বেশ কয়েকদিন থেকেই দেখছি বাবা মা একটু ভিন্ন ব্যস্ততায়। একটু কি অস্থির, নাকি বেশি বেশি সাবধান! এটা নিতে হবে, ওটা কিনতে হবে। কী নিয়ে যে তারা এতো ব্যস্ত! আমাকে কিছুই বলে না। কেনো বলেনা! আমিওতো তাদের কাজে আসতে পারি। তারপরও চোখ কান খোলা রাখছি, কী করে তাহারা।
একদিন রাতে তারা ব্যাগ গোছানো শুরু করলো। সবার আগে আমার ব্যাগটাই ধরেছে বলে বেশ স্বস্তিতে আমি। আমার একটা অনেক দিনের বন্ধু আছে। ওকে ঘুম পারিয়ে আমি ঘুমাই।কী সাঙ্ঘাতিক ব্যপার, ওকে এই রাতেই বাক্স বন্দী করবে!
এতো ভোরে কি ঘুম ভাঙ্গে আমার! তারপরও উঠে পরেছি। আমার বন্ধুটিকে নাস্তা খাওয়ানো শেষ করে বের হলাম। রাস্তায় বাবা যেন কার সাথে কথা বলছে। গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে, কথার মাঝে বৃষ্টিকে ধমকাচ্ছে। আহা, ওকে নিয়ে কেনো এতো কথা! আমি কত ভিজেছি, মনের সব কষ্ট যে ও ধুয়ে দেয়। ষ্টেশনে এসেই বাবা আবার কল করছে, দেরি হবে। তাতে অসুবিধা কি! চায়ের দোকান আছে। মা আমাকে চা খেতে দেয়। কিন্তু এ দোকানের কাপ ভালো না। প্লাস্টিকের কাপে আমি চা খাইনা।
অবশেষে যাত্রা শুরু। বড় একটা চালক বিহীন বাস। তবে টিকেট মাস্টারটা বেশ, অনেক সাজুগুজু করতে হয় কেন! আমাকে একটা বেল্ট দিলো সাথে আমার গাল টিপে দেয়ার চেষ্টা। ও আচ্ছা, আমার বেল্টটা সুন্দরনা! বাসটা চলছে হালকা বৃষ্টি আর বাতাস কেটে। মেঘও দেখতে পাচ্ছি। আচ্ছা, মেঘ থেকেইতো বৃষ্টি নামে। তাহলে দুটোকে একসাথে দেখছি কেনো! একসময় গম্ভীর আওয়াজ, বৃষ্টির জন্য বাস থামানো যাবেনা। আমরা হয়তো আবার ফিরে যাচ্ছি। বলে কি এসব, এই ড্রাইভারতো গাড়িই চালাতে পারেনা। ১ ঘনটা ঘুরেফিরে অবশেষে থামলো।
স্টেশনে অপেক্ষা করছে দুটি মামা। আমা্দের দেখে সে কী আনন্দ। অবশ্য প্রথম দেখাতে আমারও কেন জানি ভাল লেগে গেল, কারণ বুঝলাম না, ভেবেছি এই বুঝি আবার গাল টেপা হবে। না, তারা কিছু তরতাজা ফুল হাতে গুঁজে দিলো ঘ্রাণহীন। কিন্তু এখন সে ফুলও ভাল লাগছে। ফুল কেনো, আমাকে তো কেউ এর আগে ফুল দেয়নি।
ফুল দিয়ে কি হয়! খুব জানতে ইচ্ছে হয়!!
৩৪টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
কি সঙ্গীকে বাক্স বন্দী করেছে? এত নির্মম বাবা মা তো আমি জীবনেও দেখিনি।
বাস আকাশে চলে! তাও মেঘের উপর দিয়ে? এইটা আবার কেমন বাস?
যাক একঘন্টা অতিরিক্ত আকাশে বাসে চড়ে মজাই হল তাহলে 🙂
কিন্তু মামারা ফুলের তোড়া দিবে ঠিকাছে, কিন্তু আদর করে গাল টিপে দিল না কেন?
ফুল দিল তাও আবার ঘ্রান ছাড়া?
এমন মামা মামাই না, তীব্র প্রতিবাদ :@
ঐ মামা দুইটার কাছে জিজ্ঞেস করতে হবে, ফুল দিয়ে কি হয় ^:^
নাসির সারওয়ার
সত্যিই, কি নির্মম বাবা মা!
শিশুটিতো তাইই দেখলো। ড্রাইভার আদৌ ছিলো কিনা কে জানে।
শিশুটি মনে হয় মামাদের মত চালাক হয়েছে। কাউকে কাছে আসতে দেখলেই দু হাত তার নিজের গালে নিয়ে যায় টিপ্পনী বাঁচায়!!
কিছু ফুল মনে হয় ঘ্রান থাকেনা। আমি তো ফুল চাষ করিনা ঐ মামাদের মত।
ফুল দিয়ে কি হয়, আশা করি এ রহস্য একদিন ঠিকই জানতে পারবে শিশুটি!
জিসান শা ইকরাম
বেঁচে থাকুক শিশুটি আনন্দে শ্নেহে
সাফল্যের আকাশ স্পর্শ করুক -{@ (3
নাসির সারওয়ার
পৌঁছে দেবো এই আশীর্বাদ তার কাছে। মামাদের মনে হয় তার মনে ধরেছে। শুনেছি আবার যাবার জন্য এরই মধ্যে ধর্না শুরু করেছে…।
ছাইরাছ হেলাল
এক ঘন্টা বেশি ঘোরানোর জন্য ট্যাকাটুকা নিল না কেন সেটাই বুঝছি না, স্বজন প্রীতির গন্ধ পাচ্ছি যেন!!
এত্তদিন পর ফুল দেয় তাও আবার ঘ্রাণ হীন,
বুঝতেছিনা, মামা জোড়া আসলি না নকলি!!
দিল দিল, তাও আবার সামান্য একটি দু’টি ? এক ট্রাক নয় কেন বুঝতারলাম না।
নাসির সারওয়ার
যে মামাদের কাছে গেলো, তারা নাকি বেশ ক্ষমতা বান। কার সাধ্য বেশী পয়সা চায়!!
কী জানি, শুনেছি ঐ মামা জোরা নাকি ফুল বিশেষজ্ঞ। উনারাই ভালো বলতে পারেন ঘ্রাণ হীন ফুল আছে কিনা।
শিশুর ছবি কিন্তু বলছে, সে আরো ফুল নেবার জন্য হাত পেতে আছে। কতগুলো যে পেলো, তা হয়তো আমাদের আজানাই থেকে যাবে।
ছাইরাছ হেলাল
একেই কী বলে মামা বাড়ীর আবদার!
যা মনে হচ্ছে মামু বাড়ীর আসন পাক্কা এখনই।
নাসির সারওয়ার
কে যেনো বলেছে, মামার বাড়ি মধুর হাড়ি। কথাটা মনে হচ্ছে সঠিক।
তাইতো দেখছি। একলাফে মামুদের গাছের মগডালে …
নীলাঞ্জনা নীলা
পিচ্চিটা মিষ্টি রসগোল্লা। এত্তো কিউট।
পিচ্চির মতো আমারও জানার বড়ো ইচ্ছা ফুল দিয়ে কি হয়?
তবে আমায় যদি কেউ বকফুল কিংবা কুমড়া ফুল দেয়, খুশীতে দাঁত কেলিয়ে দেই।
মামাবাড়ী মধুর হাড়ি। 🙂
নাসির সারওয়ার
আসুন, আমরা এ নিয়ে একটা গবেষণা শুরু করি।
“ফুল দিয়ে কি হয়”। অন্তত এই কোমলমোতি শিশুদের জন্যতো কিছু করা হবে!!
শুনেছি সে মামাবাড়ি বার বার যাবে। ওটা যে আসলেই মধুর হাড়ি।
মিষ্টি জিন
মেঘের উপর বাসে চড়ে বারবি পুতুল মামা বাড়ী বেড়াতে এসেছে। আর মামারা কিনা ঘ্রান ছাডা ফুল দিল? একটা চকলেট ও দিল না 🙁
একটু গাল টিপে আদর ও করলো না।
🙁
পচা মামা।
বারবি সোনা তুমি আমার কাছে চলে আস।
(3 (3 (3 (3
নাসির সারওয়ার
মেঘ আর বৃষ্টি একসাথে! শিশুটি তো অবাক। মেঘ থেকে বৃষ্টি হয়। আর ও দুটোই একসাথে দেখছে।
ঘ্রান ছাড়া ফুল, একটা লিস্টি বানাতো হবে এই শিশুটির জন্য।
গাল দুটো সামলানোর কায়দা শিখে ফেলেছে এরই মধ্যে।
আপনার দাওয়াত ওকে পৌঁছে দেবার চেষ্টা চালাবো। তবে ওর মামা দুটোকে নাকি তার বেশ পছন্দ!!
অনিকেত নন্দিনী
বিবরণ শুনে আকাশের উপর দিয়ে চলা বাসে চড়ে ঘুরতে ইচ্ছা করছে। চালকবিহীন বাসে চড়ুম! ;(
ফুলের ঘ্রাণ পাননাই ক্যান? সর্দি লাগছিলো? লাগতেও পারে। লুকাইয়া লুকাইয়া বৃষ্টিতে ভিজলে এরাম ত হইবই।
মামা দুইজনের ফোন নাম্বার দেন দেহি জিগাই ফুল দিলে কী হয়। ;?
নাসির সারওয়ার
শিশুটিতো দেখতে পাইনি কে স্টিয়ারিং ঘুরাচ্ছে!
সে যেভাবে বৃষ্টিতে ভেঁজে, সর্দি থাকলেও থাকতে পারে। তবে কে যেন একটু হিংসিত হয়ে বরদোয়া করেছিলো। আর তা লেগেও গিয়েছলো মনে হয়। নইলো তখনই এই মরার বৃষ্টি আসবে কেনো?
হে মামা জোড়া, আপ্নারা কন দেহি ফুল দিলে কি হয়!!!!
অনিকেত নন্দিনী
বৃষ্টিতে ভিজলে কেবল ব্যাঙেরই সর্দি হয়না। সেই একজন ব্যাঙ ধাঁচের, অপারেশন করে টন্সিল ফেলে দিয়েছিলো কিনা – তাই।
বদদোয়া দেওনের কাজকাম করলে বদদোয়া আরো দেওয়া হইবে। ঝুড়িঝুড়ি, ঝাঁকা ভর্তি করে বদদোয়া পাঠিয়ে দেওয়া হইবে।
পচা মামুগরে ডাইক্যা লাভ নাই। তারা কিপটা হেয়া বুইঝ্যা হালাইছি। এদ্দিন বাদে দেহা তাও হুদাই গন্ধ ছাড়া ফুল দেয়, চক্লেট দেয়না।
নাসির সারওয়ার
তাইতো, ভালো কথা। খোঁজ খবর করতে হবে তার টন্সিল আছে কিনা।
আমিতো ভাবছি যারা বদদোয়া দেয় (যাদেরটা আবার লেগেও যায়) তাগোরে খুজুম। একটা বানিজ্য বানিজ্য ভাব আসতে পারে। কইজনে পারে এই কম্মটি!!
যত্তুর হুঞ্ছি, ঐ মামুরা নাকি তা্রে অনেক জায়গায় বেড়াইতে নিয়ে গেছিলো। হেগোরে এহন কিপটা কই কেম্নে?
মৌনতা রিতু
কোন বন্ধুকে নাস্তা খাওয়ানো হল ? আপনি কি ভেবেছেন ! আপনাকে রেখেই তারা ব্যাগ গুছিয়ে চলে যাবে!
আমার রিয়ানের গাল যদি কেউ ধরত, ধমক লাগাতো। কখনো ভ্যাঁ করে কেঁদে দিত।
মামা চকলেট না দিয়ে ফুল দিল, ভাবনার বিষয় ;? ছোট ঐ কিউটের ডিব্বাটা কে ?
নাসির সারওয়ার
শিশুটি তাই ভেবেছিলো। তার সঙ্গীকে যদি রেখে যায়!
মনে হয় এর শিশুটি ধমক দিতে পারেনা। তবে মায়াবী চোখে দু হাত গালে নিয়ে গালকে পাহাড়া দেয়। আর মনে হয় দাত নেই। তাই কেউ চকলেট দেয়না।
কিউটের ডিব্বাটা মনে হয় ঐ মামাদের ভাগ্নি হবে!!!!
ইঞ্জা
মামাদের বিরুদ্ধে তেব্র প্রতিবাদ। :p
নাসির সারওয়ার
আসুন একটা হরতাল করি এই প্রতিবাদে…।
ইঞ্জা
অক্কে আগামীকাল হরতাল :p
মোঃ মজিবর রহমান
মামা বলে কথা!
ডবল মা মা হয় মামা!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
নাসির সারওয়ার
সাথে মামা বাড়ির আবদারও আছে!
ভাল থাকুন।
ইলিয়াস মাসুদ
ফুল দিয়ে কি হয় কবি? আমারো পিচ্চিটার মত জানতে মুন চাই ফুল দিয়ে কি হয়
ডাইবার নেই হাওয়ার বাস চালাই কে হাহাহাহা
নাহ, মামু আর সেই মাউ নেই তো?
নাসির সারওয়ার
আপনার এবং পিচ্ছিটার সাথে আমিও জানতে চাই। ফুল দিয়ে কি হয়!
দেশে ভালূ ডাইবারের খুব অভাব। তাহারা বৃষ্টিতে ভালূ ডাইভ করতে পারেনা। পিচ্ছিটা মনে হয় চাচ্ছে দেশের বাইরে থেকে ডাইবার আসুক।
মামু দুইখান মনে হয় ভালোই পাইছে!! তবে তাহারা কেনুযে ফুল দিলো!!!
ব্লগার সজীব
শিশুটির চমৎকার ভাবনা পড়লাম, জানলাম, বুঝলাম 🙂 মামা বাড়ি এসেছিল শিশুটি, প্রথমেই তাকে বঞ্চিত করা হল গাল না টিপে। বঞ্চনার ইতিহাস কি আরো আছে? 🙂 শিশুটিকে আদর।
শিশুর ভাবনা লিখতে হলে মনের দিক থেকে শিশু হতে হয়, আপনি তা পেরেছেন ভাইয়া।
নাসির সারওয়ার
কি বুঝলেন? ফুল দিয়ে কি হয়, আমাকে বলেন।
বঞ্চনার ইতিহাস আরো আছে যা অচিরেই সবার সামনে পেশ করা হবে।
আমিতো এখনো শিশুই, বড় হবোই না।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেকগুলো ধন্যবাদ।
ব্লগার সজীব
ফুলকে ফুল দিয়েই বরণ করতে হয় ভাইয়া, শিশু আর ফুলের মাঝে তফাৎ তো নেই।
শুন্য শুন্যালয়
U r by far the youngest blogger in the world 🙂 এতদিন কই ছিলা? কতই না খুঁজলাম, আমার কাছে আইলে শুধু গাল টিপে দিতাম না, থুতনী টেনে ধরতাম, নাক ভোঁতা করে দিতাম চেপে। এত্ত কিউটি ব্লগারটাকে সোনেলায় স্বাগতম 🙂
মামারা ঘ্রাণ ছাড়া ফুল দিলো এ কেমন কথা? তাও আবার মাত্র দুই/তিনটা? কিপ্টুস মামারা!!
এই পঁচা মামাদের নাস্তানুবাদ করার পরের গল্পটা কই মাম্মি?
নাসির সারওয়ার
তুমি আমাকে যতটা ছোট মনে করেছো আমি কিন্তু ততোটা ছোট নই। আমি এখন নিজে নিজে দাড়াতে পারি।
বারে, থুতনী টেনে ধরলে আমি বুজি ব্যথা পাবোনা!
ঘ্রাণ থাকলো বা না থাকলো তাতে কি। ফুল তো ফুলই। কিন্তু ফুল দিয়ে কি হয়? আজও তো জানা হলোনা।
মামা দুটো বলে দিলেই কিন্তু তোমাকে বোকে দেবে। আর কক্ষনো কিপ্টুস বলবে না।
আরও যে কত গল্প যে আছে, শেষই হবেনা!
আবু খায়ের আনিছ
অতঃপর মামা বাড়ি যাওয়া হলো আর পরের কীর্তি পরবতী পর্বে আলোচনা করা হবে। :D)
নাসির সারওয়ার
জী, মামাবাড়ি মজার বাড়ি। অনেক কীর্তিই আছে এবং আসবো ফিরে সেগুলো নিয়ে।
সাবিনা ইয়াসমিন
মনে হচ্ছে এটা ক্ষুদে ব্লগারের প্রথম ভ্রমণ ছিলো!
তাও যেমন তেমন ভ্রমণ নয়! আকাশের ঘন মেঘ কেটে ছুটে চলা উড়ন্ত বাসে করে সোজা মামাবাড়ি!!
কিন্তু মামাদের হাতে তো মধুর হাড়ি থাকার কথা,আর মামারা হাতে করে কিনা সৌরভহীন ফুল নিয়ে এলো!
এরা কেমন মামা! এমন কেন!!
নাসির সারওয়ার
শুরু করেছিলাম এটা দিয়ে। তবে লেখা পড়ার চাপে আর লেখা হয়ে উঠছে না।
তাইতো, মামা দুটো শুধু ফুলই দিলো। মিষ্টি আনতে ভুলে গিয়েছিলো মনে হয়।