
মানুষ মরণশীল ।
মানুষ মরণশীল। এবং পচনশীলও বটে। বলা চলে একেবারে লইট্টা মাছের মতো। লাশ রাখার ফ্রিজার গাড়ীগুলো না থাকলে কি হতো কে জানে? একটা মানুষ যখন মারা যায় তখন তাঁর আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব শুভাকাঙ্ক্ষী অনেকেরই চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ে অশ্রুজল। তাঁকে নিয়ে সবাই বেদনা বিধুর হয়ে উঠে। হয়ে উঠে স্মৃতি-কাতর। তাঁর বিভিন্ন স্মৃতি, ব্যক্তি বা সমাজ জীবনে বিভিন্ন অবদান নিয়ে মানুষ আলোচনা করে। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাতের জন্য সবাই দোয়া করে। পাশাপাশি আমরা প্রায় সবাই তড়া করি যথাশীঘ্র সম্ভব তাঁকে মাটি চাপা দেওয়ার জন্য, দাফন করার জন্য। হায়রে মানুষটা জীবিতকালে কতই না আপন ছিল। ছিল অনেকেরই আপনজন, ছিল কাছের মানুষ এবং জনপ্রিয় ও প্রাণপ্রিয়। স্নেহের শ্রদ্ধার আদর্শের ভালবাসার প্রিয়পাত্র। হয়তবা কত মানুষকে তিনি বিভিন্নভাবে উপকার করেছেন। করেছেন আর্থিক এবং বিভিন্ন সাহায্য ও সহযোগিতা। তাঁর কাছে অনেকেরই ঋণের, শ্রদ্ধার ভালবাসার শেষ নেই। যেই না প্রাণবায়ু বেরিয়ে গেল অমনি বিদায় দেওয়ার জন্য আমরা যারা বেঁচে আছি তাঁরা ব্যাকুল হয়ে উঠি দাফনের জন্য পাছে মানুষটার মধ্য থেকে লইটা পচার গন্ধ না বের হয়ে যায়। লাশের পচা গন্ধ বাতাসকে দুর্গন্ধময় করে না তোলে।
পবিত্র কোরানে বলা হয়েছে — “আল্লাহই তোমাদের জীবন দান করেছেন। তিনিই তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন। আবার তিনিই তোমাদেরকে পুনরুত্থিত করবেন। তারপরও মানুষ অতি-অকৃতজ্ঞ” ! (সূরা হজ, আয়াত ৬৬)। আমরা সবাই জানি, জন্মিলেই মরিতে হইবে। অতএব মানুষের মৃত্যু অবধারিত, অবশ্যম্ভাবী এবং সুনিশ্চিত । তারপরেও কিছু কিছু মানুষের ভাব-ভঙ্গি ,আচার-আচরণ , চাল-চলন এবং কথা-বার্তা দেখে শুনে মনে হয় এদের কখনোই যেন মৃত্যু হবেনা। ওরা মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে না। যেন ওরা অমর। চিরজীবী। তাই এসব মানুষ অন্যায় করে, জোর জুলুম করে, দুর্নীতি করে, মানুষের প্রাপ্য হক দিতে চায় না। ক্ষেত্রবিশেষে অন্য মানুষের পেছনে লাগে, বিভিন্নভাবে অন্যকে হয়রানী করে, অপমান অপদস্ত করে, তুচ্ছ তাচ্ছল্য করে, দুর্ব্যবহার করে। এমনকি বিয়ের সম্পর্ক এলে হিংসা বিদ্ধেষ, রাগ, বিরাগের বশবর্তী হয়ে বিয়ে ভেঙ্গে দিতে উঠে পড়ে লাগে। অন্যের সংসারে আগুনে লাগাতে না পারলে যেন কলিজা ঠান্ডা হয় না। অন্যের সমালোচনা, পরনিন্দা, পরচর্চা, গীবত না করলে যেন পেটের ভাত হজম হয়না। অন্যের উন্নতিতে নিজের হৃদয়ে আগুনের লেলিহান শিখা দাউ দাউ করে যতক্ষণ না অপরের উপরে উঠার সিঁড়িটা কেড়েও নিতে না পারে। ভুলে যায় মৃত্যু কথা। পরকালের কথা। শেষ বিচার দিবসের কথা। আরেকটি আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে — ‘নিশ্চয়ই মৃত্যুর সময় নির্ধারিত। আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কারো মৃত্যু হতে পারে না। কেউ পার্থিব পুরস্কারের জন্যে কাজ করলে তাকে তার পুরস্কার ইহকালে দান করবো। আর যদি কেউ পরকালের জন্যে কাজ করে তবে তার পুরস্কার সে পরকালে পাবে। শোকরগোজার বান্দাদের কাজের ফল আমি নিশ্চয়ই দেবো।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৪৫)। হে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন সেসব অতি চালাক মানুষদের আপনি হেদায়েত করুণ। এবং মানুষে মানুষে বিবাদ কলহ থেকে বিরত থাকার জন্য রহমত করুণ। সুন্দর মানুষের অন্তরের কুৎসিত কালো মেঘ অপসারিত করে তাঁদেরকে প্রকৃত মোমিন মুসলমান হওয়ার তৌফিন দিন। সকলের মনে রাখা জরুরি জন্মিলে মরিতে হইবে। পাশাপাশি ভোর হলে আগামীকাল। ভোর না হলে কিন্তু পরকাল।
১৫টি মন্তব্য
জাহাঙ্গীর আলম অপূর্ব
হুম মানুষ মরণশীল।
শুভকামনা রইল
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
ধন্যবাদ ভাই।
বন্যা লিপি
পৃথিবী সৃষ্টি থেকে অবধারিত মহাপ্রয়াণ নির্ধারিত। ক্রমাগত নবী রাসুল প্রেরণ করা হয়েছে মানুষের হেদায়াতের জন্য। সবশেষ প্রেরিত মহামানব রসুল (সঃ) এর ওপরে নাজিলকৃত মহা গ্রঃণ্থ আমাদের জীবন বিধান। প্রতিটি হরফ সত্য সত্য এবং সত্য। আমরা সত্যের পথ থেকে নির্বোধের মত সরে গিয়ে নিজেদের খেয়াল খুশিমত জীবন যাপন করতে চাই। তার পরিনতিও ভোগ করি, কিন্ত প্রকৃত জ্ঞানের অভাবে বুঝতে পারিনা। নইলে মুখ জিহ্বা সংবরন করে উচ্চারন করতাম প্রতিটি বাক্য। আচরন করতাম খুব সাবধানে। আমাদের কাঁধের দুই ফেরেস্তাকে স্মরন রাখতাম প্রতি সেকেণ্ড। মহান আল্লাহ্ আমাদের সঠিক পথ চিনে নেবার তৌফিক দান নসীব করুন। আমিন।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আপু আপনি সত্য পবিত্র শান্তির ধর্ম ইসলামের মূল বিষয় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন। আমরা বিবেক বিচার বুদ্ধি সব যেন জলাঞ্জলি দিয়েছি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন। আমিন। ধন্যবাদ।
বোরহানুল ইসলাম লিটন
মূল্যবান উপস্থাপন উপহার দিলেন।
প্রত্যেকে একদিন সত্য সঠিক উপলব্ধি করে
কেউ তা সময়ে আর কেউ বা বিলম্বে।
আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা রেখে গেলাম পাতায়।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
সময় থাকতে আমরা বুঝি না। আর যখন বুঝি তখন আর সময় থাকে না। ধন্যবাদ ভাই।
ছাইরাছ হেলাল
মৃত্যুকে ভুলতে পারছে বলেই এত হানাহানি মারামারি।
কিন্তু গুটি গুটি পায় সে আমাদের দিকে এগিয়ে এসে ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে, সে হিসেব করছি না।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
সময় থাকতে আমরা বুঝি না। আর যখন বুঝি তখন আর সময় থাকে না। ধন্যবাদ ভাই।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আমরা বুঝেও বুঝি না যে মৃত্যু আমাদের ঘাড়ের ওপর প্রতিনিয়ত নিস্বাস ফেলছে। সুন্দর মতামতের জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
মৃত্যুর কথা ভুলে গিয়ে মানুষ লোভ, হিংসা, অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। আমরা সবাই জানি মৃত্যু যেকোনো সময় আমাদের ডাক দিবে তখন কোনো কিছু আটকাতে পারবে না মৃত্যু কে।সব ছেড়ে ঐ পাড়ে মিলিয়ে যেতে হবে।কিছুই সঙ্গে যাবেনা। কারো চোখের জল, ভালোবাসা , ধন সম্পদ দিয়ে ও বেঁধে রাখা যাবেনা এই নশ্বর দেহকে।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আপনার যুক্তিপূর্ণ মতামতের জন্য অশেষ ধন্যবাদ দিদি।
তৌহিদ
মৃত্যু এক অমোঘ সত্য, এর থেকে নিস্তার নেই। যারা ভুলে যায় তারাই দুনিয়াবি অপকাজে লিপ্ত হয়। সকলের বুঝ আসুক এটাই প্রার্থণা।
ভালো থাকুন ভাই।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
সত্য বলেছেন ভাইয়া, মৃত্যুর কথা আমাদের অনেকেই ভুলে যাই। আপনার মূল্যবান মতামতের জন্য অশেষ ধন্যবাদ।
আরজু মুক্তা
এজন্য প্রতিদিন মৃত্যুর কথা পাঁচবার স্মরণ করতে বলা হয়েছে।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
হ্যাঁ সঠিক বলেছেন আপা। ধন্যবাদ।