
বছরগুলি ছিলো ১৯৭৫ থেকে ১৯৮০। তখন আমরা স্কুল ও কলেজে পড়তাম। ৬ষ্ঠ শ্রেনী থেকেই আমাদের মাঝে অনেকেই ধুমপানে অভ্যস্ত হয়। আবার অনেকে কলেজ জীবনে। নীচের ছবিগুলি আমাদের সময় সবচেয়ে উল্লেখ্যযোগ্য ব্রান্ড ও কম/উচ্চ মূল্যের সিগারেট ছিলো। ছবির বাহিরেও আরো বেশ কয়েকটি ব্রান্ড ছিলো। নেটে ছবি না পাওয়ার দরুন ছবি দিতে পারলাম না। আবার অনেকগুলির নামও এখন মনে নেই।
গোটা একটা সিগারেট কারো পক্ষে একা পান করা সম্ভব ছিলো না। এক শলাকা সিগারেট ৩/৪ জন বন্ধু মিলে ধুমপান করতাম। যেহেতু আমরা ছাত্র ছিলাম তাই স্টার ও রমনা ব্রান্ড ছিলো আমাদের ক্রয়ের মধ্যে। তখন স্টার সিগারেট পাওয়া যেত ১ টাকা ৫০ পয়সায় আর রমনা ছিলো ১ টাকা ১০ পয়সা। বাবার পকেটের টাকা হাতিয়ে নিতে ব্যার্থ হলে মাঝে মাঝে বিড়ি-ও পান করতাম।
আমাদের মাঝে যারা ধনীর দুলাল ছিলো তাদের পছন্দের ব্রান্ড ছিলো ক্যাপস্টান। আমাদের একটি অঘোষিত সংগঠন ছিলো। আমারা এসএসসি পাশ করার পর সকল বন্ধুরা এই সংগঠন করি। যার নাম ছিলো “বে-রুল” (BE-RULE) মানে আইন বহির্ভুত।
আমরা আইন বহির্ভুত কাজগুলো করতে পারদর্শী ছিলাম। তবে রাষেট্রর জন্য ক্ষতিকর কাজ করতাম না। যার জন্য অন্যান্য স্কুল বা কলেজের বন্ধুরা আমাদের সমীহ করে চলতো। তারা অগোচরে একে অপরকে বলতো দেখ দেখ বেরুল আইতাছে।
তবে আমাদের সময় ইভটিজিং ছিলো না।
আমাদের আড্ডা ছিলো ময়মনসিংহ টাউন হলে। ছুটির দিনগুলিতে আমরা টাউন হলের গাড়ি বারান্দায় মিলিত হতাম। দূর থেকে কোন বন্ধুর হাতে সিগারেট দেখলে চিৎকার করে জানান দিতাম ফার্ষ্ট বুক আমার। আরেক জন না দেখেই বলতো সেকেন্ড বুক আমার। অর্থাৎ পানকরা সিগারেট বহনকারী বন্ধুকে তার ধুমপানের পর সিগারেটের অর্ধেক অংশ ফার্স্ট বুককারীকে দিতে বাধ্য থাকিবে। পরের জন সেই সিগারেটের অর্ধেক পান করে সেকেন্ড বুককারীকে দিবে। এটাই ছিলো বে-রুলের কঠোর আইন। এই আইন ভঙ্গ করার শক্তি কারো ছিলো না।
আমাদের মাঝে যারা বেশী টেটনা ছিলো তারা আড্ডায় আসার আগেই কাজটি সেরে ফেলতো। আমরা তাদের মুখে গন্ধ পাওয়ার পর বুঝতাম। আড্ডায় কেউ সিগারেট জ্বালালে সেই টেটনারা তার ভাগ পেত না।
আহা…কি দিনগুলি ছিলো আমাদের। এমন দিনে কার না ফিরে যেতে মন চায়।
স্মৃতি বড়ই মধুর।
৪১টি মন্তব্য
আলমগীর সরকার লিটন
সত্যই এমন দিনগুলো ফিরে আসুক কিন্তু আর আসবে না মনে হলেই নদী টলমল শুরু করে——————–
শামীম চৌধুরী
একদম সত্যি বলেছেন ভাই। যায় দিন ভালো। আসে দিন খারাপ।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সত্যিই স্মৃতি বড়ই মধুর।
.
ক্লাস ফাইভে স্কুল ফাঁকি দিয়ে আমি আর আমার বন্ধু সাগর দুজন মিলে কার্লভাটের নিচে বসে খেয়েছিলাম পাতার বিড়ি।
মুখে যাতে কেউ গন্ধ সেজন্য মুখ ভালো করে ধুয়ে পেয়ারা পাতা চিবাতে থাকি।
বাড়িতে এসব দেখে আমার বড়বোন হাতে ধরে মুখে বিড়ির গন্ধ পেয়ে কানের মলা দিয়ে কান ধরে ওঠানামা করান তারপর থেকে আজও বিড়ি সিগারেট কিছুই খাওয়া হয় নি।
যেহেতু বাড়িতে কেউ’ই খায়না।
.
ভালো লাগলো দাদা।
সে স্মৃতি আজ হারিয়ে গিয়েছে।
শামীম চৌধুরী
স্বাধীনতার পর পর অনেকেই পাতার বিড়ি পান করতো। আমরাও পয়সার অভাবে সে সময় পাতার বিড়ি টেনেছিলাম। তবে এখন আর এই নেশাটা নেই।
ইঞ্জা
স্মৃতির পাতা খুলেই দিলেন যখন বলি, ৮২/৮৩ সালের কোনো এক সময় কাজিনদের সিগারেট খাওয়া যেন কাউকে বলে না দিই, এ জন্যই তারা আমাকে প্রথম গোল্ডলিফ ধরাই, এরপর নানার প্যাকেট মেরে তিন চারটা স্টার খাওয়ার সুযোগ হয়, স্কুলের প্রিফেক্ট হওয়ার সুবাদে ক্লাস নাইন টেনে থাকা কালিন কয়েকজন বন্ধু মিলে টিফিনের ফাঁকে বাইরে যেতাম চুরি করে, তখন খেতাম 555 এরপর কালান্তরে বেনসন আর এখন গোল্ডলিফ লাইট, ছাড়তেই পারলাম না ভাই।
শামীম চৌধুরী
ভাইজান
এই অভ্যেসটা আমাদের অনেকেই ছিল। তবে বর্তমানে আমি ধুমপান মুক্ত।
ইঞ্জা
তাই, কবে ছাড়লেন?
সুপায়ন বড়ুয়া
স্মৃতি পিছু টানে মোরে।
আপনি খেতেন সিগারেট আর আমরা প্যাকেট গুলো দিয়ে
খেলতাম বক খেলা।
রমনা ৫ স্টার ১০ আর ক্যাপ্ষ্টান ৫০ ধরে।
ভাল লাগলো। শুভ কামনা।
মনির হোসেন মমি
আমিও খেলেছি দাদা কিন্তু সেসময় সিগারেটের অভ্যাস হয়নি।
শামীম চৌধুরী
ভদ্র ছিলেন।
শামীম চৌধুরী
দাদা
আমরাও খেলেছি প্যাকেট ছিড়ে।
মনির হোসেন মমি
ধুম পান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর-কথাটি কোথাও লিখেননি প্রিয় অথচ স্মৃতির চাদরে ধুমপানের প্রচার করলেন।। যাগগে আমরা আমরাইতো আমিইতো আর সাধু না-সেই ক্লাশ টেন থেকে পাটশলা দিয়ে টুকটাক শুরু করে এখন একজন অভিজ্ঞ সিগারেট খোর।সিগারেটের নেশায় যারা পড়েছে তারা রাতদুপুরে হলেও সিগারেট আনতে সাত সমুদ্র তের নদীর পাড় যায়। চমৎকার স্মৃতি চারণ।
শামীম চৌধুরী
মমি ভাইজান
সেটা ফিচার ছবির প্যাকেটের গায়েই লেখা আছে।
পাটশলা দিয়ে আমরাও টেনেছি।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আপনার সংগঠনের নামটা দারুন লেগেছে। সাহস থাকলেই এমন নামকরণ করা যায়। ধূমপান নিয়ে মজার, চমৎকার একটি স্মৃতিজাগানিয়া পোস্ট দিলেন। অনেক ছোট থেকেই নেশাটা শুরু করলেন এটা তো ভালো লাগলো না ভাইয়া। নেশা টা পারলে এখন ছেড়ে দেন। আমার বাবা ও চেইন স্মোকার ছিলেন ২০১৭ তে অসুস্থ হবার পর এখন সে পুরোপুরি অধূমপায়ী। কোনভাবেই নেশাটা ছাড়াতে পারছিলাম না , নিষেধ করলে আরো বেশি করে খেতো। ভালো থাকবেন সবসময় শুভ কামনা রইলো
শামীম চৌধুরী
দিদিভাই
বর্তমানে আমি ধূমপান মুক্ত।
এবার খুশীতো?
সুপর্ণা ফাল্গুনী
খুব খুশী। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। ধূমপান মুক্ত থাকুন, অন্যকে ও ভালো থাকার সুযোগ দিন
রেজওয়ানা কবির
অসাধারণ স্মৃতিচারন ভাইয়া।অনেক সিগারেটের নামও জানলাম।ভালো লাগল।
শামীম চৌধুরী
অনেক কৃতার্থ আপু।
ছাইরাছ হেলাল
hsc পাশ করার পর 555 সিগারেত খেতে শুরু করি, তখন সম্ভবত দাম ছিল ২০/২২ টাকা।
আপনার ছবির সব সিগারেট দেখেছি, ঠিক মনে করতে পারছি। আমি না খেলেও আমার অনেক ক্লাশ ফ্রেন্ড নানা
ব্রান্ড খেত।
স্মৃতি কতই না মধুর আপনার/আমাদের।
সুরাইয়া পারভীন
যাক আপনি তাও একটু বড় হয়েই শুরু করেছেন।
বাব্বাহ আপনাদের সকলের প্রাপ্য কিন্তু
ছাইরাছ হেলাল
এখন ধূমপানে বিষ পানের পক্ষে থাকি। নিকোটিন ফ্রি জীবন।
শামীম চৌধুরী
মহারাজ বলে কথা।
শামীম চৌধুরী
সত্যিই ভাইজান
স্মৃতি বড়ই মধুর সবার।
মোঃ মজিবর রহমান
BE RULe ভাংবেনা
পরের জনই পাবে।
চমৎকার লেখা।
শামীম চৌধুরী
হা হা হা…
তখনতো সিগারেট কেনার পয়সা জুটানো ছিলো আলাদিনের চেরাগ। তাই একজন টানলেই শুরু হয়ে যেত বুক করা।
মোঃ মজিবর রহমান
আমি একবার চুরি কইরা একটার বিড়ি কিনা খেয়ে মাথা ঘুইরা অওরে ছিলাম মাঠের মাঝে।
সুরাইয়া পারভীন
সংগঠনের নাম দেখে বোঝা যাচ্ছে রুলস ভেঙ্গে বে-রুল করাই ছিল আপনাদের কাজ। দারুণ দারুণ 👏👏👏
শামীম চৌধুরী
বেরুল মানেই আইন বহির্ভুত।
ধন্যবাদ আপু।
তৌহিদ
বিড়ি কাহিনি বড্ড মজারু। আমাদের সময় K2, star এর প্যাকেট এরকম ছিলোনা। প্রথম গোল্ডলীফ ধরেছি ৯৬/৯৭ সালে। এরপরে বাংলা ফাইভ। স্কুল জীবনে অনেক মজার ঘটনা আছে সিগারেট নিয়ে।
আজ আপনার স্মৃতিও জানলাম। ভালো থাকুন ভাই।
শামীম চৌধুরী
সেই বয়সে এই নেশাটা থেকে খুব কম সংখ্যক কিশোরই মনে হয় মুক্ত ছিল। কি যে দিন ছিলো মোদের। যখনই মনে পড়ে তখনই ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকি।
ধন্যবাদ ভাই।
আরজু মুক্তা
স্মৃতি পিছু ছাড়ে না!
“মুছে যাওয়া দিনগুলি আজও হায় আমায় ডাকে! ” সেই গান মনে পরে গেলো।
আরজু মুক্তা
https://youtu.be/gYhv6BMwg9I
গান শোনেন।
শামীম চৌধুরী
খুবই সুন্দর একটি গান। আামার পছন্দের একটি গান।
খাদিজাতুল কুবরা
কৈশোর তারুণ্য মানেই দূরন্তপনা। লেখাটা এবং পড়ে বুঝলাম আমাদের প্রিয় ব্লগার ভাইয়েরা কতটা দূরন্ত ছিলেন। তবে এই ক্ষতিকর নি
শামীম চৌধুরী
জ্বী, কৌশর মানের দুরন্তপনা। কেউ এই দুরন্তপনার বাহিরে ছিলো না। কি ছেলে কি মেয়ে।
খাদিজাতুল কুবরা
কৈশোর তারুণ্য মানেই দূরন্তপনা। লেখাটা এবং পড়ে বুঝলাম আমাদের প্রিয় ব্লগার ভাইয়েরা কতটা দূরন্ত ছিলেন। তবে এই ক্ষতিকর নিরব ঘাতক বস্তুটি না খাওয়াই ভালো। আগে থেকে খেলেও ছেড়ে দেওয়া উচিৎ।
পুরনো স্মৃতি বড়ই মধুর!
ভালো থাকুন ভাইয়া
শামীম চৌধুরী
আপু
বর্তমানে আমি ধুমপান মুক্ত
খাদিজাতুল কুবরা
জেনে খুব খুশি হলাম।
সবসময় হাসিখুশি প্রাণবন্ত থাকুন।
আর সুন্দর সুন্দর অভিজ্ঞতা স্মতিকথা লিখুন।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ভাইয়া ছেড়ে দেন॥ এখন বয়স হচ্ছে। এটা ভালো না।
শুভ কামনা।
শামীম চৌধুরী
বর্তমানে আমি ধূমপান মুক্ত। এবার খুশীতো আপু?
ধন্যবাদ
জিসান শা ইকরাম
ভাই, প্যাকেটগুলো দেখে পুরাই নস্টালজিক হয়ে গেলাম।
ছাত্র জীবনে আমার স্কুল জীবনে আমার ব্রান্ড ছিল বৃষ্টল। আপনাদের মতই ভাগে খেতাম সিগারেট। কলেজ জীবনে ক্যাপস্টান দিয়ে শুরু করলেও শেষ পর্যন্ত ষ্টার হয়ে গিয়েছেল প্রতিষ্ঠিত ব্রান্ড।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরু হয়েছিল ষ্টার দিয়েই। এরপরে ফাইভ ফাইভ ফাইভ চলে এলো দুই আঙুলে।
“বে-রুল” এর কর্মকান্ডে মুগ্ধ হয়ে গেলাম 🙂
এমন একটি পোষ্টের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই।
শুভ কামনা।