1081527_783351478436599_415961315_n
জমিতে তামাকের চাষ, সবুজ বিষ

এই গ্রামের মেঠোপথ ধরে সকাল বিকাল আমার হেঁটে চলা। মাঝখানে পিঁচঢালা পথ,পথের দু ধারে সবুজ আর সবুজ। এই নির্মল বাতাসে আমার সব ক্লান্তির অবসান। থাবা দিয়ে এই বাতাস আমার কাছ থেকে মাথার ঝিমঝিমানি নিয়ে যায়।
কখনও কখনও অবশ্য আমার মনটা খুবই খারাপ হয়ে যায়, যখন দেখি অনেক জমি জুড়ে তামাকের পাতা হা মেলে অট্রহাসি দিচ্ছে। আমি মুখ ফিরিয়ে নেই। আশেপাশে খোঁজ নেই কে এই জমির মালিক, দেখাও পাই। কিছু সময় বসে কথাও বলি তাদের সাথেো। কেউ অবশ্য কথা না বলার জন্য মুখটা ফিরায় না। যে এক খানা চেহারা লইয়া আইছি, কে আর মুখ ফিরায় :p

চাচামিয়ার পাশেই বসে গল্পে মাতি।

-ও চাচা কেন এই তামাক চাষ করেন? হুক্কা খান?

-না রে মা,হুক্কা কি আর চলে? বিড়ি একটু খাই।

-তামাক অনেক খারাপ জিনিস, আপনি জানেন?

-জানি তো মা,কিন্তু কি করুম, এ্যালাই ধান চাষে খরচ ম্যালা। পানি নাই নদিতে, সেচ দিমু, পানি কৈ? কামলার খরচও ম্যালারে মা। ঘরে দুখান জোয়ান মাইয়া আছে। একখান মাইয়া শশুর বাড়ি, তারেও দেহন লাগে। খরচ ম্যালারে মা। ধান বেইচা দামও যে পাইনা। এই পাতাতে খরচ কম, পানি লাগে না, দামও বেশি। সিগারেট কোম্পানির লোকেরা বাড়ি এসে নিয়ে যায় এই পাতা। হাঁটেও যাওয়া লাগে না।

এখন আমার প্রশ্ন কৃষক কেন ভাবছে ধানে লাভ নেই? কারা এই লোভ দেখানো কোম্পানিগুলো? কেন সাধারণ কৃষক আজ অবহেলার শিকার হয়ে এমন চিন্তা করছেন?

আমি যতদূর জানি ধানের কোনো জিনিসই ফেলনা নয়। তবে কেন কৃষক ভাবছে ধান চাষে লাভ নেই? আসলে যতো লাভ হচ্ছে ঐ মিল মালিকের। তারা বর্তমান প্রযুক্তির কল্যানে চালের গুঁড়ো দিয়ে প্রসাধনী, ভোজ্যতেল, বিভিন্ন ভিটামিন তৈরি করছে। তুষ থেকে পৃথকীকরণ করে সিলিকা তৈরী করছে,যে সিলিকা দিয়ে ইলেকট্রনিকসের মাইক্রোচিপস্ তৈরি হচ্ছে। পুর্বে ধান হতে একমাত্র চাল হতো তাই একটি দাম ছিল। এখন তো ধান হতেই বহুবিধ প্রডাক্ট আসছে, শুধু মাত্র চালের মূল্যমান কেন হবে ধানের?

এখন যেটা করতে হবে কৃষককে লাভবান করতে মাঠপর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের কাজ করতে হবে,পাটের মতো এই খাতে ও ভর্তুকি দিতে হবে। ফ্রান্সে প্রতিবছর খাদ্যপণ্যে ভর্তুকি দেয় সেই দেশের সরকার।

আমাদের দেশে অর্থাৎ এ মহাদেশে যতো নষ্টের জিনিস বৃটিশরাই এনে ফেলে গেছে। আমরা তা আজও বয়ে বেড়াচ্ছি। আগে পপি চাষ হতো মহা ধুমধামে। বৃটিষরা আফিম সেবন করতো ফ্যাশন হিসেবে। মুঘল বাদশাগনের বিবিরাও তাদের সন্তানকে শান্ত করতে নিজ হাতে আফিম দিত সন্তানের মুখে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, এই জাত শয়তানটা যতো ময়লা ফেলে দিয়ে গেলো এই এশিয়াতে।

যাই হোক এখনও লোক চক্ষুর আড়ালে পপি চাষ হচ্ছে বাংলাদেশে। অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি এই পপি চাষ করছে অনেক অতি লোভি শয়তান। ভারতে পাচার করে পরে ভারত থেকেই প্রোসেস করে চোরাচালানে সস্তা ও নিম্ন মানের আফিম আনছে চোরাকারবারিরা,মাফিয়া চক্ররা। এই দলে যোগ আছে অনেক নামিদামি প্রশাসনের লোক।

তবুও আমার দেশ অনেক সুন্দর। গ্রামে ঘুরতে ঘুরতে যখন গ্রামের সাধারন মহিলাদের দেখি অবাক হই। কি যে তাদের ধৈর্য্য ! সারাদিন সংসারের কাজ, গবাদিপশুপাখি পালন, সন্তান পালন যা অসাধারন। কোনো ক্ষোভ নেই জীবনের জন্য। তারপরও বসে নেই, সূক্ষ্ম  হাতে নানান রঙ্গের সূতায় কাপড়ে এঁকে চলেছে বিভিন্ন নকশি।

এ আমার অপরূপ বাংলা।
আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি………

৫৭১জন ৫৭১জন

৩৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ