আজ বড় বাবাকে নিয়ে রংপুরে গিয়েছিলাম ডাক্তারের কাছে। বাবাকে ডাক্তার দেখানোর জন্য। চেম্বারে বসে থাকার সময় লক্ষ্য করলাম, এক দম্পত্তিও তাদের এক বছরের বাচ্চাকে নিয়ে এসছে। পুরুষ লোকটি পুরো সময়টি ধরে বাচ্চাকে কোলে নিয়ে আছে। দেখে খুব ভাল লাগল। আমার মেমন রিয়ানের ছোট বেলা দেখতে পাচ্ছিলাম। তবে খেয়াল করলাম, মেয়েটি চোখ ছল ছল করে তার বাচ্চা ও স্বামীটিকে দেখছে। মনে হল একটু কথা বলি, মেয়েটির সাথে। মেয়েটি দুঃখ করে বলেই ফেলল, মেয়েটি ঐ লোকের দ্বিতীয় বউ। লোকটির প্রথম বউ এই বাচ্চাটি হতেই মারা যায়। লোকটি বাচ্চাটিকে দেখাশুনার জন্য একে বিয়ে করেছে। মেয়েটি স্বিদ্ধান্ত নিয়েছে এই বাচ্চাটি বড় নাহওয়া পর্যন্ত নিজে কোনো সন্তান নিবে না। মেয়েটির শুধু দুঃখ লোকটি তাকে খুব ভালবাসে, কিন্তু সে তার বাচ্চাটিকে নিজেই বেশী কেয়ার নেয় বেশী। এবং এই জিনিসটি তাকে কষ্ট দেয়। শুনে আমি মেয়েটির হাত ধরে হেসে দিলাম। তাকে বললাম, “তুমি একটি বোকা মেয়ে!” তকে আমি আমার গল্প শোনালাম।বললাম, ” আমার দুই ছেলে। আমার দুই ছেলেও যখন ছোট, কোথাও যাওয়ার সময় ওর বাবাই ওদের কোলে নিত। টিকা দেবার সময় সে নিজেই কোলে করে নিয়ে যেতো নিয়ে আসত। আমাকে বলত, আমি নাকি পারব না। শুনে আমি মনে মনে খুশি হতাম, দেখে যে সে তার বাচ্চার প্রতি কতোটা দুর্বল। একবার মোংলা থেকে ঢাকা আসার সময়, আমার মেমনের বয়স তখন চার, ছোটকুর দুই। ওরা পুরা রাস্তাবাবার সাথে, কিছুতেই আমার কোলে বা পাশে বসবে না। তো এটা দেখে এক মহিলা বলেই বসল,” এটা কি আপনার স্বামীর প্রথম ঘরের সন্তান !” শুনে তো আমি ক্ষেপে মেপে একাকার । ^:^ জুলি এখনো ক্ষেপায়। :p
মেয়েটি মনে হল খুশি হল শুনে। ওকে বললাম, এটা আসলে আপনাকে অপমান করা না। এটা তার ভালবাসা। মেয়েটি অনেক গল্প করল। এই কথপোকথনে মেয়েটি মনে হল, প্রান ফিরে পেল। খুব ভাল লাগল তার ঐ নিষ্পাপ হাসিটি। সহজ সরল এক সাধারন ও বুদ্ধিমতি মেয়ে। স্বামী ভাগ্য ভাল হোক এই মেয়েটির এই কামনা। এই সম্পর্কগুলো আদি অন্ত ভাল হওয়া উচিৎ।
আজকের এই ভাল লাগার মুহুর্তগুলো ভাগ করতেই লিখলাম। জানি না এগুলো পোষ্ট কিনা।
এই ছোট জীবনে পথ চলা অনেক। সেই পথ চলায় দু একটা মান অভিমান ভুলে তার ভিতরে থাকা গুনগুলো দেখেও জীবন পার করা যায় অনেকগুলো। আমি মেয়েটিকে বলেছি যখনি তোমার মন চাইবে রিং দিবে। না, আমি কোনো কাউনসিলর নই। তবুও আমরা অনেকেই অনেক সময়, নিজেদের মন খারাপ হলে কাউকে কথাগুলো বলে ফেলতে পারলে হালকা বোধ করি। আর এতে সমস্যা সমাধান হয়। আমি দু বছর মনোবিজ্ঞান বই পড়েছি। আমিই একসময় এ্যবনরমাল হয়ে গেছিলাম, বড় মামনি চলে গেলে। আমার মেয়েটা আমার স্পর্শ পায়নি, এই অপরাধে ভুগেছি, পাগল প্রায় হয়েছি। দুই দুইটা ইনজেকশনেও আমার ঘুম আসত না। কাউনসিলিং করে, জুলির সাপোর্টে সেরে উঠেছি। সোহরাওয়ার্দী হসপিটালে মানসিক বিভাগে কয়েকবার গেছি। অনেকদিন বাচ্চার কান্না সহ্য করতে পারিনি। সেই ধাক্কা শুধুমাত্র কাউনসিলিং ও মেমন আসলে সামলেছি। অনেকদিন আমি তাকে স্বপ্ন দেখেছি। ঠিক সেই সময় তার যে বয়সটা হওয়ার কথা সেই বয়সেই তাকে দেখেছি। এখন সে থাকলে, আমি হতাম “জীনেতার আম্মু”
সবার কি মন খারাপ হল ? আমার মা কিন্তু ভাল আছে। কতো কথা যে হয় ওর সাথে আমার! মন খারাপ করে থাকলে বকা দিবে। হাসাবে। গল্প করবে।
২৭টি মন্তব্য
শুন্য শুন্যালয়
জীনেতার আম্মু, মন খারাপ করোনা, যখনই খারাপ লাগবে আমাদের বলে ফেলবে। কাউন্সিলিং একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়, কথা বলতে পারা, নিজের সমস্যাগুলো শেয়ার করার কিংবা বন্ধুর মতো সাজেশন পাওয়া আজকাল খুব বিরল হয়ে গেছে। কাউকে বিশ্বাস করে কিছু যেন বলবারও উপায় নেই। অথচ এই বলতে পারার মধ্যেই মানসিক যন্ত্রণার সিংহভাগ চিকিৎসা।
শোন ভাবীজান সত্যি সত্যি কিন্তু তুমি আমাদের জুলি ভাইয়ের দ্বিতীয় বউ, জুলিভাই তোমায় বলেনি বুঝি? :p
মৌনতা রিতু
তোমার জুলি ভাইর ঘাড়ে কয়টি মাথা শুনি :@
সত্যি শুন্য, কথা বলাটা জরুরী। আলোচনা হলে অনেক সমস্যারই সমাধান বের হয়ে আসে।
ছাইরাছ হেলাল
অসংখ্য টানাপোড়নের মাঝেই আমাদের বসবাস, তবুও জীবন জীবনের কাছেই ফিরে আসে,
আমাদের মধ্যে কাউন্সিলার আছে জেনে ভাল লাগল।
দ্বিতীয় স্ত্রীরা শুনেছি স্বামীর খুব কাছের কেউ হয়, সেটা নিয়ে কিছু গল্প আমাদের শেয়ার করে ফেলুন।
মৌনতা রিতু
মুই কিন্তু কাইন্দা ফালামু। ;( মুই প্রথম মুইই শেষ।
হ , ডাক্তারী করলাম ভিজিট দিলেন না। এহন আবার কাউনসিলিং করি :=
ননদিনী তোমারে মুই খাইছি। ;( ^:^
শুন্য শুন্যালয়
কী দজ্জাল একটা বউ আনলাম ভাইয়ের জন্য ^:^
মৌনতা রিতু
মাইর মাইর মাইর। জ্বর কেন হইছে, ননদিনী ?
নাসির সারওয়ার
বাবারা একটু ইয়ে কিসিমের হয় যা অনেক সময় স্ত্রী মহাদায়রা ভালো বুঝতে পারেননা। সন্তানরা মনে হয় তা বোঝে।
সোনলের সোনারা – আসুন, আমরা এই কাউন্সিলার সময়কে ভালো ভাবে নিয়ে নেই। এর জন্যতো গোপন একটা পোর্টাল লাগবে। ও ভাই বোন মডুরা – কিছু একটা করেন…।।
মৌনতা রিতু
তা বাবারা কিয়ে কিসিমের হয় ? ঝাতি একটু জানবার চায়।
মুই মোটেও বিনে পয়সায় পরামর্শ দিতে রাজি না।
বইঝলেন ?
মোঃ মজিবর রহমান
আপু আমিত মনে করি জবনে চলতে সবয় কাউন্সিলিং একে অপরের সুখদুখ ভাগ করে শেয়ার করে যে মনের তৃপ্তি বা সুবিধা হয় তাই তো কাউন্সিলিং। না হয়ত বয়ের ভাষা বা কাগজে কলমে অনেক আছে।
আর আমরা এই সোনেলায় যে মনের ভাব আদানপ্রদান করি আমি মনে করি এটাও কাউন্সিলিঙ্গের অংশ ।
সোনেলার মডু থেকে সকল সোনেলার সোনাভাইয়াপু ভাল থাক। এই কামনা।
মৌনতা রিতু
সত্যি মজিবর একদম ঠিক কথা বলেছেন। এই সোনেলায় আমরা কতো যে কথা বলি !
কথা বলাটা জরুরী।
মোঃ মজিবর রহমান
ঠিক।
মোঃ মজিবর রহমান
সরি আপু
জবনে =জীবনে হবে , বয়ের= বইয়ের হবে।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
জীনেতার আম্মু,
সব ভাল তার শেষ ভাল যার।আপনি এত বড় একটা মানষিক ধাক্কা থেকে উঠে এসেছেন জেনে ভাল লাগল।জীনেতা যেখানে থাকুক ভাল থাকবে কেননা সে ছিল নিষ্পাপ।
মৌনতা রিতু
হুম, মা আমার ভালো আছে। অপেক্ষায় আছে তার মামনির জন্য। পৃথিবীর বুকে দায়িত্ব শেষ হলেই চলে যাব।
ভাল থাকবেন ভাই।
মিষ্টি জিন
রীতা আপু এই পোষ্টটা দেয়ার পরপরই আমি পডেছি কিন্তু কমেন্ট করতে পারিনি। কেন জান? আজ থেকে ২৩ বছর আগে আমি ও আমার প্রথম সন্তানকে হারিয়েছি। ৫ মাস আমি তাকে ধারন করেছিলাম। পৃথিবীর মুখ সে দেখেনি।
মন খারাপ কোরনা আপু রাজকন্যা যেখানেই থাকুক না কেন ভাল আছে।
কাউন্সিলিং বা শেয়ার এর গুরুত্ব অপরিসীম।
আলোচনার মাধ্যমে অনেক বড সমস্যার ও সমাধান করা যায়।
মৌনতা রিতু
আমার মাটা একদিন ছিল। অক্সিজেন দিতে গিয়ে সেই সিলিন্ডার বাস্ট হয়।
তবে এখনো ওকে দেখি আমি। তবে ও থাকলে জীবনটা আমার সত্যি অন্যরকম হতো। আমার জীবনে দুঃখের কোনো চিন্হ থাকত না।
ভাল থকো আপু।
আবু খায়ের আনিছ
সহজ একটা কথা আছে, প্রাণ খুলে কথা বলার জন্য হলেও্ একজন মানুষ প্রয়োজন জীবনে। কথা বলতে না পারলে মানুষ পাগল হয়ে যায় এমন প্রমান ভুরি ভুরি আছে।
সম্পর্কের মাঝে নেতিবাচক দিকগুলো খুজঁতে শুরু করলে সম্পর্ক খারাপ হতে বাধ্য, ইতিবাচক দিকগুলো সম্পর্কে মজবুুত করে।
ব্যাক্তিগত একটা কথা বলি, বড় দের এই ধরণের লেখাগুলো আমি বা আমার মত ছোটদের কাছে শিক্ষা হযে থাকে, ভবিষৎ সুন্দর করার জন্য এগুলো অনুপ্রেরণা যোগায়।
অনেক অনেক শুভ কামনা আপু।
মৌনতা রিতু
আনিছ ভাই, আপনাকেও অনেক অনেক শুভ কামনা।
আসলেও কথা বলাটা জরুরী।
নীলাঞ্জনা নীলা
কাউন্সেলিং শব্দটা আমাদের সমাজে এখনও অপাংক্তেয়। এখানে প্রায় ২০/২৫ বছর ধরে থাকেন অনেক বাঙ্গালী, উনারা কাউন্সেলিং শব্দটাকেই ধরে রেখেছেন যারা পাগল, শুধু তাদের জন্য। অথচ সুস্থ মানুষরাও অনেক সময় যে সকল সমস্যার সমাধান করতে পারেনা, তারাও কাউন্সিলিং করাতে পারেন। আমার বিভিন্ন সমস্যার সমাধান পেয়েছি বন্ধু ঊর্মীর থেকে। কিন্তু সবার তো আর ভালো বন্ধু থাকেনা। শেয়ার করার ভালো জায়গা না থাকলে সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়ে।
মৌনতা আপু জীনেতা সোনা ভালো আছে। পৃথিবীটা ওর মোটেও পছন্দ হয়নি। তাই ঈশ্বরের কাছে আবার চলে গেছে।
অনেক ভালোবাসা আপু। অনেক অনেক। -{@ (3
মৌনতা রিতু
হুম আপু, কথা বলাটা জরুরী সবার। জীনেতা সোনা আমার ভাল আছে। অনেক ভালবাসা নিও, সব সময় ভাল থেকো। (3 -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
ভালো থেকো তুমিও আপু। -{@
সঞ্জয় কুমার
প্রতিটি মায়ের কাছে সন্তানের মৃত্যু পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আঘাত ।
প্রথম সন্তান এত তারাতারি হারিয়ে যাওয়ার শোক টাও অনেক বিশাল ।
আপনার হারিয়ে যাওয়া ছোট্ট মা টা যেখানেই থাকুক অনেক ভাল থাকুক ।
মৌনতা রিতু
অনেক ধন্যবাদ ভাই।
শুভকামনা জানবেন।
ইলিয়াস মাসুদ
আমার মনে আছে, আমি অনেক বড় হয়েও বাবার সাথে ঘুমোতাম,বাবার বুকের উপড় আবার কখনো গলার উপড় পা রেখে ঘুমতাম,বাবার ঘুম খুব হাল্কা ছিল, একটু স্পর্শ পেলেই ভেংগে যেত,সারা রাত বাবা হয়ত আমার জন্য ক্লান্ত শরীরেও ঘুমোতে পারতো না,কিন্তু কোন দিন বুক অথবা গলা থেকে আমার পা সরাতো না,অনেক পরে যখন বড় হয়ে গেলাম তখন এই ব্যাপার টা আমার খুব কষ্ট দিত।আজ আমিও বাবা মত স্বভাবের,একটু স্পর্শে ঘুমোতে পারি না কিন্তু আমার মেয়েটা সারা রাত আমার বুকে উঠে ঘুমিয়ে থাকে আমি সরিয়ে দিতে পারি না মনে হয় ও আমার শরীরের-ই অংশ।বাব্দের প্রকাশ খুব কম কিন্তু রিসপন্সিবিলিটি অনেক সেটা স্ত্রিরা ঠিক কতটা বোঝে আমি জানি না,
লিখাটা খুব মন ছুঁয়েছে আপু,জীনেতার জন্য একটুও মন খারাপ করবেন না,ও যেখানেই আছে অনেক ভাল আছে আপনার সাথেই আছে। ভাল থাকবেন
মৌনতা রিতু
সকল স্ত্রীর কাছে তাদের স্বামীরা কিছুটা খামখেয়ালি হলেও, তারা জানে বাবা হিসেবে তারা সেরা।
ধন্যবাদ ভাই। শুভকামনা রইল। রাজকন্যার জন্য রইল ভালবাসা।
অপার্থিব
ভাল লিখেছেন। লেখাটা ছোট হলেও বেশ কিছু ভাবনার ব্যাপার আছে। মানসিক সমস্যা সবার জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে থাকে কিন্ত এর কাউন্সেলিং এর ধারণা খুব একটা জনপ্রিয় নয়।
মৌনতা রিতু
কাইন্সিলিং হওয়াটা জরুরী।
কিন্তু আমরা মনের কথা বলার মতো মানুষই হয়ত পাইনা।
ধন্যবাদ ভাই। ভালথাকবেন। শুভকামনা রইল।