বিকেল পাঁচটা বাজছে। মাত্র কাজ শেষ করলাম, বাসের অপেক্ষায়। ক্লান্তি ঢেলে দেয়ার একটাই জায়গা আদুরে ঘর। আচ্ছা ঘর কি আসলেই আদুরে হয়? পুরুষের কথা আলাদা। ওরা আজন্ম আদর পেয়েই যায়। মায়ের-বোনের-স্ত্রী-কন্যার আদর। মেয়েদের ভাগ্য অতোটা ভালো না।
থাক ঘর। শুধু জানি সমস্ত দিনের শ্রান্তি আগলে নেয় আমার পরিপাটি শয্যা। একসময় এমন ছিল আমার কক্ষে ঢোকার, আমার বিছানায় বসার অনুমতি সকলে পেতোনা। মামনি বলতো হোয়াইট হাউসের প্রেসিডেন্টের কক্ষ। এখন ভাবলেই হাসি পায়। আমার মেঝো মাসী আমার বিছানা পাতানো খুব পছন্দ করতো।
আর ভালোবাসতো আমার হাতের চা। বাড়িয়ে বলছি না ওটা ভালোই পারি।
কিসব হচ্ছে এসব! বাসের অপেক্ষায় দাঁড়ানো, প্রতিদিনই এখানে আসি, আর এসেই বাস পেয়ে যাই। আজ বোধ হয় একটা দৃশ্য দেখানোর জন্য বাসটা আমার আগেই চলে গেলো। ঠিক চোখের সামনে চার্চ। ক্রুশবিদ্ধ যিশু দু’হাত প্রসারিত করে যেনো বলছে হত্যা করে কি কোনো শান্তি পাওয়া যায়? বরং আরোও তীব্র হয় হিংসা-বিদ্বেষ। আমি যিশুর কাছে দাঁড়ালে যেনো শান্তি খুঁজে পাই। আর ভাবি মানুষ কেন হত্যা করে মানুষকে? কিছু কি পায়? না পেলেই কেন ছিনিয়ে নেয়ার প্রবণতা? কেনইবা ধর্মের নামে এতো হানাহানি? আচ্ছা কেউ যদি গালিও দেয়, আল্লাহ – ভগবান – ঈশ্বর – যিশু – বুদ্ধ কারো কি কোনো কিছু যায় আসে? আমি তো ঈশ্বরকে রোজ যা নয় তাই বলি। কাকে বলবো মনের কথা তাকে ছাড়া?
বেশ ঠান্ডা পড়েছে। অবশ্য এটা কানাডা, তাও এই জানুয়ারি যে স্নো ছাড়া গেলো। এটা কি যে ভাগ্যের! তবে ফেব্রুয়ারিকে ভরিয়ে দিয়েছে তুষার। আবার এবারকার বড়দিন গেলো স্নো ছাড়া। ওদিকে দেশ কাঁপছে শীতে।
বিরক্তিকর কথা, তাই না? আসলেই তাই। তাও না বলে যে পারিনা। এসবই কিভাবে কিভাবে জানি পেরে যাচ্ছি। ভাবতেই অবাক লাগে, এ কোন আমি! এ পথ থেকে অন্য পথে দৌঁড়ের উপর প্রতিটি দিন যায়। বাসায় যখন ফিরি মেঝের উপর পা ছড়িয়ে বসি, ওটাকেই বুঝি বলে স্বস্তি। আমি জানি এসব বড়ো একঘেঁয়ে কথা। কিন্তু এটাকেই নতূন করে সাজাই। তাই আমার কাছে দু:খটা এতো সস্তা।
এতো কথা বলা হয়ে গেলো, গানের কথা কিছু তো বলি। গান বাজছে আইপডে।
“কখনো সময় আসে,
জীবন মুচকি হাসে
ঠিক যেনো পড়ে পাওয়া চৌদ্দ আনা
অনেক দিনের পর মিলে যাবে অবসর
আশা রাখিতে যাবো বাকী দু’আনা।”
গানটির অডিও লিংক
অনেক প্রিয় এই গানটা আমার। আর এই আশা আছে বলেই হয়তো পেয়ে যাই অনেক কিছু। হারাইও অনেক কিছু। তারপরেও একই কথাই বলার কি আর প্রয়োজন আছে? শুধু জানি মনটা ভালো নেই, আগেই বলেছি আমার মন খারাপ বড়ো সস্তা টাইপের। তাই একটু হাসি তৈরী করে নিতে পারলেই সব ঠিক। এটুকু জানি লিখতে লিখতেই হেসে উঠবে মন, জেগে উঠবে মন। নিজেকে বিভিন্ন ভাবে ভেঙ্গে যাচ্ছি। হিন্দীতে কবিতা লেখার চেষ্টা করলাম। পাগলামী না করলে ভালো রাখবো কি করে নিজেকে? যদি নিজেকে ভালো না রাখতে পারি, কাউকেই তো ভালো রাখতে পারবোনা। কি সত্যি বললাম?
প্যায়ার বহুত মেহেঙ্গা চিজ হ্যায়
ইতনি সি ভি প্যায়ার কিসিকো দেনে কে লিয়ে
বহুত বড়িয়া দিল চাহিয়ে
যো কিসিকে পাস হি নেহি
অউর যিসকে পাস ইয়ে দিল হোতি হ্যায়,
উসকো প্যায়ার নেহি মিলতে কাভি।
দিল তোড়কে ফিরসে জুড়া দো
দিল, দিল হি রেহেতা হ্যায়
ইনসানিয়াত হ্যায় যিসমে,
উনকো হি ইনসান কেহেতে হ্যায়।
প্যায়ার কিয়া নেহি যাতা
হো যাতা হ্যায়
ইয়ে বাত তুমকো-সবকো পাতা হ্যায়।
দিল কো মালুম হ্যায়
তুম মেরি নেহি হো
তব ভি দিল ইয়ে চাহে প্যায়ার তুমহারা
দিল কো যিতনা ভি সামাহলাতা হু
শুনতা নেহি হামারা।
আভি কেহেদো ক্যায়া করু,
কিধার যায়ু
কিসকো বলু
রোনা ভি নেহি আতে
দিল যব টুট যাতা হ্যায়,
ইনসানিয়াত ভি ইয়াদ নেহি আতে।
(অনেকের অনুরোধে বাংলা করে দিলাম)
************
ভালোবাসা অনেক দামী অনুভূতি
অনেক বড়ো হৃদয় চাই শুধু একটুকু ভালোবাসা দেয়ার জন্যে।
যা কারুর কাছেই নেই
আর যার কাছে এমন হৃদয় আছে
সে কখনোই ভালোবাসা পায়না।
হৃদয় টুকরো টুকরো করে আবার জোড়া লাগাও,
তবুও হৃদয় হৃদয়ই থাকে।
মনুষ্যত্ব যার আছে,
তাকেই মানুষ বলে।
ভালোবাসা করা যায়না,
হয়ে যায়।
তুমি-আমি সকলেই সেটা জানি।
হৃদয় জানে তুমি আমার নও
তবুও এই হৃদয় তোমারই ভালোবাসা চায়
হৃদয়কে যতোই আগলে রাখতে চাই,
কিছুতেই শোনেনা কথা আমার।
এখন বলে দাও কি করি,
কোথায় যাই
কাকে বলি?
কান্নাও আসেনা
হৃদয় যখন ভেঙ্গে যায়
মনুষ্যত্বর কথাও মনে থাকে না।
হ্যামিল্টন, কানাডা
৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ইং।
দৃশ্য দেখি আর খন্ড খন্ড কথার মালা গাঁথি। সাথে সাথে ছবি তুলে রাখি।ছবি গুলো এখানে দেই একারনে যে এই ছবির সাথেই আমি ছিলাম্,ছিল আমার কথা। ছবি কি বাদ দিয়ে দেবো এরপরে?
৩৭টি মন্তব্য
নীলাঞ্জনা নীলা
অনেক রাত এখন।ভোরে দেখা হবে সবার সাথে।শুভ রাত্রি -{@
আবু জাকারিয়া
অনেক ভাললাগল।
নীলাঞ্জনা নীলা
ধন্যবাদ আপনাকে……… আবু জাকারিয়া
স্মৃতির নদীগুলো এলোমেলো...
সুন্দর লেখা। কিন্তু ভাষার মাসে অন্য ভাষা? তীব্র প্রতিবাদ জানাই আর উপযুক্ত বিচার দাবী করছি। নাহলে আন্দোলন…
আবু জাকারিয়া
আমিও পৃতিবাদ জানালাম।
নীলাঞ্জনা নীলা
পৃতিবাদ শব্দের অর্থ কি,বুঝলাম না………আবু জাকারিয়া
নীলাঞ্জনা নীলা
লেখার প্রশংসা করায় ধন্যবাদ আপনাকে………স্মৃতির নদীগুলো এলোমেলো… । শুধু ভাষার মাস নয় বারো মাসই আমি বাংলার মাঝে থাকি।শুধু ফেব্রুয়ারীতে( দুঃখিত ফাল্গুন বলিনি) নয়,বছরের যে কোনদিন শহীদ মিনারের বেদীতে উঠলে খালি পায়ে উঠি। হিন্দি কবিতা লিখেছি বাংলা অক্ষরে,ইচ্ছে করলেই হিন্দি অক্ষরে লিখতে পারতাম।
বিচার করার চেয়ে আন্দোলনই ভালো,ইচ্ছে মত পেট্রল দিয়ে পোড়াতেও পারবেন।সোনেলায় আপনি বিচার পাবেন না,এ নিশ্চয়তা দেয়া যায় 🙂
খেয়ালী মেয়ে
কাজ শেষে নিজের ঘরেই শান্তির দেখা মিলে–ছবির তোলার হাত অনেক ভাল সেটা বোঝাই যাচ্ছে (y)
সব ধর্মই শান্তির বাণী প্রচার করে, সবাই হত্যার বিপক্ষে, তারপরেও কেনো এতো হত্যা নৈরাজ্যে ছড়িয়ে আছে আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে?…
নীলাঞ্জনা নীলা
এরা মানুষ না,মানুষের মত দেখতে কিছু হিংস্র প্রাণী।ধন্যবাদ……খেয়ালী মেয়ে
ছাইরাছ হেলাল
গান একা শুনলে হবে না।
আপনি হিন্দিতে কবিতা লিখে ফেললেন!
অনুবাদ, সে আপনাকেই করে দিতে হবে। আপনার মন খারাপ থাকতেই পারে না।
নীলাঞ্জনা নীলা
কবির সুমন এর গান,লিংক দিয়ে দিচ্ছি।লিখেতো ফেললাম 🙂 অনুবাদ দিলে লেখা বড় হয়ে যায়,তাই দেইনি।ভালো আছি তো।ধন্যবাদ আপনাকে……ছাইরাছ হেলাল
নুসরাত মৌরিন
ওরে বাবা,হিন্দিতে এত বড় কবিতা লিখে ফেললেন!!
বাংলায় ই তো সব কিছু বেশি ভাল!! 🙂
তবে এলোমেলো কথাগুলো খুব ভাল লাগে।আশার কথা বলেন,আশা আছে বলেই এখনো আছি বেঁচে…।
নীলাঞ্জনা নীলা
লিখতে ইচ্ছে করলো তাই লিখলাম,জাপানী লিখলে বুঝতে পারবেন?তাহলে না হয় জাপানীতে দিতাম 🙂 বাংলায় ই তো সব কিছু বেশি ভাল!! 🙂 ধন্যবাদ……নুসরাত মৌরিন
জিসান শা ইকরাম
নারীরা শান্তি বিলায়,নিজের দিকে তাঁর তাকাবার সময় কোথায়?
হোয়াইট হাউসের প্রেসিডেন্টের কক্ষ এখন কেবলই স্মৃতি
যারা মানুষ হত্যা করে তারা আসলে আনন্দ পায়না,এরা সাইকো-সাইকোরা স্বাভাবিক মানুষ নয়।
দেশের বাইরে গেলে কেন জানি আমার একবার চার্চে যাওয়া হয়–
ফটো দুটো ভালো হয়েছে, ফটোর সাথে লেখা ভালোই লাগে।
হিন্দিতে কবিতা লিখে ফেলা তো চাট্টিখানি কথা নয়!!
বেশ কয়েকটি ভাষায় আপনার দখল আছে জানি
মাঝে মাঝে আমাদের সাথে একটু শেয়ার করবেন।
প্রবাসে ভালো থাকুন সারাক্ষন।
নীলাঞ্জনা নীলা
চার্চের মধ্যে উচু ছাদ আমাকে টানে।ভাষার দখল আছে ঠিক,তবে সাবধান হতে হবে এর ব্যবহারে।ইংরেজী ফেব্রুয়ারীর বাংলা কি হবে? 🙂 ভালো আছি এখন।
প্রহেলিকা
হিন্দিতে শায়রী, সাথে ছবি সব মিলিয়ে মুগ্ধ করে দিলেন। আপনার যে এতো গুন তা কিন্তু আগে বুঝতে পারিনি। বেশ ভালো লেগেছে। চমত্কার উপস্থাপনা।
নীলাঞ্জনা নীলা
অনেক অনেক ধন্যবাদ………প্রহেলিকা
মারজানা ফেরদৌস রুবা
শান্তির নীড়।
সারাদিন ক্লান্তি শেষে মানুষ ঘরে ফেরে। ক্লান্ত অবসন্ন মন নিয়ে ঘরে ফেরার আনন্দই অন্য রকম যদি সে ঘরে থাকে শান্তি।
নীলাঞ্জনা নীলা
ক্লান্ত অবসন্ন মন নিয়ে ঘরে ফেরার আনন্দই অন্য রকম যদি সে ঘরে থাকে শান্তি।ঠিক বলেছেন আপু।ধন্যবাদ আপনাকে……মারজানা ফেরদৌস রুবা
সীমান্ত উন্মাদ
আপনার কথার কুসুমে অনেক অনেক ভালোলাগা রেখে গেলাম। শুভকামনা নিরন্ত
নীলাঞ্জনা নীলা
ধন্যবাদ………… সীমান্ত
শিশির কনা
কত কিছু ভাবি আমরা।সে ভাবনাকে লেখায় প্রকাশ করতে পারিনা আমি।আপনার ভাবনা পড়ছি আর জানছি আপনাকে।আমাদের প্রিয় নীলাদিকে।
নীলাঞ্জনা নীলা
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ……… শিশির কনা।
স্বপ্ন নীলা
ওর বাবা !! অসাধারণ একটি লেখা। যেন যাদুর জালে জড়িয়ে পড়ছি লেখার মোহে— হিন্দিতো তেমন বুঝিই না—আপনি অসাধ্য সাধন করে ফেলেছেন আপু
অন্তর থেকে ভালবাসা পাঠিয়ে দিলাম আপনার জন্য
নীলাঞ্জনা নীলা
আপনার জন্যও ভালবাসা…… স্বপ্ন নীলা
ব্লগার সজীব
” ক্রুশবিদ্ধ যিশু দু’হাত প্রসারিত করে যেনো বলছে হত্যা করে কি কোনো শান্তি পাওয়া যায়? বরং আরোও তীব্র হয় হিংসা-বিদ্বেষ।”——— দেশের অবস্থা দেখে হতাশায় কাদি আপু।
নীলাঞ্জনা নীলা
দেশের এই হত্যা সন্ত্রাস আমার মন খারাপ করে দিয়েছে…… সজীব।
প্রজন্ম ৭১
এলোমেলো ভাবনা ভালো লাগলো।হিন্দি কবিতার বাংলা অর্থ চাই 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
বাংলা দিয়েছি……প্রজন্ম।
খসড়া
হৃদয়গ্রাহী ভ্রমন কাহিনী।
নীলাঞ্জনা নীলা
:p :p
স্বপ্ন
এলোমেলো কথা ভালো লেগেছে আপু।চার্চের ছবিটিতে কি জানি আছে,চোখ সরাতে পারছি না।
নীলাঞ্জনা নীলা
আমার কাছেও ভালো লাগে।ধন্যবাদ……… স্বপ্ন
শুন্য শুন্যালয়
ঠিক এমন একটি ছবি তুলে রেখেছি অনেকদিন হলো, কোন লেখায় দেব বলে রেখে দিয়েছি। আজ আপনার লেখায় দেখে খুব ভালো লাগলো। লেখায় ছবি দিলে অন্য মাত্রা পায়, লেখাটা যখন একান্ত অনুভূতি হয়। অবশ্যই বাদ যাবেনা ছবি দেয়া।
দুঃখটা যার কাছে সস্তা, নেকো নেকো কান্নাকাটিদের ভিড়ে তাকে আমার শ্রদ্ধা।
কবিতা, লেখা, ছবি; নীলা আপুকে পাঁচতারকা।
নীলাঞ্জনা নীলা
এত প্রশংসা আমার প্রাপ্য কিনা বুঝতে পারছি না শুন্য শুন্যালয়।ছবি দিয়েছেন দেখলাম।কত ভাল লেখেন আপনি -{@
ব্লগার সজীব
লেখাটি আবার পড়লাম,এবার আরো বেশি ভাল লাগলো।
নীলাঞ্জনা নীলা
শুন্য শুন্যালয় টেনে এনেছেন আপনাকে বুঝতে পেরেছি 🙂