প্রতি বছরের এই সময়টি আমি আমার মাঝে থাকি না। আমার দেহ হতে আত্মা বের হয়ে পারলৌকিক জগতে চলে যায়। ২১ দিন ব্যাপী চলে প্রস্তুতি। প্রথম পর্যায়ে গহীন অরণ্যের মাঝে যেখানে সুর্যের আলো প্রবেশ করতে পারেনা, চব্বিশ ঘণ্টা আগুনের লেলিহান শিখা, ধোয়ার কুণ্ডলী, অভিজ্ঞ তান্ত্রিক গনের ভরাট গলায় মৃত আত্মাদের সন্তুষ্টির জন্য মন্ত্রজপ, উদ্দামতায় চলে শামান-ড্রামের বাদ্য। নিকশ কালো আঁধারের ভৌতিক আলোয় যখন সবার চোখ রক্তবর্ণ এবং অবস্থান বিস্মৃত হয়ে যান সবাই, তখনই এই পর্যায়ের সমাপ্তি হয়। আমার দেহ তখন তৈরী পরবর্তী ধাপের জন্য।
এখন আমি সম্পূর্ণ ঘোরের মাঝে।হেটে যাচ্ছি পায়ের পাতায় কোন কিছুর স্পর্শ পাচ্ছি না। নির্দিষ্ট কক্ষে প্রবেশ করেই আমাকে খেতে দেয়া হয় চার বছর বয়েসের মানব শিশুর দুটো রক্তাক্ত চোখ এবং কলিজা। চার বছরের শিশুর চোখ সব কিছুর উত্তর খোঁজে, পরলোকে আমাকে বিশেষ কিছু উত্তর খুঁজতে হবে বলে এই ভক্ষণ। অন্ধকার কক্ষের সবকিছু এখন দৃশ্যমান আমার কাছে। বেশ বড় ২৫ টি পাথরের প্রতিটির উপরে রাখা দুইটি করে, পঞ্চাশটি কচ্ছপের খোল, আছে কয়েকটি গরুর লেজ এবং ছয়টি মানুষের পা! চারিদিকের ওয়ালে গরু, ছাগল, হায়েনা, শিয়াল এর মাথার কংকাল ঝুলানো। কিছু আছে তাজা, রক্ত ঝরছে মেঝেতে। কক্ষের এক কোনায় স্তূপ করে রাখা যাছে দশটি কুকুরের পা, কলিজা, মাথা, নাড়িভুড়ি, সকাল বিকেল নাস্তার জন্য ৩৮ টি জবাই করা ইঁদুর,আমার এ সময়ের খাদ্য এসব। এই কক্ষই আমার ১৯ দিনের আবাস। একাকি নিঃসঙ্গ রক্তাত্ত মেঝেতেই আমার শয্যা। চোখ খোলা রেখে বা নিদ্রার মাঝে দেখতে থাকি একটি মানুষের কংকাল, সামনে যার একটি প্রদীপ, যিনি আমার আত্মার পাহারাদার।
কিছুক্ষণ পূর্বে আমি আমার দেহকে রেখে পারলৌকিক জগতে চলে এসেছি। আমার দেহ পরে রয়েছে এখানে। আমি আমার দেহে ফিরে না আসা পর্যন্ত তান্ত্রিকগণ আমার দেহকে ঘিরে মন্ত্রোচ্চারণ করতে থাকবেন। এক মুহূর্ত মন্ত্রোচ্চারণ বন্ধ হলেই আমি আর আমার দেহে ফিরে আসতে পারবো না। কোন অশুভ আত্মা আমার দেহে প্রবেশ করে যাবে।
সমস্ত বছরের উত্তরহীন উত্তরের খোঁজে পারলৌকিক জগতে আমাকে যেতে হয়। উত্তর নিয়ে ফিরে আসি আবার। মানুষের মাঝে বেঁচে থাকা এক শামান আমি। চেনা পরিচিতজনের মাঝে অশুভ আত্মার আছর হলে সারিয়ে তুলি।প্রায়ই আমি ঘোরের মধ্যে থাকি, একারণে অদেখা বিষয়ও দেখতে পাই, ভবিষ্যত দেখি। স্বপ্ন দেখাই।
** শামান শব্দের দুটি অর্থ
১) যে জানে ( তান্ত্রিকরা জানে সব )
২) …………… এই অর্থটি প্রকাশ্যে বলা যাবেনা।
অঃকঃ আজ ভাদ্র মাসের অমাবস্যা।রাতদের মাঝে সবচেয়ে কালো রাত। তান্ত্রিকদের রাত।
প্রথম পর্বঃ ফিরে যাই শিকড়ের কাছে – সেই হাজার বছর আগের আমাদের পূর্ব পুরুষদের কাছে
দ্বিতীয় পর্বঃ শিকড় – ২
=====================
আমি আমি না, আমি সে ও না-পর্ব ২
৫৭টি মন্তব্য
কৃন্তনিকা
ভয়াবহ…
চার বছর বয়েসের মানব শিশুর দুটো রক্তাক্ত চোখ এবং কলিজা !!!
ছয়টি মানুষের পা !!!
জিসান শা ইকরাম
আপনি ডাক্তার,
ডাক্তারের কাছে এসব কিছুই না।
অনিকেত নন্দিনী
আমিও কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছি। উত্তর এনে দেয়া যাবে? ;?
জিসান শা ইকরাম
কেন নয়?
আজকের রাত যে কেবল তান্ত্রিকের রাত।
অরুনি মায়া
এগুলো কি সত্যি 😮
না মানে মানুষের দেহ ছেড়ে আত্মার বেরিয়ে যাওয়া কি সম্ভব?
জিসান শা ইকরাম
প্রাচীন কাল হতে এই বিশ্বাসটি চলে এসেছে
কিছু মানুষ এই সাধনা করেন।
অরুনি মায়া
তা জানি। প্রেত সাধনার কথা শুনেছি। কিন্তু এগুলো কতটুকু কার্যকর তা খুব জানতে ইচ্ছে করে,,,
জিসান শা ইকরাম
কি জানি!
তবে এসব আমাদের আদি ঐতিহ্যের অংশ।
অরুনি মায়া
কিছু তো একটা হয় ই। এক কাজ করা যায় আপনি প্রেত সাধনা শুরু করেন আমি আপনার শিষ্য হই আমারেআমারে পরলোকে পাঠায় দেন আমি দেখে আসি ওখানে কি কি হয়,,
জিসান শা ইকরাম
তাহলে ভুত প্রেতের আস্তানা হয়ে যাবে সোনেলা।
অরুনি মায়া
আমি কিন্তু অশরীরীরর উপস্থিতি খুব ভাল বুঝতে পারি।
প্ল্যানচেট টা বাবা করতে পারে। কিন্তু আমাকে সেখাল না 🙁
অরুনি মায়া
আমার খুব ইচ্ছে আছে ওই জগতের সাথে একটা যোগাযোগ স্থাপন করার।
জিসান শা ইকরাম
প্ল্যানচেট আপনার বাবা করতে পারেন?
হয়ত আপনার জন্য এটি শুভ হবে না একারণে আপনাকে শিখাচ্ছেন না।
অরুনি মায়া
লাভ ক্ষতি বুঝিনা। শুধু জানি শিক্ষা গ্রহণ থেকে কাওকে বঞ্চিত রাখতে নেই 🙁
সীমান্ত উন্মাদ
মামা আমার এইসব গল্প দারুন লাগে, আগুন এর চারপাশের ছবিটা দেখে কলেজে পড়ার সময়কার একটা কথা মনে পড়লো, আমরা প্লেনচ্যাট নিয়ে একটা গল্পের পড়ে এইভাবে বসে শীতের গভীর রাতে প্ল্যানচ্যাট করার ট্রাই করেছিলাম, কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তবে ভয় ভয় একটা ভাব বেশ ভালই লেগেছিল।
আপনার গল্পটা কিন্তু দারুন হইছে। এই রকম গল্প বেশি বেশি দেন মামা, গভীর রাতে এইগুলা পড়ার মজাই আলাদা।
অনেক অনেক শুভকামনা নিরন্তর জানিবেন।
জিসান শা ইকরাম
প্ল্যানচ্যাট আমাকেও খুব টানতো এক সময়।
এসব বিষয়ে আমারো আগ্রহ প্রবল।
নীলাঞ্জনা নীলা
নানা প্রথম জানলাম ভাদ্র মাসের অমাবস্যা পালন। কি জানি হয়তো করা হতো বাসায়। মনে পড়ে না। কারণ রুটি আমার খুব প্রিয়, তাই সব্জী-রুটি প্রচুর খেতাম। তবে খাওয়া নিয়ে এতো জ্বালাতাম, রাতে বোধ হয় হাতেগোণা দিন যে আমি খেয়েছি।
আর তান্ত্রিক সে যে কতো দেখেছি। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে কম দুলিনি।
তুমি দেখি বেশী ভালো লেখা শুরু করেছো!!! ঘটনা কি? ;?
আমি তান্ত্রিক একটা ফুঃ দিলাম, পঁচা লেখা আসুক। :p 😀
জিসান শা ইকরাম
বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে আমিও
তবে কিছু একটা আছে,নইলে হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ এর পিছনে ছুটত না।
আউল ফাউল লেখা লেখার দিকে মন গেছে, আউল ফাউল লেখার মানে ভালো হয়েছে জেনে খুশী আমি।
তোমার তান্ত্রিক ফু কাজে লাগুক।
নীলাঞ্জনা নীলা
বলো কি!
আউল ফাউল লেখা ভালো হয় নাকি!
নানা আবারও ফুউউউউউউউউউউউউউউউউউউঃ দিলাম। এইবার লম্বা ফুঃ :p
জিসান শা ইকরাম
আউল ফাউল মানে হচ্ছে খারাপ,
খারাপ লেখাদের মাঝে সেরা হচ্ছে -আউল ফাউল এর মধ্যে সেরা–
আচ্ছা তাহলে আউল ফাউলের সেরা হবে এবারের ফুতে।
শুন্য শুন্যালয়
ভূতের গল্পের জন্য আলাদা বিভাগ চাই। এইভাবে অনুভুতির গল্প পড়তে এসে বুকে থুথু দিতে পারবোনা। কি সাংঘাতিক !!
জিসান শা ইকরাম
আলাদা বিভাগ হলে ভালোই হয়
একান্ত অনুভূতি অবশ্য আমার জন্য ঠিকাছে।
শুন্য শুন্যালয়
হুম, আপনিও সাংঘাতিক।
জিসান শা ইকরাম
আমি এক সময় এসবের চর্চা করেছি 🙂
মেহেরী তাজ
আমি শুন্য আপুর সাথে একমত…
ভয় দেখানো হচ্ছে না?? :@
জিসান শা ইকরাম
ভয়ের কিছু নেই তাজ 🙂
ইমন
হে মাবুদ আপনি রক্ষা করেন আমায় ;(
জিসান শা ইকরাম
আমীন 😀
ছাইরাছ হেলাল
অবশেষ ব্লগ একজন তান্ত্রিক পেল।
জিসান শা ইকরাম
আপনি যে তান্ত্রিকের সেরা হতে পারেন,তা আমরা জানি।
অরুণিমা
ভয়ংকর সব বর্ননা।শিশুর চোখ,ইদুর,কচ্ছপের খোল,পশুর মুণ্ড।দা আপনিও এসব বিশ্বাস করেন?
জিসান শা ইকরাম
বর্ননা যা দিতে চেয়েছিলাম,তা পারিনি।
বিশ্বাস করিনা,তবে এসবকে আমাদের ঐতিহ্য ভাবি।
মরুভূমির জলদস্যু
ধুর মিয়া রাত্রে একা একা এখন ঘুমাই -:-
দিলেন তো ভয় পাওয়ায়ে।
জিসান শা ইকরাম
লাইট জ্বালিয়ে ঘুমান 🙂
মেহেরী তাজ
যেভাবে লিখছেন তাতে আপনার উদ্দেশ্য যে ভয় দেখানো সে বুঝতে পারছি। আবার বলে ভয়ের কিছু নাই।।।।।। 🙁
জিসান শা ইকরাম
তুমি নিজেও তো ভুতের ভয় দেখাও রুমমেটদের 🙂
মেহেরী তাজ
এই রে কট খেয়ে গেলাম। ;?
জিসান শা ইকরাম
হেটে আসার সময় পা দেখেছে কিনা জিজ্ঞেস করায় মেয়ে গেলো অজ্ঞান হয়ে 🙂
মেহেরী তাজ
হাহাহাহাহা মনে আছে আপনার??? :D)
লীলাবতী
আপনারে সন্দেহ করছি।আমি আমি না, এরপর আবার এমন লেখা,আপনি কোন মৃত আত্মা ননতো?
জিসান শা ইকরাম
বলা যাবেনা।হতেও পারি।
মোঃ মজিবর রহমান
এত সাংঘাতিক! এত ভক্ষণ সম্ভব ! না আমার দ্বারা হবে না।
সব আপনার কারসাজি নাত !
ডর দেখান হচ্ছে নাত।
পরয়া করিনা। চালায়ে যান আপনি।
জিসান শা ইকরাম
লেখার মাল মশলা এসব, আর কিছু না।
মোঃ মজিবর রহমান
হুম!
রিমি রুম্মান
আমি তো আসলেই ভয় পাইসি। 😮
জিসান শা ইকরাম
তান্ত্রিক হতে সাবধান 😀
সঞ্জয় কুমার
মামা প্লানচেট শিখতে চাই । কোন অজুহাত নয় , শেখাতেই হবে
জিসান শা ইকরাম
প্লানচেট এ একসময় আগ্রহ ছিল
সময়ে আগ্রহ চলে গিয়েছে
কিছু নেই এখন আর।
ব্লগার সজীব
তান্ত্রিক ভাইয়া আমার ভবিষ্যত জানতে চাই।পোকা মাকড় খাবার অভিজ্ঞতা আছে আপনার জানতাম।কিন্তু ইঁদুর! ইয়াক
জিসান শা ইকরাম
আপনার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।
খুব দ্রুত আপনি শীর্ষ মন্তব্যকারীর স্থান দখল করিবেন,
আর দ্রুতসময়ে সময়ে সেঞ্চুরি পোষ্ট দিবেন।
ডিসকভারি চ্যানেল দেইখ্যেন,ইদুরের পুষ্টি মান খুব বেশী 🙂
আবু খায়ের আনিছ
ভাই, আমার খুব ইচ্ছা এই সব বিষয়ের সম্মুখিন হওয়ার। কত আমাবস্যার অন্ধকারে কত শশ্মান, করবস্থান ঘুরে বেড়িয়েছি দুভার্গ্য বশত কিছুই আমার চোখে পড়েনি।
তবে আমার আপন মামা এই সব তন্ত্র মন্ত্র করত,এখন প্রবাসে আছে। উনার মুখে অনেক গল্প শুনেছি ছোট বেলায়। বড় হয়েও শুনেছি উনি কিভাবে এই সব করেন,কোথা থেকে শুরু করেছিলেন ইত্যাদি। উনার গুরুর কথাও শুনেছি, বিশ্বাস অবিশ্বাসে যাইনি শুধু শুনেছি আর শিহরিত হয়েছি, কত ভয়ংকর সেই সব ঘটনা।
কিন্তু মামার উপর আমার কিঞ্চিৎ রাগ আছে, কারণ উনিই আমাকে বলেছিলেন তোর সামনে কোন দিন এই সব জ্বীন,শয়তান বা ভুত আসবে না বা আসলেও তুই দেখতে পাবিনা আর ক্ষতিও করতে পারবে না। নানার বংশে একমাত্র নাতি ছিলাম বিদায় অনেক বেশি আদর যন্ত্র পেয়েছি আর খেয়ালও রাখত সবাই অনেক। মায়ের মুখে শুনেছিলাম, মামা নাকি কি তাবিজ কবজ করেছিল আমার জন্য যদিও আমি এইগুলো কখনো ব্যবহার করি না। কিন্তু আমি গত তিন চার বছর ধরে ভূত দেখার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না। দেখার খুব ইচ্ছা আছে, সত্যিই যদি আপনি তন্ত্রের গুরু হন তাহলে অরুনি মায়া আপুর মত আমিও আপনার শিষ্য হতে চাই।
জিসান শা ইকরাম
এটি নিয়ে আমি কিছুটা সংশয়ে আছি
কিছু একটা আছে মনে হয়
প্রাচীন কাল হতে চলে আসছে , কিছু মানুষ এ বিশ্বাস হতে নড়ছে না।
উন্নত দেশ ফিনল্যান্ড,সেখানেও এই চর্চা আছে।
আবু খায়ের আনিছ
কুসংস্কার বলেই জেনে আসছি, তারপরেও কারো বিশ্বাসে আঘাত দিতে চাই না। মামা এগুলো করত, আমার বোন,খালা খুব উপভোগ করত। মামার এক ছেলে হয়েছে বছর দুয়েক হল, দুই দিন ভালো থাকলে সাতদিন অসুস্থ থাকে। ডাক্তার দেখাতে বলি দেখায় না, জোর করে দুয়েকবার নিয়ে গিয়েছিলাম আমি তাও লুকিয়ে। এখন কি করে জানিনা, তবে নানা বাড়ির সবাই এই বিশ্বাসে অন্ধবিশ্বাসী। কিছু কাযক্রম বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলাচলে দোলায় মনকে। তারপরেও বিশ্বাস করি নি, কুসংস্কার হিসাবেই মেনে এসেছি।
জিসান শা ইকরাম
কুসংস্কার হিসাবেই মেনে নেয়া উচিৎ
বিজ্ঞান একে সাপোর্ট করে না।
আবু খায়ের আনিছ
(y) (y)
নুসরাত মৌরিন
ভয় পাইছি!!?
ব্যাপারটা সত্যি নাকি?
ওমা… বিশ্বাস হচ্ছে না। এত রোমহর্ষক!!
জিসান শা ইকরাম
এসব কি সত্যি হয়?
ভয়ের কিছু নেই।