
আচ্ছা, অনেকগুলো বছর পিছিয়ে গেলে কেমন হয়? পদ্মার ধারে ঢেউ গুনতে গুনতে একদিন যে সময়টায় চটপটি আর বাদাম খাওয়া চলতো রোজ, অন্তত সে সময় অব্দি পেছাতে পারলে বেশ হতো। সাথে কি একটি মুখ থাকতো কিংবা একাধিক ?
দরকার নেই ও হিসেবের।
ইচ্ছে হলেই ক্লাস শেষে চলে গেছি বড়কুঠি। বন্ধুর বাড়ি। তখন দুপুরের খাওয়ার সময়? তাতে কী? আমার জন্য ডাইনিং টেবিলে অপেক্ষা করতো একটি প্লেট।
খেয়ে-দেয়ে বেশ খানিকক্ষণ গল্প।
পুরোনো আমলের দোতলা বাড়িটার উঠোন আর বারান্দা জুড়ে ছিল রাজ্যের বাহারি গাছ। আর ছিল আপন আপন ভাব।
কখনও চলে যেতাম লিচুবাগানে আরেক বন্ধুর বাড়ি। বন্ধুর মা অর্থাৎ খালাম্মা বলতেন না খেয়ে হুট করে চলে যাস না যেন! ওমা, যাবো কেন? খালাম্মার হাতের গরুর মাংস কি ছেড়ে যাওয়া যায়?
লিচুবাগানের ঠিক উল্টোদিকেই আরেক বন্ধুর বাড়ি। ওখানে কি যাইনি? সকাল দুপুর বিকেল সন্ধ্যে একাকার হয়েছে তো কত কত দিন!
আর ওই যে, হেতেমখাঁয় বিশাল আকৃতির দোতলা বাড়ি যে বন্ধুর, ওখানে গেলেও তো ভুলে যেতাম দিন টিনের হিসেব। এছাড়াও উপশহরের বাসিন্দা দুই বন্ধু, সবখানেই প্রবল একটা আপন আপন ভাব। আমাকে আঘাত করে কেউ কিছু বললেই নির্দ্বিধায় পক্ষ অবলম্বন করা ওই আপন আপন বন্ধুগুলো এখনও, যখনই প্রয়োজন হয়, দ্বিধাহীন পাশে দাঁড়ায়।
পেরিয়ে গেছে অনেকগুলো বছর। এখনও আমাদের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা ছবি দেখে, প্রোফাইল বিচার-বিশ্লেষণ করে তবেই বন্ধু হই। আপন আপন ভাবটা প্রকাশ পায় লাইক-কমেন্টে। কখনও কখনও কেউ কেউ আবার একটু কাছের হয়ে ওঠে। তবুও ধোঁয়াশা। একেবারেই অজানা অচেনা কিছু মানুষকে ভার্চুয়ালি কতটুকুই বা চেনা সম্ভব? বিশ্বাস-ই বা করা সম্ভব কতটুকু? ব্যক্তিগত জীবনে তো প্রবেশ ঘটে না তেমন। ছবি দেখে, লেখা পড়ে, লেখা ছাপিয়ে মানুষের কাছাকাছি আসার চেষ্টা। দুঃখের সাগরে ভাসতে ভাসতে হাসিমুখে বন্ধুর পোস্টে দুর্দান্ত কমেন্ট করা মানুষটির মনের খবর পৌঁছোয় না আমাদের কাছে। যখন দীর্ঘ অনুপস্থিতি ঘটে কারও, হয়তো চিন্তিত হই, খোঁজ নিই। এই চিন্তিত হওয়াটুকুই হৃদ্যতা। আপন আপন ভাবটা যে এখনও, এই শুষ্ক ভার্চুয়াল জগতেও খানিকটা টিকে আছে, এ তার-ই প্রমাণ।
পদ্মার ধারে ঢেউ গুনতে গুনতে এখন চটপটি খাওয়া হয় না ঠিকই, তবে খিঁচুড়ি আর ইলিশ ভাজার ছবি তো দেখতে পাই। দেখতে পাই বিচলিত হওয়া মন। পেছাতে পারলে বেশ হতো তা ঠিক , তবে বর্তমানও মন্দ নয়। করোনাটাই যা ভাবিয়ে তুলেছে কিছুটা।
ও কেটে যাবে একদিন। আমরা শুধু বিশ্বাসটুকু বেঁধে রাখি। মানুষকে বিশ্বাস হারাতে নেই।
ছবিঃ গুগল
১৭টি মন্তব্য
ফয়জুল মহী
নন্দিত অনুভূতি চলনসই প্রকাশ
রেহানা বীথি
ভালো থাকবেন।
সুপায়ন বড়ুয়া
করোনা কেটে যাবে একদিন।
আমরা শুধু বিশ্বাসটুকু বেঁধে রাখি।
মানুষকে বিশ্বাস হারাতে নেই।
আমরা ও বিশ্বাস হারাতে চাই না
আবার জমবে মেলা হাটখোলা বটতলা।
ভাল লাগলো আপু। শুভ কামনা।
রেহানা বীথি
ভালো থাকবেন দাদা।
রোকসানা খন্দকার রুকু।
বিশ্বাসেই তো নিঃশ্বাস। এভাবেই চলতে হবে উপায় নেই।
আমরা সংকীর্ণ হয়ে গেছি।নিজেকে বিলিয়ে দিতে কষ্ট হয়।হয়ত কোন একদিন ঠিকও হবে কিন্তু জীবন থেকে তখন অনেক কিছু হারিয়ে যাবে।
ভালো লাগলো আপু।
শুভ কামনা সবসময়।
রেহানা বীথি
ভালো থাকবেন সবসময়।
আলমগীর সরকার লিটন
অবশ্যই প্রতিক্ষেত্রে বিশ্বাস রাখ প্রয়োজন বিশ্বাস ছাড়া কোনকিছু ভাবনা ঠিক না———–
অ্নেক শুভেচ্ছা রইল বীথি আপু
রেহানা বীথি
ভালো থাকবেন সবসময়।
আলমগীর সরকার লিটন
জ্বি আপু আপনিও
শামীম চৌধুরী
বহুদিন পর আপনার লেখা পড়লাম আপু। পদ্মার পাড়ে চটপটির কথা পড়তেই চলে গেলাম সেই পদ্মার চরে। আপনি আমাকে এই করোনাকালে নিয়ে গেলেন আমার প্রানের স্পন্দনে। লিচু বাগান থেকে শুরু করে পদ্মার পাড়ে চটপটি। ভাল লাগলো। শুভা কামনা।
রেহানা বীথি
ভালো থাকবেন ভাইয়া।
আরজু মুক্তা
দিনগুলো আবার ফিরে আসুক। সুন্দর হোক পৃথিবী।
রেহানা বীথি
ভালো থাকবেন আপু।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আপু আপনি এতো মিষ্টি করে কিভাবে ভাবতে পারেন! আপনি যেমন মিষ্টি আপনার লেখাও তেমনি সুন্দর আর মিষ্টি। বন্ধুবান্ধবদের সাথে আড্ডা দিতে পারিনা , ভার্চুয়াল যোগাযোগ করে দুধের সাধ ঘোলে মেটানো হচ্ছে। এই চরম বিপর্যয় একদিন কেটে যাবে কিন্তু সব কি আগের মতো ফিরে পাবো? অনেকেই চলে গেছেন, যাবে। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা রইলো
রেহানা বীথি
সেটাই আপু, দুঃসময় কেটে যাবে একদিন, তবে ক্ষত থেকে যাবে।
ভালো থাকবেন আপু সবসময়।
তৌহিদ
কাছের বন্ধু বলেন আর ভার্চুয়াল বন্ধু ই বলেন কারো উপর বিশ্বাস হারাতে নেই। আমি অন্তত চাইনা। কাছের বন্ধুরাও যেমন অনেক আঘাত দিয়েছে তেমনি ভার্চুয়ালি পরিচিত অনেকের কাছে থেকেও আঘাত পেয়েছি ।এখন আর এসব কিছুই মনে হয় না। কারণ ভার্চুয়াল জগত টাই এরকম। মানুষের উপর বিশ্বাস হারাতে নেই। ভালো থাকুন আপু।
শুভ কামনা সব সময়।
রেহানা বীথি
আপনিও ভালো থাকুন ভাই, সবসময়।