ভূমিকা ঃ-
এতো সুন্দর একটা বিকেল আমার জীবনে আসবে, আমি জানতাম। কিন্তু কবে, সেটা জানা ছিলোনা। ডাক্তার আর ফিজিওর বাইরে আর কোথাও যাওয়া হয় খুবই কম। তবে কানাডাতে এখন গ্রীষ্মকাল। তাছাড়া আজকের আবহাওয়াটাও চমৎকার ছিলো। এমন আবহাওয়ায় বাসার ভেতরে বসে থাকতে ইচ্ছে করেনা মোটেও। তাই যখনই একটু সুযোগ পেয়ে যাই পথে নেমে পড়ি। আজও ফিজিও থেকে এসে আবার বাইরে বের হয়েছিলাম। আসলে সপ্তাহের দুইদিন আমি YMCA(Young Men’s Christian Association)-তে যাই সাঁতার কাটতে। আজ যখন যাচ্ছি বাসের ভেতর থেকে দেখলাম রাস্তার দু’পাশে প্রচন্ড ভীড়। ট্র্যাফিক সামলানো যাচ্ছেনা। দূর থেকে দেখে লাগছিলো মেলা’র মতো। ভাবলাম আজ শুক্রবার, সন্ধ্যা ছয়টা(যদিও দিনমণি তখনও পাটে বসেননি), উইকএন্ড বলে কথা! তাছাড়া উত্তর জেমস স্ট্রীটে প্রচুর বারসহ রেস্টুরেন্ট আছে, সেখানে নাচ, গান হয়। এক দারুণ আয়োজন হয়ে ওঠে। যাক এই ভীড়ের মধ্যেই বাস আস্তে আস্তে যাচ্ছে, কেউ মেজাজ গরম কিংবা বিরক্ত হচ্ছেনা। অবশেষে YMCA-তে পৌঁছে গেলাম।
সাঁতার শেষ করে shower নেবার পর খুব ক্ষিধে লেগে গেলো। আমার সাথে ছিলো তীর্থ, বললাম চল আজ হাক্কা চায়নিজ রেস্টুরেন্টে ডিনার করি। ও তো ভারী খুশী। তো এবার আর বাসে নয় হেঁটে রওয়ানা দিলাম। YMCA-এর অবস্থান ৭৯ জেমস স্ট্রীট দক্ষিণ, আর হাক্কা রেস্টুরেন্ট হলো একেবারে উল্টোদিকে ২৩৯ ইয়র্ক ব্যুলভার্ড। যদিও দূরত্ব প্রায় দেড় কিলোমিটার, কিন্তু আমার জন্য এখন অনেক দূরের পথ। যে পথ যেতে দশ/পনেরো মিনিট লাগতো, সেই পথ এখন পঁয়তাল্লিশ থেকে একঘন্টা লাগে হেঁটে যেতে। অবশেষে পৌঁছলাম।
এবারে খাদ্যের সাথে পাকস্থলীর সাক্ষাৎ করানোর কথা কি ভাববো! রান্নার গন্ধে নাসিকা পুরোই অস্থির। ওদিকে বেশ ভীড় আজ। তবে রেস্টুরেন্টের মালিক চেনেন আমাকে। জায়গা করে দিলেন। বসলাম। এবারে অর্ডার দিতে ডাকলাম। ছেলে নিলো প্রণ নুডলস আর আমি চিলি চিকেন ও নান। এই রেস্টুরেন্টের চিলি চিকেন আমার খুব প্রিয়। রেস্টুরেন্টের মালিক নিজেই এসে অর্ডার নিলেন। আর জানতে চাইলেন প্রণ নুডলস তো mild হবে। বললাম প্রণ নুডলস হবে ঝাল, আর চিলি চিকেন হবে একেবারে অল্প ঝাল। উনি তো অবাক! বললাম আমার ছেলে মারাত্মক ঝাল খেতে পারে, ওর মায়ের দৌঁড় খুব কম ঝালের একটা কাঁচামরিচ পর্যন্ত। উনি খুব হাসলেন। ওহ বলে নিই মালিক ভদ্রলোকের বাড়ী কিন্তু বাংলাদেশে। খাবার টেবিলে এলো। চিলি চিকেন এতো যে দুজনে খাওয়া যাবে। নানের সাথে আবার ভাতও ছিলো। আমার পক্ষে এতো খাওয়া সম্ভব নয়। নানটা শেষ করলাম। ভাত সম্পূর্ণই থেকে গেলো আর চিলি চিকেনও অর্ধেক। কী আর করা টেকআউট বক্সে করে নিয়ে এলাম। বিল এলো মাত্র বারো ডলার। আসলে আরোও বেশী। কিন্তু আমি উনাদের রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেয়েছি প্রায় আড়াই বছর পর(অবশ্য ডেলিভারী আনতে দেই প্রায়ই)। সেই কারণেই আমার জন্যে ছাড়। যদিও আমার মোটেও ভালো লাগেনি। জোর করেছিলাম বেশ, কিন্তু কোথায় কী!
খাওয়া শেষ করে আবার হাঁটা ধরলাম উত্তর জেমস স্ট্রীটের দিকে। সূর্য কিছুক্ষণ আগেই ডুবেছে। ঘড়ির কাটায় তখন রাত দশটা। মা-ছেলে দুজনে পথ চলছি। ওদিকে পটর-পটর, জ্বালানো, কাতুকুতু, দুষ্টুমী সবই চলছে ওই পথ চলার ভেতর।
(y)এবারে প্রশ্ন, বলুন তো কে ওই দুষ্টুমী আর জ্বালানোগুলো সহ্য করছে? \|/
#বাকীটুকু আগামী পর্বে সমাপ্ত… :=
হ্যামিল্টন, কানাডা
১৪ জুলাই, ২০১৮ ইং।
২৪টি মন্তব্য
ইঞ্জা
কে আবার আমার মামু ছাড়া 😀
আপু চিলি চিকেন উইত নান, ইশ জিভে জল এলো এখন কি করি, আমি খাবো…… ;(
নীলাঞ্জনা নীলা
দুষ্টুমি কি আমি-ই করি শুধু? ;(
এটা ঠিক না।😩
তাও বলছি, ভাইয়া আসুন এখানে। কতো খেতে চান খাওয়াবো।
ইঞ্জা
আপু খাওয়ার জন্য কানাডা কেন, আপনি দেশে আসলেই গলায় ন্যাপকিন লাগিয়ে বসে যাবো। :D)
নীলাঞ্জনা নীলা
ভাইয়া তারপর আবার বলবেন না যেনো ছুরি-চামচ দিয়ে খাবার কথা। দেশে যাবো হাত দিয়ে খাবো। 😀
জিসান শা ইকরাম
হুম বেশ সস্তাই খাবার, কানাডা যাবার পরে তোকে নিয়ে যাবো ঐ রেস্টুরেন্টে খাবার জন্য, ১২ ডলারের বেশী তো একারই লাগে খেতে।
পটর পটর তো তুই করো, সহ্য করছে তীর্থ 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
নানা তুমি এলে ওই রেস্টুরেন্টে কেন যাবো? আমার নানা তার নাত্নীকে ট্রিট দেবে, টরেন্টোর হাক্কা রেস্টুরেন্টে যাবো খেতে। 😃
পটর পটর ছাড়া আমাকে কেমন দেখায় বলো তো?🤐
শুন্য শুন্যালয়
আরম্ভ তো দারুন হয়েছে। পৃথিবীর সব শিল্পের মধ্যে আহার শিল্প সেরা। আর তুমিতো একটা খাদক, খাবার টেবিলের যা অবস্থার বর্ননা দাও থেকে থেকে।
অপেক্ষা করি তাহলে। আর শোন, বাচ্চা পেয়ে ছেলেটাকে এতো জ্বালিও না, বুঝলে?
নীলাঞ্জনা নীলা
হায়রে আপু, আমি একবেলা খাই ভরপেট। তাতেই আমাকে বলছো খাদক? আমাকে কেন তুমি এতো অ-ভালোবাসো বলো তো? ;(
ছেলেটাকে বলছো বাচ্চা? বাচ্চা তো আমি। আমাকে কোলে নেয়। 😀 \|/
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
এবারে প্রশ্ন, বলুন তো কে ওই দুষ্টুমী আর জ্বালানোগুলো সহ্য করছে?
কইনচান দেহি……পারলাম না।
শুরুটা খাবার দাবার সুইমিং ঘুরাঘুরি শেষটা দেহি কি হয়। -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
মনির ভাই আপনার ভাগ্নেটা খুব শান্ত। হাল্কা-পাতলা মজা করে। তা-ও সকলের সাথে না। ওর মা-বাবা, দুই/তিনজন বন্ধু আর দিদিমনি-ভাইয়ার সাথে। তাহলে বুঝে নিন কে জ্বালানোগুলো সহ্য করছিলো? 😀
ছাইরাছ হেলাল
আপনার পেটে জ্বালা ধরুক, অবশ্য ফুলে উঠুক তা বলছি না,
তবে দুষ্টা-দুষ্টি পুরোদমে চালু থাকুক, তা চাই-ই;
নীলাঞ্জনা নীলা
দুষ্টা-দুষ্টি যারা করেনা, তারা বড়ো বোরিং হয়। জানেন তো!
পেটে জ্বালা ধরেনি, ফুলেও ওঠেনি নতুন করে। 😀
ছাইরাছ হেলাল
ফুলবে, নিশ্চিত থাকুন।
নীলাঞ্জনা নীলা
স্টেরয়েড নিতে হয়। তাই ফুলেই আছি। 😀
ছাইরাছ হেলাল
ভগবান মাফ করুন!!
ফড়িং মানত করলাম।
নীলাঞ্জনা নীলা
ভগবান মাফ করবে মনে করেন? 😀
মায়াবতী
আপনার লেখার শুরু টা ই যেন পাঠক কে আটকে ফেলে তারপর শেষ পর্যন্ত যে কখন চলে যায় পাঠক তা টের ই পায় না আর শেষ টা ও তো শেষ নয় আপা ! অধির আগ্রহে থাকলাম পরের লেখার ।
নীলাঞ্জনা নীলা
আমার লেখা এতো সুন্দর একটা মন্তব্য পেলো?
প্রশংসা পেলে কার না ভালো লাগে!
অশেষ ধন্যবাদ আপনাকে মায়াবতী।
মোঃ মজিবর রহমান
খিদে পেয়েছে খামু!!!!
দুস্টমীর সুস্টামী দারুন লাগে যদিও মাঝে মাঝে বিরক্তি আসে।
নীলাঞ্জনা নীলা
মজিবর ভাই চলে আসুন।
তবে দেশের চিলি চিকেন মজার।
দুষ্টুমী ছাড়া আমাকে মানায় না যে!
মোঃ মজিবর রহমান
হুম।
নীলাঞ্জনা নীলা
🙂
মৌনতা রিতু
মেমনটাও খুব ঝাল খেতে পারে। আমার কাঁচামরিচ বেশ লাগে কামড় দিয়ে খেতে। কে আবার সহ্য করবে! তীর্থ। তুমি যা জালাও ওকে 🙁 আহারে! বাচ্চাটা।
শোনো, এখন আমার প্রচন্ড খিদে পেয়েছে। খেতে গেলাম। এতোক্ষণ তোমার খাওয়া দেখলাম। আমার শুধু রুটি আর সবজী ভাজি অপেক্ষা করছে ;(
নীলাঞ্জনা নীলা
আপু বলো কি মেমন ঝাল খায়! আর তুমি কাঁচামরিচ কামড়ে খাও!!! ঝাল খাই, তাও মাইল্ড ঝাল। আমি রান্নায় মরিচের গুড়ো ব্যবহার করিনা।
তীর্থকে বলেছি ওর প্রথম সন্তান হবে মেয়ে। আর তার চরিত্র হবে আমার মতো। খুব জ্বালাবে পটর পটর করে। 😁
কি সবজি? ইস রুটি-সবজি কী মজা! খাবোওওওও