আজ পোষ্টের ক্যাপশন দেখে বুঝতেই পারছেন মাছের বাজার বসেছে এই সোনেলার রান্নাঘরে। আপনাদেরকে সোনেলার রান্নাঘরে আমি রাঁধুনী নীলাঞ্জনা আপনাদেরকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। যাক বেশী কথা বলার দরকার নেই। রান্না শুরু করি।

তেল-ইলিশ সন্ধি ঃ-

তেল-ইলিশ সন্ধি...
তেল-ইলিশ সন্ধি…

উপকরণ ঃ কালোজিরা, হলুদ পাউডার, জিরা পাউডার, লবণ, শুকনো মরিচ, কাঁচামরিচ, ইলিশ এবং তেল।

ইলিশ মাছ বেশী ধুতে নেই। অন্যান্য মাছ যেমন হলুদ-লবণ দিয়ে ধুতে হয়, ইলিশে তার প্রয়োজন নেই। এমনভাবে পরিষ্কার করতে হবে যাতে রক্ত না থাকে। ধুয়ে তারপর জল ঝরাতে হবে। জল ঝরে গেলে হলুদ-জিরা-লবণ দিয়ে ইলিশ মাছের টুকরোগুলো মেখে রাখতে হবে। চুলায় ফ্রাইপ্যান বসান, ফ্রাইপ্যান গরম হলে একেবারে অল্প তেল দিন। কারণ ইলিশের তেলেই পুরো মাছ রান্না হবে। তেল গরম হলে ওর মধ্যে কালোজিরা ও শুকনো মরিচ ফোঁড়ন দিন। লবণও ছিটিয়ে দিন। এবারে অল্প আঁচে হাল্কা করে ভাঁজুন। কালোজিরা আর শুকনো লঙ্কার ঘ্রাণ ছড়ালে মাছের টুকরোগুলো এক এক করে ফ্রাইপ্যানে দিন, তবে অবশ্যই হাল্কাভাবে ভাঁজতে হবে। এখন জ্বাল বাড়িয়ে দিয়ে একপাশ ভাঁজা হলে, উল্টে দিয়ে অন্যপাশও একইভাবে ভাঁজুন। শুধু লক্ষ্য রাখতে হবে দু’পাশই যেনো একই রকম দেখতে হয়। ভাঁজা হয়ে গেলে অল্প আঁচে ঢেকে রেখে দিন চুলায়। মাছের তেলেই মাছ সেদ্ধ হবে। শুধু খেয়াল রাখতে হবে তেল যেনো শুকিয়ে না যায় এবং মাছ পোড়া না লাগে। নামাবার সময় কাঁচামরিচ ফালি দিয়ে দিন। খুবই সহজ রান্না, গরম ভাতের সাথে শুধু এই একপদ দিয়েই খেয়ে নেয়া যায়।

 

ইলিশাসপারাগাস ঃ-

ইলিশাসপারাগাস...
ইলিশাসপারাগাস…

উপকরণ ঃ  কালোজিরা, হলুদ পাউডার, লবণ, শুকনো মরিচ, কাঁচামরিচ, ইলিশ, অ্যাসপারাগাস, জল এবং তেল।

নামে একটু খটোমট হলেও রান্না খুবই সহজ। অ্যাসপারাগাস লম্বা করে টুকরো করুন। দেশে অবশ্য একইভাবে ডাটা দিয়েও ইলিশ মাছ রান্না করা হয়। ইলিশ একইভাবে পরিষ্কার করে নিয়ে হলুদ-লবণ দিয়ে একেবারেই হাল্কাভাবে ভাঁজুন। ভাঁজা হয়ে গেলে ফ্রাইপ্যান থেকে উঠিয়ে নিয়ে আলাদা পাত্রে রাখুন। এবার ওই তেলেই কালোজিরা ফোঁড়ন দিন, সাথে সাথেই একটু লবণ ছিটিয়ে দেবেন। তারপর অ্যাসপারাগাস টুকরোগুলো ছেড়ে দিন ওই তেলে। হলুদ-লবণ দিন। হাল্কা ভাঁজা হলে অল্প একটু জল ঢেলে দিন ঝোলের জন্য। ঢেকে দিন জল ফুঁটতে শুরু করলে মাছের টুকরোগুলো ছেড়ে দিন। আবার ঢেকে দিন। মাছ সেদ্ধ হলো কিনা দেখুন, সেদ্ধ হলে ঢাকনা সরিয়ে দিন। আর ঝোল যতোটুকু রাখতে চান ঠিক ততোটুকুই রাখুন। সবশেষে কাঁচা মরিচ ফালি ছেড়ে দিন। তবে সাবধান অ্যাসপারাগাস খুবই নরম হয়ে থাকে, তাই খেয়াল রাখতে হবে গলে না যায়। আর দেশে যাঁরা আছেন, ডাটা দিয়ে ইলিশের ঝোল খেয়ে দেখুন। মনে হবে অমৃত।

 

আলু-কৈ মাছের ঝোল ঃ-

আলু-কৈ-মাছের-ঝোল...
আলু-কৈ-মাছের-ঝোল…

উপকরণ ঃ আস্ত জিরা, হলুদ-জিরা-ধনে-কারি পাউডার, আদা বাটা, লবণ, কাঁচালঙ্কা, ধনেপাতা, আলু ও কৈ মাছ।

কৈ মাছ এখানে পরিষ্কার করাই পাওয়া যায়। আমি শুধু হলুদ-লবণ মাখিয়ে বহুবার ধুয়ে থাকি। ফ্রোজেন কৈ মাছে গন্ধ পাওয়া যায়, আমিও পাই। তবে খুব ভালো করে হলুদ-লবণ মাখিয়ে ধুয়ে ফেললে একটুও ফ্রোজেন গন্ধ পাওয়া যায়না। আমি মাছের শরীরে হাল্কা একটা পোচ দিয়ে রাখি যাতে মশলাগুলো ভেতরে ঢোকে। এবার ধুয়ে ফেলে জল ঝরান। জল ঝরে গেলে হলুদ-লবণ মাখিয়ে নিয়ে ফ্রাইপ্যানে তেল দিন। তেল গরম হলে এক এক করে সবগুলো মাছ দিন। হাল্কা করে ভেঁজে নিয়ে তুলে রাখুন। ওই তেলেই এক চামচ আস্ত জিরা ্ছেড়ে দিয়েই লবণ ছিটিয়ে দিন। সাথে সাথেই আদা বাটা দিন। ছোট্ট একটা বাটিতে দুই চা চামচ জিরা-কারি পাউডার-হলুদ, এক চা চামচ ধনে পাউডার অল্প একটু জল দিয়ে মেখে নিয়ে ওই মশলা তেলে ঢেলে দিন। এমন ভাবে ভাঁজুন যাতে পোড়া না লাগে। এবারে হাল্কা ভাঁজা হলে ওর মধ্যে আলুর টুকরোগুলো দিয়ে দিন। বেশ নাড়াচাড়া করুন, মশলা বাদামী রঙ হলে এলে জল দিয়ে ঢেকে দিন। জল ফুঁটে আলু সেদ্ধ হয়ে গেলে ঢাকনা সরিয়ে দিন। এবারে মাছগুলো দিয়ে জ্বাল কমিয়ে দিন। অল্প আঁচে মাছ সেদ্ধ হবে। ঝোল যতোটুকু পছন্দ ঠিক ততোটুকুই টানিয়ে নিন। নামানোর আগে লবণ দেখে নেবেন। তারপর কাঁচামরিচ ফালি ও ধনেপাতা কুচি দিন। ব্যস হয়ে গেলো আলু দিয়ে কৈ মাছের ঝোল।

 

সঁরপুঁটি মাছের ব্যঞ্জন ঃ-

সঁরপুঁটি-মাছের-ব্যঞ্জন...
সঁরপুঁটি-মাছের-ব্যঞ্জন…

উপকরণ ঃ আস্ত জিরা, আস্ত তেজপাতা-লবঙ্গ-এলাচ-দারচিনি (সবগুলো দুটো করে), হলুদ-জিরা-ধনে-কারি পাউডার, আদা বাটা, লবণ, কাঁচালঙ্কা, শুকনো লঙ্কা, ঘি, গরমমশলা গুড়া।

সঁরপুঁটি মাছও এখানে পরিষ্কার করাই পাওয়া যায়। আমি শুধু হলুদ-লবণ মাখিয়ে বহুবার ধুয়ে থাকি। খুব ভালো করে হলুদ-লবণ মাখিয়ে ধুয়ে ফেলে জল ঝরান। জল ঝরে গেলে হলুদ-লবণ মাখিয়ে নিয়ে ফ্রাইপ্যানে তেল দিন। তেল গরম হলে এক এক করে সবগুলো মাছ দিন। হাল্কা করে ভেঁজে নিয়ে তুলে রাখুন। ওই তেলেই আস্ত তেজপাতা-লবঙ্গ-এলাচ-দারচিনি ছেড়ে দিন। ওর মধ্যেই এক চামচ আস্ত জিরা ্ছেড়ে দিয়ে লবণ ছিটিয়ে দিন। সাথে সাথেই আদা বাটা দিন। ছোট্ট একটা বাটিতে দুই চা চামচ জিরা-কারি পাউডার-হলুদ, এক চা চামচ ধনে পাউডার অল্প একটু জল দিয়ে মেখে নিয়ে ওই মশলা তেলে ঢেলে দিন। এমন ভাবে ভাঁজুন যাতে পোড়া না লাগে। অল্প করে জল দিয়ে ঢেকে দিন। জল ফুঁটে উঠলে মাছের টুকরোগুলো ছেড়ে দিন। একই পদ্ধতিতে মাছ সেদ্ধ করুন। মাছ সেদ্ধ হয়ে এলে চার চা চামচ ঘি ঢেলে দিন। এটা পাতলা ঝোল হবে না কিন্তু। মাখা মাখা হয়ে এলে নামানোর সময় কাঁচালঙ্কা ও গরমমশলা গুড়ো ছিটিয়ে দিন।

 

পাবদা মাছ মাখানী ঃ-

পাবদা-মাছ মাখানী...
পাবদা-মাছ মাখানী…

উপকরণ ঃ পেঁয়াজ-রসুন কুচি, আস্ত জিরা, আদা বাটা, পোস্ত বাটা, সরিষা বাটা, ধনেপাতা বাটা, জিরা গুড়া, ধনে গুড়া, হলুদ গুড়া, লবণ, ভেজিটেবল তেল, সরিষা তেল, কাঁচালঙ্কা।

পাবদা মাছ এখানে পরিষ্কার করাই পাওয়া যায়। কৈ মাছের মতোই পাবদা মাছকেও একইভাবে প্রসেস করে নেবেন। তারপর তেলে হাল্কা ভেঁজে আলাদা করে সরিয়ে রাখুন। একটা ছোট্ট বাটিতে আদা-পোস্ত-সরিষা-জিরা-ধনে-হলুদ(সব এক চামচ করে) মেখে রাখুন। আর যে তেলে মাছ ভাঁজা হয়েছে সেই একই তেলে পেঁয়াজ-রসুন কুচি হাল্কা বাদামী করে ভেঁজে নিন। ওর মধ্যে মেখে রাখা মশলা বাটা দিয়ে দিন। তারপর ভালো করে নাড়াতে থাকুন। ভাঁজা ভাঁজা হয়ে গেলে খুবই অল্প পরিমাণে একটু জল দিন। জল ফুঁটে উঠলে মাছ দিয়ে দিন। সাথে সাথেই ধনেপাতা বাটাও দিন। ঝোলের রঙ একেবারে সবুজ হয়ে যাবে। জ্বাল কমিয়ে ঢেকে রাখুন যাতে মাছ সেদ্ধ হয়। সেদ্ধ হবার পর নামানোর সময় চার চা চামচ সরিষা তেল দিন। রান্নাটা একটু ঝামেলাদায়ক হলেও স্বাদে ঠকবেন না। পাবদা মাছের এই রেসিপি আমার মন থেকে নেয়া।

**আমি রান্নায় কাঁচামরিচ দেই, গুড়া পাউডার ব্যবহার করিনা। আর আমার রান্নায় পেঁয়াজ-রসুনের ব্যবহার খুবই কম। অনেকেই অবাক হয়ে যায়, তবে কখনো বিস্বাদ হয় এ কথা শুনিনি। আশা করি রেসিপি সকলেরই পছন্দ হবে। কারণ এখানে তেলের ব্যবহার পুরোমাত্রায় আছে। আর তেল ছাড়া রান্না শুধু না, জীবনের সর্বক্ষেত্রই অচল। প্রতিনিয়ত দেখছি বিভিন্ন জায়গায়, অবশ্য ভিন্নভাবে।   😀

হ্যামিল্টন, কানাডা
৬ ডিসেম্বর, ২০১৬ ইং।

রেসিপি – দুই

৯৩০জন ৯২৯জন
0 Shares

৩৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ