ব্লগার সুরাইয়ার ফোন এলো সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার পর। ফোন চার্যে দিয়ে টিভি দেখছিলাম। ফোনের আওয়াজে দৌড়ে গিয়ে রিসিভ করতেই সুরাইয়ার চিৎকার– ” আপু তুমি কই? সারাদিন কই ছিলা? তুমি খবর কিছু জানো না??? পাগলের প্রলাপের মত লাগছিলো সুরাইয়ার উচ্চারিত শব্দগুলো। একটা লাইন শুধু কানে প্রচণ্ড আঘাত করলো……… আরজু আপু নাকি নেই????
হাত চলছে না….. ভাষা বোবা।শুধু একটা চিৎকার…… আরজু নেই???কয়েকদিন আগেও ইনবক্সে টোকা দিয়ে লেখা চাইছিলো….
আরজ# ফুপি, এবার আমরা ১২ জন মিলে বই বের করবো
তুমি রাজি থাকলে ৫ টা কবিতা দিও
— টাকা পয়সা নাই
আরজু# বড়লোকের মেয়ে। এগুলো বলতে হয় না
–কোনোদিন বড়লোকের মেয়ে ছিলাম না
আমার বর ও বড়লোক না
আরজু# আমি তো তোমার থেকেও গরীব।
আচ্ছা
দিও কবিতা
— তুমি আত্মনির্ভরশীল
আরজু#৷ শরীর ভালতো?
— শরীর মন কোনোটাই ভালো না
আরজু# ভালো হোক এটাই কামনা করি…….
প্রচণ্ড আশাবাদী ভালো মানুষ। আমাদের দেখা হয়নি কখনো। কখনো ফোনালাপও হয়নি। কিছুদিন আগেই ফোন নাম্বার চাইলো। দিলাম ও, একটা ফোনকলও করেনি…. আমিও করিনি কখনো। প্রয়োজনে খুব ছোটখাটো কথা হতো ইনবক্সে। এডমিন প্যানেলে একসময় কথা হত, আমাকে প্রশ্ন করেছিলো এক সময়…. ” জিসান ইকরাম দাদা আপনার কেমন চাচা হয়? ” সম্পর্কটা জানার পর থেকেই আমাকে ফুপি করে সম্বোধন করা শুরু করলো। সবসময় একই বাক্য উচ্চারন করত…..* ভালবাসা অবিরাম*
নিরবে দূরে থেকেও অজানা- অচেনা – অদেখা কাউকে কেউ কতটা আপন অন্তরে ঠাঁই দিতে পারে! আরজু মুক্তা এক উজ্জল প্রমান। সোনেলা ব্লগে যুক্ত হবার পরে একে একে অনেক দূরের অচেনা অজানা মানুষ খুব কাছের আত্মার সাথে যুক্ত হয়ে গ্যাছে। আরজু তাঁদের একজন। আমি লিখতে পারছি না বেশি কিছু। হাত কাঁপছে, চোখ গড়িয়ে জল ঝড়ছে,বুকের ভেতর চাপ কষ্ট হচ্ছে…..।
কি দূর্দান্ত লেখক হারালাম ।
বিনা নোটিশে এমনি করেই হয়তো একে একে সবাই চলে যাব। থেকে যাবে রেখে যাওয়া কাজগুলো।
মা নাবা!! তোকে কি বলে সান্তনা দেব? কোনো ভাষা নেই। তোর মাথায় আদরের হাত রাখলাম…. যত পারিস কাঁদ, কাঁদতে বারন করা যায়না এসময়। তোর শুন্যস্থান পূরণ হবার নয়। তোর মা প্রচণ্ড বাস্তববাদী মানুষ ছিলেন। এটাই বাস্তবতা মা!!! পরম করুনাময় সর্বশ্রেষ্ঠ মহানুভব আল্লাহ্ তোকে শোক সইবার শক্তি দিন।
আল্লাহ্ আরজু মুক্তা ফু’ম্মার আত্মা শান্তিতে রাখুন। আমিন।
২০টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি
নাবা জন্য দোয়া করছি ওযেন এ শোক সইতে পারে।আরজু আপুর মত খোলা মনের মানুষ খুব কমই আছে।তার এভাবে হঠাৎ চলে যাওয়াটা খুব কষ্ট হচ্ছে।তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
বন্যা লিপি
আমিন।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
সংবাদটা শুনে একদম আৎকে উঠেছি আপু। এ কেমন চলে যাওয়া!! এমন মৃত্যু সংবাদ কারোরই কাম্য নয়। ঈশ্বর তার পরিবারের শোক বহিবার শক্তি দিন। আমরাই মেনে নিতে পারছিনা তার পরিবার কিভাবে এ শোক সহ্য করবে, মেয়েটা কিভাবে থাকবে? তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি
বন্যা লিপি
কোনো কোনো প্রস্থান মেনে নেয়া কষ্টকর। আরজু’র যাওয়াটাও তেমনি। হয়ত কালই শুনবেন আমিও এভাবেই চলে গেছি!!! এটাই বাস্তবতা…..
মহান স্রষ্টা আরজুকে ভালো রাখুন…. আমিন।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আপু কাল থেকে আমার ও তেমনটাই মনে হচ্ছে উনি যেভাবে চলে গেল যা কল্পনাতীত। আমিও যেকোনো সময় চলে যেতে পারি , তারপর কি হবে আর ভাবতে পারছি না। মৃত্যু কখন কার কিভাবে লেখা আছে তা কেউ জানিনা, চলে গেলেই জানা যায় – চলে গেল, শূণ্যতা সৃষ্টি হলো।
ছাইরাছ হেলাল
ব্যাক্তিগত যোগাযোগ একদম নাই-ই এর মত, প্রায় সবার সাথে যেমন,
তবে তিনি হঠাৎ করেই অনেক ভাল লেখক কোন যাদু বলে হলেন তা আজ ও আমার কাছে বিষ্ময়।
এখন কেন যেন মনে হচ্ছে লেখা বিষয়ে আরও যোগাযোগ থাকলে আমাদের সবার জন্য ই হয়ত ভাল হতো।
একটি আকাল সময়ে নিভৃতে পাশে এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন, খুব সামান্য ব্লগ পরিচয় সত্ত্বেও।
আজ সে সব কথা বারে বারে মনে পড়ছে।
আল্লাহ তাঁর হেফাজত করবেন, এ প্রার্থনা আমাদের সবার।
বন্যা লিপি
ব্লগ ছাড়া ফেসবুকে যুক্ত হবার পর তেমন করে কখনো আলাপ হয়ে ওঠেনি। স্টোরিক্যাল পোষ্টে মাঋে মাঝে টুকটাক ইমো বিনিময় হত। তারপর একদিন কৌতুহলে হয়ত প্রশ্ন করেছিলো,যখন বুঝতে পেরেছিলো আমার পরিচয়(?) -” দাদা, আপনার কেমন চাচা? আমি বলেছিলাম,- আপন চাচা ভাবতে সন্দেহ হয়? আমি জানতে চেয়েছিলাম,নাবা তো এবার ক্লাশ নাইনে উঠেছে তাইনা? বিস্মিত হয়েছিলো…” আপনি কি করে জানেন?!!! আমি বলছিলাম, জুনিয়র বৃত্তি পাওয়া পোষ্ট দেখেছিলাম আপনার, ওটা মনে আছে।
তারপর… মাঝে মাঝেই টুক টাক কথা হত। বেশি হলো তখন যখন যৌথ গ্রন্থের জন্য লেখা চাইলো। বেশ কিছুদিন আগে ফোন নাম্বারও নিলো, এই গত সপ্তাহে বোধহয়-, আবার লেখা চেয়ে নক করলো….. তারপর তার অসুস্থতার পোষ্ট দেখলাম,সুস্থতার পোষ্টও দেখলাম…… তিনদিন আগে একটা কবিতা দেখলাম টাইমলাইনে…… আজ সন্ধ্যায়….. স্মৃতি হয়ে গেলো সব———–.
কেউ জানি না কে কখন চলে যাব…. রয়ে যাবে শুধু স্মৃতি রোমন্থন….. প্রার্থনা…. ভালো রাখুন মহান আল্লাহ্….. আমিন।
সৌবর্ণ বাঁধন
সৃষ্টিকর্তা তাকে পরম শান্তিতে রাখুক এটাই একমাত্র কামনা। সুন্দর মননের মানুষ হয়তো সত্যিই দুর্লভ, যে দুই একজন থাকে তারাও অকারণে হুট করে চলে যায়। পরকালে শান্তিতে থাকুক আপু।
বন্যা লিপি
সুন্দর মননের মানুষ হয়তো সত্যিই দুর্লভ, যে দুই একজন থাকে তারাও অকারণে হুট করে চলে যায়…….. এরাই পরম বাস্তবতা বুঝিয়ে দেন মহান স্রষ্টা। তাঁর পরকালীন জীবন যেন ভালো হয় আমার সেই প্রার্থনাি করি।
হালিমা আক্তার
সংবাদটা শুনে প্রথমে বিশ্বাস হচ্ছিল না। মনে হচ্ছিল কোথাও কোন একটা ভুল হচ্ছে। প্রচন্ড বাস্তববাদী এবং আশাবাদী মানুষ ছিলেন। আল্লাহ উনাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন। নাবার জন্য অনেক অনেক দোয়া রইল। মায়ের মত অনেক বড় মাপের মানুষ হও।
বন্যা লিপি
আমার ও বিশ্বাস হয়নি প্রথমে…. কষ্ট হচ্ছিলো প্রচণ্ড…. আল্লাহ্ তাঁর আত্মার শান্তি দান নসীব করুন। আমিন।
মোঃ মজিবর রহমান
কি বলব ! ভাষায় আমার শব্দ হারা হয়েছি। আপনার মত আমার কাছ থেকে নাম্বার নিয়েছিলো কিন্তু কথা হয়নি। চোখে পানি আসছে কিছুই বলার/করার নাই।
শুধু মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা নাবা তাঁর মায়ের সৃতি জড়িয়ে থাক, আর আল্লাহ মুক্ত আপুকে বেহেস্ত নসিব করুন। আমিন।
বন্যা লিপি
বিধাতার বিধান….. তিনি সর্বজ্ঞ। আমরা শুধু প্রার্থনা করতে পারি আরজুর জন্য। আল্লাহ্ তাঁকে রহমত দান করুন। আমিন।
মোঃ মজিবর রহমান
আল্লাহ্ তাঁকে রহমত দান করুন। আমিন
আলমগীর সরকার লিটন
মহান আল্লাহ জান্নাত বাসি করুন আমিন
বন্যা লিপি
আমিন
সাবিনা ইয়াসমিন
প্রথমে রুকু তার কয়েক মূহুর্ত পরে হালিমার কাছে দুঃসংবাদটি পেয়েছিলাম। তারপর কি করেছি, কাকে কি বলেছি এখন মনে পড়ছে না। শুধু এটুকুই মনে আছে আমার বিশ্বাস হচ্ছিলো না। কীভাবে একটা তাজা প্রাণ কোন সংকেত ছাড়াই ঝরে যেতে পারে!
আল্লাহ তায়ালা আরজু মুক্তাকে জান্নাতবাসী করুন।
আমিন।
বন্যা লিপি
আমারো হুঁশ ছিলো না সংবাদটা শোনার মুহুর্তে….. সুরাইয়া ফোন দিয়ে বলেছিলো, দুজনেই একসাথে চিৎকার দিয়ে উঠেছিলাম,,তারপর…… স্থির হতে সময় লেগেছে প্রচুর। ব্লগেও আসতে ইচ্ছে হয়না…. কাভার হয়ে আছে আরজু…… আল্লাহ্ সর্বত ভালো রাখুন তাঁকে।
আমিন।
জিসান শা ইকরাম
অদেখা কেউ কতটা আপন/ কাছের হতে পারে আরজু মুক্তা তাঁর প্রমাণ।
তাঁর মৃত্যুকে আমি এখনো মেনে নিতে পারছি না।
বন্যা লিপি
আল্লাহর বিধান না মেনে আমরা কে কোথায় যাব।আল্লাহ্ যা করেন ভালোর জন্যই করেন….এটা মানতেই হবে। আরজুর আত্মার শান্তি কামনায় আমরা সবসময় প্রার্থনা করি। আমিন।