
ছোটোবেলা থেকে মেয়েটা খুব ভয়কাতুরে। অদ্ভূত টাইপের ভয়! কেন বলছি অদ্ভূত টাইপ ভয়? বলছি…..তার আগে আমার কথা বলি। খুব রাগি টাইপ মানুষ আমি। অল্পতেই বড্ড রেগে যাই। এই রাগ বংশগত বলা চলে, যাকে বলে জেনেটিক্যালি। যাইহোক সেদিকে যেতে গেলে পৃষ্ঠায় টান পরে যাবে। মেয়েটার জন্মের পর আম্মা পই পই করে বলতেন, এটা করা যাবে না, সেটা করা যাবে না। যুক্তি তর্কের ধারেকাছে না গিয়ে ঠোঁটের টুঁটি বন্ধ করে নির্ধিদ্ধায়, বিনা বাক্যব্যয়ে মেনে যাই সব। প্রথম সন্তান জন্ম দেবার জন্য সাধারনত আমাদের বাঙালী রিতী অনুযায়ী অথবা রিতীনিতী ছাড়াই হোক, মেয়েরা এসময়টা মা’য়ের কাছে থাকতে বেশি ভরসা বা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। আমার পুরো পরিবারের মানুষজনের মাঝে আমি অনেকখানি ভরসা আর নির্ভরতায় থাকাটাই আমার স্বস্তি।
মেয়েটার জন্ম হলো আল্লাহ্ র অশেষ মেহেরবানিতে চাররাত আর তিনটা দিন কষ্টভোগ করার পর। জন্মের পরে ১০ থেকে ১৫ মিনিটে কান্নার আওয়াজ পাইনি।দেখতেও পরছিলাম না। একটা আর্তচিৎকার শুনেছিলাম শুধু আম্মা’র……এত কষ্টের পর এইয়া?” বুঝতে পারছিলাম না, ঘটনা কি? আমাকে বুঝতে দেয়া হয়নি। ১৫/২০ মিনিট পরে কান্নার আওয়াজ এবং আমার বুঝতে পারা… আমি কন্যা সন্তানের মা হয়ে জন্ম নিলাম নতুন করে আরেকবার এ পৃথিবীতে। প্রতিটি মেয়ে বা নারী’র জন্মই বোধ করি দ্বিতীয়বার হয়, এই মা হওয়ার মধ্য দিয়ে। সে অনুভূতি প্রকাশ করার মতো ভাষা বা শব্দেরা কখনোই প্রতুলতার পর্যায়ে পরে না বলে আমি মনে করি।
প্রায় দেড় দুই ঘন্টা পরে আমার কাছে নিয়ে এলেন আমার কন্যা সন্তানকে আম্মা। আমি বিস্ময়ে তাকিয়ে আছি কাঁথায় মোড়ানো কুট্টি কুট্টি হাত,মুখ,ভ্রু,বন্ধ একজোড়া চোখ,ঠোঁট,নাক।একটা মাংসপিন্ডের আদল নাকি আমার ভেতরের একটা রক্ত মাংসের অস্তিত্বের অংশ! মুহুর্তেই কি আমার অস্তিত্তের পরিবর্তন হয়ে গেলো? কোথায় থাকে মানবদেহের অনুভূতির মরমস্পর্শী এক ছোট্ট কুঠুরির মতো অনুভূতি? সমস্তটা ঝাঁপিয়ে নেমে আসে সেখান থেকে, চোখ হয়ে যায় মা’য়ের চোখ,ঠোঁট হয়ে যায় মা’য়ের ঠোঁট, বুকের কাছে দেবার পরই অনুভূতিগুলো ওলটপালট হয়ে যায় একটা কিশোরী অথবা কৈশোরত্তীর্ণ নারী’র। সমস্ত আবেগ এসে জড়ো হয় নিজের ভেতরের অস্তিত্বের অংশের কাছে…।
আমার আম্মা কি বুঝতে পেরেছিলেন আমাকে দেখে?
আমার মনে কি চলছে?
:এই….খবরদার মাইয়ার দিকে ওই রহম চাইয়া থাকপি না, ওতে মা’য়রও নজর লাগে।
চলবে….
২৯টি মন্তব্য
হালিম নজরুল
প্রতিটি মেয়ে বা নারী’র জন্মই বোধ করি দ্বিতীয়বার হয়, এই মা হওয়ার মধ্য দিয়ে। সে অনুভূতি প্রকাশ করার মতো ভাষা বা শব্দেরা কখনোই প্রতুলতার পর্যায়ে পড়ে না বলে আমি মনে করি।
বন্যা লিপি
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ রইলো।
ছাইরাছ হেলাল
একজন মায়ের অনুভূতি মা থেকে আর কেউ এমন ভাল অনুভবে নিতে পারে না।
মা, মা-ই।
বন্যা লিপি
মা মা’ই….. এরপরে আর কোনো বাক্য প্রয়োজন পড়ে না। কৃতজ্ঞতা রইলো।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
খুব ভালো লাগলো মা হবার অনুভুতি গুলো পড়ে। মেয়েরা আসলেই দ্বিতীয় বার জন্ম নেয় এই মাতৃত্বের স্বাদ নিয়ে। মায়ের ও নজর লাগে জানা ছিলো না। 😍😍😍 ভালো থাকুন সবসময়
বন্যা লিপি
মায়েদেরও নজর লাগে কিনা! এই বিতর্কের বিষয়ে আমি যেতেই চাইনা কখনো।সন্তানের মঙ্গল কামনায় তখন মা চাচি যা যা বলে গেছেন, করে গেছি।
ভালো থাকবেন।
ইসিয়াক
চমৎকার লেখা।
শুভকামনা।
বন্যা লিপি
আন্তরিক ধন্যবাদ।ভালো থাকবেন। সাবধানে থাকবেন।
ফজলে রাব্বী সোয়েব
অসাধারণ। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
বন্যা লিপি
শুভেচ্ছা জানবেন। আসছি পরের পর্ব নিয়ে।
সাবিনা ইয়াসমিন
মা-ই কেবল বুঝতে পারেন তখকার অনুভূতি কেমন হয়। আর বোঝেন, যারা মা হয়েছে। সন্তান জন্ম দেয়ার পর নিজেরও যেন পুণর্জন্ম হয়। এক মূহুর্তে বদলে যায় সব কিছু। নতুন আমিকে চেনার আগেই বড় হতে থাকি আপন সন্তানের সাথে হাসতে-খেলতে-শিখতে-পড়তে পড়তেই। এক সময় সন্তান বড় হয়। আমরাও বুঝতে পারি বড় হয়েছি, মানে বুড়ো হচ্ছি 😂😂
চলুক, সাথেই থাকবো।
ভালো নিও বন্যা ❤❤
বন্যা লিপি
প্রতিটা সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে কখন যেন টের পেয়ে যাই, বড় হয়ে গেছি।
বউ হয়ে গেছি, মা হয়ে গেছি। কখন যেন আবিষ্কার করলাম শাশুড়িও হয়ে গেছি😂😂 এখন নানি হবার অপেক্ষা!
তাহলে বলো! কতটা সিঁড়ি ভেঙে উঠে এসেছি বুড়ো’র সিঁড়িতে?
সামনের পর্বগুলোতে এ লেখার মূল উদ্দেশ্য বোঝা যাবে।
সাথেই থেকো ময়না।
ভালো থেকো, সাবধানে থেকো। ভালবাসায় থেকো।
কামাল উদ্দিন
মায়েদের তো এটা বিশেষ ভাবে হয়ই। বাপদের জগৎও হয়ে যায় আলাদা। যেদিন আমি প্রথম বাবা হয়েছিলাম তার পর থেকেি যেন দুনিয়ার সব কিছুকে অন্য চোখে দেখতে শিখেছি, দুনিয়ার সব কিছুতেই যে ভালোবাসার মিশ্রন আছে বাবা হওয়ার পরই ওটা সব থেকে ভালো উপভোগ করা যায়।
বন্যা লিপি
বাবা যদি বোঝে যে, মা’য়েদের অনুভূতির কাছে বাবার অনুভূতি স্বাভাবিক ভাবেই কম! তাহলে বিতর্কের জায়গা কখনোই তৈরী হবে না ভাই। এখানে বিতর্কের কোনো অবকাশই নেই। বাবা বদলে যায় আপত্য স্নেহের আবেগে। আর মা নাড়ীছেঁড়া অংশ জন্ম দিয়ে। আমি কোনোরকম তর্কে নাই। যার যার জায়গায় তার তার অনুভূতি দামী।যতটা মা’য়ের ততটা বাবার, আমি মানবোই না ভাই, আমি বড় ঘাউড়া😊😊
ভালো থাকবেন। সাবধানে থাকবেন।
ধন্যবাদ।
কামাল উদ্দিন
ঘাউরামিতে আমি নাই, রাস্তা ছেড়ে পালালাম আপু 🙂
সুপায়ন বড়ুয়া
মায়ের অনুভুতি টা সুন্দর ভাবে তুলে আনলেন।
বাবারা ও কম আনন্দ পান না।
সেটা ভুলে গেলে চলবে কেন ?
শুভ কামনা।
সুরাইয়া পারভীন
এই….খবরদার মাইয়ার দিকে ওই রহম চাইয়া থাকপি না, ওতে মা’য়রও নজর লাগে।
এটা কী আমাকেও বলেছিলেন আমার মা।
চমৎকার ভাবে তুলে ধরেছেন মা হওয়ার প্রথম অনুভূতি।
বন্যা লিপি
কামাল উদ্দিন ভাইয়ের মন্তব্যের জবাবে যা বললাম, একটু পড়ে নেবেন কষ্ট করে। বাবাদের আনন্দ আর মায়েদের অনুভূতি মিলিয়ে ফেলতে পারবেন না কখনো। সম্ভবই না। মন্তব্যে ধন্যবাদ।ভালো থাকবেন, সাবধানে থাকবেন।
নীরা সাদীয়া
নতুনত্ব আছে লেখায়। এমন অনুভূতি মায়েরা সাধারণত লিখেন না। জানার আগ্রহ বেড়ে গেল। তবে বাচ্চার নানীর ক্রন্দনেেের কারণটা বোঝা গেলো নাহ্।
বন্যা লিপি
পরবর্তি পর্বে জানা যাবে নানির আর্তচিৎকারের রহস্য! অনেক ধন্যবাদ আপু। ভালো থাকবেন, সাবধানে থাকবেন।
ফয়জুল মহী
মনোমুগ্ধকর লিখনশৈলি । অনন্য l
বন্যা লিপি
মনোমুগ্ধকর মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। সাবধানে ভালো থাকবেন।
সুরাইয়া পারভীন
এই….খবরদার মাইয়ার দিকে ওই রহম চাইয়া থাকপি না, ওতে মা’য়রও নজর লাগে।
এটা কী আমাকেও বলেছিলেন আমার মা।
চমৎকার ভাবে তুলে ধরেছেন মা হওয়ার প্রথম অনুভূতি।
বন্যা লিপি
আমাদের মা চাচি খালারা এমনই কতশত কথা বলতেন! শুধু মাত্র সন্তানের মঙ্গল কামনায়। ভালো থেকো সুরাইয়া, সাবধানে থেকো। ভালবাসা নিও।
জিসান শা ইকরাম
প্রথম মা হবার অনুভুতি সুন্দর ভাবেই ফুটিয়ে তুলেছ লেখায়,
যদিও সম্পুর্ন অনুভুতি লেখায় বর্ননা করা সম্ভব না।
শুভ কামনা।
বন্যা লিপি
সম্ভবই না সে অনুভূতি সবটা শব্দে প্রকাশ করা।
ভালো থাকবেন, সাবধানে থাকবেন।শ্রদ্ধা জানবেন।
এস.জেড বাবু
সব মায়েরা কিছু অনুভবে একই রকম- যেমন মা হওয়ার স্বাধ/ সৌভাগ্য-
////প্রতিটি মেয়ে বা নারী’র জন্মই বোধ করি দ্বিতীয়বার হয়, এই মা হওয়ার মধ্য দিয়ে।- এটা সত্যি-
তবে এর আগে আর একটা জন্ম হয়, নতুন পরিবারে- নতুন নতুন সম্পর্কের হয়ে।
এই প্রথম আপনার কোন ধারাবাহিকের প্রথম পর্ব পড়ার সৌভাগ্য হলো-
মিশে / অপেক্ষায় রইলাম পরবর্তীর।
ভালো থাকবেন সবাইকে নিয়ে।
বন্যা লিপি
মেয়েদের পর্যায়ক্রমে জন্ম হতেই থাকে বারেকবার। মাতৃত্বের জন্মের তুলনা নেই।
মন্তব্যে অনুপ্রাণিত। আসছি পরের পর্ব নিয়েই শীগগীর। ভালো থাকবেন, সাবধানে থাকবেন। শুভ কামনা।
তৌহিদ
একজন গর্ভধারিণী মা তার লেখায় নিজের সন্তানকে নিয়ে যখন লেখেন তখন সেটি আবেগ ভালোবাসায় পূর্ণ এক অনন্য অসাধারণ লেখা হয়ে ওঠে। আমি ভাগ্যবান এরকম অনুভূতি পড়তে পারছি নিজে।
আপনাকে ধন্যবাদ দিলেও কম হবে।