আরমান হাসপাতালের জরুরী বিভাগের বারান্দায় পায়চারি করছে। ডাক্তার সাহেব এসে জানালেন রোগীর প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে,দুই ব্যাগ রক্ত শীঘ্রই নিয়ে আসতে,যতদ্রুত সম্ভব ততই মঙ্গল,রোগীর অবস্থা কিন্তু আশংকাজনক,আর হ্যাঁ রোগীর রক্তের গ্রুপ ও নেগেটিভ।আমাদের হাসপাতালে নেই, আপনি অন্য কোথাও থেকে নিয়ে আসেন।
ঢাকা শহরের তেমন কিছু জানা ছিলো না আরমানের,আর তার কাছে কোনো মোবাইল ও নেই,কি করবে চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়লো।হাসপাতালের বাহিরে এসে সে যেনো পথ খুঁজে পাচ্ছে না,কি করবে কোথায় যাবে,একবার ভাবলো সে নিজেই রক্ত দিবে,কিন্তু কীভাবে দিবে সে নিজেই জানে না তার রক্তের গ্রুপ কি!আরামন রাস্তার পাশে চিন্তিত অবস্থায় দাঁড়িয়ে।
হঠাৎ এক মধ্য বয়সী ভদ্রলোক আরমানের চেহারা দেখে জিজ্ঞেস করলেন,তোমার কি হয়েছে,এতো পেরেশান কেনো!আরমান ঐ মেয়েটির অবস্থা খুলে বললো ভদ্রলোককে।তখন লোকটি বললো ও আচ্ছা এখান থেকে একটু দূরে রক্ত পাওয়া যায়,গাড়িতে উঠো,আমি তোমাকে নিয়ে যাবো,আর হ্যাঁ সাথে টাকা পয়সা আছে তো?এই কথাটি শোনে আরমান তো হয়ে দাড়িয়ে পড়লো!হায়!মেয়েটিকে বোধহয় সে আর বাঁচাতে পারবে না।
মাত্র বিশ টাকার একটি ও পাঁচ টাকার দুটি নোট তার পকেটে ,আরমান এখন কি উত্তর দিবে ভেবে পাচ্ছে না,হঠাৎ তার মাথায় একটি বুদ্ধি আসলো,সে বললো আংকেল আসলে আমি আমার রক্ত দু’ব্যাগ বিক্রি করে ও নেগেটিভ দু’ব্যাগ নিয়ে আসবো,রক্ত ক্রয়ের পরিমান টাকা আমার কাছে নেই!লোকটি আরমানের কথায় বাকরুদ্ধ হলো! কিছু বলার ভাষা খুঁজে পেলোনা।
সেখানে যাওয়ার পর আরমানের রক্ত পরীক্ষা করে দেখে যায় তার রক্তই ও নেগেটিভ।আরমান চলে এলো হাসপাতালে,ডাক্তার সাহেবকে বললো আমার রক্ত নেন আমার রক্ত ও নেগেটিভ। ডাক্তার সাহেব বললেন,দেখেন আপনার কাছ থেকে এক ব্যাগ নেয়া যাবে, কিন্তু রক্ত আরো এক ব্যাগ লাগবে,আরমান বলে যা লাগে নেন আমার কাছ থেকেই, ডাক্তার সাহেব আরমানকে বললেন পাগলামো করবেন না, নিজের শরীরের অবস্থা দেখুন!শেষ পর্যন্ত আরমানের জোরাজুরিতে ডাক্তার সাহেব বাধ্য হলেন আরমানের কাছ থেকে দু’ব্যাগ রক্ত নিতে।
এ দিকে কে এক্সিডেন্ট করেছে তা নিয়ে কলেজে চলছিলো শোরগোল।অবশেষে সঠিক তথ্য পাওয়া গেল যে,কলেজের ম্যানেজমেন্টে কমিটির সভাপতি ফারুক সাহেবের মেয়ে নুসরাত।
কলেজের কয়েকজন শিক্ষক ও আহত নুসরাতের বাবা-মা কলেজে আসেন।নুসরাতের বাবা ফারুক সাহেব রক্ত দাতার সিটে আরমানকে দেখা মাত্রই তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন।প্রায় দু’ঘন্টা পর উনার জ্ঞান ফিরলে আরমানকে বুকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে কেঁদে বলতে লাগলেন!বাবা আরমান তুমি অপরিচিত একটি মেয়ের জন্যে রক্ত খুঁজে অস্থির। পকেটে টাকা না থাকায় নিজ রক্ত বিক্রি করে রক্ত আনতে গিয়েছিলে, আর আমি সে ঠিকানায় নিয়ে গিয়েছিলাম। অথচ আমার রক্তের গ্রুপ ও নেগেটিভ,চাইলে আমি সেখানে তোমাকে না নিয়ে রক্ত দিতে পারতাম,কিন্তু আমি আমার মেয়েকে ধোঁকা দিলাম!
আরমান নিচের দিকে চেয়ে চোখের জল ফেলছে” উপস্থিত সবার চোখেও জল,সবাই বাকরুদ্ধ!এখনো নুসরাতের জ্ঞান ফিরছে না।অনেক রাতে হয়ে গেছে,আরমান নুসরাতের মাকে বলে, খালাম্মা আমি এখন আসি,রাত অনেক হয়ে গেছে,আমার মেসে ঢুকতে সমস্যা হবে,তখন নুসরাতের মা বললেন কি বললে বাবা তুমি মেসে থাকো?আরমান মাথা নেড়ে হ্যাঁ জবাব দিলো,তখন নুসরাতের মা আরমানের একটি হাত টেনে নিজ মাতায় রেখে বললেন,এই আমার মাথা ছুঁয়ে কথা দাও আমি এখন একটি কথা বলবো তুমি তা ফেলে দিবে না!আরমান তখনও মাথা নেড়ে না জবাব জানালো,তিনি বললেন আজ থেকে তুমি আমাদের সাথে আমাদের বাসায় থাকবে,আরমান মাথা তুলে নুসরাতের মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে,এদিকে নুসরাতের বাবাও বলে উঠলেন, আজ থেকে আমার দুটি ছেলেও একটি মেয়ে,তুমি আমাদের সাথেই থাকবে।
আরমান কিছু বলতে পারেনি চোখের জল ফেলে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিল!নুসরাতের মা আরমানকে নিয়ে বাসায় চলে যান,এদিকে ভোরবেলা নুসরাতের জ্ঞান ফিরে,তার বাবার কাছ থেকে আরমানের সকল কিছু শুনে সে নিজে আবেগ আপ্লুত হয়ে পরে,চোখের জল অজান্তেই ঝরে।
সকালে আরমান ও নুসরাতের মা হাসপাতালে আসেন,নুসরাত ঘুমের ভান করে শুয়ে আছে।তখন নুসরাতের বাবা বললেন, বাবা আরমান! তুমি ওর পাশে গিয়ে বসো আর আমরা বাহিরে থেকে ওর কিছু ঔষধ নিয়ে আসছি, নুসরাতের মাকে নিয়ে বাহিরে চলে গেলেন।আরমান কিছুটা অস্থিরতা বোধ করছে,কেমন যেনো তার লাগছিলো।
নসুরাত তখন মোটামুটি সুস্থতা অনুভব করছে,সে কাঁথার ভিতর থেকে চুপিচুপি মুখ বের করে আরমানের এই অস্থিরতা ও অস্বস্তি ভাব দেখে মুচকি মুচকি হাসতেছে।
হঠাৎ বলে উঠলো এই যে মিস্টার!বাহিরের আলো আসছে দরজাটি লক করেন প্লিজ! ঘুমে ডিস্টার্ব হচ্ছে তো।আরমান নিরবে গিয়ে দরজা লক করে পূর্বের জায়গায় এসে বসলো। কিছুক্ষণ পর নুসরাত আবার বলে উঠলো,এই যে মহান! সুযোগ নেওয়া হচ্ছে নাকি, এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো আমার দিকে। আশ্চর্য! তখন আরমান বলে উঠলো আরে যা তা বকছেন কেনো,আমি কারো দিকে চেয়ে নই,জানালার দিকে চেয়ে আছি, আর আপনি তো কাঁথার নিচে মুখ ঢেকে বলে যখন নুসরাতের দিকে ফিরলো, তখন দেখতে পেলো নুসরাত তার দিকে তাকিয়ে আছে,একে অপরের দিকে অপলক তাকিয়ে রইলো,নুসরাত নিরবতা ভেঙ্গে বললো,আরে জানালার দিকে দেখেন এদিকে নয়,আরমান কেমন অপ্রস্তুত হয়ে গেল! আরমান জানালার দিকে চেয়ে আছে নুসরাত আরমানের হাতটি শক্ত ধরে বলতে লাগলো,কে তুমি,কি করো,কে আছে, কি নাই কোথায় থাকো?এসব কিছুই প্রশ্ন করবো না,শুধু একটা কথা বলবো,আজ পর্যন্ত অপরিচিত ছেলেদের থেকে সবসময়ই যথেষ্ট দূরত্ব রেখে চলছি।কারো সাথে আড্ডা তো অনেক দূরে, অপ্রয়োজনে কথা বলেছি বলে মনে পড়ে না। সেই আমার শরীরে আজ অপরিচিত এক পুরুষের রক্ত ,সে তোমারি,জানি অবশ্যই এটা পাপ নয়।
জানো সকালে বাবার কাছ থেকে সব শোনার পর,তোমার রক্ত শুধু আমার দেহে নয় তুমি নিজেই আমার অন্তরে বহমান,তাই আমি চাই তুমিই আমার প্রথম শেষ ও সব সময়ের জন্য একমাত্র পুরুষ হও।দয়া করে আমাকে ফিরিয়ে দিয়ো না।অবৈধ প্রেম নয় ভালোবাসা দিয়ে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করবে বল! বাবাকে বলছি আমি সুস্থ হওয়ার পরই আমাদের বিয়ে সম্পন্ন করে ফেলতে,তুমি যদি মানা না করো,তাহলে সব খরচ বাবা বহন করবে। তুমি চাইলে বিয়ের পর তোমার যেখানে ইচ্ছে নিয়ে যেতে পারো। নতুবা আমাদের বাসায় দুজনই থাকবো, প্লিজ বলো বিয়ে করবে!
আরমান কি জবাব দিবে বুঝে উঠতে পারছে না!আমাকে ভাবতে দাও বলে রুম থেকে বেড়িয়ে আসে!
চলবে,,
১৯টি মন্তব্য
শাহরিন
শুরুটা ভালো লেগেছে।
হাফেজ আহমেদ রাশেদ
ধন্য হলাম।ধধন্যবাদ
তৌহিদ
আরমান আর নুসরাতের মিষ্টি প্রেম কথা ভালো লাগছে পড়তে। আরমানও কি নুসরাতকে ভালোবাসে? লেখকই ভালো জানেন।
ভালো লিখেছেন ভাই। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
হাফেজ আহমেদ রাশেদ
ভালো লেগেছ জেনে ভাল্লাগছে।।অশেষ ভালোবাসা
ছাইরাছ হেলাল
ভালই এগিয়ে চলছে,
তবে বিয়ের প্রস্তাবটি একটু তাড়াতাড়ি হয়ে গেল বলে মনে হচ্ছে কিন্তু।
হাফেজ আহমেদ রাশেদ
একটু ভিন্নতর হতে পারে সুন্দর মনের মানুষদের কাজ।।ধন্যবাদ জানবেন সাথেই থাকুন গল্পের
জিসান শা ইকরাম
এই পর্বেই পরিণতির দিকে নিয়ে গেলেন,
গল্প ভালোই লেখেন আপনি।
সামান্য একটু ত্রুটিঃ
হাসপাতালে কাঁথা ব্যবহার হয়না, কম্বল ব্যবহৃত হয়। অবশ্য নুসরাত এর বাসা থেকে বাবা মা কাঁথা নিয়ে আসতে পারেন।
মাথা শব্দটি দুবার মাতা টাইপ হয়েছে। টাইপিং মিসটেক বলা যায় একে।
পরের পর্ব দ্রুত চাই,
শুভ কামনা।
হাফেজ আহমেদ রাশেদ
ভালোবাসা জানবেন,, পরিণতি আগামী থাকতেও না,পারে,,এই, মোড় ভিন্নতর কোনো দিকে যেতেই পারে,,প্রথম দিকটা,মনে রাখলেই,হবে
আরজু মুক্তা
এতো তাড়াতাড়ি শেষ পরিণতি চাইনি।
আর একটু বড় হলে ভালো হতো।
শুভকামনা।
হাফেজ আহমেদ রাশেদ
গল্পের প্রথমদিক মনে আছে তো আপুনি, অবশ্য আছে।তো রহশ্য তো থাকতেই পারে,,,,,হয়তো ভিন্নতর আগামী পর্বে হতে পারে শেষ নয়,আগামী পর্বে ও
আরজু মুক্তা
রহস্যই চাচ্ছি।
সাবিনা ইয়াসমিন
এটা অবশ্যই পরিনতি না। বিবাহিত আরমান তার স্ত্রীর সাথে কিভাবে পরিচিত আর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলো, তারই স্মৃতিচারন করছে। আমার মনে হচ্ছে, আপনি এখন গল্পের সূচনাটা পাঠকের মধ্যে গেথে দিচ্ছেন, মুল গল্প আরও পরে শুরু করবেন। গল্পের প্রাথমিক রুপ ভালো হচ্ছে।
গত পর্বের চেয়ে এবারের লেখাটিতে স্বাচ্ছন্দ এসেছে। প্যারা দেয়াতেই গল্পটা খুব সহজ করে পড়া গেল। টাইপ করার সময় আরেকটু সতর্ক হলে বানান ভুলের সম্ভাবনা কমে যাবে। দাড়ি, কমা দেয়ার পর এক ক্লিক পরিমান স্পেচ রাখুন। সুন্দর দেখাবে।
ভালো থাকবেন। শুভ কামনা 🌹🌹
হাফেজ আহমেদ রাশেদ
আকাশ সম ভালোবাসা জানবেন,, শ্রদ্ধা রইলো সাথে।অনুপ্রাণীত হলাম,শুভেচ্ছা ও শুভ রাত্রি
মনির হোসেন মমি
চমৎকার ঘটনা প্রবাহে গল্প চলছে।দেখা যাক এর পর কি হয়।
হাফেজ আহমেদ রাশেদ
অশেষ ধন্যবাদ ও ভালোবাসা ভাই
মোঃ মজিবর রহমান
আংকেল আসলে আমি আমার রক্ত দু’ব্যাগ বিক্রি করে ও নেগেটিভ দু’ব্যাগ নিয়ে আসবো,রক্ত ক্রয়ের পরিমান টাকা আমার কাছে নেই — দারুন ভাবনা।
দারুন প্রেম কাহীনি ভাল লাগছে চালিয়ে যান।
হাফেজ আহমেদ রাশেদ
অনুপ্রাণীত হলাম।
হতে পারে প্রেম কাহিনী থেকেও ভিন্ন কিছু অঅপেক্ষা করছে,।।ভালোবাসা জানবেন
মোঃ মজিবর রহমান
রাশেদ ভাই, আমি গল্প লিখতে পারিনা। আপনাদের টাই পড়া হয়। আশা করি আবার পড়া হবে।
হাফেজ আহমেদ রাশেদ
শুভ কামনা ভাইয়া