গোধূলি সন্ধ্যা আর রাতটা যেন খুবই তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়। ভোরের আভাস ফুটে উঠলেই বেরিয়ে পরতে হবে ওদের। মোট সাত জন ওরা। সবার বয়সই প্রায় একই, দশ থেকে বারোর মধ্যে। সবাইকে ডাক দিয়ে ঘুম ভাঙ্গায় মাসুম। তরু উঠে দেখে সবাই উঠে পড়েছে, শুধু মতি এখনও হা করে ঘুমাছে। আর ওর ফোলা পেট উঠা নামা করছে, দিনে গড়ে একবেলা খেয়ে মানুষ যে এতো মোটা হতে পারে তা মতিকে না দেখে বিশ্বাস করা কঠিন। সবাই মিলে মতিকে …জাগানোর চেষ্টা করছে। দলের মধ্যে সব থেকে চুপ চাপ আর পরিশ্রমী – মাসুম। তরু মনে করার চেষ্টা করে শেষ কবে মাসুমকে ঘুমাতে দেখেছে। ছেলেটা ঘুমায় না মনে হয়। রাতে যখন তরু ঘুমিয়েছে তখন ও জেগে ছিল আর ভোঁরে ওর ডাকেই ঘুম ভেঙেছে। আজব ছেলে একটা কখনই ওকে ক্লান্ত হতে দেখা যায় না। খাবারের ভাগ কম হলেও কিছুই বলে না। যেটুকু পায় তায় খায়। ঘুমাস না কেন জিজ্ঞেস করলে বলে, ঘুম ধরে না তাই ঘুমাই না। ঘুম না হওয়া বড়োলোকদের রোগ গরিবের এই রোগ হয় না, মাসুম কিভাবে বাধিয়েছে কে জানে।
আজ ওদের অনেক দূর যেতে হবে সেই বিশাল শাপলা ফুলটার পাশে থাকতে বলেছে রাশেদ ভাই। সবাই তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে পড়লো। আজ মাত্র একটা বস্তা নিয়েছে সেটা মাসুমের কাছে। রেলের ভাঙ্গা বগিটা থেকে বের হয়ে তারা হ্যাঁটা শুরু করল। পথে যা পাচ্ছে কুড়িয়ে বস্তায় রাখছে। রাশেদ ভাই বলেছে আজ অনেক বড় মিছিল হবে। ওরা এর আগেও কয়েকটা মছিলে গিয়েছে। অনেক মজা লাগে মিছিলে। আর মারামারি শুরু হলে আরও বেশি মজা। আর টিভিতেও দেখায় সেটা। ওরা রাশেদ ভাইকে একবার দেখেছিল পাড়ার দোকানে বসে। তারপর থেকে সবার ইচ্ছা একবার হলেও টিভির মধ্যে যাবে। আর মিছিলে গেলে টাকা পাওয়া যায় খেতেও দেয় মাঝে মাঝে। আজ নাকি বেশি টাকা দেবে আর খেতেও দিবে একবার।
পথে যা কুড়িয়ে পেয়েছে বিক্রি করে বার টাকা হয়েছে টাকাটা তরুর পকেটে।
রাশেদ ভাইয়ের অপেক্ষায় দাড়িয়ে আছে ওরা। রাশেদ ভাইও নাকি আগে ওদের মত টোকায় ছিল। তবে এখন তার মেলা টাকা। রাশেদ ভাই যে কি করে আর কেউ না জানলেও তরু জানে। তরুর বস্তায় করে মেলা বার ডাইলের বোতল পাঠিয়েছে অনেকের কাছে। রাশেদ ভাই এসে সবাই কে চা বিস্কুট খাওয়াল। সবাইকে নিয়ে আরেক যায়গায় গেল সেখানে মেলা মানুষ। সবাই মিলে মিছিলে মিছিল করতে করতে যাচ্ছে। কার যেন ফাঁশি হবে সেটা বন্ধ করার মিছিল। হটাত করে বোমা ফুটলও চার পাঁচটা আর তারপর শুরু হল পুলিশের সাথে ইট মারামারি খেলা। আরও পুলিশ আসলো। আবার ইট মারামারি হল। পুলিশে ইট মারা বন্ধ করে গুলী মারা শুরু করল। তখন তারা যে যার মত পালাল। বেশির ভাগ মিছিলেই এমন হয় তাই আগে থেকেই রাশেদ ভাই একটা জায়গা ঠিক করে দেয়। সবাই সেখানেই এক সাথে হয়। একে একে সবাই আসলো, মতি আসলো সবার পরে খোঁড়াতে খোঁড়াতে। ওর পা দিয়ে রক্ত পড়ছিল ইট লাগছে তাই। শুধু মাসুম এখনও আসেনি। চল্লিশ টাকা করে দেওয়ার কথা থাকেও রাশেদ ভাই সবাইকে একশো টাকা করে দিল আর মতিকে আরও পঞ্চাশ টাকা। আর সবাই কে নিষেধ করে দিল কারো কাছে যেন না বলে আজ কি হইছে। কার কাছে কি কইবো টাকা পেয়েই সবাই খুশি। সবাই মিলে পাশে হোটেলে গেল পেট পুরে খাবে আগে।
সবাই মজা করে খাচ্ছে আর হোটেলের টিভি দেখছে। মিছিলের খবর দেখাচ্ছে ওরা সবাই মনোযোগ দিয়ে দেখছে যদি ওদের কাউকে দেখায় সেই আশায়। দলের সব চেয়ে পিচ্চি তপন চিৎকার করে উঠে ‘ আরে ওই দেক আমাগ মাসুম না ওইডা !! মাসুমইতো ঘুমাইতাচে। মাসুমরে দেকাইতাচে টিবিতে। তয় ও রক্তের মদ্দে ঘুমাইতাচে ক্যান?? ’ …
তরু তাকিয়ে দেখে মাসুম রাস্তায় কাত হয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে ঠিক যেন ঘুমাচ্ছে… একটু নড়েচড়ে বসলো তরু ঘুমন্ত মাসুমকে আগে কখনও দেখেনি সে তাই শেষ বারের মত একটু ভাল করে দেখে নেওয়ার চেষ্টা করে …
১৬টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
এমন ‘মাসুম’রাও আপনার ভাবনায় আছে দেখে ভাল লাগল ।
স্বাগতম আপনি এখানে ।
সুখী মানুষ
মাসুমেরা আমার ভাবনায় সব সময় থাকবে ভাই…।। ধন্যবাদ
মিসু
বাস্তবতার উপরে লেখা গল্প । মন খারাপ হয়ে গেলো ।
সুখী মানুষ
🙁 মন খারাপ থেকেই লেখা তাই ছায়াটা থেকে গেছে ……
সুখী মানুষ
মাসুমেরা আমার ভাবনায় সব সময় থাকবে ভাই… ধন্যবাদ
মর্তুজা হাসান সৈকত
ভালো লাগা রেখে গেলাম লেখায় ।
সুখী মানুষ
হুম দেখতেই পাচ্ছি ।। 🙁 ধন্যবাদ
বনলতা সেন
প্রচণ্ড বাস্তবতা নিয়ে লিখলেন ।
সুখী মানুষ
চষ্টা করি ।।
জিসান শা ইকরাম
স্বাগতম সোনেলায় —-
এমনই হয় বর্তমানে , কেউ জানে না , কিসের জন্য তাঁকে চলে যেতে হয়
মাসুমদের এমন স্বপ্ন দেখানোর মানুষ আজকাল ক্রিয়াশীল খুব
এ থেকে মুক্তি পাবো কিভাবে জানিনা
ভালো লিখেছেন ।
সুখী মানুষ
মানুষের সচেতনতা হলেই হবে ভাই দেরিতে হলেও হবে …
সোহেল মাহামুদ(অতি ক্ষুদ্র একজন)
হুমমম… গল্পের বুনট বেশ ভাল। চালিয়ে যান। আগামীতে চমক চাই…।
সুখী মানুষ
পাবেন আশা করি ।। সাথে থাকবেন আশা করি :=
শিশির কনা
এমনি করেই সমাজটা নষ্ট করে দিচ্ছে নেতারা । অক্ষমতায় কষ্ট লাগে ।
ভালো লেগেছে লেখা ।
সুখী মানুষ
ধন্যবাদ
কৃন্তনিকা
অনেক কষ্ট দিলেন, ভাই। ভীষণরকমের মন খারাপ করা লেখা … 🙁
লেখাটা ভালো তাতে কোন সন্দেহ নেই, নাড়াতে পেরেছেন আবেগকে…