
– মা একটা গল্প বলো,
– কিসের গল্প শুনবে ? ভুতের ?
– না, রাতে ভুতের গল্প শুনলে ভয় পাবো। অন্য গল্প বলো।
– একদেশে দুই ভাই ছিলো। ছোটবেলা থেকেই তারা আকাশে ওড়ার স্বপ্ন দেখতো। ওরা নিজের খেলনা, সাইকেল, আর দরকারি জিনিসপত্র গুলো নিজেরাই বানিয়ে নিতো। ধিরে ধিরে তারা যত বড়ো হয়ে উঠতে লাগলো, আকাশে ওড়ার ইচ্ছেটাও প্রবল হয়ে উঠছিলো। তারপর ওরা ঠিক করলো….
– ওরা দুইভাই এ্যারোপ্লেন আবিষ্কার করেছিলো। এই গল্পতো আমি জানি। অন্যটা বলো।
– এটা আগে বলেছি ! আচ্ছা শোনো, একদেশে ছিলো এক চিত্রশিল্পী। সে ছবি আঁকতে খুব পছন্দ করতো। ছোটবেলায় সে খুব অদ্ভুদ অদ্ভুদ কাজ করতো। একবার সে এক টুকরো কাঠ দিয়ে…
– কাঠ দিয়ে একটা বড় টিকটিকি বানিয়ে দেয়ালে আটকে রেখেছিলো। ওটাকে সবাই জীবন্ত মনে করে ভয় পেয়ে গিয়েছিলো। আর ঐ চিত্রশিল্পীর নাম ছিলো লিউনার্দো ভিঞ্চি। যারা ছবি আঁকে তাদের চিত্রশিল্পী বলে। আম্মু, তুমি এই গল্পটাও অনেকবার বলেছো।
– কি বিপদ ! তাহলে তুমিই বলো, কিসের গল্প বলবো।
– রাজা রানী আর পরীদের গল্প বলো।
– হু বলছি, একদেশে এক রাজা ছিলো আর অন্যদেশে এক রানী। রাজা ছিলো খুব গরীব। তার ভালো জামা-কাপড় ছিলোনা। হাতি-ঘোড়া, বাড়ি-ঘর, এমনকি বসার চেয়ার টেবিলও ছিলোনা। তাই রাজা একদিন মনের দু্ঃখে জঙ্গলে চলে গেলো।
– রাজা এতো গরীব ? তাহলেতো সে ঠিকমতো খেতেও পায়না। ( চোখের পানি মুছতে মুছতে মেয়ের জবাব )
– আরে ধুর ! বোকা মেয়ে, গল্প শুনেই কাঁদতে হয়না। সেখানে অনেক পরীরা থাকতো। তারাতো রাজাকে পেয়ে খুব খুশি। জঙ্গলে গিয়ে রানীর সাথে রাজার দেখা হলো। রাজা রানী ঠিক করলো তারা ঐ জঙ্গলেই থাকবে। ওই কথা শুনে বনের পশুরা একটু বিরক্ত হলো।
– কেন ? তারা কি রাজাকে পছন্দ করতো না ?
– কিছু কিছু পশু করতো না। যেমন, বাঘ। বাঘ যখন হরিণের মা্ংস খাওয়ার জন্যে হরিণকে মারতে চাইতো ,তখন রাজা বাধা দিতো। আবার কিছু শকুন ছিলো। ওদের অন্য পাখিরা ভয় পেতো। রাজা ওদের বন থেকে তাড়িয়ে দিয়ে দূর পাহাড়ে পাঠিয়ে দিয়েছিলো।
– শকুন কি পাখি না ?
– শকুন একটি পাখি। সব পাখি ভালো হয়না। তুমি টিভিতে দেখেছো ? হাঙর দেখতে একদম মাছের মতো, তারপরেও কতো হিংস্র। শকুন তেমনই এক পাখি।
– হুম, আম্মু গল্প শুনবো না। একটা গান শোনাও। আমি তোমার গান শুনতে শুনতে ঘুমাবো। পরীর গান গেয়ে শোনাও।
– আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরী
সাথী মোদের ফুলপরী,
ফুলপরী লালপরী, লালপরী নীলপরী
সবার সাথে ভাব করি ,সবার সাথে ভাব করি…..
মেয়ে ঘুমিয়ে গেছে সেহেরী খাওয়ার পর। গল্প-গান শুনে। আমার ঘুম পাচ্ছে না। আটচল্লিশ ঘন্টা ধরে জ্বরের সাথে ভাব বিনিময় করছি। একবার আমি জ্বরকে পরাজিত করছি, পরেরবার জ্বর দ্বিগুন শক্তিতে আমায় পরাস্ত করছে। ওষুধ খাওয়ার পর ঘন্টা পার হতে দেরি হয়, জ্বরের আগমনে বিলম্ব হয়না। জ্বরের ঘোরে ডুবে যাওয়ার আগে একটা গল্প বলি….
একদেশে ছিলো এক রাজা। আরেক দেশে ছিলো এক রানী। তাদের কোনো অভাব অনটন ছিলোনা। তারা তাদের রাজ্যে নিজেদের মতো করেই সুখে শান্তিতে বাস করতেন। তাদের মধ্যে একটা অদ্ভুদ মিল ছিলো। তারা দুজনেই হঠাৎ হঠাৎ অকারনে অন্যমনষ্ক হয়ে পড়তেন। তখন নিজেদের সবকিছু ত্যাগ করে ঘুরে বেড়াতেন রাজপথে, পথে-প্রান্তরে।
একদিন দৈবযোগে তাদের দেখা হয়ে গেলো। প্রচন্ড গরমে অস্থির রাজপথের এক উত্তপ্ত রৌদময় দিনে। কে কার সামনে গিয়ে দাড়িয়েছে তা কেউ খেয়াল করেনি। একজোড়া মানুষের দু-জোড়া চোখের মিলন এক অলৌকিক গল্পের সূচনা করেছিলো সেদিন। কি ছিলো সেই চোখে !
অনেক সুন্দর কিছু দেখলে সবাই মাশাহ্আল্লাহ বলে উঠে। কিন্তু অলৌকিক সৌন্দর্য যদি সামনে এসে দাঁড়ায় তখন ? এক পলক দেখার পর রানীর দৃষ্টি নিবন্ধিত হয়েছিলো মাটির দিকে। অফুষ্ট স্বরে বলা শব্দ মালায় কেবল সৃষ্টিকর্তাকে ডেকে বলেছিলো, সুবহান আল্লাহ্ ! মানুষ এতো সুন্দর হয় !!
জ্বরের প্রকোপ বাড়ছে,,,সাথে মাথার ভিতর তিব্র যন্ত্রনা। ঘুম আসছেনা। অথচ সব কিছু ঘোলা আর ঝাপসা হয়ে পড়ছে। মাথায় পানি ঢালবো ? না শাওয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে থাকবো ? একটা গান মনে পড়ছে….
মন একবার ভালোবাসে যারে
তার কথা আর কেউ জানার আগে,
মনের কথা মন বলতে পারে…
গানটা কি ঠিকমত গাইতে পারছি ? নিজের গলার আওয়াজ নিজেই শুনতে পাচ্ছি না কেন !!
– সমাপ্ত –
৩৪টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
উপস্থিত ম্যাডাম।
সাবিনা ইয়াসমিন
আচ্ছা বেশ, গিফট দিতে হবে তাইতো 😀😀
নিন একতোড়া ফুল 💐
মোঃ মজিবর রহমান
ফুল দিন কাটা নয়,
বন্ধুত্ব দিন ঘ্রিনা নয়
মানবতা থাক অপরাধ নয়
সাবিনা ইয়াসমিন
ফুলের সাথে কাঁটা থাকবে,
বন্ধুত্বের অন্তরালে ঘৃনা সুপ্ত রয়।
মানব জীবন, মানবতা ও অপরাধের সংমিশ্রনে তৈরি জীবননামা ছাড়া আর কিছুই নয়,,,
ঈদের শুভেচ্ছা রইলো ভাইজান, ঈদ মোবারক 🌹🌹
মনির হোসেন মমি
উপস্থিত
৵৵৵৵৵
কি সাংঘাতিক
মনের কথা মন বুঝতে পারছে না।এবার শুরু হবে এ নিয়ে গবেষনা।আচ্ছা গল্পটা কোন দিক দিয়ে গেল৴আমিওতো বুঝতে পারছি না।চিন্তায় হয়তো পাঠকদেরও জ্বর এসে যাবে তার চেয়ে বরং ভাল হয় ঐ রূপ কথার গল্পের ভিতর হারিয়ে যাই।
সাবিনা ইয়াসমিন
গল্পটা গল্পের দিকেই চলে গেছে। কিছু গল্প থাকে অগোছালো হয়ে। এটিও তেমনই একটা একটা কিছু। লেখক-পাঠক সবাই ভালো ও সুস্থ থাকুক, শুভ কামনা রাখি সবার জন্যই।
ঈদ মোবারক 🌹🌹
মোঃ মজিবর রহমান
আওয়াজ শুনবেন শুনবেন কর্তার ঝাড়ি মনে পরে!!! ওফ! অতো ঝাল দেখাও কেন বলত!!! আসছি!!! তো।
সাবিনা ইয়াসমিন
হাহাহাহা ,এটা কি হলো ? আমিতো কিছুই বুঝলাম না !!
তৌহিদ
বাচ্চারা এরকমই হয়, গল্প শুনতে শুনতে একসময় সব গল্প তার জানা হয়ে যায়। আর তখন বানিয়ে বানিয়ে বলতে হয় অনেক কিছু। অথচ দেখা যায় একসময় বাবা মা নিজের জীবনের গল্প বলা শুরু করে দিয়েছেন।
গান ভালো হয়েছে আপু। ☺☺
সাবিনা ইয়াসমিন
বাচ্চাদের গল্প শোনাতে শোনাতে একদিন সবগল্পই নতুন করে জানা হয়ে যায়। মনে পড়ে যায় নিজের দুরন্ত শৈশব-কৈশোর।
অনেক ধন্যবাদ তৌহিদ ভাই। ভালো থাকবেন। শুভ কামনা 🌹🌹
তৌহিদ
আপনিও ভালো থাকবেন আপু।
প্রদীপ চক্রবর্তী
ভালো লেখনী আপু।
সাবিনা ইয়াসমিন
ধন্যবাদ প্রদীপ। ভালো থাকো। নতুন লেখা দিও। শুভ কামনা রইলো ভাই 🌹🌹
শাহরিন
বুঝলাম না ব্যাপার টা 🥴
ছাইরাছ হেলাল
ঠিক ঠিক, আমিও ধরতারলাম না!
সাবিনা ইয়াসমিন
@ মহারাজ, ধরতে না পারলে ছেড়ে দিন। গল্পটাকে শক্ত করে না ধরে উড়িয়ে দিন খোলা আকাশে, সব কিছু বন্দি করার কি দরকার !!
ছাইরাছ হেলাল
গল্পের ছলে গাল-গল্প থেকে গান পর্যন্ত শোনালেন, অবশ্য সুরে না বেসুরে কিংবা অসুরে কী না কে জানে।
ব্যাঙ্গমা ব্যাঙ্গমি বাদ গেল কেন কে জানে। মেছোপ্রেত্নীদের বা শাঁকচুন্নী গল্প বললে মন্দ হতো না।
শকুনদের এভাবে অবহেলা করা ঠিক না, ঠিক না মাছরূপি কুমিরদের। অবশ্য রজ্জু ভ্রমে সর্প বা সর্প ভ্রমে রজ্জু হইলেই হইতারে।
জ্বর নিপাত যাক, অলৌকিকত্ব তুমুল ভেবে/বেগে জারি থাকুক।
নিয়মিত গল্প লিখতে শুরু করুন।
সাবিনা ইয়াসমিন
ব্যপারটা বোঝাতে গেলে আরেকটা গল্প লিখতে হবে। এতো গল্প লিখতে গেলে আবার জ্বরে ভুগতে হবে 😰😰
এই গল্পটাকে ছাড় দেও।আগামী গল্প পড়ে যাতে বুঝতে পারো সেটা মাথায় রাখবো।
শুভ কামনা, ভালোবাসা ❤❤
শাহরিন
আচ্ছা, আশায় থাকলাম 🙂
শামীম চৌধুরী
অসাধারন লেখা আপু।
সাবিনা ইয়াসমিন
ধন্যবাদ ভাইজান। ☺☺
আরজু মুক্তা
আমার মনে হলো জ্বর হলে,আমরা যেমন বকি।ঠিক তেমন।।
সাবিনা ইয়াসমিন
জ্বর হলে মানুষ প্রলাপ বকে, এটা ঠিক। তবে সেটা অজ্ঞান হবার পর। এই গল্পটা স্বজ্ঞানেই লিখেছিলাম, তার মানে বকাবকি ছাড়াই। 😂😂
শুভ কামনা 🌹🌹
সঞ্জয় মালাকার
দারুণ লিখেছেন আপু
ঈদের শুভেচ্ছা রইলো।
সাবিনা ইয়াসমিন
ধন্যবাদ দাদা। ঈদের শুভেচ্ছা আপনাকেও। শুভ কামনা 🌹🌹
মাছুম হাবিবী
ছোট বেলায় এই টাইপের গল্প মা প্রায় ঘুমানোর আগে শুনাতেন। অনেক মজা করে শুনতাম, আজ খুব মিস করছি ছোটবেলার দিনগুলো। আপনার লেখাটা পড়ে মায়ের কাছ থেকে গল্প শোনার ইচ্ছাটা আবার বেড়ে গেল। অনেক সুন্দর একান্ত অনুভূতি ।
,
সাবিনা ইয়াসমিন
মাকে আমরা ছোটবেলায় কত জ্বালাতন করতাম এটা-সেটা গল্প বলার জন্যে। তখন কিন্তু বুঝতাম না, সারাদিন ঘরের কাজ করার পর মায়ের শরীরটা কেমন লাগছে, বা তিনি কি সুস্থ আছেন কিনা। আজ নিজে মা হয়ে যখন সন্তানদের সামনে এসেছি, তখন মায়ের ত্যাগ, মমতা কে মর্মে মর্মে উপলব্ধি করতে পারছি। ভালো থাকুক আমাদের মায়েরা, ভালোবাসায় থাকুক মায়ের আদরের সন্তানেরা।
অনেক ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য দেয়ার জন্যে। ভালো থাকবেন। শুভ কামনা রইলো মাছুম। 🌹🌹
জিসান শা ইকরাম
শিশু সন্তানকে এক সময় সব গল্প বলা হয়ে যায়।
রাজা এত গরীব থাকলেও বনের অপশক্তিকে তাড়িয়ে দিতে পেরেছে! খেতে পারতো মনে হয় সে, নইলে বাঘদের তাড়িয়ে দিতে শক্তি পেলো কোথায়?
সব পাখি পাখি নয়, আবার সব মাছও মাছ নয়।
রাজা রানীর জন্য শুভ কামনা।
জ্বরেও লেখা পড়া চলছে ভালোই!
এই গানটি শুনিনি আমি এর আগে।
শুভ কামনা।
সাবিনা ইয়াসমিন
শিশুরা গল্প পছন্দ করে। আবার এক গল্প বারবার শুনতে চায়না। অথচ তাদের গল্প শোনাতে হলে কত কিছু খেয়াল রাখতে হয়। গল্পটিতে যেন শেখার কিছু থাকে, গল্পতে ভালো মন্দের পার্থক্য রাখতে হয়, আবার গল্পে কাউকে বেশি গরীব বা কষ্টেও রাখা যাবেনা। ( বাচ্চাদের আবেগে কান্না চলে আসে) 😂😂
গানটা অনেক পুরোনো দিনের। ভালো লাগলে মাঝে মাঝে গাইতে থাকি নিজের মনে। মন টেনশন মুক্ত হয়। জ্বরে ভোগা একটা বিগ টেনশন।
শুভ কামনা, ভালো থাকবেন। 🌹🌹
রেহানা বীথি
বেশ লাগলো। আমার কন্যারা যখন ছোট ছিলো একদম, তখন আমিও বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলেছি অনেক। মনে পড়ে গেলো সেসব দিনের কথা।
সাবিনা ইয়াসমিন
মা আর সন্তানদের সব চেয়ে মধুর সময়টাই হলো গল্প বলার সময়টা। একদিন সন্তান বড়ো হয়ে যায়, ঠিক বুঝে ফেলে মায়ের গল্পটি বানানো ছিলো। তারপর মায়ের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা আর মমতায় সন্তানদের চোখের সামনে চলে আসে শৈশবের সেই দিনগুলো।
ভালোবাসা রইলো আপু, ভালো থাকুন সারাক্ষন। ❤❤
আসিফ ইকবাল
সাবিনা, সেকী! সত্যি জ্বর ছিলো? খুব বেশী? গল্প পড়ে মনে হলো খুব বেশী। উচ্চ তাপমাত্রা অবহেলা করতে হয় না। অবশ্যই ঝর্ণার নীচে দাঁড়ানো প্রয়োজন ছিল। দাঁড়িয়েছিলে? এখন কেমন আছ? খুব আফসোস হচ্ছে। এই লেখা এত দেরীতে কেন পড়লাম!
সাবিনা ইয়াসমিন
আমি শাওয়ারের নীচে দাঁড়িয়ে ছিলাম, যতক্ষন পর্যন্ত শীতে না পেয়েছিলো। এখন আমি একদম সুস্থ আছি। 😊😊
এই লেখাটি যখন লিখেছি, তখন আপনার ফ্লাইং সসারে করে এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সিতে যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু সেখানে না গিয়ে গেলেন এলিফ্যান্ট রোড। আফসোস করে আর কি হবে !! ঝটপট নতুন লেখা দিন। ব্যস্ততার অজুহাত দিয়ে কাজ হবেনা।
আসিফ ইকবাল
সাবিনা, ভালো আছ জেনে ভাল লাগছে। তোমার জ্বরের খবরে একটা ধাক্কা খেয়েছিলাম হঠাৎ করেই। নিজের যত্ন নিও। তুমি Si-Fi এতো পছন্দ করো! অবশ্যই লিখবো তাহলে। একটু সময় দিও।
🙂