সুচরিতাসু,
এই মোবাইল-ইন্টারনেটের যুগে কাউকে চিঠি লিখিতে বসিতে হইবে তাহা আমি মনে মনে ভাবি নাই। মানুষ বড় অদ্ভুত জীব, তাহার কর্মকান্ড আরও অদ্ভুত। কখন কাহার জীবনে কী ঘটিবে তাহা আগে হইতে কেহই নির্দেশ করিতে পারে না। তাই এই পত্র লেখা বা লেখার চেষ্টাকে আমি বাস্তববাদী হইয়াও ভবিতব্য হিসাবে ভাবিয়া লইয়াছি। তুমি শুনিলে অবাক হইবে না জানি, আমি আমার ইহজীবনে এই প্রথম কোন মানুষকে উদ্দেশ্য করিয়া চিঠি লিখিতে বসিয়াছি। পরীক্ষার প্রয়োজনে যদিও বহুবার “পিতার নিকট টাকা চাহিয়া পত্র” বা “বন্ধুকে বেড়াইতে আসিবার আমন্ত্রণ” জাতীয় পত্র কয়েকবার লিখিয়াছি কিন্তু তাহা যে সত্যিকারের চিঠি নয় উহা মনে মনে জানিতাম। তাই প্রেমপত্র কিভাবে লিখিতে হয় তাহা আমার জানা নাই। খুব কিশোর বয়সে ও যৌবনের প্রারম্ভে আমি ২ খানা প্রেমপত্র পাইয়াছিলাম। কিন্তু সেখানে কি লেখা ছিল তা এখন আর আমার মগজে নাই। কিভাবে কী লিখিব বা লেখার ধরন কী হইবে তাহা বুঝিতে পারিতেছি না। তুমি হয়ত ইহা পড়িয়া হাসিয়া গড়াইবে, মনে মনে ভাবিবে এই উজবুককে পত্র লেখার অনুরোধ না করিলে পারিতাম। কিন্তু কি করিব বলো? আমি যে লিখিতে পারি না।
প্রাচীন প্রখ্যাত লেখকদের সাহিত্য কর্মে পড়িয়াছি চিঠি লিখিবার আলাদা কাগজ ও কলম পাওয়া যায়। এবং তা বহন করিবার উপযুক্ত বাহারি খামও পাওয়া যায়। কিন্তু সারা গোপালগঞ্জ তন্ন তন্ন করিয়া খুজিয়াও আমি উহাদিগের সাক্ষাৎ পাই নাই। পরন্তু দোকানদারদের নিকট চিঠি লিখিবার কাগজ খুজিতে গেলে তাহারা যে দৃষ্টিতে আমার দিকে কটাক্ষপাত করিয়াছে তাহাতে আমার মনে হইয়াছে আমি বুঝি ডাইনোসরের ডিম্ব খুজিতেছি।
দেখো কি আবল তাবোল বকা শুরু করিয়াছি। চিঠিতে মনের কথা, প্রেমের কথা লিখিতে বসিয়া উল্টা পাল্টা বকিতেছি। আসলে তোমাকে চিনিবার পর হইতেই আমার জীবনে কি জানি একটা ঘটিয়া যাইতেছে। নিজেকে আমি কোথাও খাপ খাওয়াইতে পারিতেছি না। মধ্যাহ্নের সূর্য টাকে তোমার মুখ ভাবিয়া খোলা ছাদে নির্বিকার তাকাইয়া থাকি। আকাশের দিকে তাকাইয়া মনে হয় “তুমিও এই আকাশের নিচেই আছো, অথচ তোমাকে দেখিতে পাইতেছি না, ছুঁইতে পারিতেছি না”।
“তুমি আমার” ইহা মনে মনে ভাবিলে যেমন নিজেকে বঙ্গের রাজা মনে হয় সেই সাথে এটাও মনে হয় আমি বুঝি পথ হারা পথিক। ছিন্ন বস্ত্রে, নিরন্ন উদর লইয়া তোমাকে দেখিবার আশায় পথে পথে ঘুরিতেছি। যদিও চাল চুলোহীন পথিকের সাথে আমার উল্লেখযোগ্য কোন পার্থক্য নাই এবং তাহা আমাকে দেখিয়াই তুমি বুঝিতে পারিবে।
আজ আমাদের প্রথম দেখা হইল, তোমার মনে হয়তো হাজার প্রশ্ন জাগিয়াছে তুমি জীবন সঙ্গী হিসাবে কাকে নির্বাচন করিতেছ?? প্রশ্ন জাগিবারই কথা। কারণ আমি আসলে ঠিক গতানুগতিক নই। ছেড়া স্যান্ডেল, রং ওঠা জিন্স, এক মুখ দাড়ি লইয়া ঘুরিতে আমার বাধে না। কিন্তু তুমি এরকম নও। সুদর্শন যোগ্য বিত্তশালী কেউই তোমার উপযুক্ত বলিয়া আমার মনে হয়। কিন্তু আমি এরকমই। খুব বড় একটা মন আর বুকে অপরিমেয় ভালোবাসা ছাড়া আমার আর কিছুই নেই। এতে কি তোমার চলিবে?? মাথা গোজার ঠাই, নিরাপত্তা আর ভালোবাসা ছাড়া হয়ত এই জীবনে আমি তোমাকে আর কিছুই দিতে পারিব না। আর যাই হোক শপথ করিয়া বলিতে পারি আমাকে যদি তুমি আপন করিয়া লও ভালোবাসার কমতি তুমি জীবনে অনুভব করিবে না।
ইতি
তোমার শুভ্র।
২৬টি মন্তব্য
মেহেরী তাজ
মাথা গোজার ঠাই আছে, নিরাপত্তা আছে আর ভালোবাসাতো আছেই। তাহলে আর কি চাই? খানাপিনা? যেও হয়েই যাবে। না খেয়ে মানুষ খুব কমই মরে।
ভালো লাগলো ভাইয়া!
বায়রনিক শুভ্র
তারপরেও আমি এখন সিঙ্গেল । বলেন এইটা কিছু হইল ?
মেহেরী তাজ
ভাইয়া তাইলে আপনার খোঁজাখুঁজি তে কিছু ভুল আছে। খুঁজেন খুঁজেন আলো জ্বালিয়ে ভালো করে খুঁজেন পেয়ে যাবেন দেখেন……..
বায়রনিক শুভ্র
তেল গেছে ফুরাইয়া,বাত্তি গেছে নিভিয়া । চাদ্দিকে খালি আন্ধার আর আন্ধার । ক্যামনে খুজি ? ;(
মেহেরী তাজ
তাইলে মোবাইলের ফিলাশ লাইট জ্বালান….
বায়রনিক শুভ্র
মোবাইল চুরি গেছে ।
নীলাঞ্জনা নীলা
“প্রাচীন প্রখ্যাত লেখকদের সাহিত্য কর্মে পড়িয়াছি চিঠি লিখিবার আলাদা কাগজ ও কলম পাওয়া যায় । এবং তা বহন করিবার উপযুক্ত বাহারি খামও পাওয়া যায় । কিন্তু সারা গোপালগঞ্জ তন্ন তন্ন করিয়া খুজিয়াও আমি উহাদিগের সাক্ষাৎ পাই নাই । পরন্তু দোকানদারদের নিকট চিঠি লিখিবার কাগজ খুজিতে গেলে তাহারা যে দৃষ্টিতে আমার দিকে কটাক্ষপাত করিয়াছে তাহাতে আমার মনে হইয়াছে আমি বুঝি ডাইনোসরের ডিম্ব খুজিতেছি।” ——চিঠি লেখার প্যাড জমানো আমার শখ ছিলো। আপনার এই প্যারাটা পড়ার পর মনে হলো আজকাল কি চিঠি লেখার প্যাড দেশে আছে? আচ্ছা এখন কি সাদা কাগজ কিনে খাতা বানানো হয় স্কুল-কলেজের জন্য? জানতে ইচ্ছে করছে খুব।
সুন্দর হয়েছে চিঠি। (y)
বায়রনিক শুভ্র
চিঠি লেখার প্যাড আমি আমাদের গোপালগঞ্জে খুজে পাই নি । তবে ঢাকায় পুরানা পল্টন বা নিউ মার্কেটে খোজ নিলে পাওয়া যেতেও পারে । খাতা এখনো অনেকেই কাগজ কিনে বানায় , তবে বেশিরভাগই কেনা খাতা ব্যবহার করে ।
নীলাঞ্জনা নীলা
আমার বাসায় চিঠি লেখার প্যাড এবং খাম দুটোই আছে। 🙂
বায়রনিক শুভ্র
চিঠি লেখার মানুষ না পাইলে আমি রাজি আছি । 😀
নীলাঞ্জনা নীলা
হাহাহাহাহাহাহাহা।
চিঠি লেখা এখন আর হয়না। অবশ্য গত জানুয়ারি মাসে আমার একটা বান্ধবীকে চিঠি পাঠিয়েছি পোষ্ট করে। ও তো কেঁদেই ফেলেছিলো। কতো বছর পর ওর মেইলবক্সে চিঠি এসেছে সেটা ওর মনেই নেই।
শুন্য শুন্যালয়
ইশ মনে করিয়ে দিলেন, কী সুন্দর সুন্দর চিঠি লেখার প্যাড পাওয়া যেতো। ঘুরে ঘুরে খুঁজতাম সেগুলো। নাহ কালই খুঁজতে বের হবো চিঠির কাগজের।
এযুগেও শুভ্র দেখি সাধুর চিঠির সুবাস ধরে রেখেছে, বেশ বেশ। ভাল্লাগছে 🙂
বায়রনিক শুভ্র
খুজবেন ভালো কথা , আমারে একখান চিঠি দিয়েন । 😀
অরণ্য
আপনার চিঠি পড়ে চিঠির জামানায় চলে গেলাম। সুন্দর লিখেছেন।
থাম্বস আপ। (y)
বায়রনিক শুভ্র
অনেক ধন্যবাদ । 🙂
আগুন রঙের শিমুল
প্রথমবার দুর্গেশনন্দীনি পড়িবার অভিজ্ঞতা মনে পরিয়া গেলো। 😀
বায়রনিক শুভ্র
হা হা হা হা হা ।
ইকরাম মাহমুদ
কী অপূর্ব চিঠিখানা। সোনেলার এহেন আয়োজন সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। ইমেইল,ফোনের যুগে আমাদিগের শুভ্র ভাইয়ার চিঠিখানা পড়িয়া মনে হইলো আমি ১৯ শতকে ফিরিয়া গিয়াছি। কত চমৎকার করিয়া মনের ভাব প্রকাশ করিতে চেষ্টা করিয়াছেন এবং সফলতার সহিত সম্পন্ন করিয়াছেন।
বায়রনিক শুভ্র
সবই আমার প্রেমিকাদের দুয়া ও আশীর্বাদ । 😀
ইকরাম মাহমুদ
:D) 😀
আবু খায়ের আনিছ
আপনার চিঠি পড়ে মনে হলো, এখনো চিঠি লিখার মত অবস্থা আছে, আর কিছু মানুষও আছে যাদের চিঠিই মানায়। অসাধারণ।
বায়রনিক শুভ্র
আমি এই যুগেও কয়েকজনের কাছ থেকে চিঠি পেয়েছি ।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
হুম আকর্ষনীয়। ডিজিটাল যুগে এনালগকে ভুললে চলবে না। -{@
বায়রনিক শুভ্র
হ, আবার জিগায় ।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
সবাই এত সুন্দর সু্ন্দর মন্তব্য করলো , আমি কি কৈতাম। -{@
বায়রনিক শুভ্র
ধন্যবাদ । 🙂