
ফিনিক ঝরা জোসনা দেখা আর সেই সাথে খোলা মাঠে বা নির্জন রাস্তায় একাকী হাঁটার একটা রোমান্টিকতা আছে। জোসনা বিলাস না হয়ে জোসনায় অবগাহন হবে। ইচ্ছেটাকে প্রাধান্য দিতে আয়তুল কুরসি পড়ে হাঁটা শুরু করলাম। শর্টকাট রাস্তা কিন্তু যেতে হবে কবরস্থানের পাশ দিয়ে।
জোসনায় গাছপালা সাদা হয়ে থাকে। রূপালী আলোর বন্যা। “আজ জোসনা রাতে সবাই গেছে বনে” কিংবা চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙ্গেছে!” গানগুলি সেটিং করে হেড ফোন লাগিয়ে নিতে নিতে ভাবলাম, রবীন্দ্রনাথ না থাকলে কী যে হতো!
কবরস্থান শুরু হতেই দেখি, ওর গেটের মুখে জটলা। শুধু মেয়ে আর মেয়ে। রহস্যজনক মনে হলো। আমি একটু দাঁড়িয়ে চিনতে চেষ্টা করলাম মেয়েটিকে। খুব চেনা লাগছে। পত্রিকার পাতা চোখে ভাসছে। কোথায় জানি ডায়াসের মেয়ে দুটিকে দেখেছি। মেমরি কি ফ্যাকাশে হয়ে গেছে? মনে পরছে নুসরাত, সাথে তনু।
নুসরাত বলছে, ” বাংলাদেশে একটা ছেলেও রাখবোনা। সব ছেলেরা একই। এরাই পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে, আনন্দ করার জন্য। আমি জানতামনা ; নিষ্ঠুরতার মাঝে এতো আনন্দ থাকে। জানতামনা মানুষকে কষ্ট দিতে আনন্দ হয়। পুরুষরা ভেবেছে, আমি মরে গেছি। আমি মরিনি। আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছে। নিশ্চয় তাঁর কোন উদ্দেশ্য আছে।
আল্লাহ চান, বাংলাদেশে কোন নিষ্ঠুরতা থাকবেনা। কোন হিংস্রতা থাকবেনা, কোন ভায়োলেন্স থাকবেনা। পৃথিবী হয়ে যাবে শান্ত, সুন্দর আর ভালোবাসার।
বাংলাদেশ থেকে সকল পুরুষকে সরায় দিতে আমি এটা করতে চাই। পুরুষ মানুষদের ভিতরেই আছে ভায়োলেন্সের বীজ। অন্যায় অবিচারের বীজ। শরীরে একের অধিকে ওয়াই ক্রোমোজোম থাকলে মানুষ হতো বড় অপরাধী। যদি আইনের ভয় না থাকে, তাদের ভিতরে জন্ম নেয় হিংস্র পশু।
ছেলেদের ভালোমানুষি হচ্ছে লোকদেখানো। তাদের হৃদয়ের ভিতর লুকানো আছে তাদের প্রকৃত রূপ। আজ যতো মেয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে সব মেয়েকে প্রশ্ন করলে একটাই উত্তর মিলবে। নৃশংতা আর হিংস্রতা।
আমি বাংলাদেশের আনাচেকানাচে ঘুরে এইসব মেয়ে জোগাড় করেছি। সশস্ত্র করেছি। সংগঠিত করেছি। শুধুমাত্র পুরুষমুক্ত সমাজ গড়তে।
প্রশ্ন হতে পারে, পৃথিবীতে নতুন মানুষ জন্মাবে কেমনে? আমরা মেয়েদের ছেচল্লিশটি ক্রোমোজোম আলাদা করবো। এককথায় ক্লোনিং করবো। পুরুষ মানুষ জন্ম দিতে পারেনা। একজন নারীই পারে শ্বাশত, সুন্দর দৃশ্যের রূপ দিতে।
পুরুষ মানুষ দেখলে এখন আমার অনুকম্পা হয়।
মেয়েরা, তোমরা তোমাদের কাজ শুরু করো। যন্ত্রণাহীন মৃত্যু যেনো তাদের হয়—- এতোটুকু অনুরোধ থাকলো।
সব মেয়ে একসাথে মাথা নাড়লো।
হঠাৎ ঘাম ছেড়ে ঘুম ভাঙ্গলো। এ আমি কোথায়? দেখি, বাসার সামনের মাঠে জোসনা দেখতে দেখতে ঘুমিয়েছিলাম কিন্তু আমি তে কবরস্থানের রাস্তাটাতে ভাষণ শুনছিলাম। স্বপ্ন আর বাস্তবের মুখোমুখি। কীভাবে পারবো এই দায় এড়াতে? আমি ছেলে হয়েই কী বদলায় দিতে পারবো এই হিংস্র সমাজকে? বিবেক জাগ্রত হয়ে বলছে, “ইমন রুখে দাঁড়াও! একজন সাহসী হয়ে সামনে দাঁড়ালে আরও একশো লোক দাঁড়াবে।”
২৭টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি
ঘূণেধরা পুরুষ শাষিত সমাজটাকে বদলাতে হবে নতুবা পুরুষের একপেষি নারী কেন্দ্রিক অত্যাচার নির্মমতা বন্ধ হবে না। চমৎকার লিখেছেন।জাগ্রত হউক বিবেক।
আরজু মুক্তা
জাগ্রত হোক বিবেক।
ধন্যবাদ ভাই
জিসান শা ইকরাম
গল্পের মাধ্যমে কঠিন এক বাস্তবতাকে সামনে নিয়ে এলে।
ইদানিং পত্রিকা খুললেই সুধু নারীদের উপর হিংস্রতার খবর। এভাবে চলতে দেয়া যায় না, দেয়া উচিৎ না।
শক্তিশালী গল্প।
শুভ কামনা।
আরজু মুক্তা
আপনার কমেন্ট মানেই অনুপ্রেরণা।
ধন্যবাদ আপনাকে।
হালিম নজরুল
চমৎকার পটভূমি, চমৎকার উপস্থাপন।
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ ভাই
সুপর্ণা ফাল্গুনী
এতো সুন্দর করে উপস্থাপন করলেন ধন্য আপু ধন্য। খুবই ভালো লেগেছে। স্বপ্ন আর বাস্তব যদিও আকাশ পাতাল তবুও এমনটা করা গেলে ভালো হতো। শুভ কামনা রইলো আপনার জন্য
আরজু মুক্তা
শুভকামনা আপনার জন্য।
ভালো থাকবেন।
সুপায়ন বড়ুয়া
বিবেক জাগ্রত হয়ে বলছে, “ইমন রুখে দাঁড়াও! একজন সাহসী হয়ে সামনে দাঁড়ালে আরও একশো লোক দাঁড়াবে।”
সুদিনের অপেক্ষায় রইলাম।
ভাল লাগলো।
শুভ কামনা। শুভ রাত্রি।
আরজু মুক্তা
ভালো থাকবেন।
লিখা ভালো লেগেছে জেনে ধন্য হলাম।
মোঃ মজিবর রহমান
হ্যা আমার মতে মানুষ যতনা দায়ী তার চেয়ে দায়ী আমাদের দেশের রজনৈতিক খমতায়, প্রসাশনের ক্ষমতায় খমতাশীনের ক্ষমিতায় যারা গধিনশইন।
যারা বিচার ব্যাবিস্থায় বৃদ্ধাংগলি দেক্ষাচ্ছে তারাই সকল নির্জাতনকারি।
এই ভাবে প্রতিশোধ নিতে পারলে ক্ষুব খুব ভালহিত। শোষিত সঠিক শাস্তি দিত। ১০০ তে ১০০।৷
আরজু মুক্তা
সহমত ভাই। কমেন্ট ভালো লেগেছে। রাজনীতিবিদরা বৃদ্ধাঙ্গুলি না দেখালে এই কাজ পুনরাবৃত্তি হতোনা।
মোঃ মজিবর রহমান
হ্যা আমাদের পুরুষ দের ম@ঝে নাই, মনুষত্য, নাই মানবতা, সব গেছে অবক্ষয়ে।
যদি থাক্ত তবে অঘোটন হত্না।
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ ভাই।
সঞ্জয় মালাকার
দিদি গল্পের মাধ্যমে কঠিন এক বাস্তবতাকে সামনে নিয়ে এলে।
চমৎকার লিখনী দিদি,আপনার জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা।
আরজু মুক্তা
সুন্দর কমেন্টের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ দাদা
নিতাই বাবু
গল্প দিয়ে বাংলাদেশের বর্তমান চিত্রপট তুলে ধরেছেন, খুব সুন্দরভাবে। আমার মনে হয় না যে এদেশ থেজে হিংস্রতা দূর হয়ে সবার মনে সত্যিকারের ভালোবাসা নতুন করে জন্ম নিবে! তবুও নিত্যদিনের আশা, সবার মনে উদয় হোক ভালোবাসা।
শুভকামনা থাকলো।
আরজু মুক্তা
মানুষ বাঁচে আশায় আর ভালোবাসায়।
ছাইরাছ হেলাল
বাস্তবতা স্বপ্ন থেকেই শুরু হোক।
কলঙ্ক মুক্ত সমাজ আমাদের সবার কাম্য।
আরজু মুক্তা
একদম। কলঙ্কমুক্ত সমাজ হোক।
রেহানা বীথি
স্বপ্নটা যদি সত্যি হতো!
খুব ভালো লিখেছেন।
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ, আপু
কামাল উদ্দিন
স্বপ্নটা একটু সংশোধন করেও দেখতে পারতেন। যেমন দুষ্ট পুরুষ শূন্য, শুধু দুষ্ট পুরুষই কেন দুষ্ট নারীদেরও শূন্য করলে মন্দ কি? তাছাড়া মৃতরা তো সব ভালোমন্দই নাকি জানতে পারে। পৃথিবী সকল দুষ্ট মুক্ত হোক বা থাকুক এই কামনা আমিও আপনার সাথে করছি……শুভ কামনা সব সময়।
আরজু মুক্তা
সাথে থাকলেই খুশি।
শুভকামনা আপনার জন্য।
কামাল উদ্দিন
আপনার জন্যও রইল অনেক অনেক শুভ কামনা আপু।
নিরব সাগর
আমরা এখন রুখে দাঁড়াতে ভুলে গেছি ।
আরজু মুক্তা
কথা মন্দ নয়।
ধন্যবাদ, ভাই।