কুইন্স ব্লুবার্ডের রেড লাইটে অপেক্ষায়। ডান দিকে শতশত সমাধি ফলকের দিকে তাকাতেই গাড়ীটির দিকে চোখ যায়। এই কন্কনে ঠাণ্ডায় গাড়ীটির গ্লাস নামানো। একটি কুকুর মাথা বের করে তাকিয়ে আছে। ড্রাইভিং সিট থেকে কেউ উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে ডাকলো, কুশল জানতে চাইলো। চেনা স্বর। আমিও উচ্ছ্বসিত। চেঁচিয়ে বলি জেসিকা ! একটু হাই হ্যালো’র মাঝেই গ্রিন লাইট জ্বলে উঠলো। কতদিন পর এক ঝলক দেখা ! ষাটোর্ধ জেসিকা কোরিয়ান। অনেক আগে আমার কলিগ ছিল। আমাদের অনেক গল্পগুজবের সুন্দর সময় কেটেছে একদা…
ধৈর্য সহ্য ক্ষমতা, মানিয়ে চলার মানসিকতা নেই তাঁর। অল্পতেই কারো না কারো সাথে বিবাদে জড়িয়ে পড়তো। লাঞ্চব্রেকে গল্প করার সময় আমি তাঁর খিটমিটে মেজাজের উল্টো পিঠে সুন্দর একটি মানুষকে, মনকে দেখতে পেতাম। দুই সন্তানের জননী জেসিকা জীবনের কোন এক সময়ে তৃতীয়বারের মত মা হতে যাচ্ছিলো। কিন্তু স্বামী-স্ত্রী কারোরই তা কাম্য ছিল না। বিধায় সে শিশুটি আর পৃথিবীর মুখ দেখেনি। প্রায়ই জেসিকা এটি নিয়ে তীব্র এক অপরাধ বোধে ভুগতে থাকে। তাঁর ধারনা, সে একটি শিশুকে হত্যা করেছে। শিশুটি বেঁচে থাকলে এতদিনে এত বছর হতো… অমুক ক্লাসে পড়তো। রোজ মধ্যরাতে আচ্মকা ঘুম ভেঙে গেলেই নাকি সে কোন একটি মেয়ে শিশুর কান্নার শব্দ শুন্তে পায় ! আবার কোন দুঃসময় এলেই ভাবে, এটা তাঁর পাপের ফল। এসব শুনে শুনে আমার মনে হতো__ জেসিকা কি কোন মানসিক সমস্যায় ভুগছে ! একটি অপরাধ মানুষের গোটা জীবনকে এমনভাবে তাড়িয়ে বেড়ায় !
অথচ, এতো এতো জীবন্ত মানুষ হত্যা করেও অপরাধ বোধ হয়না অনেকের… 🙁
৩২টি মন্তব্য
আবু জাকারিয়া
খুব অল্পের মধ্যে গুছিয়ে অনেক সুন্দর একটা গল্প। পড়ে খুব ভাল লাগল। গল্পটিতে খুব সুন্দর একটা বার্তা ফুটে উঠ্রেছে।
তা হল, একটি অপরাধ
মানুষের
গোটা জীবনকে এমনভাবে তাড়িয়ে
বেড়ায় !
রিমি রুম্মান
অথচ কেউ কেউ কত অবলীলায় অপরাধ করে যায় … কোন বোধ নেই তাদের। ভাল থাকুন। শুভকামনা রইলো।
স্মৃতির নদীগুলো এলোমেলো...
ভালো লিখেছেন আপা।
রিমি রুম্মান
অনেক ধন্যবাদ…
খেয়ালী মেয়ে
অপরাধবোধ তাদেরই হয় যাদের মাঝে মনুষ্যত্ব আছে—কিন্তু যারা মনুষ্যত্বই অর্জন করতে পারেনি তাদের আবার কিসের অপরাধবোধ?………..
রিমি রুম্মান
ঠিক বলেছেন, ঠিক এই কথাটিই বুঝাতে চেয়েছিলাম। ধন্যবাদ অশেষ ।
ছাইরাছ হেলাল
সবার বোধ এক হয় না কখনো।
অপরাধের মাত্রা অনেক কমে যেত তা হলে।
রিমি রুম্মান
সেটাই। সবার বোধ থাকলে অপরাধ কমে যেতো , পৃথিবী সুন্দর হতো ।
নুসরাত মৌরিন
বোধ থাকলেই হয় মানুষ।আর যারা মানুষ তাদেরই আজীবন অপরাধবোধ তাড়িয়ে বেড়ায়।
আর যারা এত এত জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে মারছে, তারা আর যাই হোক মানুষ না!!
রিমি রুম্মান
ওরা মানুষ নামের কলংক। ভাল থাকুন। নিরাপদে থাকুন।
প্রহেলিকা
অপরাধ বোধ যদি তাদের মাঝে ধারণ করতো তাহলে আর মানুষ পোড়াতে পারতো না। পশুদের মাঝে অপরাধ বোধ আবার কি? পার্থক্য শুধু এটুকু এই পশুরা আমাদের জনপদে স্থান করে নিয়েছে।
রিমি রুম্মান
হিংস্র পশুর লোকালয়ে বিচরন বিপদজনক। নিরাপদে থাকুন এদের থেকে।
জিসান শা ইকরাম
লেখাকে কোথা থেকে কোথায় নিয়ে এলেন
জেসিকা শান্তি পাক, ভুলে যাক সব কিছু।
এত এত মানুষ হত্যা করে তারা অপরাধ বোধে ভুগছে না তারা
কারণ তারা সাইকো, সিরিয়াল কিলার।
রিমি রুম্মান
জেসিকা একটি উদাহরন। একটি ঘটনা তার গোটা জীবনকে তাড়িয়ে বেড়ায়, অথচ কত অবলীলায় মানুষ মানুষকে পুড়িয়ে মারে… এদের কেন কোন অপরাদবোধ নেই ?
নীলাঞ্জনা নীলা
বোধ পুড়ে যাচ্ছে,অসহ্য লাগছে সব কিছু।
রিমি রুম্মান
আপু, লুকিয়ে টিভি দেখি। খবর পড়ি নেটে। বাচ্চাদের নিরাপদ দূরত্বে রাখি, যেন এসব না দেখে। আমার দেশকে আমি কেন আমার সন্তানদের থেকে লুকিয়ে রাখতে হয় ! যেখানে গর্ব করে ওদের দেখানোর কথা আমার দেশ… কালচার… দেশের মানুষ ।
সীমান্ত উন্মাদ
জেসিকার এই বোধ যদি আমাদের সব রাজনীতিবিদদের থাকত। শান্তিপাক জেসিকা। আর আপনার জন্য শুভকামনা।
রিমি রুম্মান
ভাল থাকুন আপনিও। নিরাপদে থাকুন, দোয়া রইলো।
শিশির কনা
জেসিকা অপরাধ বোধে ভুগছে,কারন তিনি মানুষ।আমাদের দেশে যারা মানুষ পুড়িয়ে মারছেন,তারা অমানুষ,অমানুষদের বোধ থাকে না।
রিমি রুম্মান
ঠিক বলেছেন। ভাল থাকুন। নিরাপদ থাকুন।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
অপরাধবোধ মারাত্মক সমস্যা।
সারাজীবনেও এর প্রায়শ্চিত্ত হয় না।
অপরাধবোধে যারা ভুগেন, তাঁরা নরম মনের অধিকারী। নিজের কষ্টকে মেনে নিতে পারেন কিন্তু নিজেকে অন্য কারো যন্ত্রনার কারন হিসাবে মানতে পারেন না।
যারা জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করছে, তারা শ্রেফ পিশাচতুল্য।
রিমি রুম্মান
ওদেরও পরিবার আছে। বাবা-মা আছে। ভাইবোন আছে। নেই শুধু বোধ। আমার সমস্ত অভিশাপ ওদের জন্যে। নিরীহ ঘুমন্ত মানুষগুলো’র গন্তব্য কেমন করে বদলে যায় ! যাবার কথা ছিল কোথায়, অথচ চলে যায় ধরা ছোঁয়ার বাইরের জগতে !! উফ !!
বৃষ্টিহত ফাহিম
শেষ লাইনে পাঞ্চ রেখে গেলেন, ভালো লাগল।
রিমি রুম্মান
অনেক কষ্ট চেপে লিখেছি। একটি ঘটনা দিয়ে বুঝাতে চেয়েছি। তবুও সবাই বুঝে নিয়েছে। অনেক ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।
ব্লগার সজীব
কি লিখবো বুঝতে পারছিনা আপু।দেশের এই হত্যাগুলোকে কিছু টকশোবাজ এবং রাজনীতিবিদ সমর্থন করছে।বিবেস্ক শুন্য হয়ে গিয়েছে সবাই।
রিমি রুম্মান
তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা নিরীহ মানুষ পুড়ানোকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে না। সন্ত্রাসীদের মারাকে অপরাধ হিসেবে দেখে। এদের প্রতি ঘৃণা জানানোর ভাষা নেই।
প্রজন্ম ৭১
উম্মাদ মানুষ খুন করে আনন্দ পায়। (y)
রিমি রুম্মান
বুদ্ধিজীবীরা আর বড় উন্মাদ। ওদের কোন প্রতিবাদ চোখে পরে না।
খসড়া
আপনার একান্ত অনুভূতিগুলি অন্যরকম।
রিমি রুম্মান
অনুভূতিগুলো শেয়ার করি যদি একজন মানুষেরও মনে দাগ কাটে, তবুও আমার লেখা সার্থক হবে। ভাল থাকুন।
স্বপ্ন
আপু,অনেকের বোধই নেই।
রিমি রুম্মান
বোধহীন মানুষগুলোর বোধোদয় হোক । শুভকামনা রইলো।