বিশাল তোরজোর। ভিয়েতনাম যাবো। আমাশা, ডায়রিয়া প্রটেক্টর হিসেবে ট্যাবলেট, ওরস্যালাইন কিনে হালকা পাতলা একটি ফার্স্ট এইড বক্স সাথে নিয়েছি। ব্যাক পেইন আমার আমৃত্যু সাথী। একারনে খাটি ইন্ডিয়ান মুভ স্থান করে নিল ফার্স্ট এইড বক্সে।
আবহাওয়া অর্থাৎ শীতের কি অবস্থা জানতে গুগল মামুর উপর আস্থা না রেখে কিছুদিন পুর্বে ভিয়েতনাম ভ্রমন করে আসা এক জুনিয়র বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারি যে বাংলাদেশের মতই শীত। ঢাকা এবং বরিশালে ভালই শীত তখন। নিজকে মহান হিসেবে নিজের পিঠ থাবরে দেয়ার জন্য কম্বল বিতরন কর্মসূচী গ্রহন করেছি, অতএব শীত কম্বল এর উপযোগি।
ভিয়েতনাম এর প্রকৃতি একদম বাংলাদেশের মত। শীত প্রতিরোধের মাল মসলা যখন আছেই, ঠান্ডা লাগাব কেন বিদেশ বিভূইয়ে? একারনে গায়ে এবং লাগেজ ভালভাবেই পূর্ন করলাম গরম পোষাকে। গায়ে দিলাম স্যান্ডোগেঞ্জী, টি- শার্ট, ফুলহাতা গেঞ্জী এবং সবার উপরে ব্লেজার। লাগেজেও পর্যাপ্ত শীতের কাপড় নিলাম।
২৩ জানুয়ারী সকালে সিংগাপুর থেকে ভিয়েতনাম এসে পৌছালাম। প্লেনের তীব্র এসি কাবু করতে পারেনি। হো চি মিন সিটি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে নামার পরে ভিসা স্ট্যাম্পিং এর জন্য বসে থাকতে থাকতে মনে প্রশ্ন, ঘটনা কি গরম লাগছে কেন? সেন্ট্রাল এসি নস্ট নাকি? চারদিকে তাকিয়ে নিজকেই বেমানান মনে হলো। শীত প্রতিরোধে যা গায়ে দিয়েছি তাতে বরফের দেশে অভিযানে যাবার মত ড্রেস হয়েছে। পাশের চেয়ারে বসা এবং সামনে অনেক ঠ্যাং ঠুং বাইর করা, পাতলা টি- শার্ট গায়ে কত মানুষ। যেন লজ্জা পেয়েছি নিজেই। দ্রুত ব্লেজার খুলে ফেলে হাতে নিয়েছি। স্যান্ডোগেঞ্জি তখন ভিজে চুপচুপ। বিমানবন্দরের বাইরে পা রাখা মাত্র মনে হল আগুনের মধ্যে এসেছি। ট্যাক্সি করে হোটেলের রুমে আসার পরে বুলেটের গতিতে সব কিছু শরীর থেকে খুলে ফেলে হাফ ছেরে বেঁচেছি যেন।
বেডের উপর স্তুপিকৃত গরম কাপড় দেখে গা জ্বলে উঠে এখন। সময়, পরিবেশ, পরিস্থিতি, অবস্থান না জেনে না বুঝে কোন কিছু গ্রহন করা বিপদজনক, তা সে দ্রব্য হোক বা মানুষ। হোক না তা মহা মূল্যবান, পরিত্যাগ করতেই হয়,
******* ভিয়েতনাম ভ্রমনের শুরুটা এভাবেই
২৫টি মন্তব্য
মিষ্টি জিন
আমার জানা মতে ভিয়েতনাম , থাইল্যান্ড , সিংগাপুর মালয়েশিয়া , ইন্দোনেশিয়া নাতিশিতোজ্ঞ দেশ। আপনার বন্ধু আপনারে ভালই ইনফরমেশন দিয়েছে ভিয়েতনামের আবহাওয়ার ব্যাপারে
:p
ভিয়েতনামিজ খাবারের ব্যাপারে সাবধান, যে কোন মুহূতে ওর স্যালাইন কাজে লাগতে পারে।
হ্যাপি ঘোরা ঘুরিং।
জিসান শা ইকরাম
আপনার জানাটা সঠিক।
ভিয়েতনামি খাবারে প্রথমদিন তো সমস্যা প্রায় হয়েছিল। ফাস্ট এইড বক্স থেকে স্যালাইন কমেছে মাত্র একটি।
দোয়া কইর্যেন স্যালাইন যেন সব দেশে নিয়ে যেতে পারি।
ঘোরাঘুরি তো চলতেই আছে,
মিষ্টি জিন
ঝিঝি পোকা আর ফড়িং ভাজা ভিয়েতনামের বেশ বিখ্যাত খাবার । টেষ্ট করে দেখুন। স্যালাইন আর ফেরত নিতে হবে না। :D)
জিসান শা ইকরাম
ঝিঝি পোকা খাইনি, তবে থাইল্যান্ডে ফড়িং ভাঁজা খেয়েছি,
খুবই মজা খেতে 🙂
ভাগ্য ভাল ঝিঝি পোকা ভাঁজা সামনে পরেনি,
মিষ্টি জিন
ফড়িং ভাজা খেয়েছেন?
ইয়াক ইয়াক..
উল্টা পাল্টা খাবারের ভঁযে নন মুসলিম দেশে আমি একমাত্র মেগডোনাল্ডের উপর ভরসা করি।
জিসান শা ইকরাম
কি খাইনি জিজ্ঞেস করেন তো,
শামুক, ঝিনুক, অক্টোপাস, কচ্ছপ, কাকড়া কিছুই বাদ নেই ম্যাডাম 🙂
নিহারীকা জান্নাত
“সময়, পরিবেশ, পরিস্থিথি, অবস্থান না জেনে না বুঝে কোন কিছু গ্রহন করা বিপদজনক, তা সে দ্রব্য হোক বা মানুষ। হোক না তা মহা মূল্যবান, পরিত্যাগ করতেই হয়”…….শেষের বাক্যটি দিয়ে রম্য লেখাটি শিক্ষামুলক লেখায় মোড় নিলো। আমরাও শিখলাম অনেক কিছু। ভ্রমণের শুরুটা আপনার জন্য কষ্টের/বিব্রতকর হলেও পড়ে কষ্টিত না হয়ে উলটো হেসে ফেললাম। সেজন্য ক্ষমা চাইছি। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন। হ্যাপী হ্যাপী ঘুরে দেশে ফিরে আসুন।
জিসান শা ইকরাম
বয়স্ক মানুষেরা কথার শেষে কিছু শেখাবেই। আমিও চান্স পেয়ে শিখালাম।
কত ভ্রমনের কথা যে লেখা হয়নি!
আপনি ভাল থাকুন।
আবু খায়ের আনিছ
বিড়ম্বনায় শুরু, তবু আনন্দদায়ক।
উদ্দেশ্য কি?
জিসান শা ইকরাম
আগে তিতা পরে মিঠা — ভ্রমন কাহিনী তাই তিতা দিয়ে শুরু করেছি 🙂
উদ্দেশ্য এটাই,
ইঞ্জা
ভাইজান খাসি আর গরু থেকে এক মেইল দূরে থাকুন নইলে কুত্তার মাংস পেঠে চালান হইতে পারে। :p
জিসান শা ইকরাম
ভাইরে সব মাংস খাওয়া যায়, কুত্তার মাংসে কোনোদিন রুচি হবে না,
ইয়াক ।
শুভ কামনা।,
ইঞ্জা
:D)
শুন্য শুন্যালয়
আচ্ছা এইটা আপনার গরম কাপড়ের ছবি? আমি ভেবেছি গুগল থেকে সোয়েটারের দোকানের ছবি দিয়েছন বোধ হয় 🙂
স্যালাইনের সদ্ব্যবহার করুন, এতো কষ্ট করে বহন করে নিয়ে গেলেন যখন!
জ্ঞানীগুনী মানুষ অনেক মূল্যবান কথাই বলেছেন, কোনকিছু গ্রহনের জন্য পরিবেশ পরিস্থিতির উপর নির্ভর করতেই হয়।
ভ্রমণ কাহিনী শুরুই করলেন দু:খ দিয়া, না জানি কী আছে পরে। আমাগোর জন্য কিছু আইনেন কইলাম।
জিসান শা ইকরাম
জি জি এইটা আমার নিয়ে যাওয়া গরম কাপড়ের ছবি,
স্যালাইনের সদ্ব্যবহার করবো? দোয়া করলেন না বদ্দোয়া দিলেন ম্যাডাম? 🙁
আগে তিতা পরে মিঠা এই ফর্মুলা নিয়েছি এবার, আগে দুঃখ পরে আনন্দ,
কি আনবো লিষ্ট তো দিবেন,
ভাল থাকুন সারাক্ষণ।
শুন্য শুন্যালয়
দোয়া, বদ্দোয়া যেটাই বলেন; গরীব মানুষের কোনটাই কাজে লাগেনা। চিন্তায়েন না। লিস্ট তো করে পাঠিয়েছি, আপনি বোধহয় অন্য কারো জন্য শপিং করে বাড়ি ফিরেছেন। 😀
ভালো থাকবেন সবসময়, আমি জানি আপনি ভালো থাকবেন।
জিসান শা ইকরাম
গরম কাপড়েই তো লাগেজ বোঝাই হয়ে গিয়েছে, শপিং আর করলাম কৈ?
চিন্তাইয়েননা অস্ট্রেলিয়া গিয়া আপনার জন্য শপিং করুমনে 🙂
আপনিও ভাল থাকুন ম্যাডাম, আমার ভাল থাকা আপনার কাছে পাঠাইয়া দিলাম।
ছাইরাছ হেলাল
ভ্রমণে এত্ত এত্ত খুটিনাটি থাকে যে ইচ্ছে করলেই সব ঠিক-ঠাক কড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না।
শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা তো আছেই।
ঔষধাদি ফিরুক সঠিক সংখ্যায় এ কামনা থাকবে।
জিসান শা ইকরাম
আমি তো সুই সুতা পর্যন্ত নেই ভ্রমনে 🙂
এবার নিতে ভুলে গেছি,
নীলাঞ্জনা নীলা
নানা ওরস্যালাইন কয়টা শেষ হইলো? 😀
তুমি শীতের যে কাপড় নিয়েছো, এ বছর কানাডাতে থেকেও আমি এমন কাপড় পড়িনি।
শোনো গুগল মামা খুব কমই ভুল বলে। আমি টেম্পারেচার চেক করি গুগল মামার থেকেই। মানুষের আন্দাজে যতোদিন পোষাক নির্বাচন করেছি, ধরাই খেয়েছি। যাক শোনো আমার জন্য কি জানি কিনেছো বলেছিলে? নানা কুয়ালালামপুরে KL Bird Park, Batu Caves, Taman Negara(National Park), Manukan Island এই জায়গাগুলো দেখে এসো। কুয়ালালামপুর থেকে প্রথম দুটো কাছে, আর পরের দুটো প্রায় ৪ ঘন্টা লাগে। আরোও কিছু জায়গা আছে কিন্তু তোমার সময়ে হবেনা। প্লেনে যেতে হয় দুটো প্রিয় জায়গা আছে আমার। শোনো অবশ্যই Pavilion KL Shopping Mall-এ যেও। :p নানী আর তোমার একমাত্র নাত্নীর জন্য গিফট নিয়ে এসো।
দেখো নানা তোমার আর আমার এই সম্পর্ক শুধু কিন্তু এ জন্মেরই নয়। মনে রেখো। 😀 :p \|/
জিসান শা ইকরাম
স্যালাইন মাত্র একটা শেষ, বাকী গুলো নিয়ে এসেছি মালয়েশিয়ায়।
Manukan island বাদে আর সব দেখেছি আগেই, এবার অবশ্য আবার যাব, হেলালের প্রথম মালয়েশিয়া ভ্রমন তাই।
ঠিক ঠিক সেই ভিক্টোরিয়ান যুগ হতেই তো 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
স্যালাইন শেষ করার প্রস্তুতি নাও নাই তো! 😀
ভালো করেই ঘুরতে থাকো। তবে আইল্যান্ডটা মিস দিওনা নানা।
অতোই যখন জানো আমার জন্য কি কিনেছো? :p
জিসান শা ইকরাম
আইল্যান্ডে যাওয়া হয়নি আর, সময় পাইনি।
কি কিনেছি তা বলা যাবেনা, দেশে আয় তখন দেখবি।
রুম্পা রুমানা
এই বিড়ম্বনাগুলো ভিয়েতনামেই রেখে আসেন। আবহাওয়ার মর্জি বুঝা বড় দায়। আনন্দে কাটুক সময়।
জিসান শা ইকরাম
ধন্যবাদ আপনাকে উইশ করার জন্য,
শুভ কামনা।