
*গোয়ান্দাগিরির দশা”
অর্ধ বার্ষিক শেষ। তাই আমরা একটা ডিটেকটিভ ক্লাব খুলেছি। বাইরের কেউ তা জানে না। শুধু এটার সাথে জড়িত আমরা পাঁচজন জানি।
আমি, আশরাফ, কাসেম, টিপু ও জয়নাল। কিন্তু সমস্যা হলো ক্লাব খোলার ২-৩ দিন হয়ে গেলো একটাও কেস পেলাম না।
আমাদের ডিটেকটিভ ক্লাবটা মাঠে মারা যাচ্ছিলো। আমার আশা ছেড়ে দিচ্ছিলাম।
আমাদের বাসার সামনে ব্যাপারি পাড়ার পুকুর ঘাটে বসে আছি। খুব মন খারাপ আমাদের। এমন সময় জয়নাল সাইকেল নিয়ে এসে হাজির। ওর সাইকেলের পিছনে টিপুও আছে। ওরা হাপাতে হাপাতে এসেছে। জয়নালের একটা কবিতার বই আর টিপুর বানানো একটি পেরিস্কোপ হারিয়ে গেছে।
আমাদের জানে শেষ মেষ পানি আসলো। কিন্তু আমাদের বেশ হাসি পেলো যে, শেষ পর্যন্ত কিনা আমাদেরই ক্লাবের কেস সমাধান করতে হবে!
জয়নাল আর টিপু সব খুলে বলল।
সেটা ছিলো এ রকম।
“” জয়নাল আর টিপু দুজনেই সাইকেলে করে আমাদের গ্রামের একটি পুকুর পাড়ে গিয়েছিলো মাছ ধরার জন্য। ও পুকুরটা সিঁড়ি রাস্তা থেকে বেশ নিচু পর্যন্ত চলে গেছে। এখন পানি কম তাই নিচু সিঁড়ি থেকে রাস্তাটা দেখা যায় না। ওরা ওদের সাইকেল রাস্তার উপর রেখে তালা মেরে মাছ ধরতে নিচের সিঁড়ি পর্যন্ত নেমেছিলো। তাই ওরা ওদের সাইকেলটি দেখতে পাচ্ছিলো না। ওরা উপরে উঠে এসে দেখে সাইকেলের পিছনে খাতা আর পেরিস্কোপটি নেই।
ওরা একটি চিরকুট পায়।
আশরাফকে এখন একটু গভীর দেখাচ্ছে। ও এই ডিটেকটিভ ক্লাবটি খুলেছে। বেশ কয়েকদিন ও শার্লক হোমস্ পড়তেছে। বইটা পড়ার পর ওর ভাবই পাল্টে গেছে। নিজেকে ও প্রায় শার্লক হোমস্ই ভাবতে শুরু করেছে। ওর হাঁটাচলার এই পরিবর্তনটা বেশ উপভোগ করার মতো।
ও বলল,” দেখি চিরকুটটা?”
জয়নাল মুখটা অন্ধকার করে চিরকুটটা জয়নালের দিকে এগিয়ে দিলো।
আশরাফ যখন চিরকুট লেখে তখন ওর চোখ গোল আলুর মতো গোল গোল হয়ে গেলো।
কাসেম জিজ্ঞেস করলো,” কিরে আশরাফ, তোর চোখ গোল আলু হয়ে গেলো কেনো?”
আমিও জিজ্ঞেস করলাম।
আশরাফ বলল,” জানি নারে মেমন কি যে লিখেছে চিরকুটে!”
ও কাগজটি আমার দিকে এগিয়ে দিলো।
চিরকুট দেখে আমারও চোক্ষু চড়কগাছ।
আমি জোরে জোরে পড়া শুরু করলাম।
” যৎ চু আজিজু মাচং কে লপধ তুমারতিতে সহপাকির মাচাবা কানাচী। আরনামি চাতোশামাধিদের চিক্লাপাসেছই।”
কাসেম বলল,” অ্যাঁ! এটা কোন ধরনের তামাশা? কোন ব্যাটা লিখছে? ব্যাটার মাথা ছিড়ে দিতে ইচ্ছে করছে।”
আমি বললাম, দেখ তোরা হাতের লেখাটা কতো সুন্দর।
ওরা রেগে গিয়ে বলল,” আমরা এমন সব ভাষা পড়ে মাথা খারাপ করছি, আর তুই কিনা হাতের লেখা সুন্দর দেখতেছিস?”
মাগরিবের আযান পড়ে গেলো বলে আমরা সবাই যার যার বাসায় চলে গেলাম।
পরের দিন আমরা চারজন বসে আছি। কিছুক্ষণ পর আশরাফ হাসতে হাসতে এসে হাজির হলো। ওকে দেখে খুব গর্বিত মনে হচ্ছে। কাছে এসে জোরে জোরে বলতে লাগলো, বলল,” পেয়ে গেছি। কালকের সে রহস্যজনক চিরকুটের সমাধান পেয়ে গেছি।
চিরকুটে লেখা ছিলো,” আমাকে তোমরা ধরতে পারবা না। আমি তোমাদের স্কুলে পড়ি। তোমাদের ক্লাসেই।”
কাসেম বলল,”কালকে ব্যাটাকে ধরব।”
টিপু বলল,” ধরবি কীভাবে?’
আমি বললাম,”যেহেতু হাতের লেখা সুন্দর, তাই আমাদের ক্লাসের এরকম সুন্দর যার হাতের লেখা—
আশরাফ চট করে বলে ফেলল,”পলাশের।”
আমরা সবাই একটা আনন্দ ধ্বনি প্রকাশ করলাম।
আজ স্কুল খুলেছে। ছুটির পর সবাই চলে গেলেও আমরা পাঁচজন দাঁড়ালাম।
আমরা খেয়াল করলাম পলাশও বসে আছে। ও আমাদের দিকে তাকাচ্ছে একটু পর পর।
আমরা ওর কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে কোনো কথা না বলে ওকে দেখতে লাগলাম।
ও অবাক হবার ভান করে বলল,” কিরে এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো তোরা?”
জয়নাল বলল,” বারে! ভুলে গেছিস? তুই তো আমাদের খাতা আর পেরিস্কোপটা নিয়েছিস।”
পলাশ হাসতে হাসতে বলল,” ও সেই কথা! বলছি শোন, তোরা একটা গোয়েন্দা ক্লাব খুলেছিস।”
আমরা প্রায় সবাই চিৎকার করে একসাথে বলে উঠলাম,” হ্যাঁ তো! তুই কি করে জানলি?”
পলাশ বলল,” জয়নাল আর টিপু যেদিন মাছ ধরতেছিলো, ওরা খুব আফসোস করতেছিলো যে তোদের কোনো কেস আসছে না। আমি ওদের ওখানে দেখে ওদের কাছেই যাচ্ছিলাম। ওদের কথা শুনে আর ওদের সামনে যাইনি। তাই আমি ওদের সাইকেল থেকে ওগুলো সরিয়ে,তাড়াহুড়ো করে একটি চিরকুট লিখে রেখে দেই।
এতে অন্তত তোদের হাতে একটা কেস তো এলো!”
আমরা পলাশের সামনে একেবারে হাদারাম হয়ে গেলাম। এরপরে ওকে আমাদের ক্লাবের সদস্য করে নিলাম।
আস্তে আস্তে আমাদের ক্লাবের কথা ছড়ানোর পরে এমন সব কেস আসতে লাগলো যে আমরা মোটামুটি শরমই পেতে লাগলাম।
কারো মুরগি হারাইছে, কারো বা বাইরে শুঁকাতে দেয়া কাপড় হারাইছে।
আমরা আমাদের সে ক্লাব বন্ধ করে দিতে বাধ্য হলাম।
জুহায়ের আফতাব মেমন
রংপুর ক্যাডেট কলেজ রংপুর
২২টি মন্তব্য
নীরা সাদীয়া
গল্পতো ভালোই এগুচ্ছিলো। কিন্তু এত্ত মজার ক্লাব অবশেষে বন্ধ হয়ে গেলো! খুব হতাশাজনক। ঐ ক্লাব আরো চলুক, আরও গল্প শুনতে চাই।
রিতু জাহান
ভালবাসা নিও নীরা।
হুম, তার গল্প শোনাব অবশ্যই।
এমন করে ধরে রেখো।
তৌহিদ
মেমন এত সুন্দর গুছিয়ে লিখতে জানে! একদম মুন্সিয়ানা লেখা। এ যেন আমারই স্কুল জীবনের গল্প। ধন্যবাদ আপু, তার বইয়ের গল্প আমাদের শেয়ার করার জন্য।
মেমনের জন্য দোয়া আর ভালোবাসা রইলো।
রিতু জাহান
ধন্যবাদ ভাই।
ভালো থাকুন ভাই।
আপনাদের এমন ভালবাসায় আমি আবেগ আপ্লুত সত্যিই।
মনে রাখব আমি।
তৌহিদ
ভালো থাকবেন আপু।
মাহমুদ আল মেহেদী
অনেক সাজানো গোছানো একটি লেখা পড়লাম। আপুকে ধন্যবাদ এমন একজন লেখকের মা আপনি, আপনার সন্তানের চিন্তাগুলো সোনালী আলোতে আমাদের মাঝে বিছিয়ে দেওয়ার জন্য। মেমনের জন্য শুভ কামনা ।
রিতু জাহান
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই।
ওদের জন্য দোয়া করবেন ভাই।
জিসান শা ইকরাম
হা হা হা, দারুন লিখছে মেমন। ক্ষুদে গোয়েন্দাদের কাছে মুরগি, কাপড় চুরির কেস আসা আরম্ভ করছিলো 🙂
এক নাগারে পড়ে ফেলার মত গল্প,
মেমনের জন্য শুভ কামনা।
রিতু জাহান
হুম, মামু বাড়ি বলে কথা।
মামুদের তো ভালো লাগবেই
থ্যাংকু ভাইয়া।
ইঞ্জা
মেমন বাবার লেখার মধ্যেই মুন্সিয়ানা ভাব আছে, আমি লেখাটি পড়েই অবাক হয়েছি, এতটুকুন ছেলে মাশা আল্লাহ্ কতো সুন্দর লিখতে পারে আর শেষের কয়টি লাইন পড়ে তো হাসরে হাসতে শেষ।
দোয়া করি বাবা আমাদের যেন অনেক বড় হয়।
রিতু জাহান
জানি ভাইজু, আপনারা ওকে অনেক আদর করেন।
এমন করে আগলে রাখবেন জানি। বেঁচে থাকি না থাকি ওর অনেক গুলো আশ্রয় হবে।
ইঞ্জা
আপু এই ভাবে বলবেননা, আল্লাহর রহমতে আপনি দীর্ঘজীবী হবেন, আপনি আপনার সন্তানদের সুখ উপভোগ করবেন এই দোয়া রইলো আর আমরা তো আছি সবাই ইনশা আল্লাহ্।
শুন্য শুন্যালয়
আহারে শার্লোক হোমসের ছানাগুলার কেসের এই অবস্থা! তাই বলে ক্লাব বন্ধ হবে কেন? দুদিন পরপর ব্লগ থেকে একটা করে ব্লগার মিসিং হয়, এই কেস টাও আমাদের বাবাকে দেয়া যেতে পারে। যেমন ব্লগার সজীব।
মেমোনের লেখার হাত সম্পর্কে আগে থেকেই জানি তাই অবাক হচ্ছিনা। বাবা অনেক দূর যাক আমাদের, সবসময় এই প্রার্থনা করি।
ওর বই এর একটা কপি লাগবে আমার, দেখি কিভাবে পাই।
বলে দিও মেমোনকে, এখনই ওর এই এত্তোগুলো ফ্যান তৈরি হয়ে গেছে 🙂 <3
রিতু জাহান
২২ তারিখ বলে দিব।
তোমার আদর পৌছে দিব। তুমি বলো কিভাবে পাঠাব? পাঠিয়ে দিব।
সত্যিই! সজিব একটা মিসিং কেস হয়ে গেছে।
অলিভার
গল্পটা ভালো লেগেছে 😃
তারচেয়েও অবাক লেগেছে এই জেনে যে গল্পটা এই বয়সী কারও লেখা জেনে।
মেননের জন্যে ভালোবাসা রইলো 💐💐💐
রিতু জাহান
আপনার ভালবাসা ওকে পৌছে দিব। ২২ তারিখ আসবে সে।
সাবিনা ইয়াসমিন
আহারে, গোয়েন্দা সংস্থাটি কেন বন্ধ করলো ! মুরগী– কাপড় খুঁজে দেওয়া খারাপ হতো না।
কত দারুন করে লিখেছে তাই ভাবছি। আসলে মেমনের বইয়ের রিভিউ আমার দেয়া উচিৎ ছিলো, অথচ দিতে পারিনি। এই জন্যে সরি রিতু। এরপর ওর বই থেকে আমার সবচেয়ে ভালো লাগার গল্পটা আমি পোষ্ট করবো।
মেমন ও মেমনের মায়ের জন্যে ভালোবাসা ও শুভকামনা রইলো, ❤❤❤❤
রিতু জাহান
তোমার জন্য অনেএএএক ভালবাসা রইলো।এমন করে আগলে রেখো।
ছাইরাছ হেলাল
উহ্, ক্লাব বন্ধ করা যাবে না, আমাদের ঝানু একজন গোয়েন্দা লাগবেই।
আমাদের ব্লগাররা ব্লগে মন না দিয়ে কোন কোন ফল খায়, পাখির ছানা ধরে সেগুলো আমাদের জানতে হবে।
জানতে চাই-ই।
পড়া, তাও পড়তে মন্দ লাগে না, আমরা আমরা যে!!
মামু বাড়ি বলে কথা।
রিতু জাহান
তাই তো! ওকে তো এমন সব কেস ধরিয়ে দিতে হবে।
পাখিদের ধরে ধরে আনতেই হবে।
মামু বাড়ি বলেই ভাবছি তার সব লেখা মামুদের ঘাড়ে উঠায়ে দিব।
প্রহেলিকা
ভাবতে ভালোই লাগে মেমনের কথা। লেখার দক্ষতাও বেশ, নিয়মিত চর্চা চালু থাকলে একদিন অনেক বড় হবে সে। এত্তোগুলা ভালবাসা মেমনের জন্য!
রিতু জাহান
অনেক অনেক ধন্যবাদ জানবেন ভাই।
আপনার আপনাতের সকলের ভালবাসা পৌছে দিব।