আমরা দুই বান্ধবী দুই ডিপার্টমেন্টে পড়ি। হলে দু’জনের রুম দুই প্রান্তে। তবুও কেমন করে যেন আমাদের গভীর বন্ধুত্ব। একসাথে টিভি রুমে, ডাইনিং রুমে গল্পে মশগুল থাকি। কি এতো গল্প করি ? আবার এভাবেও বলা যায়___ কোন গল্পটা না করি ? আমি সাদামাটা। ব্যবহারের জিনিস “একটা হলেই হয়” টাইপের। ও সৌখিন। ব্যবহারের সব “ভাল/ব্র্যান্ডের হওয়া চাই” টাইপের। বান্ধবীটির এক জন্মদিন। রাতে সবার আগে সেলিব্রেট করবো বলে বিকেলেই নিউ মার্কেটের সামনে থেকে ফুল কিনি। বেছে বেছে গোলাপ আর রজনীগন্ধা দিয়ে যত্নে তোরা বানিয়ে নিয়ে আসি। লুকিয়ে লকারে রেখে দেই চম্‌কে দিবো বলে। রাত বারোটা এক মিনিটে সেই রুমে যাই। ফুলের তোরা এগিয়ে দিয়ে হ্যাপি বার্থডে উইশ করি। আমার সৌখিন বান্ধবীটি সারপ্রাইজড হয়। চোখ ভিজে যায় তাঁর আনন্দে। অতঃপর রুমমেট সিনিয়র আপুরাও সবাই উইশ করে একে একে। সেই রাতে ভোর অবধি হাসি গল্পে মেতে থাকি আমরা……

হুট করেই যখন আমার এদেশে আসা নিশ্চিত হয়, তখন অনেক মনখারাপের মাঝেও মজা করে বলে, “আমার সব কস্‌মেটিকস এখন থেকে তুই-ই পাঠাবি কিন্তু।” আমি খুশী হই এমন আবদারে।  দেশ থেকে চেনা কেউ এলে বান্ধবী ফোন করে, কি লাগবে জানতে চায়। আবার এখান থেকে চেনা কেউ গেলে আমি জানতে চাই__ তোর কি লাগবে। এভাবেই দিন, মাস, বছর, যুগ পেরোয়। বন্ধুত্ব অটুট সেই আগের মতই। শুধু অনেক অনেক গল্প হয় না… অনেক অনেক হাসি, ঠাট্টা হয় না।

ওরা স্বামী-স্ত্রী গাঁ’য়ের কলেজে শিক্ষকতা করে। ভোরে ফোন দিলে ওই প্রান্তে হাঁস মুরগীর ডাক, ফেরিওয়ালার ডাক। এমন চেঁচামেচির মাঝে কথা হয় না মন খুলে। আমি রেখে দিতে চাই। দশ মিনিট পর ফোন দিতে বলে। কলেজের উদ্দেশ্যে বের হচ্ছে। বাইরে গেলেই নাকি শান্তিতে কথা হবে। দশ মিনিট পর ফোন দেই। এবার আরো বিকট শব্দ ! কান ঝালাপালা। এইদিকে আমি চেঁচাই। ওইদিকে ও। মাথা ধরে আসে। অবশেষে জানতে পারি, বিশেষ একধরনের বাহনে করে কলেজে যাতায়াত করে। শ্যালোমেশিন চালিত যান। নাম___” ভটভটি”। আমি কল্পনায় বোঝার চেষ্টা করি, “ভটভটি” কি সিএনজি এর মতো ? নাকি মিশুক এর মতো ? নিজেকে সান্তনা দেই… যাক্‌, কথা হয়নি তো কি হয়েছে… আছি-ই তো এক পৃথিবীতে… এক আকাশের নীচে …

সময়, পরিবেশ আর পরিস্থিতির কাছে ভালোবাসায়, যত্নে গড়া সম্পর্কগুলো কতো না অসহায় !

৫৬০জন ৫৫৯জন
0 Shares

২৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ