ভোরে ব্রেক ফাস্টের টেবিলে যখন গাইড বললো ‘ আজ তোমাদেরকে দেশের সবচেয়ে পুরানো বৌদ্ধ মন্দিরে নিয়ে যাবো , অনেক টা পথ যেতে হবে দ্রুত নাস্তা শেষ করো ‘ – আমাদের বিস্ময়ের সীমা থাকলো না । খুসিতে আমি গাইডের দিকে বিয়ারের বোতল এগিয়ে দিলাম ‘ নাও লি ( আসলে উচ্চারন হবে রীইই ) ‘ , হেসে আমাদের টেবিলেই বসলো রিইই।
পিয়ং ইয়ং এর একমাত্র ফাইভ স্টার হোটেল হোটেল পিয়ং ইয়ং থেকে দীর্ঘ যাত্রার জন্য বেড় হলাম। কম্যুনিস্ট দেশে ধর্মীয় উপাসনালয়য় আছে কিনা এ প্রশ্ন রিইই কে করেছিলাম আগের দিন। রিইই বলেছিলেন আছে , আমি বিশ্বাস করিনি। আমার সাথে একই বিশ্বাসহীনতার কথা প্রকাশ করেছিলেন – পাকিস্থান , ইরান , ঘানা , ব্রাজিল , মিশর , জাপান , আর্জেন্টিনার ডেলিগেট গন। কি আর করা সরকারী মেহমানদের বিশ্বাস করাতেই হবে যে কম্যুনিস্ট দেশে উপাসনালয়য় আছে। তাই এই আয়োজন , যা শিডিউল বহির্ভূত ।
প্রায় ৩ ঘন্টা কার ড্রাইভের পরে পাহাড়ি সুন্দর রাস্তা । ৩ ঘন্টার পুরোটা সময়ে রাস্তার দু পাশের প্রকৃতিকে মুগ্ধ হয়ে দেখেছি। অবশেষে চলে আসলাম বৌদ্ধ মন্দিরের প্রধান গেইটে। গেইট ছাড়িয়েও প্রায় ১৫ মিনিট এর ড্রাইভ।
এই ধরনের স্বচ্ছ পানির লেক ঘিরে রেখেছে বৌদ্ধ মন্দির কে । এত সুন্দর আর পরিচ্ছন্ন যা কল্পনায়ও আসে না ।
মুল চত্বরে ওঠার সিঁড়ি বেয়ে উঠে প্রথমেই চোখ যায় প্রধান মন্দিরে যেখানে বুদ্ধার বড় বড় ৪ টা পিতলের মূর্তি । পুরোহিত মন্ত্র পড়ছেন জোরে জোরে । একটি মোম জ্বলছে । জুতা খুলে প্রায় সবাই প্রবেশ করলাম । আমি জালালাম সবকটি মোম । কিছুটা সম্মোহিতের মত তাকিয়ে থাকলাম ধ্যনমগ্ন গৌতম বুদ্ধর মূর্তির দিকে। ভারতে জন্ম নেয়া গৌতম বুদ্ধের প্রচলিত ধর্ম আজ কোথায় চলে এসেছে। দু- হাত জোড় করে মনে মনে প্রার্থনা করে সামনে রাখা দান বাক্সে ২০ ইউরো দিলাম । আমার দেশটির সুখ ও সমৃদ্ধির প্রার্থনা কোন কাজে আসেনি মনে হয়।
পাকিস্থান , ঘানা , জাপানের ডেলিগেটস
কোরিয়ার সবচেয়ে পুরাতন বৌদ্ধ মন্দির এটি। ১২০০ বছরের বেশী পুরাতন। কোরীয় যুদ্ধের সময়ে জাপানীরা এটি ধংশ করে ফেলে । যুদ্ধের পরে প্রেসিডেন্ট কিম ইল সুং এটী আবার পুনঃ নির্মাণ করেন । চত্বরে মোট পাঁচটি মন্দির । কাঠের অসাধারন কারুকাজ করা ।
মন্দিরগুলোর ছাদ বা চালা গুলো এমন দৃষ্টি নন্দন কাঠের কারুকাজ করা কাঠামোর উপরে।
অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম অনেকক্ষন , কত সময় ব্যয় হয়েছে প্রতিটা কাঠে এমন কারুকাজ করতে।
এই হচ্ছে বৌদ্ধ মন্দিরের প্রথম পুরোহিতের সমাধি । সাধারন , কিন্তু সুন্দর ।
মুল চত্বর ছারাও পুরো এলাকাটিকেই মন্দির এলাকা বলা হয় । অত্যন্ত পরিপাটি করে গুছানো। ঝকঝকে থাকে সব সময়।
উত্তর কোরিয়া জনগন ধার্মিক নন । তাঁরা কম্যুনিস্ট । হাতে সামান্য কিছু আছেন ধর্মে বিশ্বাস করেন। তাঁদের জন্য এবং অতীত ঐতিহ্য এভাবেই সংরক্ষন করা হয়েছে। একটি সময়ে এই দেশটির জনগন বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী ছিলেন।অতিহ্য কিভাবে সংরক্ষন করা হয় – এর মডেল হতে পারে উত্তর কোরিয়া ।
১৭টি মন্তব্য
আদিব আদ্নান
পড়তে ভালই লাগছিল , অসমাপ্ত কেন ?
সুন্দর ছবি ।
জিসান শা ইকরাম
বাংলা লায়নের নেট চলে গিয়েছিল হঠাৎ করে ।
রবি দিয়ে ছবি আপলোড করতে প্রচুর সময় লাগছিল । তাই এই অবস্থায় অসমাপ্ত ।
কয়েকটা ছবি আজ দিব।
ধন্যবাদ ।
ছাইরাছ হেলাল
দেখতে পাচ্ছি বৌদ্ধ মন্দিরটি অনেক সুন্দর ।
জিসান শা ইকরাম
আরো কয়েকটি ছবি দিচ্ছি । অনেক সুন্দর স্থান।
লীলাবতী
উত্তর কোরিয়া সম্পর্কে কিছুই জানিনা । সরকারী মেহমান মানে কি ? চমৎকার লিখেছেন্ ।
জিসান শা ইকরাম
আমি যতটা জানি শেয়ার করার আশা রাখি ।
তাঁদের গেস্ট হিসেবে গিয়েছিলাম দুই বার।
শিশির কনা
আপনি কম্যুনিস্ট নাকি ? লেখা এবং ছবি গুলো সুন্দর। আরো লিখুন ঐ দেশ সম্পর্কে ।
জিসান শা ইকরাম
না , কম্যুনিস্ট না ।
লিখবো আরো অনেক আশাকরি ।
বনলতা সেন
জানার বাকি কতকিছু , আরো জানতে চাই ঐ দেশ সম্পর্কে ।
জিসান শা ইকরাম
আমি যতটুকু জেনেছি জানাবো তা ।
"বাইরনিক শুভ্র"
ভ্রমণ কাহিনী কম কম লিখবেন । আপনার লেখা পড়ে যেতে ইচ্ছা করছে ।
জিসান শা ইকরাম
ওখানে যাওয়াটা খুব কঠিন , তবে আমার সাথে যাওয়া যাবে 🙂
যাযাবর
ধারনা ছিলনা কোন কম্যুনিস্ট দেশে ধর্মীয় উপাসনালয় থাকতে পারে। সাবলীল বর্ণনায় ভালো লেগেছে পোস্ট । আরো লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।
জিসান শা ইকরাম
হুম , আরো লেখার ইচ্ছে আছে ।
লজিক্যাল সুমধু
সুন্দর সব ছবি সুযোগ করে দিয়েছেন দাদা। দারুন ফটোব্লগ।
জিসান শা ইকরাম
ধন্যবাদ সুমধু ।
কামাল উদ্দিন
ছবিগুলো দেখতে পাচ্ছিনা কেন ভাই?