সাম্প্রদায়িকতা, ভাবনার সংকীর্ণতা ও বৈচিত্র

শিপু ভাই ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, শনিবার, ০৬:৩৫:৪০পূর্বাহ্ন বিবিধ ২২ মন্তব্য

ঘটনাঃ মোঃ মনির হোসেন নামের একটা ছেলে শুক্রবার রাতে ছিন্তাইকারীদের ছুরিকাঘাতে নিহত হয়। নিহত ছেলেটা কোন এক গার্মেটসে কাজ করতো। তার বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার দীঘলি গ্রামে। পরদিন পত্রিকার নিউজ-“ছুরিকাঘাতে পোষাক শ্রমিক নিহত”।
ফলাফলঃ গার্মেন্টস বন্ধ, পোশাক শ্রমিকদের দ্বারা গার্মেন্টস ফ্যাক্টিরি ও রাস্তায় কিছু গাড়ি আর দোকানে ভাংচুর। রাস্তা বন্ধ। পুলিশেষ লাঠিচার্চ। কিছু শ্রমিক গ্রেফতার।
————এটা কিন্তু একটা সাম্প্রদায়িক ঘটনার উদাহরণ। ঐ ছেলেটা “পোষাক শ্রমিক” সম্প্রদায়ের বা তাকে ঐ সম্প্রদায়ের লোক হিসেবে পরিচিত করানো হয়েছে।
মজার বিষয়- নিহত ছেলেটাকে আরো অনেক সম্প্রদায়ে পরিচিত করা যায়-
যেমনঃ- ছেলেটাঃ
*এশিয়
*ভারতিয় উপমহাদেশীয়
*বাংলাদেশী
*বাঙ্গালী
*বিক্রম্পুইরা
*মুসলমান
*সুন্নি
*হানাফী
*পুরুষ
*অশিক্ষিত
*ডানহাতি
*দরিদ্র
*নিট গার্মেন্টস শ্রমিক

আচ্ছা, এইটা বাদ দেই। এরকম করে আরো অনেক সম্প্রদায়/দল/গোষ্টিতে ফেলা যাবে নিহত মনির কে।

ধরি, মুন্সিগঞ্জের কতিপয় লোক “স্বাধীন বিক্রমপুর” এর দাবীতে আন্দোলন করছে। সরকার তাদের দমন করতে চেষ্টা করায় তারা সহিংস আন্দোলন (!?) শুরু করছে। তারা এখানে সেখানে হামলা চালাচ্ছে। তারাও নানা দল উপদলে বিভক্ত। একদিন কিছু দুর্বৃত্তের সশস্ত্র হামলায় “মোখলেস” নামে একজন নিহত হল। কিন্তু তাদের সংগঠনের প্রচলিত নাম “এন্টি জেলা গোষ্ঠি”। সে জেলা বিরোধী হলেও সবসময় শুধু বিক্রমপুর তথা মুন্সিগঞ্জেরই সমালোচনা করতো ও কুতসিত গালিগালাজ করতো বিক্রমপুরবাসীদের। মোখলেস চাইতো দেশে আলাদা আলাদা জেলা থাকবে না। পুরা বাংলাদেশ একটা মাত্র জেলা হবে। “জেলা পদ্ধতি”র বিরোধিতা করে পত্রপত্রিকায় ও অনলাইনে লেখালেখি করা ও বিক্রমপুর/বিক্রম্পুরবাসী নিয়ে আজে বাজে কটুক্তি করাই ছিল মোখলেসের কাজ। তাই প্রায় সবার ধারণা এটা নিশ্চই কোন বিক্রমপুইরার কাজ। হত্যাকান্ডের বেশ খানিক সময় পর টুইটারে “বিক্রমপুইরা পোলা ৮০ টাকা তোলা” নামের একটি গ্রুপ মোখলেস হত্যার দায় স্বীকার করে টুইট করে। এরাও “স্বাধীন বিক্রমপুর” আন্দোলন করে ।

“এন্টি বিক্রমপুর গোষ্ঠি”র প্রতিক্রিয়াঃ বিক্রম্পুইরা খা*কির পো*রা খারাপ। ওগো মায়রে বাপ!!! বিক্রমপুইরাগো সব এদেশ থিকা খেদানো হোক।

ঢাকায় স্থায়ী বিক্রমপুরের কিছু লোকের প্রতিক্রিয়াঃ আমি বিক্রমপুরে আর যামু না। আমি ঢাকায় সেটল করে ভালো করেছি। বিক্রমপুরে জন্ম নেয়ায় আমি লজ্জিত।

টাইপ-১ বিক্রমপুর বাসীর প্রতিক্রিয়াঃ মোখলেস হত্যার বিচার হওয়া উচিত। কোন হত্যাকান্ডই সমর্থন যোগ্য না। বাট মোখলেসের উচিত হয় নাই বিক্রমপুর নিয়া আজেবাজে কথা বলা।

টাইপ-২ বিক্রমপুরবাসীর প্রতিক্রিয়াঃ জানোয়ার হত্যার আবার বিচার কী?! মোখলেস বেশি বাইড়া গেছিল তাই শাস্তি পাইছে। মোখলেসের চ্যালাপ্যালাদেরও সাইজ করা উচিত।

টাইপ-৩ বিক্রমপুরবাসীর প্রতিক্রিয়াঃ স্বাধীন বিক্রমপুর একটা রঙ কনসেপ্ট। এটা সকল বিক্রমপুরবাসীর মতামত নয়। যারা এটা করেছে তারা প্রকৃত বিক্রমপুরী না।

টাইপ-৪ বিক্রমপুরবাসীর প্রতিক্রিয়াঃ মোখলেস কেডা?

টাইপ-৫ বিক্রমপুরবাসীর প্রতিক্রিয়াঃ মোখলেস ভাইয়ের চেতনা আমরা বৃথা যেতে দিব না। তিনি আঞ্চলিকতা মুক্ত বিশ্বের স্বপ্ন দেখেছেন। কালকা গুলিস্তানে আমরা মোমবাত্তি জ্বালামু।

অন্য জেলাবাসীর টাইপ-১ প্রতিক্রিয়াঃ- বিক্রমপুইরারা মানবতার শত্রু তা আবারো প্রমানিত হল।

মোখলেসের জেলাবাসীর প্রতিক্রিয়াঃ- আর কত? আর কত প্রান গেলে শান্ত হবে বিক্রমপুইরারা?! আমরা এই দেশে জন্ম নিয়ে ভুল করেছি। আমরা পাশের জেলায় চলে যাব।

“এন্টি জেলা গোষ্ঠি”র সমর্থকের প্রতিক্রিয়াঃ এক মোখলেসের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে হাজারো মোখলেস জন্ম নিবে।

নব্য “এন্টি জেলা গোষ্ঠি”র অল্পবয়সী সদস্যের প্রতিক্রিয়াঃ “আমিই মোখলেস”!!!

৫৭৯জন ৫৭৯জন
0 Shares

২২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ