“ শুনুন মি: পারফেক্ট আমি ‘রুপা’। ‘রুপা’ বা ‘সিলভার’ হলো বাজারে সবচেয়ে সস্তা। আমরা সবাই এটা জানি এবং আপনাদের সবার মনে হতে পারে। বাবা আমার কাজকর্মে বলেন, আমার নাম ‘কুইক সিলভার’ রাখলে ভালো করতেন। আমিও তাই মনে করি, আমি কুইক সিলভার বা পারদ। কুইক সিলভার রুপার মতই উজ্জল কিন্তু তাকে ধরা বা ছোঁয়া যায়না।
দুপুর তিনটের সময় আপনাদের বিয়ের জন্য আসার কথা। গায়ে হলুদ হয়ে গেছে অথচ বিয়ের জন্য না এসে আপনারা খবর পাঠিয়েছেন আপনার একমাত্র মেয়ের একমাত্র জামাই আমাকে নতুন করে তার বন্ধুবান্ধবসহ দেখবে। যদি পছন্দ হয় তবেই বিয়ে না হলে বিয়ে হবে না। বিয়ে হোক বা না হোক আমি আর কারও সামনে যাচ্ছি না। আপনার যদি তাতে মনে হয় বিয়ে করবেন না তাহলে আসার দরকার নেই!” – একনাগারে এতগুলো কথা বলার পর রুপা ফোনটা কেটে দিলো। এরপরের রিএকশান তো জানাই যায়। আর এ বিয়ে হবে না। সো হোয়াট!!!
আমার বাবা নিতান্তই একজন সহজ সরল কম শিক্ষিত মানুষ। আমি তার অতি আদরের একমাত্র কন্যা। ছোটবেলা থেকে বাবা আমায় হাজারো নামে ডাকেন। কখনো সোনা, ময়না, টিয়া , পাখি , জান, কলিজা, টুটু, সুলু, কুটু, মুটু, পুকু, লুকু যা আসে মুখে। আমি রাজশাহী ভার্সিটিতে সাইকোলোজিতে চান্স পেলেও বাবা সামর্থ্যের কারণে পড়াতে পারেন নি। পরে আমি ইংলিশে অনার্স করি। মাষ্টার্স পরীক্ষা না দিতেই আমার ব্যাংকের চাকুরীটা হয়ে যায়।
আমি পাঁচ ফুট পাঁচ লম্বা, শ্যামলা মেয়ে। সবাই বলে দেখতে সুন্দর, তারচেয়ে বেশি স্মার্ট। হঠাৎ করেই বাবা জানালো তার বন্ধু ছেলের জন্য আমাকে চেয়েছে। আমি অবাক হলাম কোটিপতির একমাত্র ছেলে আর আমি, কি করে সম্ভব! তার উপর ছেলে নাকি নায়কের মতো সুন্দর। আমার আবার নায়ক পছন্দ না, তবুও বাবার সম্মানের জন্য রাজী হলাম।
প্রথমে তারা আমায় তাদের বাড়িতে ডেকে নিলেন। বুডো অসুস্থ দাদী আছেন তিনি দেখবেন।দাদী বেশ খুশি হলেন। আমি ভাবলাম যাক শর্ট কাটে দেখা- দেখি শেষ হলো তাহলে। কিন্তু আমার ভাবনা পুরোই ভুল। পনেরজনের বিরাট বড় দল এবার দেখতে এলেন। যারা পরিবারে বয়োজোষ্ঠ। যাবার সময় শর্ত দিয়ে গেলেন তাদের ছেলে ভালো বিছানা ও বাথরুম ছাড়া চলতে পারেনা। সো, আমাদের সেগুলো বানাতে হবে। আমি সামান্য বাডিটাই লোনে করেছি। ছোট ভাই এর পড়াশুনা। বাবাকে বললাম, বাদ দাও।
বাবার বন্ধু বলে কথা! বাথরুম হলো। এবার এলেন ছেলে ও তার বন্ধুরা। তাদের সাথে আমাকে বেশ কিছু সময় নোংরা হাস্যরস করতে হলো। কেউ কেউ আমার ফিগার দেখে আধাপাগল হলো এবং আমাকে চোখে চোখে লেহন করলো। যেগুলো কোনদিনই আমার পছন্দ না।
বিয়ের কথা হবার পর থেকেই ‘সামির’ আমাকে ফোন দেয়।অধিকাংশ সময়ই সেক্সুয়াল টপিক। সারাদিন অফিস করার পর যেগুলো আমার মাথায় কিছুতেই ঢেকে না। আর শরীর ব্যাপারটা মনস্তাত্বিক বলেই আমি জানি তা নিয়ে এতো আলোচনারই বা কি আছে?
আলোচনা এমন- ফুলশয্যায় আমি কি করবো? আমার বলতে ইচ্ছে হয়, গাধা সেটা তো এখনো আসেনি! তবে আমার পছন্দ বলি, খোলা ছাদে কবিতা শোনা আর চাঁদ দেখা।
তার পছন্দ- আমার পুরো শরীরে একটিও কাপড় থাকবে না পরিপূর্ণ আলোয় আমাকে দেখবে। কিছু ছবি তুলবে, বিয়ার খাবে তারপর,,, আমার বমি পায়।
ছেলে নাকি এম, বি, এ। আমার তো পুরাই সন্দেহ। অবশ্য বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট টাকা হলেই কিনতে পাওয়া যায়। ছেলে চাকুরী করেন না, কন্ট্রাকটারী করেন। তার বাবাও তাই করতেন, ছেলে হাল ধরেছে এটা ভালো।
কোটিটাকা থাকার পরও আমাকে গয়না দিতে হবে দশভরি। অনুষ্ঠান করতে হবে বিরাট করে। ছেলেকে সাজাতে হবে। আংটি দিতে হবে হীরার। একটা ইয়ামাহা লেটেষ্ট বাইক দিতে হবে। যেগুলো দেবার সামর্থ্য আমার বাবার নেই। তবুও বাবা কেন যেন উঠে পরে লেগেছেন এই ছেলেকেই জামাই বানাবেন।এরপর মোটামুটি লাখ দুয়েক টাকা খরচ করে আজকের বাজার করেছেন। আত্নীয়- স্বজনদের কাছে চেয়ে নিয়েছেন। যেগুলো আমি পরে জেনেছি এবং কষ্টও পেয়েছি। বাবা যদি সত্যিই আমাকে অনেক ভালোবাসেন এবং আমাকে ‘কুইক সিলভার’ মনে করেন তাহলে তো এমনটা করার কথা না। এটা তো আমাকে অসম্মান করা। কে, কাকে বোঝায়! বাবারা এ সময় এসে মেয়েকে সন্তান নয়, বোঝা ভাবতে শুরু করেন। কোনমতে অন্যের ঘরে পাঠানোটাই যেন মূখ্য। অথচ আমার তো ইচ্ছে করে সারাজীবন বাবা-মায়ের সাথে ছোট্ট কুটুরী বানিয়ে গুটুর- মুটুর করে কাটিয়ে দেই। এসব লোকদেখানো, শরীরসর্বস্ব বিয়ের কি দরকার!
রাত দশটা বাজে। ছেলেরা এখনও ফোন দেয়নি। আত্নীয়রা যারা এসেছিলেন আমি তাদের জানিয়ে দিলাম এ বিয়ে হবে না। খাবার দাবার আশেপাশের লোকদের দিয়ে দিতে। অজান্তেই চোখের কোল ভিজে গেলো, একি সুখের অশ্রু?
সিদ্ধান্ত নিলাম, বিয়ে আমি সেদিনই করবো। যেদিন কেউ একজন আমাকে অঝোর বর্ষার পানিতে রিকশার হুড ফেলে আসতে দেখে মুগ্ধ হবে।
একগাদা কদমফুল হাতে বলবে- আমি শ্রাবন, বর্ষা প্রেমিক। বর্ষার সাথে প্রেম করবো বলে অনন্তকাল অপেক্ষায়! কাউকে আমার সাথে বৃষ্টিতে ভেজার জন্য সঙ্গী করে পাইনি। আপনি কি আমার সাথে ভিজবেন? আমি মুগ্ধ হয়ে কদমফুল হাতে তার সাথে ডাকাত বৃষ্টিতে নেমে পরবো। বিয়ের দিন আমাদের জ্বর থাকবে ১০২ ডিগ্রি। দুজনে চুমু খেতে গেলেই হাঁচি আসবে!! সে বলবে, চলো না হয় আবার ভিজি!!!!!
ছবি- নেট থেকে।
১৬টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
বাহ মিষ্টি প্রেমের গল্প!
কিছু মানুষের টাকা থাকলেই তারা মানুষ হয় না,
সব থাকার পরেও এদের চাহিদার শেষ নেই।
বিয়েতে এদের সব চাই।
রুপারা এমন বর খুব কমই পায়,
অধরাই থেকে যায়, তাঁদের স্বপ্ন গুলো।
সব রুপারা যেন এমন জীবন সঙ্গী পায়।
গল্প ভালো লেগেছে, শুভ কামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আসলেই টাকা থাকলেই মন থাকে না। সকল রুপাদের জন্য শুভকামনা। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা রইলো।
আরজু মুক্তা
রূপার গহনা আমার খুব পছন্দের।
এই রকম রোমান্টিক জামাই খুব কম হয়। তারপরও হাজারও ব্যস্ততার ফাঁকে একটা কদম নিয়ে সামনে আসাই যায়।
গল্প ভালো লাগলো। এই বৃষ্টিতে ভিজে একটু খুচুরি খাওয়াই যায়।
শুভ কামনা
রোকসানা খন্দকার রুকু
খুঁজতে হবে মন দিয়ে তাহলেই পাওয়া যাবে। অশেষ কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা নেবেন।
ছাইরাছ হেলাল
“ছোটবেলা থেকে বাবা আমায় হাজারো নামে ডাকেন। কখনো সোনা, ময়না, টিয়া , পাখি , জান, কলিজা, টুটু, সুলু, কুটু, মুটু, পুকু, লুকু যা আসে মুখে।”
এটুকু ভাল করেই বুঝলাম, কিন্তু বাবা/বাবু এগুলা কে কে কখন কীভাবে কোথায় কোথায় বসে বলল তা তো গল্পে এলো না!!
স্বপ্ন বাস্তবতা হয়ে এলে কত-ই না সুন্দর লাগতো, গল্পে গল্পে।
রোকসানা খন্দকার রুকু
হা হা হা তা না হয় বুঝেই নিন। সব কি সবসময় গল্পে বলা যায়। ধন্যবাদ ও শুভকামনা ভাইয়া।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
এমন নোংরামি যেন পুরুষের অলংকার হয়ে গেছে। অনেক থাকার পর ও এমন আবদার করাটা কতোটা যৌক্তিক!! সত্যিই বিয়ের বয়স হলেই বাবা-মায়েরা কেমন যেন মেয়েকে পার করাতেই সুখ খুঁজে নেয়। গল্প ভালো লেগেছে। কদম ফুল কেন এই বর্ষায় আরো তো কত সুন্দর সুন্দর ফুল পাওয়া যায়? এক আঁজলা বকুল/বেলী/কামিনী হলে আরো মোহনীয় হতো গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে। শুভ কামনা রইলো অফুরন্ত
রোকসানা খন্দকার রুকু
ঈশ্ এতসুন্দর ফুলের নাম মাথায়ই আসেনি । এরপর লিখবো দিভাই। ভালোবাসা রইলো।
হালিমা আক্তার
আমাদের দেশে এরকম অনেক রাজ ভিখারি আছে। যাদের অনেক আছ তারপরও শশুর বাড়ির জিনিসপত্র লাগবে। শেষটা খুব ভালো লাগলো। সত্যি কদম হাতে কেউ এসে বলুক- এটা শুধু তোমার জন্য। শুভ কামনা অবিরাম।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আপনাদের ভালোলাগা আমার লেখার অনুপ্রেরণা। অনেক ভালো থাকবেন।
নার্গিস রশিদ
সেই লাইন তা খুব ভালো লাগলো । সেটা হল ” এক সময় বাবারা মেয়েকে সন্তান নয় বোঝা ভাবতে শুরু করে।” চরম বেদনাদায়ক কথা ।
এর কি পরিণতি হতে পারে তা তাঁরা ভাবেনা। সুন্দর লেখা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আপনার মতো লেখক এবং পাঠক পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা নেবেন।
নার্গিস রশিদ
না না তা মোটেও না। গল্পের মাধ্যমে সমাজের ঘোটে যাওয়া বাস্তব ব্যাপার গুলো তুলে আনতে আপনার মতো লেখিকার তুলনা হয়না ।
রোকসানা খন্দকার রুকু
অনেক অনেক ভালোবাসা নেবেন।
রেজওয়ানা কবির
আমাদের সমাজে বেশিরভাগ মানুষই মেয়েদের এমনভাবে বিয়ের আগে খুঁটিয়ে দেখে যে যাকে দেখে একমাত্র সেই জানে তার কতটা খারাপ লাগে। আর বড়লোক স্বামীর চেয়ে খোলা আকাশের নীচে বৃষ্টিতে হাত ধরে ভেজার মত মানুষই জীবনে বেশী প্রয়োজন। গল্পের শেষের অনুভূতিগুলো আমার জীবনের সাথে মিলে গেছে, এরকম এক বরষায় আজাদ ও এসে আমাকে বলেছিল চলো ভিজি বৃষ্টিতে। আমরা ভিজেছিলামও এবং বিয়ের রাতে বৃষ্টিতে ভিজে জ্বরও ছিল। মনে পড়ে গেল আমার ও অনুভূতি। খুব ভালো লিখেছো। রুপা অনেক মেয়ের ভিতরই বাস করে।
রোকসানা খন্দকার রুকু
হুম নতুন ঘটনা জামা হলো। এইটা তো বলো নাই।
ধন্যবাদ আপু ভালো থেক তুমি আজাদকে নিয়ে।