মোপাইল!! আর না আর না!!

ছাইরাছ হেলাল ৮ মার্চ ২০১৬, মঙ্গলবার, ০৬:২১:৪১পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি ৩৭ মন্তব্য

সুকানির নির্দেশে একমানব উচ্চতার হুইলটি ঝাড়পোছ করত তৈল মর্দনে ব্যস্ততা চরমে ছিল, ব্রিজ থেকে সামান্য দূরে থেকে অনুচ্চ স্বরে ও ইশারায় কেউ ডাকছে ভেবে এগিয়ে গিয়ে ভ্যাবাচেকা খেলাম, পিছু নিয়ে আবার সেই পুরনো চেয়ারের কাছে ফিরে এলাম, সামান্য দূরে অন্য একটি আধ ভাঙ্গা চেয়ার দেখিয়ে ইশারায় বসতে বলল, আরও সামান্য দূরবর্তী হয়ে আড়ষ্ট ভাব নিয়ে ভয়ে ভয়ে বসেই পড়লাম।

লেখাপড়া কদ্দুর?
তা ধরুন গিয়ে ম্যালা (মিন মিনে গলায়),
কোন্‌ অব্দি তাই বলুন?

আলাপচারিতার সাথে লক্ষ্য করলাম, তাঁর সযত্ন কোলের অন্দরে রাখা মনোহর ঝোলাটি খুলে দু দু’খানা মোপাইল বের করলেন! ঈষৎ চোরা চাহনিতে যা অনুমান করলাম তা নিম্নরূপ,

একখানা আইফুন
অন্যখানা সোনি।

মোপাইল মালিকের আদরযত্নের প্রাচুর্যে মনে হচ্ছে ইহা অতি মূল্যবান ও মহা দুর্লভ প্রজাতির লওয়াজিমা। আঙ্গুলে বিদ্যুত খেলিয়ে দুটো ফোনই চালু করে কী সব কাবিল টেপাটেপি শুরু করে দিলেন, একবার এটা আর একবার ওইটা, বেশ একটি অ্যাক্রোবেটিক মনমুগ্ধতায়,
পলকহীনতায় আক্রান্ত আমিও।

তা প্রায় আষ্ট কেলাস পর্যন্ত, তবে পাশ করতারিনাই, বার তিনেক ফেল করার পর উদ্যম হারিয়ে সতের বারের লাইনে যাওয়া আর হয়ে হয়নি, ঠিক করেছি কিনা আপনি ই বলুন?
খুব ই ঠিক কাজ করেছেন, তবে অকালপক্ব হননি এই ই যা।
আচ্ছা, ব্লগ দিয়ে ইন্টারনেটটি কিভাবে কী যদি ইট্টু বলতেন………………(ভাব গতিক দেখে মনে হচ্ছে হাল্কাপাতলা সদয়)
কী ভাবে ব্লগে লিখি সেটা বলছি, মন দিয়ে শুনুন,
মন পুরোটা একাট্টা করে শুনতে শুরু করার বিশাল প্রস্তুতি নিলাম।

আমি প্রথমে সনি এক্সপেরিয়া দিয়ে ব্লগে লিখতে শুরু করেছিলাম, পোস্ট দেয়ার আগে ফেসবুকের গ্রুপে লিখতাম, এরপর কপি করে ব্লগে পোস্ট করতাম, কিন্তু তাতে প্রব্লেম হত, লাইন সব এলোমেলো হয়ে যেত, সেগুলো ঠিকঠাক করতে অনেক সময় লেগে যেত, খেয়াল করলাম এই সমস্যা শুধুই ওপেরা মিনির জন্য হচ্ছে, তাই ব্রাউজার চেঞ্জ করে ইউ সি নিলাম, ইউ সিতে আর এই প্রব্লেম হয়নি।
কিন্তু প্রথমেই খেলাম ধাক্কা, মন্তব্য লিখে সেন্ড করলে তা সেন্ড হতনা, এভাবে দশ বার চেষ্টায় একটা মন্তব্য সম্ভব হত, আমি আগ্রহ হারিয়ে ফেললাম, ভাবলাম এত কষ্ট করে ব্লগে লেখা সম্ভব নয়, এরপর আমার  অপদার্থ পরামর্শক আমাকে পরামর্শ দিলেন ব্রাউজার চেঞ্জ করতে, তখন আবার ইউসিতে গেলাম। এবার একবারের চেষ্টাতেই সফল, কিন্তু পেইজ ওপেন হতে বিরাট স্লো, জিপি নেট স্লো, মোবাইল আগুনের মত গরম হয়ে যেত ব্লগে ঢুকলে, এরপর আবারো ব্রাউজার চেঞ্জ করে ডলফিন নিলাম, এভাবে ওপেরা, ইউসি আর ডলফিনের মাঝখানে পিষ্ট হতে থাকলাম।
শুধু তাই নয় ফেসবুকে বাংলা লেখা সহজে হলেও ব্লগে বাংলা লিখতে গেলেই মোবাইল পাগলায়, কখনো একই অক্ষর দুইবার আসে, কখনো ডিসপ্লে দৌড়াদৌড়ি ছুটোছুটি শুরু করে দেয়, এবারে ফোনই চেঞ্জ করলাম, আই ফোন নিলাম, এইবার পুরো মাথাই খারাপ হয়ে গেল, দেখি বাংলা কি বোর্ড ই গায়েব হয়ে যাচ্ছে বারবার আর এটাতে দাড়ি নাই, মন চাইল ফোনটা বাড়ি মেরে ভেঙে ফেলি কিন্তু আই ফোনে ব্লগে ব্রাউজ করা খুব সহজ, শুধু বাংলা লিখতেই যত ঝামেলা। অবশেষে জিপি নেটের মুখে ঝাটা মেরে ওয়াই ফাই নিলাম।
এবারে দেখা যাক কী করে পোস্ট দেই, প্রথমে নতুন লেখায় প্রবেশ করে শিরোনাম লিখি, এরপর লেখা কপি পেস্ট করার আগেই বিভাগ নির্বাচন করে নেই, কারণ প্রায়ই আমি বিভাগ নির্বাচন করতে ভুলে যাই, ছবি দেয়ার থাকলে সেটার মেমরি আগেই কমিয়ে রাখি, এরপর লেখাটি কপি করে এনে টেক্সট এ সিলেক্ট করে বক্স এ পেস্ট করে দেই, যদি অনেক বড় লেখা হয় তবে পার্ট পার্ট করে কপি পেস্ট করি, এক্ষেত্রে দুটো ব্রাউজার ইউজ করি, একটা থেকে কয়েক দফা কপি করে আরেকটায় পেস্ট করি, মানে এক ব্রাউজারে সোনেলা, আর আরেক ব্রাউজারে লেখা, মানে ফেস বুক গ্রুপ, অথবা এভার নোট, এরপর যেখানে যেখানে ছবি হবে সেখানে সিলেক্ট করে,নতুন মিডিয়া যুক্ত করণে গিয়ে ছবি এড করি, সব শেষে দৃশ্যমান এ সিলেক্ট করে প্রকাশ করে দেই। কি মনে হচ্ছে খুব সোজা? জ্বি না মাথার চুল একটাও থাকবেনা, লোম্ফা টাউক্কা হলে আলাদা ব্যবস্থা।

আধা মিনিটের মধ্যে নিঃশব্দে চেয়ার ছেড়ে রেলিং জড়িয়ে আকাশে চাঁদ-তারার ঔজ্জ্বল্য নিরূপণে ব্যতিব্যস্ত সময় কাটাচ্ছি। এদিকেও চোখ রাখছি, বলা শেষ করে যেই না আমার চেয়ারের দিকে তাকিয়েছে, আমি দৌড়ে চেয়ারের কাছে এসে ভুয়া কাঁচুমাচু ভঙ্গিতে দাঁত কেলিয়ে হাত কচলাচ্ছি আর মিনমিনে হয়ে বললাম, মাথার উপ্রের উপ্রে দিয়ে গেছে।
ইশারায় বসতে বললেন, এ যাত্রা ফাঁড়া কেটে গেছে। ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ব্লগে কী লেখেন?

লিখি অনেক কিছু, বক পক্ষি উড়ে যায় নীল আকাশে………………………………
ত্বরিত থামালাম সাহস করে, বক পক্ষি আকাশে ওড়বে না তো পানিতে সাঁতার কাটবে!! আকাশ তো নীল ই,
হলদে বা বেগুনি রংয়ের হয় বলে তো দেখিনি, শুনিনিও!!
আচ্ছা থাক, অন্য কিছু বলুন।
ট্যাকাটুকার কথা কিছু বলুন এবার।
আবার? (হাল্কা অগ্নি বর্ষণ ও কিড়মিড়)
ঠিক আছে, ট্যাকা পান না, তাহলে তো ট্যাকা দিচ্ছেন!! তা মাসে কত দিতে হয়? মাসকাবারি যা হোক কিছু একটা ঠিক করে দিলে এবার থেকে আমিও ব্লগে ল্যাকতে চাই,

এর উত্তরে আমাকে যা শুনতে হয়েছে তা লিখে দেয়ার ভাষা আমার জানা নেই (কলকব্জাহীন মুখ)।
ব্লগে আর লেখা হইল না এ জনমে (ওহ্‌ মমিন)।

সুকানির গুষ্টি কিলাই, চিক্কুর পারতাছে, বুইড়া ভাম কোনহানকার, মরে না ক্যা!!

একটি কার্ড বের করে দিয়ে বললেন “ফোন করে একদিন অফিসে আসবেন সময় করে (যদিও আপনি লোক সুবিধার না বিড়বিড় করে বলছে)”

দৃশ্যান্তরিত আন্তরিকতায় ছিলেন তিনি অসাধারণ।
বাঁধাহীন নিকষ কালো দিগন্তে মুহুর্মুহু বর্ণ বদল করার হিম্মত ও প্রতিভা বড়ই অপ্রতুল।

(“নেটে আজকাল সবই পাওয়া যায়,”)

৬৭৩জন ৬৭৩জন
0 Shares

৩৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ