রুপক তাকিয়ে আছে পাখি দুইটার দিকে। টুনি বলল, ভাইয়া এখন কি করবে? কিছু ভেবেছো?
ভাবছি হেমন্তির দেয়া নাম্বারটায় ফোন করব।
কি! তুমিও পাগল হয়ে গেলে?
না হইনি। তবে পিচ্চিটার সাথে কথা বলে পাগল হতে পারি কিনা দেখি। আমার ধারনা ঐ পিচ্চি মেয়েটা একটা ইন্টারেষ্টিং ক্যারেক্টার হবে।
তুমি কি এখনই ফোন করবে?
না। পরে একসময় করব।
তাহলে এখন কি করবে?
এখন কবিতা শুনব। মহাদেব সাহা’র “চিঠি দিও” এই কবিতাটা তুই পারিস না?
আমি কবিতা টবিতা কিছু পারি না।
গাধী কোথাকার! এসব পারবি কেন? পারিসতো শুধু ফোকঁলা দাঁতে হি হি করে হাসতে।
ভাইয়া ভালো হবে না বলে দিচ্ছি!
যা কবিতাটা আমিই তোকে শুনাচ্ছি। ভালো করে শুনে রাখ………
করুণা করে হলেও চিঠি দিও, খামে ভরে তুলে দিও
আঙ্গুলের মিহিন সেলাই
ভুল বানানেও লিখো প্রিয়, বেশি হলে কেটে ফেলো তাও,
এটুকু সামান্য দাবি, চিঠি দিও, তোমার শাড়ির মতো
অক্ষরের পাড়-বোনা একখানি চিঠি
চুলের মতন কোন চিহ্ন দিও বিস্ময় বোঝাতে যদি চাও …
বর্ণণা আলস্য লাগে তোমার চোখের মতো চিহ্ন কিছু দিও।
টুনি হুংকার দিয়ে বলল, ভাইয়া থামতো। তোমার কবিতা শুনতে ভাল্লাগছে না। তার চেয়ে তোমার ঘর থেকে গিটার এনে দেই। পারলে একটা গান শুনাও। তোমার কবিতার চেয়ে গান ভালো হয়।
কবিতার মাঝখানে গান? অসম্ভব! এখন কবিতার মোডে আছি। গান গাইতে পারব না। তুই চাইলে আমাকে শুনাতে পারিস। কি শুনাবি? “তোমাকে না লেখা চিঠিটা ডাক বাক্সের এক কোণে” এই গানটা?
আমি পারব না। হুহ…
তোকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। তুই থাক আমি বরং আপার বাসা থেকে ঘুরে আসি।
তুমি এখন নাফিজা আপুর বাসায় যাবে?
হুম।
এই অবস্থায়!
তুই আমার চুল দাড়ির কথা বলছিস তো?
হ্যা। তোমার মুখটা কেমন বাদরের মত লাগছে আয়নায় দেখেছ?
হুম দেখেছি। অনেক সময় নিয়ে দেখেছি। এবং বেশ মুগ্ধও হয়েছি। কারন এমন কবি ভাবের ছেলে সচরাচর দেখা যায় না।
কি হয়েছ বললে! তোমার এই বাদর মার্কা মুখ দেখে তুমি মুগ্ধ হয়েছ? হি হি হি……
হ্যা হয়েছি। ভালো করে দেখ আমাকে এখন কবি নির্মলেন্দু গুন’র মত মনে হচ্ছে না? ব্যবধানটা শুধু আমার চুল কালো আর কবির চুল সাদা। উনার দাড়িও সাদা। তবে ব্যাপার না। বয়সকালে আমারও এমন হয়ে যাবে। তখন কবির মত আমিও এই টাইপের একটা কবিতা লিখে ফেলব।
আমার ঈশ্বর জানেন, আমার চুল
পেকেছে তোমার জন্য,
আমার ঈশ্বর জানেন, আমার জ্বর
এসেছে তোমার জন্য,
আমার ঈশ্বর জানেন, আমার মৃত্যু
হবে তোমার জন্য ।
তারপর ঐ ঈশ্বরের
মতো কোন একদিন তুমিও জানবে,
আমি জন্মেছিলাম তোমার জন্য, শুধু
তোমার জন্য ।
ভাইয়া তোমার কবিতা কপচানো বন্ধ করতো। হঠাৎ আপুর বাসায় কেন যাচ্ছ?
আপা আমার উপর খুব রেগে আছে। ওর রাগ ভাঙ্গাঁতে যাচ্ছি।
তুমি আপুর রাগ ভাঙ্গাঁতে যাচ্ছ! হি হি হি… তোমার এই অবস্থা দেখলে আপু আরো রেগে যাবে।
তাহলে কি আর করা আপাকে আরেকটু রাগিয়ে দিয়ে আসি।
ভাইয়া তোমার কয়দিন পাবনা থেকে ঘুরে আসা উচিত। কারন তুমি একটা পাগল। বড্ড উন্মাদ এইটা জানো?
রুপক টুনির মত মুখ বাকিয়ে বলল জানি। হুহ! সে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়াঁল। বারান্দা থেকে চলে যাচ্ছে সে। টুনি চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে রুপকের দিকে।
ঢাকা শহরে মাটি আর সবুজ কচি ঘাস এই দুই বস্তু দেখা যায়না বললেই চলে। তবে দু-একটা বড় বড় গাছ দেখা যায় এটাই বা কম কিসে! বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টি কোন আয়োজন ছাড়াই চলে এসেছে। টিপটিপ বৃষ্টির ছোয়ায় গাছের সবুজ পাতাগুলোকে আরো সবুজ লাগছে। সব মিলিয়ে প্রকৃতি এখন নতুন বউ’র মত অপরুপ রুপে সেজেঁগুঁজে বসে আছে নগর বাসীর জন্য, কখন তারা বলবে ওয়াও! অপুর্ব…
রুপক রিক্সার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টির দিনে রিক্সা পাওয়া তার জন্য বিরাট ভাগ্যের ব্যপার। সে কখনও বৃষ্টির দিনে ঘর থেকে বের হলে রিক্সা পায়না। সে কি আরো কিছুক্ষন অপেক্ষা করবে নাকি হেটেই রওয়ানা দিবে বুঝতে পাচ্ছেনা। একটা ছাতা নিয়ে আসলেই হত। কিন্তু তার ছাতি নিয়ে ঘুরা একদম পছন্দ না। তার ধারনা এটা একটা মেয়েলী স্বভাব। কেবল মেয়েরাই কারনে অকারনে ছাতা নিয়ে ঘুরবে। কিন্তু ছেলেরা কখনো ছাতা ব্যবহার করবে না। রুপক বৃষ্টির মাঝেই হাটতে শুরু করল। তার মাথায় মাছির মত একটা গান ভন ভন করেই যাচ্ছে……
বাদলা দিনে মনে পরে ছেলে বেলার গান
বৃষ্টি পরে টাপুর টুপুর নদে এল বান।
যদি ডেকে বলি এসো হাত ধরো
চল ভিজি আজ বৃষ্টিতে……
পেছন থেকে একটা গাড়ি এসে রুপকের পাশে থামল। গাড়ির আয়না উঠানো তাই ভেতরে কে আছে ঠিক বুঝা যাচ্ছে না। দরজা খুলে একটা মহিলা বের হতেই রুপক চিনতে পারল। এটা ইভা। তার স্কুল জীবনের বন্ধু। রুপক বলল আরে ইভা তুমি এখানে কি ব্যাপার?
ছোট মামার বাসায় যাচ্ছিলাম। তোমাকে দেখে দাড়ালাম। কিন্তু তুমি এই বৃষ্টির মাঝে কি করছো?
অনেকদিন বৃষ্টিতে ভিজি না তাই ভাবলাম আজ একটু ভিজি।
ইভা বলল, তোমার মিথ্যে কথা আমি ধরতে পারি। সত্যি করে বল কোথায় যাচ্ছিলে? ইভার কোলে একটা বাচ্চা ওয়া…ওয়া… করে কেঁদে উঠল।
রুপক বলল, আপার বাসায় যাচ্ছিলাম। তোমার কোলে ছেলে না মেয়ে?
ইভা লাজুক হেসে বলল, এটা আমার মেয়ে নাম বিভূর।
রুপক বলল, তখনও আমার গালে দাড়ি গজায়নি বলে তুমি বলেছিলে যাও আগে তোমার গালে দাড়ি গজিয়ে এসো তারপর ভালবাসার কথা বলবে। আজ আমার গালে দাড়ি গজিয়েছে। সে ফাঁকে তোমার কোলে একটা কন্যা সন্তানও গজিয়ে ফেললে ইভা?
ইভা হকচকিয়ে গেল। সে এমন কথা শুনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলনা। মা… মা…মানে?
হা হা হা… আরে বোকা মেয়ে ভয় পেও না। আমি তোমার সাথে একটু দুষ্টামি করছিলাম।
ওহ গড! তাই বল। আমিতো সত্যি সত্যি ভয় পেয়ে গেছিলাম। তোমার দুষ্টামীর স্বভাবটা এখনো যায়নি তাহলে?
রুপক হাসল। যে হাসির মানে হল “না”। তার দুষ্টামী করার স্বভাবটা এখনো যায়নি।
ইভা বলল, তোমার আপত্তি না থাকলে আমার সাথে চল। আমাকে মামার বাসায় নামিয়ে ড্রাইভার তোমাকে পৌছে দেবে।
ধন্যবাদ। আমাকে সামনে ফুলের দোকানটায় নামিয়ে দিলেই চলবে।
ফুলের দোকানে কেন?
ফুল কিনব। আমার প্রাক্তন প্রেমিকা আমার কাছে একটা কালো গোলাপ চেয়েছে। লাল গোলাপে আমাদের প্রেম শুরু হয়েছিল। আজ কালো গোলাপ দিয়ে শেষ করে আসব। তারপর অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করে ঘর-জামাই চলে যাব।
ইভা হাসল। বলল, তোমার দুষ্টামির স্বভাবটা এবার ছাড়। বয়সতো কম হয়নি। রুপকও হাসল। বলল চল যাই।
রুপক তার আপার জন্য বেলী ফুলের মালা কিনল। বেলী ফুল আপার খুবই পছন্দ। কিভাবে যেন আপা এই মালাটাকে খোপায় পরে। দুলাভাই আপার জন্য শাড়ি, চুড়ি আর টিপ এনেছে। কিন্তু ফুল আনেনি। এখন আমি বেলী ফুল নিয়ে গেলেই আপার রাগ গলে যাওয়ার কথা।
রুপক ডোর বেল চাপল। তার সাথে সাথেই নাফিজা আপা এসে দরজা খুলে আবার লাগিয়ে দিল। এমন করল কেন ব্যাপারটা বুঝা গেল না। রুপক আবারও বেল চাপল। নাফিজা এসে প্রায় ধমকের মত বলল মাফ করো। এখন ভিক্ষে দিতে পারব না।
রুপকের চোখ কপালে উঠে গেল। তার আপা তাকে ভিক্ষুক বানিয়ে ফেলল!
কি হল কথা কানে যায় নি?
আপাগো ভিক্ষা না দিলে আমি যামুই না।
কি! মগের মল্লুক নাকি?
না ভাইয়ের মল্লুক। তুই আমাকে চিনতে পারলি না আপা?
কে!
আমি তোর ভাই। রুপক।
ও আল্লাহ! তোর এই অবস্থা কেন?
গোয়েন্দা বিভাগে চাকরি পেয়েছি আপা। একটা অপারেশনে যেতে হবে সে জন্য এ ছদ্মবেস ধরেছি।
সত্যি তুই চাকরী পেয়েছিস!!! আগে বলিস নি কেন?
এখন তো বলেছি। এই নে তোর জন্য বেলী ফুল এনেছি।
আল্লাহ! এতো সুন্দর ফুল! কোথায় পেলিরে?
কোথায় পেলাম সেটা কোন কথা না। যা তো এক কাপ গরম গরম চা নিয়ে আয়। চা খেতে খেতে তোর সাথে আরো কিছুক্ষন ঝগড়া করে চলে যাই।
ভাই তুই বোস আমি এক্ষুনি আনছি।
রুপক সোফায় গিয়ে বসল। সোফার পাশের টেবিলের উপর টেলিফোন রাখা। আপা বোস বলেই তার সাজঘরের দিকে ছুটে গেল। এ ফাকে হেমন্তিকে একবার ফোন করা যাক। রুপক নাম্বার টিপে কল করল। দুবার রিং হতেই ওপাশ থেকে মেয়েলী কন্ঠে বলল…
– হ্যালো…
– তুমি হেমন্তি ?
– না। আমি হেমন্তির বড় বোন। কিন্তু আপনি?
– আমাকে আপনি চিনবেন না। হেমন্তিকে ডাকুন।
– আপনার নামটা অন্তত বলুন।
– বললামতো চিনবেন না। হেমন্তিকে ফোনটা দিন।
– আমি আপনাকে চিনব না। অথচ হেমন্তি ছোট্ট একটা মেয়ে ও আপনাকে চিনবে?
– চেনারতো কথা। যাইহোক, হেমন্তি ছোট্ট একটা মেয়ে আর আপনি বুঝি খুব বড় একটা মেয়ে? আমারতো মনে হয় আপনিও ছোট্ট একটা মেয়ে। হয়তো ক্লাস সিক্স কিংবা সেভেনে পড়ছেন।
– কি! আমার কথা শুনে সিক্স সেভেনে পড়ি মনে হয়। হুমমম ?
– তাইতো মনে হয়। তো আপনি কিসে পড়েন শুনি।
– আমি অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্রী।
– তাহলেতো ছোট্ট মেয়ে ঠিকই আছে। আচ্ছা হেমন্তিকে ফোনটা দিন।
– আপনার নাম না বললে দেয়া যাবে না।
– ঠিক আছে বলছি। আমার নাম হেমন্ত।
– হেমন্ত?
– হুম। হেমন্তি থেকে হেমন্ত।
– আপনি আমার সাথে ফাজলামু করছেন!
– হ্যা করছি। কারন আমি ফাজিল একটা ছেলে ।
– সত্যি করে বলুনতো আপনি কে?
– সেটা না হয় মুখো-মুখি বসেই বলব। হেমন্তি আছে কিনা সেটা বলুন।
– হেমন্তি ঘরে নেই। ছাদে খেলতে গেছে।
– আচ্ছা! আমি তাহলে পরে আবার ফোন করব। এখন ফোনটা রাখি? রুপন্তি…
– আপনি আমার নামও জানেন?
– ………।
– হ্যালো… হ্যালো…
রুপক রিসিভার নামিয়ে রাখল। আপা সেজেগুজে তার সামনে এসে দাড়াল। কার সাথে কথা বলছিলি? তোর দুলাভাই ফোন করেছিল?
না আপা। কেউ ফোন করেনি। আমি নিজেই ফোন করেছিলাম।
কার কাছে?
একটা মেয়ে। নাম রুপন্তি। অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ে। ওর ভয়েজটা
কি সুইট রে আপা। ভাবছি প্রেমে পড়লে আমি ওর প্রেমেই পরব। কিন্তু এখন মেয়েটাকে দেখব কিভাবে সেটাই ভাবার বিষয়।
আপা হাসছে। মনে হয় রুপকের কথায় সে খুব মজা পাচ্ছে।
ভাই তুই এতো বড় হয়েছিস। অথচ তোর দুষ্টুমির স্বভাবটা এখনো গেল না।
আপা আমি কিন্তু তোর সাথে মোটেও দুষ্টুমি করছি না। আমি সিরিয়াসলি বলছি। যেভাবেই হোক ঐ মেয়েটাকে আমি দেখবই। পছন্দ হলে বিয়েও করে ফেলতে পারি। এখন আমি যাই রে আপা। দুলাভাই আসার সময় হয়ে গেছে। এসে আমাকে দেখলে আর যেতেই দিবে না।
এখনই যাই কি! রাতে খেয়ে যাবি না? তোর পছন্দের সব কিছু রান্না করা আছে। শুধু গরম করব আর দেব।
আপা তোর হাতের রান্না যথেষ্ঠ খারাপ। দুলাভাই কি করে যে দিনের পর দিন তোর রান্না সহ্য করছে আমি সেটাই ভাবছি।
তুই এমন কথা বলতে পারলি?
আপার সামনে বসে থাকতে আর ভালো লাগছে না। তাই মিথ্যে কথা বলতে হচ্ছে। হ্যা পারলাম। এবার নে দরজাটা লাগিয়ে দে আমি চলে যাচ্ছি।
(গল্পটা ১০ পর্ব পর্যন্ত যাবে)
#১৭
৯টি মন্তব্য
শুন্য শুন্যালয়
কবিতা, গান, চমৎকার একটি লেখা সব মিলিয়ে চমৎকার কিউব। চলুক চলুক।
নির্বাসিত নীল
হুম… চলছে… 🙂
মিথুন
বাহ সুন্দর গল্প। প্রথম পর্বটা পড়তে হবে।
নির্বাসিত নীল
সময় হলে পড়ে নিতে পারেন…।।
ধন্যবাদ!
সিনথিয়া খোন্দকার
একই সাথে ভীষন আবেগ আর পরিস্থিতির নিখুত বাস্তবপ্রায় বর্ণনা। সুন্দর।
নির্বাসিত নীল
ধন্যবাদ আপু…।
জিসান শা ইকরাম
সুন্দর -{@
নির্বাসিত নীল
ধন্যবাদদদদদদ্দদদদদদদ্দদদদ্দদদদ্দ