প্রথম পর্বে বলেছিলাম বাস্তব কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করব।
ঘটনাঃ-১. আমি ছদ্মনাম ব্যবহার করছি। ঘাড়ে মাথা মোর একটাই। যাইহোক, দরিয়া। মুনের ছোটবেলার খেলার সাথি। নামকরা রক্ষনশীল মুসলিম পরিবারের মেয়ে মুন। দরিয়া ঐ বাড়ির আশ্রিতা এক পরিবারের মেয়ে। দরিয়া প্রজাপতির মতো উচ্ছল শান্ত এক অতি ফুটফুটে এক মেয়ে। গরীবের ঘরের দুঃখ। কেন যে এতো সুন্দর ছিল ও! পড়াশুনার জন্য খোকলা পরিবারের মুন মেয়েটি শহরে চলে আসল। দরিয়া ঐ গ্রামেই থেকে গেলো। ঐ বাড়িতে দশট পনেরোটা পরিবার। সব বাড়ির ফয় ফরমেশ মনখুলে করে দিত। এখন ও বাড়ির বুদ্ধ বৃদ্ধার পান ছিঁচে দিতে হবে। আজ এ বুড়োর কাপড় ধুয়ে দিতে হবে। বিনিময়ে বাড়ির বুড়ির পুরানো শাড়ি আর কিছু পান্তা ভাত। দরিয়ার মা এ বাড়ি ও বাড়ির ধান ভেনে চলে। দরিয়া বড় হয়েছে। গায়ে গতরে মাংস লেগেছে। রুপ যেন ঠিকরে বের হচ্ছে। দরিয়ারা ঐ বাড়ির পুরনো ভিটেতে কোনোরকম ছাপড়া তুলে থাকে। দরজায় নেই কোনো জোর। জোরে হাওয়া দিলেই হা করে খুলে যায় সেই দরজা। জসিম উদ্দিনের আসমানির ঘরের মতো।
দরিয়া প্রেম বোঝে না। না বোঝে ভালবাসা। সময়ই যে নেই এসবের। পেটের জালায় শরীর ও মন সেখানে তুচ্ছ। কিন্তু মিষ্টি কথায় সবার ডাকে তাকে ছুটে যেতেই হবে, সবার ফরমাস খাটতে। একদিন বৃষ্টির রাতে মাতব্বর বাড়ির ও মুন্সিবাড়ির ছেলে ডেকে নিল দরিয়াকে। ঘরের পাশে ধনচে ক্ষেতেই শেষ করে দিল দরিয়াকে। হাত ভাঙ্গা, ঘাড় ভাঙ্গা। সবই শেষ। কাপড় ছিড়ে একাকার। পা ঠেকে ছিল শুনেছি মাটিতে অথচ গলায় ফাঁস! পুলিশ নির্বিকার। ধিক্কার হেসমাজ তোমাকে। অথচ এই কিশোরী সদ্য যৌবনে পা দেওয়া দরিয়ার জানাযা তথাকথিত ঐ বাড়ির লোকেরা পড়ালো না। মাটিও দিল না তাকে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে। দরিয়া নাকি অপবিত্র হয়েছিল। ওর মাটি হলো খালপাড়ে। লজ্জায় ঘৃণায় মুন আর কোনোদিন তাদের গ্রামের বাড়ি যায় নাই। দরিয়ার অভিশাপ কেন নামেনি ? এই প্রশ্ন আল্লাকে মুন করেছে অনেকবার। এর নাম কি ধর্ম ? কোথায় লেখা আছে তাকে মাটি দেওয়া যাবে না, জানাযা পড়ানো যাবে না?
ঘটনা ২ঃ – অর্থি শশুর বাড়ি এসেছে। অর্থি কবিতা লিখতে ভালবাসত। কবিতা পড়তে ভালবাসত। খাতার পাতায় কখনো সখনো লিখে ফেলত দু’ এক লাইন। এ নিয়ে অর্থি মারও খেয়েছে। বড় বোন মা তার ভাবত, কোনো ছেলেকে লেখা হয়ত কোনো প্রেমের সংলাপ। অর্থিদের নিয়ম তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়া বাড়ির মেয়েদের। তাই সেই গায়ে গতরে বড় হওয়া অর্থি বিয়ে হয়ে চলে এলো। মনে যে সেই চঞ্চলতা তার থেকেই গিয়েছিল। শাশুড়ি প্রথম দিনই ডেকে বলল, ” বোরখা ছাড়া বাড়ির বাইরে একদম পা বাড়ানো যাবে না। খুউউউব সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল করে রান্না ঘরে আসতে হবে। তা সে কনকনে ঠান্ডাই কেন না হোক। না’পাক শরীরে রান্নাঘরে আসা যাবে না ভুলেও। কনকনে ঠান্ডা পানি দিয়েই অপবিত্র শরিরটাকে পাক করতে হবে ! তুমি সবার বড় এই সব দেবর ননদ তোমাকে মানুষ করতে হবে। এদের পড়াশোনা বিয়ে সবই তোমার দ্বয়িত্ব”। মুন গুনে দেখল এখনো ছয়টাকে মানুষ করতে হবে। এদের মধ্যে মুনের বড় পাঁচজনই। দুষ্টু মুন মনে মনে হেসেই ফেলল। এদের আবার কেমন করে মানুষ করতে হবে ! এগুলো কি গাধার বাচ্চা নাকি? পরে বুঝল, মানুষ করা মানে, তাদের কাপড় ধোয়া, তাদের প্লেট ধোয়া, রান্না করা, এর মধ্যে এই অসুসথ শশুর শাশুড়ির সেবা করা। মুনের শশুর মসজিদে ছাড়া নামাজ পড়ে না। কপালে তার দাগ পড়ে গেছে। মুনের এদিকে সারাদিন কাজ করে রাতের স্বামীর ভ্যানভ্যানানিআর সহ্য হয় না। ধুর ছাই তোর কাঁথা পুড়ি অবস্থা ! মুনের রুমের পাশেই থাকে শশুর ও এক দেবর। দেবর তার দৈব শক্তি পেয়েছে। প্যাঁচা মেরে রাতের আঁধারে কুফরি বিদ্যায় মশগুল। শশুর মশাই তার দিচ্ছে নির্দেশনা। দুই বন্ধুর মধ্যে শত্রুতা বৃদ্ধির তাবিজ থেকে শুরু করে ছেলে বসে আনা সবই পারে সে দক্ষ হাতে ! কুফরি বিদ্যা মানে শেরেকি। যা আল্লাহর সাথে সরাসরি শেরেকি করা। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়লেই এসব গুনাহ মাফ হবে? কখনোই না।
ঘটনা ৩ঃ- বাগেরহাট খানজাহান আলীর মাজার। ছোটবেলা থেকেই যাওয়া আসা রীতুর। ওখানে তাদের আত্নীয়ের অভাব নেই। তাই ঐ মাজারের খুটিনাটি সবই জানে সে। ওখানকার মাজারের ভন্ড ভক্তরাও রীতুদের চেনে। রিতুর ছোটবোনের শশুরবাড়ির আত্নীয়দের নিয়ে গেল মাজার দেখতে। রিতু যাবার আগে সবাইকে গাড়িতে বলে দিল, কেউ যেন কোথাও টাকা না দেয়, মাজারে সেজদা না করে। শুধু ফাতিহা পাঠ করেই যেন তাঁর জন্য দোয়া করা হয়। কারন ওটা শুধুমাত্রই একজন বুজূর্গ লোকের কবর। তাই তাকে সালাম দিয়ে ফাতেহা পাঠ করে দোয়া করতে বলল। মাজারে ঢুকেকুমির দেখার জন্য সব উতলা হল। কিন্তু ধলা পাহাড় কালো পাহাড় তো মরে গেছে অনেক আগে। এই দুই কুমির ছিল খানজাহান আলী দিঘীর পুরাতন কুমির। রিতু একটু দূরে সরে গেলো দল থেকে কি কারনে যেন। এরই মধ্যে মাজারের এক খাদেম ইমোশনাল জালে ফেলে দিয়েছে রিতুর এক আত্নীয়কে। রীতু এগিয়ে যেতেই তুমুল তর্ক শুরগ হল। রিতু তো বুক ফুলিয়ে ঝগড়া করছে। কারন এখানেরসবই রিতুর চেনা।অনেক পরেপুরাতন খাদেমরা আসার পরে রক্ষে হল। এই মাজারে ভন্ডামি করে চলে কয়েকটা পরিবার। চলে চাঁদাবাজি।
ঘটনা ৪ঃ- সুফির সব বিষয়েই খুবই কৌতুহল। খুবই দুষ্টু। আজ সে দুই বাচ্চার মা। তবুওএসব নিয়ে প্রচন্ড প্রতিবাদ। একদিন সে গেলো পাশের বাসার ভাবির সাথে পরী নামানো দেখতে। পরী একজনে ঘাড়ে এসে বলে দিবে সব। কে কোথায় তাবিজ পুতে রেখেছে, কে কার ক্ষতি করেছে, কার স্বামী পরকিয়া করছে, কার ছেলে খাচ্ছে নাকেন , পড়ছে না কেন, ছেলেমেয়ে হচ্ছে না কেন সবই বলে দিবে পরী। এই সুযোগ কেবা হাতছাড়া করে।সুফিও ৫০ টাকাদিয়ে বসে পড়ল। একটু পরেজবা ফুল সামনে নিয়ে পিটির পিটির করে মন্ত্র পড়তে লাগল। মেখে বলে উঠল,” উত্রে যা দক্ষিণে যা, পূর্বে যা, পশ্চিমে যা। ইচ্ছে করে মহিলা কাপতে লাগল ঠকঠক করে। মনে হল কসে চড় মারে সুফি। ভাবির ননদের পেটে জিনের বাচ্চা। কারন স্বামী তার অতিই বৃদ্ধহইছে। ঘরে নাতি নাতনি এই মুখ দেখাবে কেমন করে? এই বয়সে যদি বাচ্চা কাচ্চা হয়! কিন্তু এ যে জিনের বাচ্চা তাই সাবধান! একে নষ্ট করলে অভিশাপ নেমেআসবে! অগত্যা সে এখন জিনের বাচ্চা পেটে নিয়ে ঘুরছে। এটা কুড়িগ্রামের ঘটনা। এবং একদম সত্যি।
যাইহোক পরিশেষে বলতে চাই। নামাজ রোযা বা ইবাদত হোক সবার মঙ্গলের জন্য। কোনো অন্ধ কুসংস্কারে নয়।

৫৩০জন ৫৩০জন
0 Shares

২০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ