
কুমড়ো ফুলে ফুলে
নুয়ে পড়েছে লতাটা,
সজনে ডাঁটায়
ভরে গেছে গাছটা,
আর, আমি ডালের বড়ি
শুকিয়ে রেখেছি—
খোকা তুই কবে আসবি!
– আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর এই কবিতায় কুমড়ো, সজনে ,পুঁই লতার কথায় মায়ের অপেক্ষা; যুদ্ধরত খোকার জন্য মায়ের আকুতি।
কুমড়ো ফুল,পুঁই লতা,সজনে ডাটাসহ নানা হারাতে বসা সুস্বাদু সবজি এখন আমরা নিজেরাই চাষ করছি। বাসা বাড়ির ছাদ, বাড়ির পাশের পতিত জমি কোনটাই ফেলে রাখছি না। নিজে নিজেই পুষ্টিগুন সম্পন্ন এইসব সবজি চাষ করে নিজেদের চাহিদা মেটাচ্ছি। ফলেই আজ আমাদের অনেক সফলতা।
সোনার বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিবুর রহমান কন্যা আমাদের প্রধানমন্ত্রী ঘোষনা দিয়েছেন, পতিত জমি ফেলে রাখা যাবে না। তার কথায় কৃষকও ঝাঁপিয়ে পরেছেন। কৃষকের এমন ভালোবাসার ফলেই আমরা গিনেস বুক অব রেকর্ডস এ নাম লিখিয়ে ফেলেছি।
ধুমধারাক্কা চলছে কৃষির আধুনিকায়ন। বেডপ্লান্টারের মত সফল উদ্যেগে চাষ হচ্ছে সহজে ও দ্বিগুণ। শত শত একর নদীর পাড়ের চর জমিতে সবজি চাষ হচ্ছে। কৃষির এমন বিপ্লব কখোনোই কৃষিনায়ক ছাড়া সম্ভব নয়।
কৃষির এমন বিপ্লব ঘটানো স্বপ্নদ্রষ্টা কৃষকদের খবর রাখাও জরুরী। কারন ‘কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে’-একথা বোঝা যায় যখন বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় সবজির দাম আকাশ ছোঁয়া হয়ে যায়। বাঙ্গালীয়ানায় যখন ঘাটতি পরে।
সম্প্রতি খবরে দেখা যাচ্ছে, বিপুল পরিমান চাষ করা কুমড়ো যার বাজার মূল্য নেই। কদিন আগে ফুলকপি, বাঁধাকপি গরুতেও খায়নি।বেগুন সহ অন্যান্য সবজি চাষ করে কৃষক খরচও তুলতে পারেনি। এমনটা হবার পেছনে কারন কি?
সবজিতে কুমড়ো আজও যার সমান কদর। এই কুমড়ো ফুলের বড়ি যা দূর্লভ ও লোভনীয়। কুমড়ো যে কোন ভাবেই খাওয়া যায়। যেমন ধরেন- পুরুষ ফুলগুলো পরাগায়ণ শেষে ঝরে যায়। তা কাজে লাগাতে বেটে সুন্দর বড়ি বানানো যায়। যা মাছের সাথে রান্না করলে অতুলনীয়।কুমড়োর বিচি ভর্তা অতুলনীয়।
আমার এক জাক্তার আন্টির মুরগীর গিলা,কলিজা,পা দিয়ে কুমড়ো রান্না অসাধারণ! মায়ের হাতের কুমড়োর পায়েস খেলে স্বাধ যেন লেগেই থাকে। এছাড়াও গরুর মাংসে কুমড়ো রান্না, পেয়াজের বিকল্প হিসেবে, চাটনি, তরকারীর রসালো ঝোল বানাতে কুমড়ো ব্যবহার করা যায়। মোটকথা, লিখলে এ জীবনেও কুমড়োর গুনগান শেষ হবে না।
কিন্তু এত গুণে গুনান্বিত হবার পরও সেই কুমড়োর বাজার মূল্য নেই। কুমড়ো তার মর্যাদা হারাতে বসেছে। কৃষক লাভের মুখ দেখছে না। এমন অবস্থায় রাস্তার পাশে কুমড়ো ফেলে দিতে হচ্ছে। অথচ এক একটি কুমড়ো নাকি একশ কেজির উপরেও হয়।
প্রবাদ বাক্য সত্যে রুপ নিচ্ছে- “অতি বড় ঘরনী না পায় ঘর; অতি বড় সুন্দরী না পায় বর”।
আমার প্রিয় মানুষ বলছিলেন, কৃষক যদি কুমড়োর দাম না পায়। তাহলে আমরা কেন ২০/২৫ টাকা কেজি কিনি? ভাববার বিষয়, ক্রেতা কিনছে ন্যায্য মূল্যে কিন্তু কৃষক ঠকছে দাম পাচ্ছে না।
কারন হল, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ব। কৃষকের কাছ থেকে যারা কাঁচামাল খরিদ করে তারা হল পাইকার। তারা নিয়ে এসে দেয় পাইকারী বাজারে। লাভ ও পরিবহন খরচসহ দাম নিয়ে তারা বিক্রি করে। এবার খুচরা দোকানী কিনে এনে আমাদের মত বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে। আর তখুনি দাম বেশি হয়ে যায়। অথচ কোথাও কোথাও পাইকারী আর খুচরা বাজারের তফাত শুধু ছাউনির ভেতর বাহির।
আর একটা মজার বিষয় হল, কৃষকের কাছ থেকে পাইকার কিনে নেয় প্রতি পিচ হিসেবে আর বাজারে আসতে আসতেই আমরা কিনি কেজি হিসেবে। ফলে কৃষক ও ক্রেতা দুপক্ষই ঠকছে।
কুমড়ো সহ যে কোন সবজি চাষই এখন ব্যয়বহুল। দিনমজুরের উচ্চ দাম দিতে হয়। এদিকে সার, বীজ, কীটনাশকের দাম চড়া। কুমড়ো চাষে প্রচুর মাছির উপদ্রব হয়। একবার মাছি হানলেই কুমড়ো পঁচে যায়। তাই কৃষককে ফাঁদ পাততে হয়, প্রতি সপ্তাহে কীটনাশক স্প্রে করতে হয়। এতে অনেক খরচ পরে যায়। এবং অধিক ফলন হবার পরও কৃষক মূল্য পায় না।
এ থেকে পরিত্রান পাবার জন্য সরকারকে আন্তরিক ও নজরদারী বাড়াতে হবে। আমরা আশা করব সরকার রপ্তানী ও সংরক্ষনের ব্যবস্থা করবে। এছাড়াও বড় বড় শহরগুলোতে যাওয়ার সময় পরিবহন চাঁদার কারনেও কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাছাড়া ক্রেতাদেরও অধিক মূল্যে কিনতে হয়। এসব বন্ধেও বিশেষ নজর দিতে হবে। তা না হলে কৃষক উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে এবং সবজি চাষ বন্ধ করে দেবে। তখন আমাদের অতি উচচদামে সবজি কিনে খেতে হবে। এবং মাঝেমাঝেই যে সবজি বাজারে আগুন লেগে যায় তা ঘটতেই থাকবে।
আমাদের সবুজ বাংলা যার রুপে মুগ্ধ হয়ে পর্যটকরা একসময় হুমডি খেয়ে পড়েছিলেন। তাদের বর্ননায় পাওয়া যায় এদেশের সুজান- সুফলার গল্পগাথা। অনেক আগে টাকায় আটমন চাল পাওয়া যেত তখনও কিন্তু কৃষক ঠকেনি বরং লাভের মুখেই ছিল। তাই শুধু চাষে নয় কৃষক বাঁচাতে সংরক্ষন ও সুষ্ঠু পরিকল্পনা জরুরী।
ছবি- নেট থেকে।
২০টি মন্তব্য
পপি তালুকদার
বিষয় টা নিয়ে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। সবজি কিংবা ফলের ক্ষেত্রে শোনা যায় বাম্পার ফলন হয়েছে অথচ কিনতে গেলে আগুন ছোয়া দাম।আমরা চাই মূল কৃষক যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
ভালো লিখছেন আপু।
রোকসানা খন্দকার রুকু
বাম্পার ফলন হলেই দাম কমে যায় আর ফলন কম হলেই আর বাজারে পাওয়া যায় না। মহা সংকট!
ধন্যবাদ আপু।
হালিমা আক্তার
আমাদের দেশে নিরবে কৃষি বিপ্লব ঘটে যাচ্ছে | আগে যেখানে পতিত জমি ছিল , এখন সেখানে না না ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে | এই কৃষি বিপ্লব আমাদের খাদ্য ঘাটতি পূরণ করছে | কিন্তু গরিব কৃষক গরিব ই থেকে যাচ্ছে | ভাগ্যের চাকা তার দিকে ঘুরেনা | সমসাময়িক বিষয় নিয়ে খুব সুন্দর লিখেছেন | শুভেচ্ছা রইলো |
রোকসানা খন্দকার রুকু
কৃষি বিপ্লব মানে হল কৃষকের শষ্য রপ্তানী কিংবা সংরক্ষন করে তাদের বাচিয়ে রাখা। কিন্তু আদতে তা হয় না।
সরকার সদয় হোক!
ধন্যবাদ আপু।
তৌহিদ
এদেশে কৃষকেরা তাদের ফসলের ন্যায্যমুল্য পাচ্ছেননা। এরকারন কৃষক থেকে বিক্রেতার মাঝখানে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌড়াত্ব, রাস্তায় ফসলের ট্রাকে চাঁদাবাজি সহ নানান কর্ম।
কৃষকের বাজার সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই যা চরম দূর্ভাগ্যজনক। এই অবস্থার উত্তরণ জরুরী। কৃষক বাঁচলে বাঁচবে দেশ।
সুন্দর পোস্ট লিখেছেন।
রোকসানা খন্দকার রুকু
কৃষক ও ক্রেতা দুশ্রেনীই ঠকছে। সরকারী পদক্ষেপ জরুরী।
ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা ভাইয়া।
ছাইরাছ হেলাল
কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে খুব ই সত্য, কিন্তু আমরা নিরন্তর তাঁদের দুর্দশা আর ভোগান্তির কথাই শুনি।
জানি না কী করে এর উত্তরণ ঘটবে।
রোকসানা খন্দকার রুকু
সরকারী পদক্ষেপ জরুরী। ধন্যবাদ ও শুভকামনা ভাইয়া।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
কৃষক তার খরচটাও তুলে আনতে পারে না আর আমরা ক্রেতারা উর্ধ্বমূল্যে নাজেহাল প্রতিনিয়ত। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যে সরকার যেন দর্শক। ভালো লাগলো বিষয়টি। অফুরন্ত শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো
রোকসানা খন্দকার রুকু
আপনার মন্তব্যে বরাবর অনপ্রানিত হই। ধন্যবাদ ও শুভকামনা সবসময়।
রেজওয়ানা কবির
আমি লেখার টপিকই খুঁজে পাই না, আর তুমি কুমড়ো নিয়ে কত সুন্দর সমসাময়িক কৃষকদের দূর্দশা তুলে ধরেছো, আসলে যে লিখতে পারে সে সব বিষয় নিয়েই পারে। আমার কুমড়ো দিয়ে গরুর মাংস খুব প্রিয়। শুভকামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
লিখতে শুরু কর হয়ে যাবে। কলম না ধরেই বলছ, তাহলে হবে?
ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইল।
সাবিনা ইয়াসমিন
আজকেও কুমড়া কিনেছি ২৫ টাকা কেজি দরে। দুই কেজি কিনলাম, সম্পুর্ন কুমড়াটির ওজন দশ কেজির উপরে ছিলো, এত বড় কুমড়া কিনে একবারে খাওয়া সম্ভব হবে না। এখানে (ঢাকায়) বেশিরভাগ মানুষেরাই বড় সাইজের কুমড়া গুলো এভাবে কেনে। যদি পিস হিসেবে কিনতাম আর এই দাম সরাসরি কৃষকের হাতে তুলে দিতে পারতাম তাহলে কোন কুমড়া চাষীই অর্থকষ্টে থাকতো না। কিন্তু বাস্তবতা চলে গেছে মধ্যস্বত্ব ভোগীদের দখলে। কৃষি, কৃষক আর গ্রাহকের মাঝে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এদের দুর্নিবার লোভ। এদের থেকে পরিত্রাণ না পাওয়া পর্যন্ত মনে হয়না কৃষকের মুখে হাসি ফুটবে। আর আমরা ক্রেতারা সব্জি বাজারের আগুনে এভাবেই পুড়তে থাকবো।
সুন্দর পোস্ট দিলেন,
শুভ কামনা 🌹🌹
রোকসানা খন্দকার রুকু
অসাধারণ মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা রইল।
দেয়াল সরানোর ব্যবস্থা না হলে সমস্যা চলতেই থাকবে।
অনেক ভালোবাসা রইল।
বোরহানুল ইসলাম লিটন
অনেক মূল্যবান উপস্থাপন।
মধ্যস্বত্বভোগীরাই কৃষকের বারোটা বাজিয়ে দেয়।
একই পণ্য যখন বারে বারে দ্বিগুণ দামে কয়ের হাত বদল হচ্ছে
তখন সাধারাণ ক্রেতার কাছে আসছে তা অনেক উচ্চমূল্যে।
সিন্ডিকেটেই বাজিমাত উৎপাদনকারীর মাথায় হাত।
আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা রেখে গেলাম নিরন্তর।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আপনার জন্যও আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ রইল।
আরজু মুক্তা
সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে আরও তদারকি বাড়াক।
কৃষক লাভবান হোক।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। ভালোবাসা অবিরাম।
হৃদয়ের কথা
কৃষক তাদের শ্রম দিয়ে আমাদের বাঁচিয়ে রাখে, অথচ আমরা কৃষক বান্ধব কখনোই হতে পারিনি। ফসলের সঠিক মূল্য না পেলে কৃষক এক সময় চাষাবাদ বন্ধ করে দেবে, এতে আমরা এক কঠিন সমস্যায় পরে যেতে পারি।
রোকসানা খন্দকার রুকু
জী একদম ঠিক বলেছেন।
ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।