“অনেকে রয়েছেন একটা মাত্র দিয়াশলাইয়ের কাঠি খরচ হওয়ার ভয়ে গ্যাস জ্বালিয়ে রাখেন। একটা কাঠির চেয়ে জীবনের মূল্য বেশি না।“
—–মাননীয় প্রধানমন্ত্রী

IMG_20160301_234417

সম্প্রতি গ্যাস বিস্ফোরণে পুরো একটি পরিবার শেষ হয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী সতর্কবার্তা হিসাবে একথা বলেন। যেখানে গ্যাসের চুলা জ্বলবে সেখানে জানালা দরজা খুলে রাখার জন্যও তিনি সবার প্রতি অনুরোধ জানান। —————————————-

আক্রান্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো ছাড়া আর কিছুই বলার নেই।

প্রকাশিত খবর থেকে যা জানা গেলো, গৃহকর্তী সুমাইয়া সকালে নাস্তা তৈরি করতে গিয়ে চুলায় আগুন দিলে বিস্ফোরণ ঘটে। আর বাড়ির দরজা-জানালা বন্ধ থাকায় সারা বাড়িতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ধারণা, ওই বাসার গ্যাসের চুলা বা লাইনে সমস্যা ছিল। এর ফলে গ্যাস বের হয়ে রান্নাঘর থেকে পুরো ফ্ল্যাটে ছড়িয়ে যায় আর চুলা জ্বালাতেই এর বিস্ফোরণ ঘটে।

gas_chula

পুরো ঘটনাটি আমাদেরকে একটি বার্তাই দেয়, ঘর বন্ধ থাকা অবস্থায় গ্যাসের চুলায় আগুন দিতে নাই। অবশ্যই আগে দরজা-জানালা খুলে নিতে হবে।
দুর্ঘটনাটি হয় গ্যাসের চুলার লাইনে লিক থাকায় ঘটেছে, নাহয় গ্যাসের চুলা ওপেন ছিলো বলেই ঘটেছে।

gus
আরো একটি বিষয় সম্পর্কে সজাগ থাকা উচিৎ। আর তা হলো, অকারণ গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে না রাখা। এ বিষয়টি নিয়ে অনেকদিন থেকেই আমার লিখার ইচ্ছা। আজ তাই এ ব্যাপাটি নিয়ে লিখতে বসলাম।

index(8)
আমার বাসায় প্রতি তিন মাসে এক বাণ্ডিল করে দিয়াশলাই লাগে। এক বাণ্ডিলে সম্ভবত ১০/১২ টা দিয়াশলাইর বাক্স থাকে। অটোবার্নার কিনলেও এক সময় আর অটো থাকে না। দিয়াশলাইয়ের ব্যবহার করতেই হয়। গত একটি বছর ছাড়া বরাবরই বলা যায় আমার বাসায় দিনে চুলোই জ্বলে না। পরিবারের সকলেই সকালে যার যার কাজে বেরিয়ে বিকালে ফিরি। তারপরও এত্তোগুলো দিয়াশলাই লাগার মুল কারণ হচ্ছে প্রয়োজন ছাড়া চুলার আগুন এক মুহুর্তও জ্বালানো থাকে না। প্রয়োজন শেষ, তো চুলা বন্ধ। আবার প্রয়োজন, আবার দিয়াশলাই। আমরা দু’জন দিয়াশলাই সরবরাহ করতে রাজী কিন্তু প্রয়োজন ছাড়া চুলোয় আগুন দেখতে রাজী নই। চুলা জ্বালানো থাকা মানেই গ্যাসের অপচয়। গ্যাস আমাদের জাতীয় সম্পদ। একটা দিয়াশলাইর কাঠি খরচ হবে বলে জাতীয় সম্পদের এমন অপচয় কতোটা ন্যায়সঙ্গত? গভীরভাবে ভেবে দেখুন তো, তাই কি উচিৎ? আমার রাষ্ট্রীয় সম্পদের এমন অপচয় যদি আমি রোধ করতে না পারি তো এর সুফল আমি ভোগ করার আশা করবো কিভাবে? চারপাশে গ্যাসের এমন অপব্যবহার দেখে এজন্য আমি বরাবরই চাই গৃহস্থালীতে ব্যবহৃত গ্যাসে মিটার পদ্ধতি চালু করা হোক অথবা প্রি-পেইড গ্যাস সরবরাহ পদ্ধতি চালু হোক। কারণ আমার দেশের মানুষগুলোর মধ্যে অনেক ভালো ভালো গুনের সমাহার থাকলেও তাদের সবচেয়ে বড় দোষ তারা অবচেতন মনে একটা ধারণা লালন করেন, আর তা হলো ‘সরকারী মাল দরিয়া মে ঢাল’ অর্থাত যা আমার নয়, তার যথেচ্ছ ব্যবহার। শুধুমাত্র অবচেতন মনে এই ধ্যান-ধারণায় অভ্যস্ত বলে অবোধ বাঙালী অনুভবই করতে পারে না সরকারী সম্পদ মানেই আমার সম্পদ, আমার দেশের সম্পদ।

WASA_water_003

তাছাড়া নৈতিক দিক থেকে অপচয় রোধে শুধু সম্পদই (গ্যাসই) কেনো? অপচয় মানেই তো অপচয়। বাসা-বাড়িতে বুয়ারা কাজ করলে দেখা যায় সাপ্লাই কলটা ছেড়ে রেখে থালাবাটি মাঝতে থাকে! ওদিকে বিনা প্রয়োজনে কল থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে তো পড়ছেই। কোন ভ্রুক্ষেপ নেই সেদিকে। এই অনুচিত কাজটি অবলীলায় অনেক সাধারণ মানুষকেও করতে দেখি। আমার বাসায় যেকোন গৃহপরিচারিকা আসলে তাদের মাঝে একটা আচরণগত পরিবর্তন হয়েই যায়। কেউ কেউ এক সময় বলেও ফেলে, কতো বাসায় কাজ করেছি, কিন্তু আপনার মতো করে সাপ্লাই কলের পানি ব্যবহারে এতো মিতব্যায়ীতা আর বারবার চুলায় কাঠি জ্বালিয়ে আগুন দিতে দেখিনি। তখন কথাচ্ছলে আমি তাদের সাথে এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করি। দেখা যায় আপনা থেকেই তাদের মাঝে এ ব্যাপারগুলো নিয়ে আচরণগত পরিবর্তন এসে যায়। ফলে তারা শুধু আমার এখানে নয়, পরবর্তী সব জায়গাতেই এর প্রতিফলন ঘটাবে বলে মনে করি।

আমরা অনেকেই নিজেদেরকে সচেতন নাগরিক হিসাবে ভাবি। কিন্তু আমরা কি একবারও নিজের দিকে তাকিয়ে দেখি সুনাগরিক হিসাবে আমরা কতোটুকু সচেতন? রাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে রাষ্ট্রের প্রতি আমরা কতোটুকু দায়বদ্ধ? কতোটুকু নাগরিক কর্তব্য পালন করি। কিছু একটা হলেই পারি শুধু সরকারের গুষ্টি উদ্ধার করতে, মেয়রকে গালি দিতে, প্রশাসনকে দোষারুপ করতে। আরে বাবা! সরকার, মেয়র, প্রশাসন সব তো এই আমাদের নিয়েই। আমরা সজাগ-সচেতন থাকলে, তারা আমাদের সচেতনভাবেই পরিচালনা করবেন। প্রতিটা পদক্ষেপেই আমাদেরকে রাষ্ট্রের প্রতি, সমাজের প্রতি, পরিবারের প্রতি দায় মিটাতে হবে। পরিবর্তনটুকু আগে নিজের মধ্যে নিয়ে আসি! তারপর এর প্রভাব নিজের চারপাশে ছড়িয়ে দেই। একসময় দেখা যাবে সকলেই এমনটা ভাবছে। পরিবর্তনের এই সুফল আপনি না পেলেও আপনার আগামী প্রজন্ম এর সুফল ঠিক ভোগ করবেই।

আসুন নিজে সচেতন হই আর অন্যকেও সচেতন করি।
দুর্ঘটনায় নিহত পরিবারের সদস্যদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।

৫৪৯জন ৫৪৯জন
0 Shares

৩৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ