
ঝক ঝকা ট্রেন চলেছে, ট্রেন চলেছে ওই
ট্রেন চলছে, ট্রেন চলছে, ট্রেনের বাড়ি কই?
সবারি অপেক্ষা, কখন শোনা যাবে সেই শব্দ। মা ও অপেক্ষা করেন। আমাদের ছোট শহরে দুটা স্টেশন। নতুন স্টেশন আর পুরাতন স্টেশন। স্টেশনের কাছে বাড়ি হওয়ায়, ট্রেনের শব্দ হলেই মা গেটে গিয়ে দাঁড়ান। যতক্ষণ না ট্রেনটি বাসার পিছন দিয়ে ঘড় ঘড় শব্দ করে পুরাতন স্টেশনে যাচ্ছে।
তারপর মা এসে বলেন, আজ কেউ আসবেনা রে! ভাত উঠায় দে। আগের দিনে গুণে গুণে আত্মীয় আসতো না। দেখা যেতো পাশের বাড়ির খালা, তার ছেলে অথবা তার নাতি আসতো শহর দেখতে।
আমাদের বাড়ি ছিলো স্কুল ঘরের মতো। বড় বড়, লম্বা লম্বা। একবার কি হলো! এতো আত্মীয় আসলো যে মেঝে, খাট সবমিলে জায়গা হচ্ছিলো না। আব্বা ফোন দিলো সার্কিট হাউসে। ওখান থেকে একজন কেয়ার টেকার এসে কিছু আত্মীয় স্বজনকে নিয়ে গেলো। রুম নং ৬ ও ৭ দেয়া হলো। ৭ সিঙ্গেল হওয়াতে মিজানুর, মানে আমার ফুপাতো ভাই এর জায়গা হলো।
ফোন বাজছে। আমি আব্বাকে ডাকলাম। আব্বা, ফোন ধরবো।
ধরো। কিন্তু এতো রাতে! আড়াইটা বাজে।
হ্যালো! আসসালামু আলাইকুম।
আপু, আমি রোকন।
রোকন ভাই, এতো রাতে? কি খবর?
স্যারকে দেন।
আব্বা : কি হয়েছে?
স্যার, তাড়াতাড়ি আসেন। আপনার ভাগ্নারে কে জানি মারছে। সে কি অবস্থা!
আচ্ছা, আসতেছি।
আব্বা, আমিও যাবো।
চলো।
দুজনেই গিয়ে দেখি, মিজানুরের পুরা গা লাল দাগে পরিপূর্ণ। এমনিতেই তো ও ফর্সা। আরও টকটকে হয়ে আছে।
আব্বা : কি রে, কি হইছে?
মিজানুর : মামা, আমি ঘুমাইছি। হঠাৎ দরজা খুলে যায়। দেখি, একটা ছায়া! সে কি আলো তার গায়ে। লম্বা দাড়িও আছে। আমারে দাঁড় করায়, সে কি মাইর দিলো।
আমি বললাম, মারতেছেন ক্যান?
উনি বলে, কথা বলিস? নামাজ পরিসনা ব্যাটা! প্রসাব করে পানিও নিসনা! আমি এ বিছানায় থাকি। তুই পবিত্রতা নষ্ট করছিস।
বলে আর মারে। একটা জায়গাও খালি রাখে নাই। দেখেন কি অবস্থা! পরে আমার কান্না শুনে রোকন ভাই আসে।
আব্বা ওকে বাড়িতে যেতে বললো।
বাসায় আসার পর সবাই উৎসুক। ঘটনা কি? কেমনে এটা হইলো?
আব্বা বললেন, ওখানে একজন ভালো জ্বীন থাকেন। শীতের সময় মসজিদে নামায পড়ার সময় দরজা জানালা লাগা থাকে। কিন্তু নামায শুরু হলেই, ফট করে দরজা অটো খুলে যায়, আবার লাগিয়েও যায়। নামায শেষেও ঐ একই অবস্থা!
আমি একদিন ৭ নং রুমে ছিলাম। রাত ১/২টার দিকে দেখি, কেমন জানি মিষ্টি একটা সুবাস। আর বাতাসটাও ঠাণ্ডা বইছে। আযান হলেই পানির কল খুলে কে জানি ওযু করছে। উনাকে দেখা যায় না। কিন্তু পানির শব্দ পাওয়া যায়। এর থেকে বোঝা যায় ওখানে একজন ভালো জ্বীন থাকে।
৭ রুম এখন লকডাউন। ভয়ে কেউ থাকে না।
★★ভৌতিক ঘটনাগুলো কি আমরা নিজের অজান্তে মনের মধ্যে পুষে রাখি। আর ঘটনা মিলে গেলেই, সেই সুপ্ত ভুতটি আমাদের অজান্তে পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে জন্ম নেয়। প্রশ্নটা আপনাদের কাছে থাকলো। তবে উপরোক্ত ঘটনা সত্যি।
৩৩টি মন্তব্য
ফয়জুল মহী
অনবদ্য প্রকাশ। ভালো লাগলো।
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ ভাই
নীরা সাদীয়া
আমিওতো তাই ভাবছি। সত্যিই এটা মনের ভুল ব্যাখ্যা নাকি আসলেই এমন কেউ আছে? আমি বেশ উপভোগ করলাম আপনার গল্প বলার ধরণ।
আরজু মুক্তা
হা হা।
ধন্যবাদ
ছাইরাছ হেলাল
উক্ত ঘটনা সত্যি! বললেই সত্যি হয়ে যায় না কী!
আপনি মাইর-মুইর খাইলে বুঝতাম কিছুটা সত্যি।
আরও লেখেন।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
হা হা হা। ভাইয়া পারেন ও আপনি। এতো মজা করে মন্তব্য লিখেন। ধন্যবাদ আপনাকে
আরজু মুক্তা
বেড়াতে এলে ঐ রুমের বরাদ্দ আপনার জন্য থাকলো।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আপু এতো বয়স হলো এখন পর্যন্ত এসবের সম্মুখীন হইনি। সত্যি মিথ্যে জানিনা তবে অনেকের মুখে এগুলো শুনে অভ্যস্ত। রহস্য বড়ই রহস্যময়। এর ভেদ করা উচিত হবেনা কারণ এর কূল নাই কিনার নাই। ভালো থাকবেন
আরজু মুক্তা
রহস্যময় হলেও সত্যি।
ধন্যবাদ
প্রদীপ চক্রবর্তী
পবিত্রতা নষ্টের জন্য এত মাইর বাপরি!
আহা!
এমন ভৌতিক রহস্যময় যদি আমায় আঁকড়ে ধরতো তাহলে বেশ হয়।
যাই হোক দারুণ লাগলো,দিদি।
আরজু মুক্তা
চলে আসেন ৭ নং রুমে
রহস্যঘেরায় স্বাগতম
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
সুন্দর এবং উপভোগ্য লেখা । মুগ্ধতা ছুঁয়ে গেল। শুভেচ্ছা অবিরাম ।
আরজু মুক্তা
আপনাকে ধন্যবাদ
জিসান শা ইকরাম
এটি সত্যি ঘটনা!
ভৌতিক ঘটনা আসলে আমরা মনের মধ্যে লালন করে রাখি।
মন চায় এসব ঘটনা সত্যি হোক, তাই কিছু মিল পেলেই সত্যি হিসেবে মানি।
গল্পের উপস্থাপনা সুন্দর হয়েছে। আরো লিখতে হবে ভৌতিকতা নিয়ে।
শুভ কামনা।
আরজু মুক্তা
অতিপ্রাকৃত ঘটনা মেনে নেয়া ছাড়া উপায় নেই
মোহাম্মদ দিদার
বেশ উপভোগ করলাম আপনার গল্প।
আামার কিছু আপসুস আছে, হারা জনম খালি হুনি অমুকের ভূতে ধরছে, জীনে পরিতে আচড়াইছে। হালায় হালারা আমারে চুক্কে দেহেনা! কত কত আউস মোর একখান পরি দেহার! কতে কতো…..
আপসুসই রই গেলো।
কেমন আছেন প্রিয় লেখিকা?
অনেক দিন পর আসলাম।
আরজু মুক্তা
আমি ভালো আছি। আপনি?
আপনার জন্য ৭ নং রুম বরাদ্দ থাকল। আসেন। বেড়িয়ে যান
কামাল উদ্দিন
এমন অতিমানবীয় ঘটনাগুলো আগের দিনে বেশী শোনা যেত, আর মানুষজনও খুবই বিশ্বাস করতো এসবে। এখন আর শোনা যায় না, আর বিশ্বাস করার লোকও তো খুবই কমে গেছে। এমন ঘটনাগুলো শুনতে বা ঘটনার স্থানটা দেখতে আমার ভীষণ ভালোলাগে…….শুভ কামনা জানিয়ে গেলাম আপু।
আরজু মুক্তা
স্বাগতম। একদিন আসেন। ৭ নং রুম বরাদ্দ থাকলো।
দারুণ রহস্যময়
কামাল উদ্দিন
আমার ঘুরুঞ্চি মন, একদিন হয়তো ঠিকই চলে আসবো আপু
নিতাই বাবু
ভৌতিক গল্পগুলো আমার খুবই ভালো লাগে। তাই আমি বাসায় বসে ইউটিউবে প্রায়সময় ভূতের মুভিগূলো বেশি দেখি। আপনার লেখা পড়ে মনে হচ্ছে আমি ইউটিউবে ভূতের সেসব মুভি গুলো দেখছি। সত্যি ভালো লেগেছে। শুভকামনা থাকলো।
আরজু মুক্তা
এরকম অনেক ঘটনাই স্মৃতিতে। মুভি লাগে না।
ধন্যবাদ দাদা
তৌহিদ
আমাদের চারপাশে এমন কত ঘটনা ঘটে যার কোন সুনির্দিষ্ট কারন খুঁজে পাওয়া যায়না। প্রকৃতির সব খেয়াল মানুষের বোঝার সাধ্যি নেই।
ভালো থাকুন আপু।
আরজু মুক্তা
সেটাই। এভাবে মুখোমুখি হয়ে, মেনে চলতে হয়। আসবেন নাকি ৭ নং রুমে?
সুপায়ন বড়ুয়া
ভৌতিক ঘটনাকে সত্যিকার ভাবে তুলে ধরার দক্ষতায় পরিপূর্ণ। বাসার সামনে ফুলেল সুবাসের গাছ থাকলে কথাই নাই।
সেদিক থেকে আমদের অভিজ্ঞতায় ঘাটতি।
ভাল লাগলো। শুভ কামনা।
আরজু মুক্তা
তাহলে, চলেন ঘুরে আসি ৭ নল রুম।
রহস্যময়।
এস.জেড বাবু
ভিষন মজা পেলাম আপু
ভিন্নতায় পরিপূর্ণ-
মনে হচ্ছিলো নিজের জীবনে দেখা কোনও ঘটনা নিজেই পড়ছি
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ ভাই।
কঠিন করে লিখতে পারিনা।
এস.জেড বাবু
আপনি সবসময় সুন্দর লিখেন, সহজ বোধগম্য ।
শুভকামনা আপু
হালিম নজরুল
ভাল লাগল রহস্যময়তা
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ ভাই
সাবিনা ইয়াসমিন
কিছু রহস্য রহস্যই থেকে যায়।
আপনার ভৌতিক গল্প পড়ে আশ্বস্ত হলাম, সব ভৌতিক গল্পই ভয়ংকর হয় না 🙂
আরও লিখুন,
শুভ কামনা 🌹🌹
আরজু মুক্তা
একদম। উৎসাহ পেলে ভালো লাগে।
ধন্যবাদ