শততম পোষ্টের অনুভূতি-

তৌহিদুল ইসলাম ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, শনিবার, ০৯:১৬:১৬অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ২৮ মন্তব্য

আজ সোনেলায় এটি আমার একশো’তম পোষ্ট। যদিও শততম পোষ্টের জন্য আজ এই লেখাটি লেখার কিংবা দেবার ইচ্ছে ছিলোনা। যখন বুঝলাম আমার ইচ্ছেরা সবসময় অযাচিত ডানা মেলে উড়তে চায় নিথুয়া পাথারে, তাদেরতো আর বন্দী করতে পারিনা? আমি মহাসারথীদের সমারোহে নিজেকে কচুপাতার নীচে আষ্টেপৃষ্ঠে রেখেছি অনেক ঝড়ঝাপটা থেকে রক্ষা করতে। তাই ভাবলাম সোনেলায় যারা আমার লেখা পড়েন তাদের আমার সম্পর্কে কিছু জানানোই হবে একশোতম পোষ্টের স্বার্থকতা। সোনেলার ব্লগার পাঠকদের সোনেলায় আমাকে করা বিভিন্ন রকম প্রশ্নের উত্তর আমাকে দিতে হয়েছে। তার মধ্য থেকে বাছাই করে করে কিছু প্রশ্নোত্তরসহ এখানে দিলাম। সেগুলি আপনারাও পড়ুন, তাহলেই আমার আমিকে কিছুটা হলেও বুঝতে পারবেন।

চলুন প্রশ্ন আর উত্তরের জগত থেকে আপনাদের ঘুরিয়ে নিয়ে আসি। আশাকরি ভালো লাগবে। আপনাদের আরও কিছু জানার থাকলে প্রশ্ন করুন। উত্তর দেবার চেষ্টা করবো।

প্রশ্নোত্তর পর্ব-

 

প্রশ্নঃ সব সময় এতো প্রানবন্ত থাকার পেছনের রহস্য কি ?

উত্তরঃ আমি আসলে মন খারাপ করে থাকাকে প্রশ্রয় দেইনা। নিজে হাসিখুশি থাকি, অন্যকেও রাখার চেষ্টা করি। আর পাশেতো একজন আছেই, গিন্নী।

 

প্রশ্নঃ আপনাকে সারাক্ষণ হাসি খুশীতে মগ্ন থাকতে দেখি,এর গোপন রহস্য কি?

উত্তরঃ আমি আসলে মন খারাপ করে থাকাকে প্রশ্রয় দেইনা কখনো। কোন কারনে মন খারাপ হলে তার কারন খোঁজার চেষ্টা করি, যদি আমি দোষী হই তাহলে ক্ষমাপ্রার্থনা করি আর সেটাকেই নিজের শিক্ষা হিসেবে গ্রহন করি। আর অন্যের কারনে মন খারাপ হলে তাকে ক্ষমা করে দেই, এতে নিজের মনে প্রশান্তি আসে। আমার জন্য অন্য কারও মন খারাপ থাকুক সেটাও মেনে নিতে পারিনা তাই হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করি। আমার গুরু বলেছেন – নিজেকে সবখানে মেনে নিয়ে নয় মানিয়ে নিয়ে চলতে শেখো, দেখবে নিজেকে অচ্ছুত মনে হবেনা। এটাই মুল রহস্য।

আজ এখন ভাবছি এরা দুজনেই একই রকম প্রশ্ন করেছিলেন কেন? ঘটনা কি?

 

প্রশ্নঃ ভাই সালাম জানবেন, কেমন আছেন এখন?

উত্তরঃ ওয়ালাইকুমুসসালাম ভাইয়া, আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আমার মন সবসবয় উড়াধুড়া থাকে ভাই।

 

প্রশ্নঃ ভাইয়া কতদিন থেকে সাথে প্রেম করছেন?

উত্তরঃ আমার প্রনয় এনগেজমেন্টের পর থেকে চালু হয়ে অদ্যাবধি চলছে।

 

প্রশ্নঃ লেখকদের যতটুকু জানি প্রণয়ে তাদের কিছু না কিছু ঘটনা ঘটে আপনাদের বেলায় কি তেমন কোন স্বরণীয় ঘটেছিল? একটু জানতে মন চায়।

উত্তরঃ স্বরণীয় ঘটনা অনেক আছে ভাই একটা বলছি, আপনার ভাবী ১০৩ ডিগ্রী জ্বর নিয়ে পাহাড়ে উঠেছিলো শুধু আমার সাথে উঁচু থেকে সমুদ্র দেখবে বলে। সেদিনটা এক অবিস্বরণীয় দিন ছিলো। বাকী গুমোট ফাঁস করন যাইতো না।

 

অনেক প্রশ্ন করবার আছে, ব্লগের দ্বিতীয় ব্লগার হিসাবে পাঠকের মুখোমুখি হওয়া অনেক বড় ব্যাপার, তাও এতো অল্প সময়ে। কিছু ব্যক্তিগত প্রশ্ন জানবার ছিলো-

প্রশ্ন একঃ এমন একটি বই এর নাম বলুন, যা পড়ে আপনি কেঁদেছেন।

উত্তরঃ অনেক বই পড়েই কান্না পেয়েছিল আমার। এইমুহুর্তে একটি বইয়ের কথা মাথায় আসছে – উইলবার স্মিথের উপন্যাস “দ্যা সেভেন্থ স্ক্রল” এ একটি বাচ্চার চরিত্র ছিলো। সে যখন মারা যায় তার মুখে একটাই শব্দ ছিলো- আম্মি,আম্মি, আম্মি! তখন চোখ ভিজে উঠেছিলো।

 

প্রশ্ন দুইঃ একজন লেখকের পাঠককে হাসানো বা কাঁদানো কোন গুনটি কঠিন বলে মনে হয়? কেনো?

উত্তরঃ লেখকের দুটি গুনই অনেক কঠিন। কারন লেখক সব পাঠকের কথা চিন্তা করেই বই লেখেন। পাঠক যখন আবেগময় হয়ে পড়ে তার লেখা পড়ে এটা যেমন স্বার্থকতা, তেমনি যারা একটু হাসেন তার লেখা পড়ে মন ভালো হয় এটাও তার লেখার স্বার্থকতা। লেখক নিজে কাঁদেন কিন্তু অন্যকে হাসাতে জানেন বলেই তিনি স্বার্থক লেখক।

 

প্রশ্ন তিনঃ লেখালেখিতে পরিবার থেকে কতটুকু সহযোগিতা পান? পাশের বাড়ির সুন্দরী ভাবীকে নিয়ে প্রেমের গল্প লিখলে গিন্নি ঝাড়ু হাতে নেবে কিনা?

উত্তরঃ আমি শখে লিখি আর যতটুকু সহযোগীতা পাই সেটা পরিবার থেকেই পাই। আমি লিখতে বসলে কেউ ডিস্টার্ব করেনা, আবার অন্যদিকে সবার সব কাজ সেরে দিয়ে তারপর লিখতে বসি যাতে কেউ ডিস্টার্ব না করে। কাজেই নো টেনশন!!

পাশের বাড়ীর সুন্দরী ভাবী কে নিয়ে কেচ্ছাকাহিনী লিখলে আমার খবর আছে নিশ্চিত। শুধু ঝাঁটা না সাথে আরও কিছু জুটবে। আর বিবাহিত জীবন পরবর্তী জীবনের অসম প্রেমের গল্প লিখতে আমি পারবোনা, এ ধরনের চিন্তা মাথাতেই আসবেনা আমার। ভবিষ্যতে শুধুই প্রেমের গল্প লিখতে পারি।

 

প্রশ্ন চারঃ মৃত্যুর আগে কাওকে কিছু লিখে যাবার স্কোপ পেলে, কী লিখবেন?

উত্তরঃ মৃত্যুর আগে এমন স্কোপ এলে মাকে লিখবো–

মামনি, পাখির ডানার মত আমাদের সবাইকে ছায়া দিয়েছো সবসময়। একজন সন্তান হিসেবে তোমার কাছ থেকে সারাজীবন শুধু নিয়েই গেলাম; তোমাকে আরও অনেক কিছু দেয়ার ছিলো আমার, তার কিছুই দিতে পারলাম না। আমায় ক্ষমা করে দিও মা!

আর সহধর্মিণীকে লিখবো-

তোমার এত ভালোবাসার যোগ্য আমি ছিলাম না। ভালোবাসার ঋন যদি জীবন দিয়ে শোধ দিতে হয়, তাহলে আমার এ মৃত্যু তোমার ভালোবাসাকে উৎসর্গ করলাম। ওপারে তোমার অপেক্ষায় পথ চেয়ে থাকবো সোনা, সব অসম্পন্ন কাজ সম্পন্ন করে তাড়াতাড়ি এসো কিন্তু! আর হ্যা আমার শেষকৃত্যের আগে কপালে একটা আলতো চুমু দিও।

নাহ! চোখে পানি এসে গেলো, আর লিখতে পারলাম না।

সেদিন সত্যিই চোখে পানি এসেছিলো!!

 

প্রশ্ন পাঁচঃ গান অথবা লেখালেখি, দুটোর মধ্যে কোনটা বেশি পছন্দ?

উত্তরঃ দুটোই সমান পছন্দের। এখন আর গান শোনা হয়না তেমন, শুধুমাত্র জার্নিতে গান শোনা হয় কানে হেডফোন লাগিয়ে। এটা আমার লাগবেই। এখন একটু সময় পেলেই আমি দু’কলম হলেও লিখি। আর গান শুনলে আমার নানাবিধ লেখার আইডিয়া মাথায় খেলা করে। তখন সেটা চট করে নোটবুকে লিখে রাখি যাতে পরে ভুলে না যাই। তাই আমার জন্য দুটোই পরিপূরক।

 

প্রশ্ন ছয়ঃ ঘুরতে যাবার জন্য ড্রিম স্পট কোনটি?

উত্তরঃ ড্রিমস্পট অনেকগুলি আছে- প্যারিস এবং ইটালী ভ্রমন, সুইডেন আর রোমের রাস্তায় হাত ধরে পাশাপাশি হাঁটবো, বালি দ্বীপে রাত্রি ভ্রমন। সবশেষে তাজমহলের সামনে নিজেরা যুগলবন্দী ছবি তুলবো। এসবকিছু আমার আর গিন্নীর দৈত স্বপ্নের স্পট।

আর আমার একার স্বপ্নের স্পট হলো- সাহারার বালিয়াড়ির বুকে জোছনা দেখা, হিমালয়ের পাদদেশে নিজেকে সঁপে দিয়ে অনুধাবন করা আমি কত ক্ষুদ্র!জাপানের ফুজিয়ামায় রাত্রী যাপন করা। মিশরের পিরামিডের ভিতর দেবী হাপী এবং মিশরের রাণী লসট্রিসের এবং তার কৃতদাস টাইটা এ দু’জনের মুর্তি দেখা।

একজনেরই করা এত্তগুলা প্রশ্ন দেখে আমি ডরাইসিলাম কিন্তু!

 

প্রশ্নঃ ভাবিরে কতোটুকু ভয় পান তা জানতে চাই। কারন, ভাবিও কিন্তু একজন ব্লগার।

উত্তরঃ বউরে না ভয় পেলে সংসারে শান্তি আসবে কি করে? সংসার সুখের হয় ভয়েরও গুনে!! তবে ব্লগিং করতে আমি বউরে মোট্টেও ডরাইনা হুম।

 

প্রশ্নঃ প্রেম করে বিয়ে নাকি বিয়ের পরে প্রেম  আপনার মতে কোনটা ভালো ?

উত্তরঃ প্রেম করে বিয়ে করলে সব ঝামেলা আপনার আর এরেঞ্জ করে বিয়ে করলে ঝামেলা পরিবারের অন্যান্যদের। বুউজ্জালন এইবার।

 

প্রশ্নঃ ধরে নিচ্ছি ভাবির অনুমতি সাপেক্ষে/নিয়েই ব্লগিং করছেন। তা করুন। ব্লগ থেকে ভাবির দূরত্ব ক’হাত?? সঠিক মাপ বলতে হবে।

আমার হয়ে ইঞ্জা ভাইয়ের উত্তরঃ কি বলেন ভাই! তেনার লগে লগে আমগো ভাবীজান বি সোনেলার ব্লগার তা আপনে মিস করলেন কেমতে?

 

প্রশ্নঃ আপনার ব্লগ প্রোফাইলের কালো চশমার রহস্য কি? বলে ফেলুন।

উত্তরঃ আমার চোখের মায়ায় যেন কেউ না পরে তাই কালো চশমায় ঢেকে রেখেছি নিজের চোখ। আমি সবারটা দেখবো, কেউ আমারটা দেখবেনা।

 

প্রশ্নঃ ভাই, ভাবীরে কখন পেত্তম দেখলেন, কেমনে কি হইলো কইয়ালান?

উত্তরঃ ইনগেজমেন্টের দিনই প্রথম সামনাসামনি দেখেছি দাদা, এরপর ডাইরেক্ট বিয়া। আর কিছু নাই।

 

প্রশ্নঃ লেখা এবং পরিবারের মধ্যে কোনটির প্রাধান্য বেশি? মানুষের জীবনে অনেক স্মরণীয় আনন্দের মূহুর্ত থাকে, আপনার জীবনের এমন স্মরণীয় দুটি আনন্দের মূহুর্ত?

উত্তরঃ আপনি কই আছিলেন? নাকি সবার প্রশ্ন পড়ে এরপর জটিল ধাঁধা দিয়ে আমারে ফেইল করানোর ইচ্ছে? প্রশ্ন করার জন্য ধন্যবাদ জানবেন।

পরিবারের প্রাধান্য সবার আগে অবশ্যই, এটা নিশ্চিত জানবেন। স্বরনীয় আনন্দঘন মুহুর্ত অনেক আছে, এই মুহুর্তে মনে পড়ছে –

১. যেদিন সরকারি চাকুরীর নিয়োগপত্র হাতে পেয়েছিলাম।

২. যেদিন আমি আর আমার গিন্নী সমুদ্রের তীরে জোছনা উপভোগ করেছিলাম প্রথম এ সময় গুলো। এ দুটিই স্বরণীয় আনন্দঘন মুহুর্ত ছিলো।

 

প্রশ্নঃ আপনাকে কোনো বিষয় গুলো ভীষণ রকম মোটিভেট করে আর কার কার অনুপ্রেরণা আপনাকে সব চেয়ে বেশী উজ্জীবিত করে?

উত্তরঃ নিরবে নিভৃতে অন্যের উপকার করা যেন বাম হাত জানতে না পারে ডান হাত দিয়ে আমি কার উপকার করেছি এটি আমার সবচেয়ে বড় মোটিভেট করে। আমি খুব অল্পেই সুখী থাকার চেষ্টা করি।

আমার চাওয়ার পরিধি কম, অন্যের এটা আছে ওটা আছে, আমার কবে হবে! এই চিন্তাকে মনে প্রশ্রয় দেইনা। এরকম আরও অনেকে কিছু আছে যা আমাকে মোটিভেট করে।

আর আছে দুটি প্রার্থনাঃ প্রশান্তি, ক্ষমাদান।আমার পরিবার এবং আমার মোটিভেশনাল গুরু আমাকে উজ্জীবিত করেন সবসময়।

 

শেষ প্রশ্নঃ তৌহিদ ভাই সালাম নিবেন। আমার প্রশ্ন হচ্ছে নিজেকে এক কথায় প্রকাশ করতে হলে কি বলবেন?

আমার উত্তর হচ্ছে- এক কথায় আমি একজন স্বার্থপর হোমোসেপিয়ান।

**********

প্রিয় পাঠক, লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এখন আপনাদের অনুভূতি জানতে চাই। আপনারাও চাইলে পাঠকদের খুব কাছাকাছি যেতে পারেন এমন প্রশ্নোত্তর পর্বের মাধ্যমে। সোনেলা আপনাদের সাহায্য করতে সদা তৎপর। আপনাদের অনুভূতি মন্তব্যে জানান।

সবাই ভালো থাকুন সুস্থ্য থাকুন। শুভকামনা রইলো। শুভ ব্লগিং।

 

১১৬৬জন ৯৮৮জন
0 Shares

২৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ