
শিবপুজোর উপবাস অনেক কঠিন। বাড়িতে মা কাকীরা পুজো করতো সেই সাথে আমরা বোনেরাও। এই জিনিস আমি মনে হয় সাত আট বছর থেকেই করি। তখন উপোস থাকতে পারতাম না কিন্তু থাকতে চাইতাম, মা জোর করে নিরামিষ খাবার খাইতে দিতো। মায়েরা করে দেখে আমারও ইচ্ছে হতো। যাই হোক শিবের গীত গাইতে শুরু করলাম যে জন্য, একটু বড় হবার পরই সব নিয়ম মেনেই করতাম। আগেই বলেছি শিব পুজোর উপবাস অনেক কঠিন। আগেরদিন সংযম পালন করতে হয়, মানে নিরামিষ খাবার, সূর্য ডোবার পর আর ভাত খাওয়া যাবে না, যা খাবার সন্ধ্যার আগে। রাতে শুধু ফলমূল, জল এসব। সূর্য ওঠার পর একেবারেই নির্জলা উপবাস। সব রকমের খাওয়া বন্ধ, জলও বন্ধ। সন্ধ্যার পর পুজো শুরু। শিব পুজো রাতের চার প্রহরে হয়। চার প্রহরে চারটা পুজো যতোদূর মনে পরে। একেক প্রহরে একটা পুজো এরপর বিরতি।
বিরতির সময় ছোটবেলা বাড়িতে ভিসিআর আনা হতো, ধর্মীয় কাহিনীর ছবি চলতো যেমন তারাপীঠ মহাপীঠ, জয় বাবা তারকনাথ টাইপের। যাতে রাত জাগতে সমস্যা না হয় তাই এই ব্যবস্থা। সব মা কাকীরা আমরা মিলে মুভি দেখতাম।
কিন্তু ওরে ভাই কি যে খিদে লাগতো। গলা শুকিয়ে যেতো। রাত যতো গভীর, খিদেও ততো গভীর। ঘুমানো যাবেও না। একটা কথা বলে মায়েরা, শিব অল্পে খুশি, এতো কষ্ট করে তাকে পুজো করা লাগে না। মেয়েরা এতো কষ্ট করছে দেখে শিবের নাকি কষ্ট হয়। তাই কোনো মেয়ে যদি খিদেয় ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পরে তাহলে ভোলানাথ এসে সেই মেয়ের পা টিপে দেয়, যাতে আরাম হয়। বলে’ আহারে মেয়েটা আমার জন্য এতো কষ্ট করছে’ এজন্য মেয়েরা ঘুমায় না, যদি শিব পা টিপে দেয় তাহলে তো পাপ হবে🙄।
যাই হোক আমি যেজন্য এতো কথা লিখলাম রাত গভীর হতে লাগলেই আমার খাবার কথা মনে পরতো, যতো ভাল ভাল খাবার সব চোখের সামনে ঘুরতো। কলার মোচার তরকারি, নানা রকম মিষ্টি, ইলিশ ভাজি, কই মাছের ভাপা, ওরে বাবা নিজেরে পুরা হাভাতে মনে হতো, আর মনে মনে শিবের কাছে বলতাম খাওয়ার কথা চিন্তা করছি বলে যেন ক্ষমা করে দেয়। এরপর ভোর হতো। পুজো শেষ করে প্রসাদ খেতাম। তারপর স্নান করে এক থালা ভাত, অবশ্যই নিরামিষ খাবার।
কালকে মা জননী বলেছে ছোটবেলায় শিবপুজো দিতাম বলেই নাকি শিব আমার কপালে ভোলানাথ জুটিয়ে দিয়েছে। মাকে বললাম ‘তুমি তো আর জানো না মনে মনে কতোকিছু খেয়ে নিয়েছি, এতো বছর যে দেইনা তার কি হবে? ‘ 😆😆। মা বলে শিবঠাকুর অল্পে খুশি, এতো না মানলেও চলে। আমি বলেছি ‘হু এইজন্য নাস্তিক বর দিয়েছে।’ মা বলল ‘তুই বেশি বুঝিস’🤣🤣। বলে ফোন রেখে দিছে আর ধরে না😤😤
৯টি মন্তব্য
হালিম নজরুল
সুখে থাকেন, শুভকামনা রইল।
আলমগীর সরকার লিটন
চমৎকার এক অনুভূতির প্রকাশ
মোঃ মজিবর রহমান
যাইহোক সুখে বাস করেন।
ছাইরাছ হেলাল
আপনার শিব ঠাকুর অল্পতেই খুশি
আপনার আর চিন্তা কী..
তা ধিন তা ধিন !!
সুপর্ণা ফাল্গুনী
যাক মহাদেব আপনার ভোলানাথকে ভালো রাখুন, সুস্থ রাখুন। উপবাস থাকলে খাবারের দিকে নজর যাবেই , হাভাতের মতো খেতে মন চায়, অন্যসময় কিন্তু এমনটা হয়না-এটাই পরীক্ষা। অনেক টা রম্য রচনা হয়ে গেছে। অনেক মজা পেলাম লেখায়। নিরন্তর শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো
মনির হোসেন মমি
হা হা হা নাস্তিক; বর!!
সংসার সুখের হউক ।।সূখী হউন আপনেরা।
শিবপুজো যতটুকু জানি সব বয়সী নারীদের সব চেয়ে বেশী পছন্দের পুজোঁ।অনেেক কিছু জানলাম।
মোঃ তোফাজ্জল হোসাইন
দিদি আমার প্রশ্ন হল আপনি যেমন দেবদেবী বিশ্বাসী পুজো অর্চনা উপবাস করেন। ঠিক তার বিপরীতে আপনার স্বামী নাস্তিক তাহলে আপনার পুজো অর্চনা কি কোনো কাজে আসবে????
আপনি কিভাবে তার সাথে ঘর সংসার করছেন???
আপনি কি তাকে বুঝাচ্ছেন ধর্মীয় বিষয় নিয়ে???
এভাবে যদি চলতে থাকেন তবে মৃত্যুর পর কি হবে???
জিসান শা ইকরাম
শিবপুজোর উপবাস দেখছি অনেক কঠিন।
চব্বিশ ঘন্টা একটানা উপবাস, ভাবাও যায় না।
উপবাসে থাকলে সুস্বাদু সব খাবার খেতে ইচ্ছে তো করবেই।
চমৎকার উপস্থাপনায় লেখাটি অনেক মজার হয়েছে।
ভোলানাথের সাথে আপনার জীবন সুন্দর এবং স্বার্থক হোক, এই দোয়া করি।
আরজু মুক্তা
অনেক কিছু জানলাম