ঘটনাঃ মোঃ মনির হোসেন নামের একটা ছেলে শুক্রবার রাতে ছিন্তাইকারীদের ছুরিকাঘাতে নিহত হয়। নিহত ছেলেটা কোন এক গার্মেটসে কাজ করতো। তার বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার দীঘলি গ্রামে। পরদিন পত্রিকার নিউজ-“ছুরিকাঘাতে পোষাক শ্রমিক নিহত”।
ফলাফলঃ গার্মেন্টস বন্ধ, পোশাক শ্রমিকদের দ্বারা গার্মেন্টস ফ্যাক্টিরি ও রাস্তায় কিছু গাড়ি আর দোকানে ভাংচুর। রাস্তা বন্ধ। পুলিশেষ লাঠিচার্চ। কিছু শ্রমিক গ্রেফতার।
————এটা কিন্তু একটা সাম্প্রদায়িক ঘটনার উদাহরণ। ঐ ছেলেটা “পোষাক শ্রমিক” সম্প্রদায়ের বা তাকে ঐ সম্প্রদায়ের লোক হিসেবে পরিচিত করানো হয়েছে।
মজার বিষয়- নিহত ছেলেটাকে আরো অনেক সম্প্রদায়ে পরিচিত করা যায়-
যেমনঃ- ছেলেটাঃ
*এশিয়
*ভারতিয় উপমহাদেশীয়
*বাংলাদেশী
*বাঙ্গালী
*বিক্রম্পুইরা
*মুসলমান
*সুন্নি
*হানাফী
*পুরুষ
*অশিক্ষিত
*ডানহাতি
*দরিদ্র
*নিট গার্মেন্টস শ্রমিক
আচ্ছা, এইটা বাদ দেই। এরকম করে আরো অনেক সম্প্রদায়/দল/গোষ্টিতে ফেলা যাবে নিহত মনির কে।
ধরি, মুন্সিগঞ্জের কতিপয় লোক “স্বাধীন বিক্রমপুর” এর দাবীতে আন্দোলন করছে। সরকার তাদের দমন করতে চেষ্টা করায় তারা সহিংস আন্দোলন (!?) শুরু করছে। তারা এখানে সেখানে হামলা চালাচ্ছে। তারাও নানা দল উপদলে বিভক্ত। একদিন কিছু দুর্বৃত্তের সশস্ত্র হামলায় “মোখলেস” নামে একজন নিহত হল। কিন্তু তাদের সংগঠনের প্রচলিত নাম “এন্টি জেলা গোষ্ঠি”। সে জেলা বিরোধী হলেও সবসময় শুধু বিক্রমপুর তথা মুন্সিগঞ্জেরই সমালোচনা করতো ও কুতসিত গালিগালাজ করতো বিক্রমপুরবাসীদের। মোখলেস চাইতো দেশে আলাদা আলাদা জেলা থাকবে না। পুরা বাংলাদেশ একটা মাত্র জেলা হবে। “জেলা পদ্ধতি”র বিরোধিতা করে পত্রপত্রিকায় ও অনলাইনে লেখালেখি করা ও বিক্রমপুর/বিক্রম্পুরবাসী নিয়ে আজে বাজে কটুক্তি করাই ছিল মোখলেসের কাজ। তাই প্রায় সবার ধারণা এটা নিশ্চই কোন বিক্রমপুইরার কাজ। হত্যাকান্ডের বেশ খানিক সময় পর টুইটারে “বিক্রমপুইরা পোলা ৮০ টাকা তোলা” নামের একটি গ্রুপ মোখলেস হত্যার দায় স্বীকার করে টুইট করে। এরাও “স্বাধীন বিক্রমপুর” আন্দোলন করে ।
“এন্টি বিক্রমপুর গোষ্ঠি”র প্রতিক্রিয়াঃ বিক্রম্পুইরা খা*কির পো*রা খারাপ। ওগো মায়রে বাপ!!! বিক্রমপুইরাগো সব এদেশ থিকা খেদানো হোক।
ঢাকায় স্থায়ী বিক্রমপুরের কিছু লোকের প্রতিক্রিয়াঃ আমি বিক্রমপুরে আর যামু না। আমি ঢাকায় সেটল করে ভালো করেছি। বিক্রমপুরে জন্ম নেয়ায় আমি লজ্জিত।
টাইপ-১ বিক্রমপুর বাসীর প্রতিক্রিয়াঃ মোখলেস হত্যার বিচার হওয়া উচিত। কোন হত্যাকান্ডই সমর্থন যোগ্য না। বাট মোখলেসের উচিত হয় নাই বিক্রমপুর নিয়া আজেবাজে কথা বলা।
টাইপ-২ বিক্রমপুরবাসীর প্রতিক্রিয়াঃ জানোয়ার হত্যার আবার বিচার কী?! মোখলেস বেশি বাইড়া গেছিল তাই শাস্তি পাইছে। মোখলেসের চ্যালাপ্যালাদেরও সাইজ করা উচিত।
টাইপ-৩ বিক্রমপুরবাসীর প্রতিক্রিয়াঃ স্বাধীন বিক্রমপুর একটা রঙ কনসেপ্ট। এটা সকল বিক্রমপুরবাসীর মতামত নয়। যারা এটা করেছে তারা প্রকৃত বিক্রমপুরী না।
টাইপ-৪ বিক্রমপুরবাসীর প্রতিক্রিয়াঃ মোখলেস কেডা?
টাইপ-৫ বিক্রমপুরবাসীর প্রতিক্রিয়াঃ মোখলেস ভাইয়ের চেতনা আমরা বৃথা যেতে দিব না। তিনি আঞ্চলিকতা মুক্ত বিশ্বের স্বপ্ন দেখেছেন। কালকা গুলিস্তানে আমরা মোমবাত্তি জ্বালামু।
অন্য জেলাবাসীর টাইপ-১ প্রতিক্রিয়াঃ- বিক্রমপুইরারা মানবতার শত্রু তা আবারো প্রমানিত হল।
মোখলেসের জেলাবাসীর প্রতিক্রিয়াঃ- আর কত? আর কত প্রান গেলে শান্ত হবে বিক্রমপুইরারা?! আমরা এই দেশে জন্ম নিয়ে ভুল করেছি। আমরা পাশের জেলায় চলে যাব।
“এন্টি জেলা গোষ্ঠি”র সমর্থকের প্রতিক্রিয়াঃ এক মোখলেসের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে হাজারো মোখলেস জন্ম নিবে।
নব্য “এন্টি জেলা গোষ্ঠি”র অল্পবয়সী সদস্যের প্রতিক্রিয়াঃ “আমিই মোখলেস”!!!
২২টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
যে যার যার জায়গা নিজস্ব পরিসর অনুযায়ীই ভাববে।
বৃত্তের বাইরে যেতে পারবে না।
অনেকদিন পর এখানে ………………………
শিপু ভাই
এ যেন অন্ধের হাতী দর্শনের মত মামা।
আমি মেন্টালি খানিকটা ডিস্টার্বড। তাই বড় লেখা আসছে না। 🙁
রিমি রুম্মান
ভাল লাগলো লেখাটি। কিছু মানুষ মৃত্যু আর হত্যা’র পার্থক্য না বুঝেই প্রতিক্রিয়া দেয়। আবার কিছু মানুষ “সব মৃত্যুই দুঃখজনক” বলে প্রতিক্রিয়া দেয় যদিও … সাথে আবার একটি “কিন্তু” যোগ করে আরও কিছু ব্লা ব্লা টাইপের শব্দ যুক্ত করে।
শিপু ভাই
সামগ্রিক ঘটনাবলী কেউ নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে না। সবাই নিজের পারসপেক্টিভ থেকেই মতামত দেয়। ফলে এত বৈচিত্র।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
নাম দেখে চমকে গেলাম পরক্ষণে বুঝলাম সে এক সাম্প্রদায়ের লোক ।লেখাটি যুক্তিযুক্ত সুবিদা নিতে ইচ্ছেমত যে যার লোক বলে চালিয়ে দেয় যা মোটেও ঠিক নয়। -{@
শিপু ভাই
জ্বী ভাই। সেটাই।
অনেক ধন্যবাদ।
মনির নামটা আমার পছন্দ!!! 😉
শিশির কনা
কত কিছু ভাবি আমরা।, খুবই ভাল লাগলো
শিপু ভাই
অনেক ধন্যবাদ।
আমাদের ভাবনাকে আরো সম্প্রসারিত করতে হবে।
বৃষ্টিহত ফাহিম
;? ;?
শিপু ভাই
😀
জিসান শা ইকরাম
নিজের চিন্তার বাইরে যেতে পারছি না আমরা
যত মত তত পথ
বাঙ্গালীর মধ্যে বিভিন্ন রক্তের স্রোতধারা এর কারন বলে আমার মনে হয়।
সমসাময়িক যে কোন ঘটনার সাথে এই লেখাটি যায়।
ধন্যবাদ এমন লেখা শেয়ারের জন্য।
শিপু ভাই
আপনাকেও ধন্যবাদ মামা
ব্লগার সজীব
আপন সীমায় বন্ধী আমরা।ভালো লেখেন আপনি বরাবরই।
শিপু ভাই
আমরা হুট করেই নিজেদের সীমাবদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে মতামত দিয়ে যাই।
স্বপ্ন
একটি ঘটনা কত বিভিন্ন ভাবে ভাবে মানুষ!
শিপু ভাই
হ্যা, এজন্যই সঠিকটা পাওয়া দুস্কর হয়ে যায়।
শুন্য শুন্যালয়
যারা ঘটনাটির সাথে ডিরেক্টলি সম্পর্কিত তারা হয়তো কিছুটা বুঝতে পারেন প্রকৃত সত্য কি। তবে যারা দূর থেকে জানেন তাদেরকে নির্ভর করতেই হয় অন্যের উপর। সেখানে নিজের বাছবিচার করাটা প্রশ্নের বাহিরে। আপনার লেখাটি যথার্থ, একটি ঘটনার নানা দিক ভিন্নভাবে দেখবে সবাই সেটাই স্বাভাবিক।
এখন কিছু কিছু ঘটনা যা ঘটছে তা সাম্প্রদায়িক তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে এবং বোঝাও যাচ্ছে। এটাকে ভিন্নভাবে ভাবার সুযোগও থাকছে অন্যদের জন্যে।
আপনার ঘটনাটির সাথে এটির যোগসূত্র নেই তবুও উদাহরণ দিলাম। লেখাটি চিন্তার খোরাক যোগায়। অনেকদিন পর লিখলেন।
শিপু ভাই
হুম আপু, একটু ঝামেলা যাচ্ছে। ব্লগ পোস্ট লেখার মত স্থিতি নাই আমার।
তবে নিয়মিত হতে ইচ্ছে করে খুব।
লীলাবতী
ফেইসবুকে পড়েছি।অত্যন্ত যুক্তিপুর্ন সহজ করে লেখা।ধন্যবাদ এমন পোষ্টের জন্য ভাইয়া।
শিপু ভাই
আপনাকেও ধন্যবাদ 🙂
সঞ্জয় কুমার
ভালোই লিখেছেন । তবে আমার কাছে মনেহয় মানুষের মানুষ পরিচয় টাই আসল ।
মনির নামটা দেখেই প্রথমে বুকের মাঝে একটা খোঁচা খেয়েছিলাম । সোনেলার মনির ভাই আমার প্রিয় একজন ব্লগার ।
শিপু ভাই
হাহাহাহহাহাহাহ
ধন্যবাদ ভাই