পরিচিত মানুষের কাছে আমি যেমন বাচাল অপরিচিত মানুষের কাছে তেমনি চুপচাপ আর বোরিং। এইতো কিছুদিন আগে ২০১৮ সালেও আমি ছাত্রী ছিলাম। উদ্যম, উচ্ছ্বল, প্রাণবন্ত আর ছেলে মানুষ… এসব মিলেই যেন আমি।বান্ধবীদের নিয়ে আড্ডা দেয়া, ঘুরে বেড়ানো,ক্লাস, কলেজ,হুড়োহুড়ি, দূরন্তপনা আর হাহা হাসি ইত্যাদি নিয়েই কেটে যেতো বেলা। এরই মাঝে টুকটাক কিছু চাকরি, টিউশন ইত্যাদি করেছি, ছেড়েছি। কিন্তু ২০১৯ এ হঠাৎ একটা নতুন চাকরি হলো। একদম কলেজের ম্যাম। এবার আমি পড়লাম মহা দোটানায়। আমি এখন কলেজের ম্যাম, তাই আমাকে সেটা বজায় রেখে চলতে হবে। আবার আমার ভেতরের বাচ্চামীগুলা এত দ্রুত কি আর হারিয়ে যাবে? প্রথম প্রথম কলিগদের সাথে আমি যেমন, তেমন আচরণই করতাম। এই যেমন : মন চাইলেই তাঁদেরকে ম্যাসেঞ্জারে ইমো (🙂😇🙄) পাঠিয়ে দিতাম! তাঁরা হয়ত এসব দেখে অবাক হতো, কিন্তু কিছু বলতো না। পরে দেখলাম এসব তাঁরা কেউ পাঠায় না। আমিও বুঝলাম, এখানে আমি বাচ্চা নই। এসব পাঠানো যাবে না। ফেসবুকে যা খুশি পোস্ট দিতাম। কিছুদিন পর ছাত্ররা এড পাঠালো। এড পাঠিয়ে আবার সামনাসামনি অনুরোধ করলো যেন একসেপ্ট করি। তাদেরকে একসেপ্ট করার পর আরও জ্বালা। যাই লিখি, পরদিন ক্লাসে যেতেই তারা ওটা নিয়ে নানান কথা বলে। পরে বুঝলাম, আমার স্বাধীনতা শেষ। আর যা খুশি তা লেখা যাবে না।
এবার আসি পোশাকের ব্যপারে। আমি সাধারণত থ্রি পিস পরতে পছন্দ করি। কিন্তু যাত্রা পথে প্রায়ই অনেকের সাথে দেখা হয় এবং তারা নানান প্রশ্ন করে। যেমন:
মুখে রাজ্যের আতংক নিয়ে…
“তোমার লেখাপড়া এখনও শেষ হয় নাই?”🙄🙄🙄
মুখে বিরক্তি নিয়ে…
” মাইয়া আর কত লেখাপড়া করে?”
একটু হেসে…
“তা তুমি এখন কিসে পড়ছো?”
বিষয় ইংরেজি জেনে অবাক হয়ে…
“ইংরেজিতে পড়েও বেকার?”
তাদেরকে স্বান্তনা দিতে আজকাল শাড়িই পরি। রোজ রোজ এত আগডুম বাগডুম প্রশ্ন শুনতে ভালো লাগে না। শাড়ি পরে যে কেউ পড়তে যায় না, এটুকু বোধ বোধ করি আমাদের আঙ্কেল আন্টি সমাজের আছে।
এখানেই শেষ না। তাদেরকে যখন জানাই আমি এখন আর পড়ি না, পড়াই… তখন তাদের রিএকশন দেখার মত। বেশকিছু মানুষ জানে আমি কলেজে পড়াই, তবু তারা বলবে,
“তোমার স্কুল কয়টা থেকে?”
বলি, “কলেজ ★★টা থেকে।”
“ঐ হলো, স্কুল এন্ড কলেজই তো।” 😑😑😑
কেউ ভুল করে বলে, কেউ ইচ্ছে করে। যারা ইচ্ছে করে কলেজকে স্কুল বলে, তারা কিছুতেই মানতে চায় না যে ওটা কলেজ। শুধুই কলেজ। কী আজীব!!!
২২টি মন্তব্য
বন্যা লিপি
অদ্ভূত! তাইনা? এই আমাদের সমাজ ব্যাবস্থা।হাজারো বিধি নিষেধের শেকলে ক্রমাগত আমরা সময়ের আগেই মুরুব্বি হয়ে যেতে বাধ্য হই। আমাদের চলতে হয় স্টেজ বুঝে।স্টেজ বুঝে আমাদের একেক মঞ্চে একেক রকম নাট্যাভিনয় করে যেতে হয়। তবুও মন বলে তো কিছু একটা আছে নাকি? থাকতেই হবে!
একটু সামলে সুমলে, ইগনোর করেই চলবেন ;
এই আর কি! নিজেকে নিজের মতো রাখবেন, একান্ত আপন করে আপন ভূবণে।
নিরন্তর শুভ কামনা।
নীরা সাদীয়া
মন বলে যে কিছু আছে তা ভুলেই যাচ্ছি।
কি আর করা!
শুভ কামনা জানবেন।
ইঞ্জা
আপু আমার মেয়েও যে কখন যেন বড় হয়ে উঠেছে, অনার্স তৃতীয় বর্ষ, এখনো হটাৎ করে মুখ দয়ে চলে আসে, তোর / ওর স্কুল / কলেজ কবে, কখন ইত্যাদি, মেয়েটি নিজের খরচ যোগাতে, কারো কাছে হাত না বাড়ানোর জন্য বেশ কয়েকটি টিউশনি করছে, আমি বাধা দেয়নি, জানি ও বড় হয়েছে।
সুন্দর এক পোস্ট দিলেন আপু, খুব ভালো লাগলো।
নীরা সাদীয়া
ভাই, কারা যে ভুল করে বলে, আর কারা যে বিষয়টা ইচ্ছে করে বলে, তা কিন্তু বোঝা যায়। তারা কিছুতেই মানতে চায় না যে এটা কলেজ। আমি একটা কলেজের প্রভাষক। তারা দরকারে এটাকে স্কুল এন্ড কলেজ বলবে (যদিও এটা শুধুই কলেজ) তাও মানবে না যে এটা কলেজ।
ইঞ্জা
হা হা হা হি হি হি 🤣🤣🤣
হালিম নজরুল
বেশকিছু মানুষ জানে আমি কলেজে পড়াই, তবু তারা বলবে,
“তোমার স্কুল কয়টা থেকে?”
বলি, “কলেজ ★★টা থেকে।”
“ঐ হলো, স্কুল এন্ড কলেজই তো।”
————— এরকম ঘটনা প্রায়ই ঘটে। অনাকাঙ্ক্ষিত।
নীরা সাদীয়া
হুম, এরা এটা ইচ্ছে করেই বলে!
ভালো থাকবেন, শুভ কামনা রইলো।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
খুব মজা পেলাম লেখাটি পড়ে, এরকম আমার সাথে ও হয়েছে। যা লিখেছেন তা অহরহ ঘটছে আমাদের চারপাশে। অনেকে ইচ্ছা করেই ভাব নেয় তাকে হেয় করার উদ্দেশ্যেই। শিক্ষক যদি একটু ফ্রি হয় তাহলে আসলেই সর্বনাশ। ছাত্র-ছাত্রীরা মাথায় উঠতে বাধ্য। ধন্যবাদ আপু। ভালো থাকুন শুভ কামনা
নীরা সাদীয়া
ঠিক বলেছেন। শিক্ষক ফ্রী হলেই ছাত্ররা মাথায় চড়ে বসে! সমাজেও এমন কিছু মানুষ থাকে।
শুভ কামনা রইলো।
সাবিনা ইয়াসমিন
মানুষের অবাঞ্চিত কৌতুহলের শেষ নেই। বিশেষ করে পরচর্চাকারী আংকেল, আন্টি, ভাইয়া আপুদের। এদের কাজই হলো যথাতথা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা। পৃথিবী উল্টে পাল্টে গেলেও তারা নিজেদের বদলানোর কোনো চেষ্টাই করেন না 🙁 এদের ইগ্নোর করা ছাড়া বিকল্প আর কোনো পথ নেই।
তোমার আগামী দিনগুলোর সফল হোক,
দোয়া ও শুভ কামনা রইলো 🌹🌹
নীরা সাদীয়া
এদের আসলে অনেক সময়, অলস সময়। তাই এ অবস্থা!
শুভ সন্ধ্যা।
ছাইরাছ হেলাল
আপনার তো দেখছি নিত্য নূতন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন।
আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ, আর ও লিখুন। পড়ি-জানি।
নীরা সাদীয়া
সত্যি, কতই না অভিজ্ঞতা যোগ হচ্ছে এ ছোট্ট জীবনে।
শুভ সন্ধ্যে।
সুপায়ন বড়ুয়া
কেউ তো এখনো বলেনি
বাচ্চা আনতে যাচ্ছেন ?
কেমন করছে সে ?
ভালো থাকবেন।
নীরা সাদীয়া
বলেছে। একজন
নীরা সাদীয়া
একজন বলেছে, “তোমার বাচ্চা কজন? ওহ্ তোমার তো এখনও বিয়েই হয়নি।”
এর কথা আরেকদিন লিখবো।
ফয়জুল মহী
অনন্যতা উপস্থাপন
নীরা সাদীয়া
ধন্যবাদ।
আলমগীর সরকার লিটন
বেশ সুন্দর লাগল এক ভাবনার প্রকাশ
অনেক শুভ কামনা রইল কবি আপু
নীরা সাদীয়া
আমি তেমন কোন কবি নই ভাইয়া।
শুভ কামনা জানবেন।
সৈকত দে
তোমার স্কুল কয়টা থেকে?”
বলি, “কলেজ ★★টা থেকে।”
“ঐ হলো, স্কুল এন্ড কলেজই তো
এক কথায় অসাধারণ।
নীরা সাদীয়া
এরাই আমাদের সমাজ।
শুভকামনা রইলো।