এক মাজারের দেশে এক লোক ছিল। লোকটি ছিল খুবই গরিব। লোকটির দাদার এক গাধা ছিল। দাদার মৃত্যুর পর ওয়ারিশ সূত্রে গাধার মালিক হলেন লোকটির বাবা। লোকটির বাবা ওই গাধা দিয়ে হাটবাজার থেকে ব্যবসায়ীদের মালামাল বহন করে সংসারের খরচ যোগাতেন। একদিন লোকটির বাবা মৃত্যুবরণ করলেন। সংসারে খানাওয়ালা বলতে এক মেয়ে আর স্ত্রী মিলে তিনজন। জায়গা সম্পত্তি বলতে শুধু বাড়িটা। সম্পদ বলতে বাবার রেখে যাওয়া গাধাটি ছাড়া আর কিছুই ছিল না তাঁর। তাই লোকটি বাপদাদার রেখে যাওয়া গাধা দিয়েই তাদের মতন ব্যবসায়ীদের মালামাল বহন করে সংসার চালাতেন। এভাবে চলতে লাগলো লোকটির ছোট সংসার। আর বাপদাদার রেখে যাওয়া গাধাটিও দিনদিন বুড়ো হতে লাগলো।
একদিন গাধাটি মরে গেলো। গাধা আর ঘোড়া মরে গেলে মাটিচাপা দিতে হয়। কারণ, মানুষ পচা গন্ধ, আর গাধা ঘোড়ার পচা গন্ধও এরকম। তাই গাধা ঘোড়া মারা গেলে অনেকেই মাটিচাপা (কবর) দিয়ে রাখে। যাতে পচা দুর্গন্ধে মানুষের যেন ক্ষতি না হয়। লোকটি তাঁর মরা গাধাটিকে মাটি (কবর) দেওয়ার জন্য বাড়ির পাশে একটা জায়গা ঠিক করলো। জায়গাটি হলো, একটি ত্রিমুখী রাস্তার মোড়। যা ছিল লোকটির বাড়ির উওর পাশে।
এখনকার মতো আগে এতো মানুষ ছিল না। মানুষের সংখ্যা খুবই কম ছিল। তাই রাস্তায় মানুষের চলাচলও ছিল কম। লোকটি তাঁর মরা গাধাটিকে রশি দিয়ে বেধে ত্রিমুখী রাস্তার মোড়ে নিয়ে গেলেন। গাধার মাপে কবরের মতন করে মাটি খুঁড়লেন। গাধাটিকে যত্নসহকারে কবর দিয়ে বাড়ি চলে এলেন।
এদিকে রাতদুপুরে সাত চোর ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলো চুরি করতে। চুরি করতে যাচ্ছে একটা বড় গৃহস্থের বাড়িতে। ওই বাড়িতে টাকা-পয়সা সোনা-দানার অভাব নেই। ওই বাড়িতে চুরি করার প্রোগ্রামটা ছিল অনেক আগের। কিন্তু সময় আর সুযোগের অভাবে চোরদের যাওয়া হয়নি। তাই আজ অন্য বাড়িতে চুরি করতে না গিয়ে, ওই বড় গৃহস্থের বাড়ি চুরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেই বাড়িতে চুরি করতে যাবে, সেই বাড়িতে যেতে হলে এই রাস্তা ছাড়া আর কোনও বিকল্প রাস্তা নেই। তাই এই রাস্তা দিয়ে সাত চোরের আসা। আর এই রাস্তার ত্রিমুখী মোড়েই গাধার মালিক গাধাটিকে কবর দিয়ে রেখেছে।
সাত চোর ত্রিমুখী রাস্তার মোড়ে যখন এলো, তখন একটা কবরের মতো দেখতে পেয়ে সবাই থমকে দাঁড়ালো। একজন আরেকজনকে বলছে, “কিরে, এখানে এটা কার কবর? এই কবর তো আগে কখনো দেখিনি?”
চোরের সরদার বললো, “যার কবরই হোক-না-কেন, চুরি যদি সাকসেস হয়, তো এখানে সাতজনের ভাগ থেকে একভাগ দেওয়া হবে।”
সরদারের কথায় আর কেউ অমত করেনি, সবাই রাজি হয়ে বড় গৃহস্থের বাড়ির দিকে রওনা হলো। চুরি সাকসেস হলো। টাকা-পয়সা সোনা-দানা সহ আরো অনেককিছু সাথে নিয়ে সাত চোর ওই রাস্তা দিয়েই আবার আসতে লাগলো। ত্রিমুখী রাস্তার মোড়ে আসতেই সবাই গাধার কবরের সামনে দাঁড়ালো। চোরের সরদার বললো, “সবাই গোল করে কবরের চারদিকে বসো।”
সবাই কবরের চারদিকের গোল করে বসলো, চোরের সরদার চুরি করা মালামাল এই কবরের সামনেই আট ভাগ করলো। সাত চোরের সাতভাগ, আর গাধার কবরের জন্য একভাগ। তারপর সবার ভাগের মালামাল গুছিয়ে নিয়ে, গাধার কবরের একভাগ কবরের সামনে রেখে সাত চোর চলে গেলো।
এদিকে গাধার মালিক সারারাত গাধা আর সংসারের চিন্তা করতে করতে একসময় ফজরের আযান শুনতে পেল। ওমনি তড়িঘড়ি করে উঠে ত্রিমুখী রাস্তার মোড়ে গাধার কবরের সামনে গেলো। কবরের সামনে গিয়েই গাধার মালিক একটা পোটলা দেখতে পেলো। যেই পোটলাটি সাত চোর গাধার কবরে রেখে গিয়েছিল।
গাধার মালিক পোটলা খুলে দেখে, স্বর্ণের আংটি, কানের দুল, টাকা-পয়সা, রূপা দিয়ে বানানো অলঙ্কার। এসব দেখে লোকটি রীতিমত অবাক হয়ে গেলো! গাধার মালিক দুহাত তুলে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করে বলতে লাগলো, “হে আল্লাহ, আমার গাধাটিকে তুমি বেহেশত নসিব করো! আমার গাধা মরে গিয়েও আমার সংসার চালানোর পথ তৈরি করে দিয়েছে।”
এই বলেই গাধার মালিক চোরদের রেখে যাওয়া পোটলাটি লুঙিতে গুঁজে তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে গেল। বাড়িতে পোটলাটি লুকিয়ে রেখে, একটা বালতি হাতে নিয়ে আবার গাধার কবরের সামনে এলো। রাস্তার পাশে থাকা খাল থেকে বালতি দিয়ে পানি এনে গাধার কবরটা ভালো করে লেপে দিলো। সামনেই ছিল একিটা জবাফুলের গাছ। কয়েকটা লাল জবাফুল ছিঁড়ে গাধার কবরের পর, ফুলের পাপড়িগুলো ছড়িয়ে দিয়ে গাধার মালিক বাড়ি চলে গেলো।
এদিকে ত্রিমুখী রাস্তার মোড়ে এরকম ফুল ছিটানো কবর দেখে, লোকজন আসা- যাওয়ার সময় ভক্তি করে অনেকে অনেককিছু ফেলতে লাগলো। কেউ টাকা, কেউ পয়সা, কেউ আগরবাতি, কেউ মোমবাতি, কেউ ফুল, কেউ কেউ ফুলের মালাও দিতে শুরু করলো। কেউ আবার রাস্তা দিয়ে আসা- যাওয়ার মাঝে নিজের সমস্যা দূর হবার জন্য মানতও করতে লাগলো।
এই দিনই বিকালবেলা গাধার মালিক মনের অনন্দে আবার গাধার কবরের সামনে এলো। কবরের সামনে এসে দেখে, গাধার কবরে এক টাকা, পাচ পয়সা, দশ পয়সা, দুই পয়সা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। সাথে পড়ে আছে ফুলের মালা সহ আগরবাতি মোমবাতিও। এসব দেখে গাধার মালিক মনের অনন্দে একরকম পাগল হয়ে যাবার পালা। তবুও নিজেকে ঠিক রেখে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা টাকা- পয়সাগুলো কুড়িয়ে নিয়ে নাচতে নাচতে বাড়ি চলে গেলো।
গাধার মালিক বাড়ি যাওয়ার পর স্ত্রী লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো, “মানুষই তো চিরদিন বাঁচে না! গাধা মারা যাবার পর, ঘরের মানুষটি যেন শোকে পাথার হয়ে গেছে! কারোর আত্মীয়স্বজন মরে গেলেও এরকম হয় না! কাজকর্ম ছাড়া কি আর সংসার চলবে?”
স্ত্রীর কথা শুনে লেকটি হেসে বললো, “আমার আর কাজকর্ম করতে হবে না। আমার গাধা জীবিত থাকতে আমাকে যা দিয়েছে, গাধা মরে গিয়ে তাঁর চেয়ে আরও বেশি দিচ্ছে। গাধা আমার খুবই কামেলদার ছিল। তাই আজ গাধার কবরে টাকা-পয়সা, সোনা-দানা, ফুল- তুলসীর অভাব নেই। রাস্তা দিয়ে লোকজন আসা- যাওয়ার সময় মানত করে আমার গাধার কবরে অনেককিছু দিয়ে যাচ্ছে। দেখ, কত টাকা-পয়সা গাধার কবর থেকে কুড়িয়ে এনেছি। সকালবেলাও একটা গাধার কবরে একটা পোটলা পেয়েছিলাম। যা তোমার কাছে আমি বলিনি। পোটালার ভেতরে স্বর্ণের আংটি সহ আরও কিছু আছে। যা দিয়ে আমরা অনেকদিন চলতে পারবো।”
স্বামীর মুখে এসব কথা শুনে স্ত্রী মহা খুশি! মনে মনে বলতে লাগলো, “যাক! তাহলে এবার আমাদের সংসারটা বোধহয় একটু ভালোভাবেই চলবে। না খেয়ে আর কখনো থাকতে হবে না।”
রাতে খাওয়া-দাওয়া সেরে শুয়ে শুয়ে গাধার মালিক চিন্তা করতে লাগলো, গাধার কবরটি এভাবে রাখা টিক হবে না। কবরটিতে বাঁশ মূলী দিয়ে একটা ছনের ঘর তৈরি করে, সেখানে বসে থাকতে হবে।
যেই কথা, সেই কাজ! পরদিন ভোরবেলা গাধার মালিক বাঁশঝাড় থেকে কয়েকটা বাঁশ কেটে গাধার কবরের সামনে নিয়ে গেলো। বাঁশের চারটে খুঁটি গাড়ল। ছন না থাকার কারণে, নারিকেল পাতার ছাউনি দিয়ে একটা ছোট কুঁড়েঘর তৈরি করে ফেললো। ঘরের বেড়াও দিলো, দরজাও রাখলো। ঘর বানানোর সময় লোকজন রাস্তা দিয়ে আসা- যাওয়ার সময় গাধার মালিককে জিজ্ঞেস করলো, “ভাই এটা কার মাজার?”
গাধার মালিক উত্তর দেয়, “ভাই এটা এক কামেলদার ‘গাদ্দার’ সাহেবের মাজার।”
গাধার মালিকের কথা শুনে লোকে তা-ই বিশ্বাস করে ‘গাদ্দার’ সাবের মাজারে ভক্তি শ্রদ্ধাসহকারে দান- দক্ষিণা দিয়ে লাগলো। আর গাধার মালিক মাজারের খাদেম সেজে লাল শালু কাপড় পড়ে ‘গাদ্দার’ সাবের রওজার পাশে বসে পড়লো।
বছর খানেক পর মানুষের দান- দক্ষিণায় আর খাদেম সাহেবের সদিচ্ছায় ‘গাদ্দার’ সাবের মাজার হলো ইটপাটকেলের দালান ঘর। আর মাজারের চারপাশ হয়ে উঠলো এক অন্যরকম ঝকঝকা। আস্তে আস্তে ‘গাদ্দার’ সাবের মাজারের কথা দেশবিদেশও ছড়িয়ে পড়লো। এখন অন্ধবিশ্বাসী কিছু মানুষ সামান্য সর্দি জ্বর হলেও ‘গাদ্দার’ সাবের মাজারে গিয়ে মানত বা মানসী করে। মানুষের মনোবাসনা পুণ্যের আশায় গরু-ছাগল বলী বা জবাই করার মানত বা মানসীও করতে লাগলো।
এভাবে ‘গাদ্দার’ সাবের মাজারের অলৌকিক কেরামতির কথা চারদিক ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলো। মানুষের মুখে- মুখে শুধু ‘গাদ্দার’ সাব, ‘গাদ্দার’ সাব শোনা যেতে লাগলো। প্রতিবছর একটা নির্দিষ্ট সময়ে ‘গাদ্দার’ সাবের মাজারে বাৎসরিক ওরসও অনুষ্ঠিতও হতে লাগলো। একসময় মাজার কমিটিও হলো। প্রতি তিনবছর পরপর ভোটাভুটির মধ্যদিয়ে মাজার কমিটি নির্বাচিত হতে লাগলো। নির্বাচিত হওয়া নতুন কমিটি নতুন করে মাজারের দায়িত্বপালন করতে লাগলো।
বাৎসরিক ওরস উপলক্ষ্যে ৭-৮দিন যাবত মেলা হতে লাগলো। মেলায় দোকান বসাতে হলে মাজার কমিটি দোকানদারদের কাছ থেকে লক্ষলক্ষ টাকা সালামিও নিতে লাগলো। দোকানদারা ব্যবসা করার আশায় লক্ষলক্ষ টাকা সালামি দিয়েও মেলায় দোকানের জায়গা বরাদ্দ নিয়ে মেলায় দোকান বসাতে লাগলো। বাৎসরিক ওরস উপলক্ষ্যে মেলার দুই- একদিন আগে থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ফকির, সাধু, সন্যাসী, জটাধারী পালগ মাস্তান ও গঞ্জিকা সেবনকারীরা আস্তানা গাড়তে লাগলো। ওরসের সময় চলে একদিকে মেলা, অন্যদিকে সাড়ে তিন কিলোমিটার জুড়ে মাইকে গান-বাজনা সহ জিকিরের শব্দ। এসময় পুরো মাজার এলাকা থাকে মহা হুলুস্থুলে জমজমাট। এতে কারোর হয় সর্বনাশ, কারোর শুরু হয় রিজিকের মৌসুম ভাদ্রমাস।
এভাবে চলতে চলতে ‘গাদ্দার’ সাবের মাজারের এরিয়াও বাড়তে থাকে। মানুষের আসা- যাওয়ার পথ ছোট হতে থাকে। একসময় যেই রাস্তা দিয়ে চলতো গরুর গাড়ি। সেই রাস্তা দিয়ে এখনে চলাচল করে বড়বড় যানবাহন সহ অনেক রকমের অত্যাধুনিক গাড়ি। সরকার রাস্তা বড় করার জন্য মাজার সরিয়ে ফেলতে নোটিশ জারি করলে, মাজারের ভক্ত আশেকানদের শুরু হয় সরকারবিরোধী মিছিল মিটিং। শুরু হয় ভাংচুর সহ নানান অপ্রীতিকর ঘটনা। তারপর সরকার বাধ্য হয়ে রাস্তার মোড়ে ঠিক স্থানে মাজার রেখে রাস্তার প্রস্থতা বাড়াতে থাকে। আর ‘গাদ্দার’ সাবের মাজার কমিটির ব্যবসাও পুরোদমে চলতে থাকে।
একসময় ‘গাদ্দার’ সাবের মাজারের প্রতিষ্ঠাতা (গাধার মালিক) খাদেম সাহেব মৃত্যুবরণ করলো। মাজার কমিটি খাদেম সাহেবকে খুবই সম্মানের সাথে ‘গাদ্দার’ সাবের মাজারে পাশেই কবর দিলো। এখন ‘গাদ্দার’ সাবের মাজারে দিনরাত জটাধারী ফকির সাধু সহ সহজসরল মানুষ আনাগোনা চলতেই লাগলো। এভাবে জয় হতে লাগলো ‘গাদ্দার’ সাদের মাজারের দায়িত্বে থাকা নির্বাচিত কমিটির সদস্যদের। আর ক্ষয় হতে লাগলো মাজারের দেশের অন্ধবিশ্বাসী সহজসরল মানুষের কষ্টার্জিত টাকা-পয়সা।
লেখাটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক
ছবি সংগ্রহ ইন্টারনেট থেকে।
২২টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি
খুব সত্য কথা লিখেছেন।এ দেশে ভন্ডামী করা যত সহজ ভাল কাজ করা তার চেয়ে বেশী কঠিন।ধন্যবাদ লেখাটি সেয়ার করার জন্য।
নিতাই বাবু
শ্রদ্ধেয় মনির দাদা, লেখাটি লেখেছি আমাদের দেশে মনগড়া যত্রতত্র গড়ে ওঠা কিছু মাজারের ইতিহাস জেনে। তবে সব মাজার নয়।
একসময় চৌধুরী বাড়ি আসলে দেখাতে পারবো দাদা।
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় মনির দাদা।
তৌহিদ
গল্পটি রুপক অর্থে লেখা হলেও সমাজের বাস্তবতাকে তুলে এনেছেন দাদা।
কতদিন পরে এলেন!!
নিতাই বাবু
হ্যাঁ শ্রদ্ধেয় তৌহিদ দাদা, অনেকদিন পর সকলের ভালোবাসার প্লাটফরম সোনেলায় আমার আগমন। খেঁটে খাওয়া মানুষ আমি দাদা। সময়ের সাথে সদা আমার যুদ্ধ। তাই ঠিকমত নিয়মিত হতে পারছি না। তবে মাঝে-মাঝে মাঝে-মাঝে সোনেলায় কিন্তু উঁকি মারি, দেখি!
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় দাদা। ভালোবাসা সবসময়।
তৌহিদ
আপনিও ভালোবাসা জানবেন শ্রদ্ধেও দাদা☺
জিসান শা ইকরাম
লেখাটি পড়ে হাসি এলেও কিছু কিছু মাজারের প্রতিষ্ঠা এমন অন্ধ বিশ্বাসের মাধ্যমেই হয়ছে।
অনেক দিন পরে লেখা দিলেন,
আরো লেখুন।
শুভ কামনা।
নিতাই বাবু
হ্যাঁ শ্রদ্ধেয় গুরুতুল্য দাদা। অনেকদিন পরই সোনেলায় আসা হলো। আমি দাদা এক সময়হীনা জীবন্ত মানব। জীবনটা আমার জন্য এক যুদ্ধক্ষেত্র। যুদ্ধ করছি সময়ের সাথে। তাই ইচ্ছে থাকলেও ছুটি পাওয়া যায় না। তা নিয়মিত হতে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও কিন্তু পারছি না।
জিসান শা ইকরাম
আপনি একজন যোদ্ধা, আমিও
তাই যোদ্ধারা আমার কাছে অত্যন্ত প্রিয়।
আসবেন সময় করে,
শুভ কামনা।
নিতাই বাবু
সোনেলা প্লাটফরম এখন খুবই ভালো লাগছে। সবকিছুতেই দ্রুত স্পিড!
ছাইরাছ হেলাল
অনেকদিন পরে লিখলেন।
দেখুন এমন চল আমাদের এখানে ভাল/মন্দ মিলিয়ে শত শত বছরের পুরোন।
তাই এত্ত সহজে বেড়িয়ে যাওয়া সহজ কোন কর্ম নয়।
নিতাই বাবু
ঠিক বলেছেন শ্রদ্ধেয় দাদা। এর থেকে বেরিয়ে আসাও সম্ভব নয়! কারণ, আমরা অন্ধবিশ্বাসী আর মাজার বিশ্বাসী, তাই।
নীলাঞ্জনা নীলা
“লালসালু” উপন্যাসের কথা মনে পড়ে গেলো।
দাদা চমৎকার লিখেছেন। এটাই বাস্তব, কাল্পনিক নয়।
নিতাই বাবু
আমাদের এলাকার মুসুল্লিগণ গত কয়েকদিন আগে এভাবে গড়ে ওঠে একটা মাজার ভেঙে ফেলা হয়েছে, শ্রদ্ধেয় দিদি। শুধু এটি কেন, এরকম মনগড়াভাবে গড়ে ওঠা মাজার আমাদের দেশে অনেক আছে। সেগুলো থেকেমানুষের বিশ্বাস কেউ আর কখনওই ভঙ্গ করতে পারবে না। ওইসব মাজারের কার্যক্রম চলছে, চলবেই।
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় দিদি।
নীলাঞ্জনা নীলা
আমরা মানুষ নামের মানুষই যে শুধু। মনুষ্যত্ব হারিয়ে গেছে দাদা।
শুন্য শুন্যালয়
মাজার শব্দ শুনলেই আমার এলার্জি শুরু হয়। আমাদের ধর্মেই মাজার জিয়ারত জায়েজ নয় উল্লেখ আছে, অথচ আমাদের বিশাল ধর্মপ্রাণ মানুষেরা সেইসব পাত্তাই দেয়না।
গাঁধার কবর-ই এইগুলা, তার চাইতে বড় গাঁধা এদের অনুসারীরা।
নিতাই বাবু
আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি একজন মৃতব্যক্তির সমাধিতে কেউ কিছু চাওয়াটাই বিফল। কেননা, মৃতব্যক্তির কিছুই দেবার ক্ষমতা নেই। কিছু দেওয়ার ক্ষমতা রাখে বা আছে একজন জীবিত ব্যক্তির। তাই আমি দিদি সবসময়ই এসবের বিরোধী। মানুষ কী বুঝেশুঝে যে একজন মৃতব্যক্তির কবরে গিয়ে মনোবাসনা পুণ্যের আশায় বসে বসে কাঁদে, তা আমার মাথায় খেলে না, কাউকে বুঝাতেও পারি না দিদি।
ধন্যবাদ জানাচ্ছি, আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য। আশা করি ভালো থাকবেন সবসময়।
সাবিনা ইয়াসমিন
লেখাটা প্রকাশের সাথে সাথেই পড়েছি। দুটো কারণে কমেন্ট দিতে পারিনি ১ লগ আউট অবস্থায় ছিলাম ২ এম বি শেষ পর্যায়ে ছিলো, নইলে প্রথম কমেন্টে আমার নাম থাকতো। 😁
লেখাটি পড়ার সময় আমার লাল সালু উপন্যাসটির কথা মনে পড়েছিল। মাজার ব্যবসা এখন সবচেয়ে রমরমা ব্যবসার মধ্যে একটা। কোনো মূলধন ছাড়া দ্রুত আর্থিক অবস্থা পরিবর্তন করতে ভিক্ষার চেয়ে মাজার ব্যবসা এগিয়ে আছে। এই ব্যবসায়ীদের কনফিডেন্স লেভেল এত উপরে থাকে যে এদের কেউ দমাতে পারেনা। আর সাধারণ অজ্ঞ মানুষ গুলো এদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ভাবেই না মাজারটি কি আসলেই কোনো মৃত অলির না কোনো গেরস্ত বাড়ির মরা বলদের!!
অনেক দিন পর এলেন দাদা। নিয়মিত লিখবেন আশা রাখি। ভালো থাকবেন, শুভ কামনা 🌹🌹
নিতাই বাবু
আমাদের গোদনাইল চৌধুরী বাড়ি এলাকায় একটা মাজার ছিল দিদি। মাজারটির নাম ছিল, “মা-তিন গাট্টি মাজার শরিফ”। এটি ছিল এক পাগলিনীর কবর। পাগলিনীর মুখের ভাষাও কেউ বুঝত না। পাগলিনী যে কোন দেশের নাগরিক ছিল, তাও কেউ জানতো না। পাগলিনীর সাথে সবসময় তিনটে ছেড়া কাপড়ের গাট্টি থাকতো। মৃত্যুর পর কিছু মানুষ নিকটস্থ চিত্তরঞ্জন কটন মিলের পরিত্যক্ত এক জায়পগায় কবর দেয়। কয়েক বছর পর সেই কবরই হয়ে ওঠে “মা- তিন গাট্টি মাজার”। গত কয়েকদিন আগে সামনে থাকা এক মসজিদের মুসুল্লিগণ ক্ষিপ্ত হয়ে তা ভেঙে ফেলে। এখন বর্তমানে মাজার এলাকা একেবারে শান্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। যা বিগত বছরগুলোতে এলাকার মানুষ এরকম শান্ত পরিবেশ কখনওই দেখেনি।
আরও অনেক কাহিনী ছিল এই মাজার নিয়ে দিদি। তা আর মন্তব্যের ছোট বক্সে লিখা সম্ভব নয়। ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় দিদি। আপনার সুন্দর মূল্যবান মন্তব্যের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
সাবিনা ইয়াসমিন
মাজার সম্পর্কে আমার ব্যাক্তিগত ধারনা যেমনই হোক মাজার ব্যবস্থাপনা আর এর পরিবেশ সম্পর্কে আমার অভিজ্ঞতা খুবই খারাপ। একটা সময় আমি ঢাকা শহরের বিভিন্ন মাজার ঘুরেছি শুধু নিজের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতায় সম্পূর্ণতা লাভ করার জন্যে। যদি কখনো সম্ভব হয় লিখবো। কমেন্ট বক্স অনেক সময়েই ছোটো মনে হয় লেখার উপর পর্যাপ্ত আলোচনা করার জন্যে। তাতে কি, আমরা আমরাই। লেখা প্রকাশ করার পর লেখার উপর আলোচনা হোক এটা লেখকের দাবী থাকে। আমরা পাঠকেরা চেষ্টা করবো লেখকের লেখাটির মূল্যায়ন ধরে রাখার।
শ্রদ্ধা সম্মান আপনার প্রতি থাকবে দাদা। যখনই সময় পাবেন চলে আসবেন নিজের লেখা আর আমাদের লেখায় নিজ মতামত দেয়ার জন্যে।
শুভ কামনা 🌹🌹
নিতাই বাবু
অশেষ ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় দিদি। আমি আছি আপনাদের সাথে।
অপার্থিব
গাদ্দার বাবার ইতিহাস শুনাইলেন বলেই কি লেখার ট্যাগ ইতিহাস ? কয়েক মাস আগে একদিন রুপ গঞ্জে তিনশ ফিট রাস্তায় দেখলাম নেংটা বাবার ওরস, ভাবলাম নেংটা বাবারে দেইখা চক্ষূ জোড়া ধন্য করি, ভিতরে ঢুকে দেখি নেংটা বাবা বহু আগেই পটল তুলেছে, আফসোস!
নিতাই বাবু
এদেশে যত্রতত্র মাজার গড়ে ওঠার ইতিহাস। ক্যাটাগরি যদি ইতিহাসে না যায়, তো সম্পাদন করার দায়িত্ব থাকে ব্লগ টিমের। যাই হোক, আমি ট্যাগ গল্প হোক আর ইতিহাস হোক, হয়ে তো গেছেই। আপনিও কিন্তু এক ওরসের গল্প শোনালেন দাদা। তবে লেংটা বাবার মাজারটির নাম জানা হলো না কিন্তু?