি), লাল পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ ফালি, ধনেপাতা কুচি, টম্যাটো (টুকরো করে কাটা) এবং সরিষার তেল। আগেই বলে রাখি কোরিয়ান্ডার পেষ্ট তৈরীটাই কিন্তু আসল। ধনেপাতা, রসুন, পেঁয়াজ, জালাপিনো এবং কাঁচামরিচ একসাথে ব্ল্যান্ড করে নিতে হবে। তারপর তার মধ্যে বাকী সব উপকরণ দিয়ে মাখিয়ে নিতে হবে। দেশের বাইরে ওয়ালমার্টে এই পেষ্ট পাওয়া যায়, দেশের বাজারে পাওয়া যায় হয়তো। আমার জানা নেই। হয়ে গেলো কোরিয়েন্ডার পেষ্ট। এই পেষ্টটা বানিয়ে দেখে নেবেন স্বাদ কেমন। লবণ-চিনি-লেবুর রস কম-বেশী হলে পরিমাণমতো দিয়ে নেবেন।
মুরগীর জল ঝেড়ে নিয়ে তার মধ্যে লাল পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ ফালি, ধনেপাতা কুঁচি, সরিষার তেল ছাড়া অন্য সব উপকরণ দিয়ে খুব ভালো করে মাখিয়ে ফ্রীজে(অবশ্যই ফ্রীজারে নয়) রেখে দেবেন। মাখানোটা কিন্তু অনেকক্ষণ ধরে করবেন। বারো ঘন্টা পর ফ্রীজ থেকে বের করে নেবেন। দেশে আজকাল সবার ঘরেই মাইক্রোওয়েভ আছে, কিন্তু আমাদের চাই গ্রীল ওভেন। যার মধ্যে ওভেনপ্রুফ একটি ট্রে-এর জায়গা হতে পারে। অবশ্য বড়ো সাইজের মাইক্রোওয়েভ ওভেনেও গ্রীল থাকে। কারণ আমরা এই মাখানো চিকেনকে ব্রয়েল করবো। এবারে ওভেন প্রি-হিট করুন ৪০০ ডিগ্রী ফারেনহাইট তাপমাত্রায়। তারপর ট্রে-এর উপর ক্যানোলা অয়েল ব্রাশ করে তার উপরে মুরগীর টুকরোগুলো সাজিয়ে নিন। এবারে মুরগীর উপরে হাল্কা করে অল্প ক্যানোলা অয়েল ব্রাশ করে দিয়ে ওভেনে ঢুকিয়ে দিন। এখন তাপমাত্রা বাড়িয়ে ৫০০ ডিগ্রী করে দিন। ৩০ মিনিট ওভাবে থাকবে। ৩০ মিনিট পর দেখবেন সেদ্ধ হয়েছে কিনা! সেদ্ধ হলে উল্টে দিয়ে আরোও ৩০ মিনিট রাখুন। সেদ্ধ হবার পর হাল্কা বাদামী হয়ে গেলে ওর মধ্যে লম্বা লম্বা করে কাটা লাল পেঁয়াজ, ধনেপাতা, কাটা টম্যাটো দিয়ে সরিষার তেলে মেখে নিন। তারপর উপরে ফালি করে কাটা কাঁচামরিচ ও ধনেপাতা দিয়ে সাজিয়ে দিন। এখন নিশ্চয়ই বুঝেছেন কেন এর নাম দিয়েছি ইষ্ট-ওয়েষ্ট ফিউশন? এটি আপনি রুটি/পরোটার সাথে খেতে পারেন। আবার ভাতের সাথে খেতেও মন্দ হয়না। একবার ট্রাই করে দেখুন।
সেমাই-ক্ষীরের পায়েসঃ-
সবশেষে মিষ্টি না হলে কি হয়? ঢেকুর তোলার পর একটু মিষ্টি জাতীয় খাবারের প্রয়োজন পড়ে। তা না হলে খাওয়া তো অসম্পূর্ণই থেকে যায়। তাই খুব সহজ একটি রেসিপি দিচ্ছি, যা সকলেই তৈরী করে নিতে পারবেন।
উপকরণ – লবঙ্গ-এলাচ-দারচিনি-তেজপাতা(প্রতিটি দুটো করে), দুধ, সেমাই, ক্ষীর, চিনি, ঘি, গরমমশলা গুড়া।
একটি পাত্রে দুধ ঢালুন এবং ওর মধ্যে লবঙ্গ-এলাচ-দারচিনি-তেজপাতা দিয়ে জ্বাল দিতে থাকুন। নাড়তে থাকুন ততোক্ষণ, যতোক্ষণ পর্যন্ত ঘন না হয়। এখানে অবশ্য ক্রীমের দুধ পাওয়া যায়। আপনারা চাইলে কনডেন্সড মিল্কে জল দিয়েও জ্বাল দিতে পারেন। দেশে ক্ষীর তৈরী করাটা খুব কঠিন। এখানে ইন্ডিয়ান দোকানে ক্ষীর কিনতে পাওয়া যায়। দুধ ঘন হয়ে এলে তার মধ্যে ক্ষীর ঢেলে দিন। আবারও নাড়ুন। ক্ষীর দুধের সাথে মিশে গেলে সেমাই দিয়ে দিন। সেমাই সেদ্ধ হয়ে গেলে এক চামচ ঘি দিয়ে দিন ওর মধ্যে। সাথে সাথেই চিনিও ঢেলে দিন স্বাদমতো। পায়েস ফুঁটে উঠলে অল্প গরমমশলা গুড়ো ছিটিয়ে দিয়ে নামিয়ে নিন। একেবারেই অন্যরকম স্বাদ পাবেন। একঘেঁয়ে রান্না লাগবে না। ওহ বলে রাখি ক্ষীর জমাতে কম করে হলেও এক থেকে দেড় ঘন্টা লাগে। আর দুধ নেড়ে যেতেই হয় ওই সময় পর্যন্ত। হাত ব্যথা হলে আমাকে কেউ কিন্তু কিছু বলতে পারবেন না, কারণ আগেই জানিয়ে রাখলাম।
আজকের মতো এটুকুই। লিখতে লিখতে হাত ব্যথা হয়ে গেছে। সেই সকাল ১১ টা থেকে লিখতে শুরু করেছি। ক্ষীর জমানো তো মাত্র দেড় ঘন্টা, লেখায় তাহলে হিসেব করুন।
হ্যামিল্টন, কানাডা
১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ইং।
৩৪টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
আপনি তো দিয়েই খালাস! কোনটা রেখে কোনটা খাই!!
আপনার ওজনটা কত এখন কে জানে!!
নীলাঞ্জনা নীলা
আমার ওজন বেশী না, মাত্র ১০০ কেজি। :p
গিনেজ বুকে রেকর্ড করার ইচ্ছে। 😀
তবে এসব খেয়ে ১০০ কেজি করাটা খুবই কঠিন। জাঙ্ক ফুডের দিকে আমার খুব টান।
রিমি রুম্মান
কপি করে রাখলাম। দেখে দেখে রান্না করব। তবে পাকোড়া আমার খুব প্রিয়।
নীলাঞ্জনা নীলা
রিমি আপু আশা করি ভালো লাগবে। আমি পাকা রাঁধুনী নই, তবে চেষ্টা করে যাচ্ছি বিয়ের পর থেকেই। 😀
রেঁধে অবশ্যই জানিও কিন্তু।
ভালো রেখো আপু। -{@
লীলাবতী
পরিচিত রান্না গুলোতে কিছুটা ভিন্নতা পেলাম, রান্না করা হবেই হবে 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
লীলাবতীদি রেঁধে অবশ্যই জানাবেন কিন্তু।
আশা করি খারাপ লাগবে না খেতে। 🙂
মোঃ মজিবর রহমান
দিদি খাইতে ইচ্ছে করে তো।
নীলাঞ্জনা নীলা
মজিবর ভাই কষ্ট করে রেঁধে খেতে হবে যে! দেশে থাকলে ঠিক রেঁধে খাওয়াতাম। আমি নিমন্ত্রণ দিতে খুব ভালোবাসি।
অপার্থিব
পোস্ট সংগ্রহে রাখলাম। অন্তত চিকেন ইষ্ট-ওয়েষ্ট ফিউশনটা খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেন। হাজার হলেও নিজের আবিষ্কৃত !!
নীলাঞ্জনা নীলা
কিভাবে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করবো, বলুন। সাজেশন চাইছি আপনার কাছে।
মোঃ মজিবর রহমান
এইরে হাতছাড়া হল বুঝি।
ভাল থাকুন আপু।
নীলাঞ্জনা নীলা
মজিবর ভাই কি করবো আপনি-ই বলে দিন তবে। 🙂
অপার্থিব
সাজেশন তো মাথায় কিছু আসছে না, খাওয়াতে চেয়েছেন এটাকেই আপাতত খাওয়া হিসেবে ধরে নিলাম। আপাতত…
নীলাঞ্জনা নীলা
আপাতত…এই তিন ডটের মানে কি রান্না করে খাওয়াতেই হবে? নিস্তার নেই? 🙁
মিষ্টি জিন
এর আগের রেসিপি থেকে কিছু কিছু করেছি। এটা থেকেও করবো। পাকোডা আমি প্রায় ই করি । তোমারটা একটু অন্যরকম তাই ট্রাই করবো।
নীলাঞ্জনা নীলা
মিষ্টি আপু আশা করছি সুস্বাদু হবে। না হলে কিন্তু রেসিপি দাতার দোষ না, রাঁধুনীওয়ালীর দোষ। :p 😀
রুম্পা রুমানা
আমাদের জন্য পাঠিয়ে দেন গো আপু । একটা একটা করে সব কটা চেষ্টা করবো এক সময় । ভালো হলো আপনার রেসিপিগুলা পেয়ে। ধন্যবাদ।
নীলাঞ্জনা নীলা
আমি নিজের জন্য রান্না করতে একটুকুও ভালোবাসিনা। চলে আসুন ঠিক রেঁধে খাওয়াবো। 🙂
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
আপনার এমন রান্নার রেসিপি সোনেলা খাদ্য নির্ভরশীল ব্লগে পরিনত হচ্ছে যে কোন সময় যে কোন ব্লগের সাথে যুদ্ধে নেমে পড়ব।আপনি আরো মওজুদ করুন যাতে যুদ্ধে খাদ্যের ককোন ঘাটতি না থাকে…… \|/ \|/ \|/
নীলাঞ্জনা নীলা
মনির ভাই আ——–ক্রমণ! 😀
মৌনতা রিতু
নীলা আপু, তুমি এমন ভাবে রিসিপি দিলে, মনে হল পাশে দাঁড়িয়ে থেকে শিখাচ্ছ।
পাকোড়া তো খুবই প্রিয়। তবে যদি তা কেউ করে খাওয়ায় :p
একশোতে একশো গুরু। -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
একশোতে একশ’? মাত্র? দু’শো নয় কেন? ;(
মৌনতা রিতু
তোমার রান্নার রেসিপি কপি করতে বয়েই গেছে ! ,,,,,,,,,
স্কিন শট শিখছি, ওটাতেই সেভ করে রেখেছি। :D) \|/ \|/
নীলাঞ্জনা নীলা
স্কিন শট এই সেদিন এক ভাবী শিখিয়ে দিলেন আমায়। 😀
এখন আমিও পারি। \|/
মৌনতা রিতু
কারন আমি কপি করতে পারি না,,,,,,,, ;( ;( ;(
নীলাঞ্জনা নীলা
সেলফোন থেকে নাকি ল্যাপটপ থেকে কপি করতে পারোনা আপু?
শুন্য শুন্যালয়
এইটা কী ঠিক করেছ কবিতার নূপূর? আমি আটদিন ধরে অসুস্থ, তুমি খবরই নিলা না, উল্টা এইসব রান্নাবান্নার লোভ দেখিয়ে বসে আছো, তুমি খুবই ফঁচা।
চিকেনের রেসিপির উপকরণ দেখে ডরাইছি, এর থেকে টিকেট কেটে যাওয়া ইজি হবে, আসতেছি ওকে?
সেমাই, ক্ষীর, পায়েশ সব একসাথে? আল্লাহ্ই জানে, এই মাইয়া আমারে জামাই বাড়িত থাইক্কা বের করে দেবার পরিকল্পনা করছে নাকি।
তোমার গেস্টদের ফোন নাম্বার দাও আগে, পরে বুঝবো আসলেই কেমন হইছিলো।
রান্নাবান্নার ধৈর্য্য আমার একেবারেই নাইগো নীলাপু, তবে ট্রাই নিমু সুস্থ হয়ে নেই। একটু বেশি বেশি দোয়া করো তো আপু। -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
কি হয়েছে তোমার? জ্বর নাকি? তুমি আমাদের সাহসী তিলোত্তমা। তোমাকে অসুস্থতা কাবু করতেই পারেনা। -{@ (3
এবারে শোনো বলি, চিকেনের রেসিপির মশলা তুমি রেডিমেড পাবে অষ্ট্রেলিয়াতে। দেশে পাওয়া যাবে কিনা জানিনা, তাই সব উপকরণ লিখে দিয়েছি। আর ভালো রান্না খেতে হলে কষ্ট তো করতেই হবে। :p
তাড়াতাড়ি চলে এসো তো সুস্থ হয়ে। কতোদিন ঝগড়া করা হয়না। 🙁
শুন্য শুন্যালয়
ও আমি সুস্থ হয়ে ফিরে আসবো তোমার সাথে ঝগড়া করার জন্য? ঝগড়াটে কোথাকার। 🙁
দোকানে গেলে মশলার বাহার দেখলে আমি ডড়াই আর ডড়াই সস এর বাহার দেখলে। এত্তো এত্তো মশলা কিসের আল্লাহ্ মালুম।
হ্যাঁ আপু, জ্বর ছিলো সাথে কাশি, এখন একটু ভালো আছি, জ্বর ছেড়েছে। ঝগড়ার কথা শুনেই গায়ে জোশ এসে গেছে, হা হা হা 😀
রান্না করবো একটা একটা করে, দেখি কেমন রাঁধুনি তুমি। -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
তিলোত্তমা এভাবে ভাইরাস পাঠিয়ে দিলে? ঠিক করোনি। কাশি দিতে দিতে হাঁপিয়ে গেছি। তোমার ওই ভাইরাস আমার $২০ খরচ করিয়েছে। জীবনে কফ সিরাপ খাইনি। কি ভাইরাস্নী মাইয়ারে! :@
একটু কোথায় ঝগড়া করবো, তা না, আমার কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছে। বয়স আমার মাত্র কুড়ি, বানিয়ে দিয়েছে আশি। এমনই দিচ্ছি কাশি। পালিয়ে যাবে দেশের মাছি। 😀
রেসিপি আমার দারুণ। তবে “নাচতে না জানলে উঠান বাঁকা” জানো তো? 😀
চাটিগাঁ থেকে বাহার
অসাধারণ সব খাবারের আয়োজন, ভাল লেগেছে। খেতে পারলে আরো ভাল লাগত। আপনাকে ধন্যবাদ। -{@ -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
চলে আসুন হ্যামিল্টনে।
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
অনিকেত নন্দিনী
সক্কাল সক্কাল এত্ত এত্ত রান্নার আয়োজন দেখে মাথাটাই বিগড়ে গেলো। ছবি আর রেসিপি দিয়েই খালাস! এতে হপেনা, করে খাওয়াতে হপে। পালং পাকোড়া, রাই শাক আর ইলিশ ডাঁটা করে দিলেই হবে। 🙂
পানি ধরতে পারছিনা, কাশি শুরু হয়ে যাচ্ছে। টনসিলের জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে কেটে বাদ দিয়েছিলাম সেই পুচকাবেলায়। কিছুদিন যাবৎ সর্দি লাগলেই আলজিব আর তার চারপাশ ফুলে যায়। গলা ফুলে একদম চেপে আছে গো দিদি। কষ্টটা হুবহু টনসিলের কষ্টের মতোই। 🙁
নীলাঞ্জনা নীলা
নন্দিনীদি আরে সবচেয়ে সহজ তো এই তিনটাই। কি মজা! ভাগ্য ভালো অন্যগুলো বলেননি। 😀 \|/
ইসসিরে ডাক্তার দেখিয়েছেন? টনসিল আমারও নেই। অবশ্য অপারেশন লাগেনি। এমনই অবস্থা হয়েছিলো টনসিল ফেঁটে মুখ থেকে পড়ে গিয়েছিলো। আমি তিনমাস কথা বলতে পারিনি। ইশারায় কথা বলতাম। আমার কাছে লাগছে কোনো ভাইরাল টাইপ অসুখ। আপনি একটা কাজ করবেন?
দুটো লং, দুটো এলাচ, একটা তেজপাতা, কয়েকটি কালো/সাদা তুলসীপাতা, মধু, একেবারে অল্প একটু চা পাতা ও আদা ছেঁচে জলে দিয়ে গরম করুন। ফুঁটে যাবার পর সেটা দিনে তিনবার খান। বেশী করে বানিয়ে নেবেন, যাতে দিনে তিনবার চলে। চায়ের কাপের মাপে। আশা করি সেরে যাবে। সুস্থ হয়ে উঠুন দিদি। -{@