আমি মোটামুটি টাইপ স্টুডেন্ট। স্কুল বা কলেজ লাইফে আমি কোন সময় খুব ভালো স্টুডেন্ট হইতে পারি নি। আবার ফাইনাল পরীক্ষায় কোন দিন ফেল করার রেকর্ড ও নাই। আমার লাইফে ফেল বলতে ক্লাস এইট এ থাকতে একবার ইংরেজি ক্লাসটেস্ট পরীক্ষাতে ২০ এর মধ্যে ০০ পাইছিলাম। সে দিন লজ্জায় আমার মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছা করে ছিলো। সে দিন খাতাটা বল বানায়া স্কুলের ছাদে ফেলে দিয়েছিলাম। আর ভয়ে বাসায় রেজাল্ট ও বলতে পারি নি। তারপর বেশকিছু দিন আর ফেল নামক শব্দটা আমার নিজের জন্য শুনি নি।
এর প্রায় ৪ বছর পরে ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে এসে একবার কেমিস্ট্রিতে সতেরো পেয়েছিলাম। যেখানে উনিশে পাস। এটা ইয়ার চেঞ্জ ছিলো।
বড় হওয়ার সাথে সাথে হয়তো লজ্জা নামক অনুভুতি টা কমতে থাকে। আগে অমুক বা তমুক ফেল করেছে শুনলে নিজের খারাপ লাগতো। এখন আর লাগে না।
সে যাক। ক্লাস এইটে থাকতে ক্লাসটেস্ট এ ফেল করার জন্য যতটা মন খারাপ হয়েছিলো তার ০.০৫% মন ও খারাপ হলোনা ইন্টারমিডিয়েট ইয়ারচেঞ্জে ফেল করে। তার অবশ্য আর একটা কারন ছিলো আর তা হলো অনেকেই কয়েক টা সাবজেক্ট এ ফেল করেছে আমি তো মাত্র একটাতে তাও আবার মাত্র দুই মার্ক্স এর জন্য।
বাড়ি গিয়ে দাঁত কেলায়া কেমিস্ট্রি বাদ রেখে অন্য সাবজেক্টস গুলার রেজাল্ট বলছিলাম। ভাবছিলাম দাঁত দেখায়ে পার পেয়ে যাবো। কিন্তু আব্বু আমার ত্রিশপাটি (তখন আরো দুই পাটি দাঁত উঠা বাকী ছিলো।) দাঁত দেখেই কলেজ থেকে নিজে গিয়া রেজাল্টশিট তুলে আনছিলেন। কেমন করে যেন সে যাত্রায় ঝাড়ু পেটা থেকে বেচে গিয়েছিলাম তা এতো দিন পরে আর ঠিক মনে পরে না।
তারপর আবার প্রায় চার বছর ফেল নামক শব্দটা আসে নি। আসলে বলা যেতে পারে আমি আসতে দেইনি। ফেল করতে পারি মনে হলে আমি সেই এক্সামই দেইনি :p আবার অনার্স লাইফে এসে কেমন করে যেন মোটামুটির বর্ডার লাইন ক্রস করে এক ধাপ উপরে উঠে গেলাম। সবাই আমার উপরে ভরসা করে। অন্তত ফেল করবো না।
বড় আপু ভাইয়ারা সব বলে অনার্স লাইফে না কি ফেল করতেই হয়। ফেল না করলে না কি আমি অনার্স এর স্টুডেন্ট তা প্রমাণ হয় না। আমি অনার্স পড়ি তা আমায় প্রমান করতে হবে। আবার ফাইনাল পরীক্ষাতে ফেল করার সাহস আমার নাই। তাইলে কেমনে কি?!
বেপার নয় আবার প্রায় চার বছর পর আজকের পরীক্ষাটা (ইনকোরস) ভালো হয় নি। ফেল করলে ও করতে পারি।
তবে মাঝে মাঝে খুব মনে হয় কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্ট এর টিচার্সরা এতো খাচ্চোর কেন? এরা যেমন বিনা নোটিশে উইত আউট লেকচার উইত আউট সাজেশন উইত আউট সলিউশন আমাদের এক্সাম নিয়ে জ্বালায় কেন?????
আমরা হলাম গিয়া প্রাণী মানে প্রাণিবিদ্যার স্টুডেন্ট । কেমিস্ট্রিতে তো আমরা একটু কাঁচাই হবো তাই না?? আমরা পড়ি বিভিন্ন প্রাণীর প্রজনন, গুরুত্ব, বাসস্থান, আচরন,দেহগঠন, হাড্ডির সংখা,হাড্ডির অবস্থান, রোগবালাই ইত্যাদি। এখন যদি আমাদেরকে কেউ প্রশ্ন করে [Co(NH3)6]Cl3 এটার নাম কি তাইলে কেনমে হপে…? আমাদের পাকার সময় তো লাগবে না কি?!
বি:দ্র : চার বছর মনে হয় আমার বর্ডার লাইন।
৩০টি মন্তব্য
খেয়ালী মেয়ে
ফেল বৃত্তান্ত ভালোই 🙂
মেহেরী তাজ
ফেল আবার ভালো হয় নাকি ? :p ধন্যবাদ পরী আপু।
খেয়ালী মেয়ে
আপনার ফেল বৃত্তান্ত তো আমার কাছে ভালোই লাগলো :p
ছাইরাছ হেলাল
বৃত্তান্ত দারুণ বলতেই হচ্ছে।
আপডেটের অপেক্ষায় রইলাম।
মেহেরী তাজ
কোথায় ফেল করার জন্য তিরস্কার করবেন, তা না করে ভালো বলছেন। দেবো আপডেট। ধন্যবাদ ভাইয়া।
মোঃ মজিবর রহমান
আসল ফেলত করেননি জ্বালা বোঝেননি।
ফেলুর কান্না জগত জোড়া।
সুন্দর লিখেছেন।
আবার পড়ার …।
মেহেরী তাজ
ধন্যবাদ ভাইয়া, সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
মরুভূমির জলদস্যু
HSC এর মূল মার্কসিটে এখনো চতুর্খ বিষয়ে ০০০ (তিনটা শূন্য) জলজল করে আমার। :p
মেহেরী তাজ
চথুর্থ বিষয়ে ফেল কোন ব্যাপার হলো? ধন্যবাদ ভাইয়া।
মরুভূমির জলদস্যু
শুধু ফেল না তিনটা শূ্ন্য সহ ফেল।
নুসরাত মৌরিন
😀
মজা পাই আপনার লেখায় সবসময়।
মেহেরী তাজ
মজা দিতে পেরে নকে ধন্য মনে করছি আপু। ধন্যবাদ।
জিসান শা ইকরাম
আপনি যাই লেখেন অত্যন্ত মজা করে লিখেন
কথার ছলে বলে ফেলেন।
ফেল বৃত্তান্তও এত ভালো হতে পারে, তা এই প্রথম দেখলাম।
পরীক্ষা যেনো ভালো হয় এবার।
শুভ কামনা।
মেহেরী তাজ
ভাইয়া ফেল করতে করতে কেমন করে যেনো পাশ করে যাই 🙂 পরীক্ষা ভালো হচ্ছে।
ওয়ালিনা চৌধুরী অভি
পরীক্ষার মাথায় বাঁশ মারুন। ‘পাইছি উহারে…
মেহেরী তাজ
:p আমার মাথায় মারবে আব্বু :p
মামুন
H.S.C তে ফোর্থ সাব্জেক্টে ছিল ম্যাথ। একবার কোশ্চেন আউট হয়ে পরীক্ষা বাতিল হল সেই ১৯৯০ ইং সালে। এরপর মন ভেঙ্গে গেলো। পরীক্ষা দিলাম। পেলাম ৩৩ ও ৩৬। বুয়েট, বিআইটি সহ ফরেষ্ট্রি এবং অন্যান্য ভালো সাবজেক্টে ফর্মই নিতে পারলাম না। ;(
আপনার লিখায় সাথেই রইলাম।
মেহেরী তাজ
ধন্যবাদ ভাইয়া, সাথে থাকার জন্য।
জিসান শা ইকরাম
সোনেলায় আর একজনের ফেইল বৃত্তান্ত আছে, অনেক আগেই পোষ্ট করেছিলেন তিনি।
https://sonelablog.com/archives/21677
মেহেরী তাজ
দাদা এতো দিন পরে দেখছি এই সব মন্তব্য। 🙁
সময় করে পড়ে নেবো দাদা।
শুন্য শুন্যালয়
ফেল তুমি তাজরে করেছ মহান। পাশের পরিবর্তে ফেল তাও স্মৃতিময়!!! সে আর বলতে।
আপনার কাছ থেকে লেখার টিপস্ নেব ভাবছি।
মেহেরী তাজ
অনেক অনেক দিন আগের কথা যখন শুন্য আপু আমায় আপনি ডাকতো। :D)
হাহাহাহা….
লেখার টিপ্স? ? দেবো দেবো…. 🙂 😀
বন্য
ভাগ্যের চাকা উল্টেও যেতে পারে, যেটা খারাপ দিয়ে এসেছেন সেটাই হয়তো বেশি ভালো হয়ে যাবে, ফেল বৃত্তান্ত এতো সুন্দর করে লিখলেন পাশের বৃত্তান্ত হলে না জানি কেমন হতো , আচ্ছা আগে পাশ করে নিন তারপরও না হয় পাশের বৃত্তান্তটুকুও পেয়ে যাবো আমরা।
মেহেরী তাজ
বন্য ভাইয়া আপনার কথা ঠিক হয় নি আমি এই সাবজেক্ট এই ফেল করেছি। এবং মায়ের লাঠি তাড়া খেয়েছি। 🙁
ব্লগার সজীব
ওস্তাদ আমাকে শিষ্য হিসেবে গ্রহন করেন, নইলে কিন্তু অনশন করবো সোনেলায়।
মেহেরী তাজ
এই পোষ্টঈ তাহলে আমাদের ওস্তাদ শিষ্য ডাকের গোড়া পত্তন করেছে। 🙂
লীলাবতী
তাজের পোষ্ট মানেই মজাদার পোষ্ট।
মেহেরী তাজ
ওয়ান্স আপন আ টাইম।
হা হা হা.. …
অরুনি মায়া
ওমা এই মেয়ে দেখি ফেল করতে করতে নির্লজ্জ হয়ে গেছে 😮
মেহেরী তাজ
আপু নির্লজ্জ আবার কি জিনিস???
আর এগুলা তো ফাইনাল ফেল না। গত মাসে যে ফেলটা করছি সেটারই আগাম পোষ্ট ছিলো এটা। 🙁