
বিয়ে হলো দিল্লিকা লাড্ডু জো ভি খায়েগা ও পস্তায়েগা অর জো ভি না খায়েগা ও ভি পস্তায়েগা। পেত্নীর সাথে ব্রেকআপ হবার পর ভেবেছিলাম আর বিয়েই করবো না। বাধ্য হলাম সবার চাপাচাপিতে। কাউকে নতুন করে ভালোলাগানোটা একটু কষ্টসাধ্য তাই মেয়ে দেখতে গেলাম না। যা থাকে কপালে!
বিয়ের কোন আমেজ নেই, তাই বেশ রাতে রুমে ঢুকলাম। ও মাই গড! সমবয়সী পেত্নী হলে তো এতক্ষনে গলা টিপে ধরতো। তার বদলে কান্নারত এক বালিকাকে পেলাম যে কিনা আমি দেরী করায় বসে কাঁদছে। নিজেকে আবারও খুব খারাপ ও অবিবেচক বলে মনে হলো। কি করি, চোখ মুছিয়ে দিতেই বালিকা আদুরে গলায় বললো, ‘আমার ভীষন ক্ষিদে ও ঘুম পেয়েছে।’
এতরাতে কি পাই! সামান্য বিস্কিট আর আমার খাবার জন্য যে দুধটা ছিলো তাই দিলাম।ঢকঢক করে খেয়ে খুশি হয়ে বালিকা ঘুমিয়ে পড়লো। বুঝলাম, এতোক্ষণ তাহলে ক্ষিদের জ্বালায় কাঁদছিলো।
পরিপূর্ণ এক পুরুষের জন্য নিদেন এক বালিকা, কি করে সম্ভব! প্রথম পূর্ণ চোখে তাকালাম তার দিকে। বয়সের চেয়ে একটু বেশিই লম্বা আর অতি সুন্দরী। অবোধ বালিকার আলোতে পুরো ঘর যেন জোসনামাখা।জোসনামাখা অতি সুন্দরীদের জীবন আলো ছড়ানোর আগে অঙ্কুরেই শেষ হয়, যা দুখখজনক।
ছেলের বয়স নয়, ক্যারিয়ার আসল। সরকারী কর্মকর্তা মানে জামাই হিসেবেও প্রথম শ্রেণী। সেখানে আমার মতো কালো, খটাস, বদরাগী একটা লোকও কোন ব্যাপার না। এই মেয়ের কপালে কি আছে কে জানে?
সংসার শুরুর কদিন শাশুরী সাথে ছিলেন। বেশ যত্ন করে মেয়ের ঘরদোর গুছিয়ে দিলেন। সরকারী বাসা, মানুষ আমরা দুজন। বয়স্ক কাজের দাদী মাঝে মাঝেই আসেন না, অসুস্থ থাকেন। শাশুড়ী যাবার সময় মেয়েকে জড়িয়ে খুব কাঁদলেন। আমাকে বললেন, বাবা মেয়েটা বাচ্চা, দেখে রেখ। আহা! কি দরদ!
অধিকাংশ সময়ই আমার অফিসের কাজের চাপে ফিরতে দেরী হয়। জানিনা কি হবে? বালিকা সারাসময় একা একা কি করবে? একটা উটকো যন্ত্রনা মাথায় নিয়ে চলতে হবে।
আমার একা একা সব কাজই করার অভ্যাস। বালিকা ঘুমে থাকতেই আমি ড্রাইভার দিয়ে নাস্তা আনিয়ে তার জন্য টেবিলে রেখে যাই। সে উঠে ফোন দেয়, বাবু আমার নাস্তা কোথায় রেখেছেন? আমি কোন এ্যাঙ্গেলে তার বাবু লাগি এটা তো বুঝলাম না। আবার আপনিও বলে। খেতে বসে নানা অভিযোগও থাকে। পরোটা ঠান্ডা হয়ে গেছে, অতি শক্ত, কি দিয়ে খাবে, প্রতিদিন একই জিনিস খেতে ভালো লাগে না এসব।
তথ্য অফিসের যে কোন জরুরী অবস্থাতেও আমাকে তার ফোন ধরতে হয়। প্রথম দিকে উঠে যেতাম এখন আর উঠি না। মিটিং চলুক, যাই চলুক তাকে ঠিকঠাক ডিরেকশান দেই। ওভেনে কিভাবে পরোটা, তরকারী গরম করে নেবে এসব। অফিসের সবাই মুখ টিপে হাসে।
-আমাদের বহু জ্বালিয়েছ বাছা এবার বোঝ বালিকা বধুর ঠেলা। এসময় পেত্নীটাকে ভীষন মিস করতে থাকি। কতো জ্বালিয়েছি তাকে।
সেদিনও মিটিং এ ফোন। বাবু, আলুভর্তায় হলুদ দিতে হয়? সবার সামনে কি বলি, দাঁত চিবিয়ে বললাম হ্যাঁ দিতে হয় তবে পরিমানে কম।
আজ বালিকা রান্না করেছে তাই বিকেল থেকে ফোন দিয়ে বাসায় ডাকছে। মনে হলো সে ভীষন এক্সাইটেড। আমাকে একদম উঠতেও দিচ্ছে না। রাজ্যজয়ের মতো খেতে দিলো হলুদ আলুভর্তা আর ডিমভাজি দিয়ে। ভর্তায় এতো ঝাল জীবন যায় যায়, মরিচ বোধহয় আর ছিলো না।
খাবারের ব্যাপারে কম্প্রোমাইজ করার মানুষ অন্তত: আমি না তাই প্রচন্ড রেগে গেলাম। মনের সব ক্ষোভ ঝেডে তাকে বকাঝকা করলাম। শুরু করে দিলো কান্না। তার কান্না শুরু হলে আর থামেনা। তখন তার সাথে আমার আহ্লাদী করতেও ইচ্ছে হয় না। কি করি! তাকে থামাতে বাইরে থেকে খাবার আনিয়ে খেতে ডাকছি কিন্তু সে চোখ- মুখ ফুলিয়ে একাকার করে বসে আছে। কিছুতেই খেতে আসবে না, একনাগারে কেঁদেই চলেছে। আল্লাহ কি বিপদ দিলে?
অফিসে যাবার আগে শার্ট খুঁজ পাচ্ছিলাম না। গেল কৈ? একটা শার্টও নাই, অগত্য কালকেরটাই পরতে হবে। বালিকা হাসিমুখে আমার শার্ট নিয়ে হাজির। সব জমা হয়ে ছিলো তাই বের করে ধুয়ে রেখেছে। ভাবলাম ম্যাচিউরিটি এসেছে এবার বোধহয় বৌ ডাকা যাবে।খুশিমনে শার্ট খুলে আমি প্রায় অজ্ঞান হবার অবস্থা।
এককালার সব শার্টেই বিভিন্ন রঙ। ওয়াশিং মেশিনে লাল, নীল, হলুদ, সবুজসহ রঙ ওঠে এমন সব কাপড় একসাথেই দিয়েছিলো তার ফলেই এই হাল। রাগে মুখে ফেনা উঠে গেলো। বালিকা এক দৌড়ে পাশের রুমের দরজা লাগিয়ে দিলো।
রাতে বাসায় ফিরে সাড়া শব্দ নেই, বুকের ভেতর ছ্যাত করে উঠলো। চিরকুট পরে আছে- আপনার সব শার্ট নষ্ট করার জন্য আমি দুখ্খিত। মাকে বলেছি আমার মাটির ব্যাংকটা পাঠিয়ে দিতে। আমি ওটাতে যে টাকা জমিয়েছি তা দিয়ে আপনার শার্ট কিনে দিবো। না হেসে পারলাম না, সংসার করার কি আপ্রাণ প্রয়াস!
বালিকার ব্যাংক ভেঙ্গে ৯৭৫ টাকা পাওয়া গেছে। তার ভীষন মন খারাপ, সাথে গুরুতর সন্দেহ নিশ্চয়ই ব্যাংকের মুখ ঘসে ছোট ভাই টাকা বের করে নিয়েছে। ওকে ছাড়বে না, হাঁটছে; পায়চারী করছে। বালিকার রাগ থামাতে বললাম চলো বাইরে বেডিয়ে আসি। আর তোমাকে সংসার করতে হবে না। বয়স হলে এমনিই সব শিখে যাবে। তুমি পড়াশুনা করবে তারপর আমার মতো অবস্খান যেদিন তৈরি করবে। সেদিন তোমার বেতনের সব টাকায় আমি শার্ট কিনবো, ওকে।
লাইব্রেরি থেকে বালিকার জন্য প্রয়োজনীয় সকল বই- খাতাপত্র কিনে নিলাম। তার টুকটাক কেনাকাটা সেরে রিকশায় ফিরছি। রিক্সায় বসে বালিকা হাত নেডে নেডে, কলকলিয়ে গল্প বলেই চলেছে। আমার প্রতি তার ভয় কাটতে শুরু করেছে বোধহয়!
আকাশে ভরা পূর্নিমা।চাঁদের সমস্ত আলো যেন বালিকার শরীরে চিকচিক করে ধরা দিয়েছে। আমার মাথা পুরুষালী চেতনায় ঝিমঝিমিয়ে উঠলো। আলতো কাছে টেনে আমি তার ঠোঁটে হারিয়ে গেলাম। আর সেও প্রথম আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
(আমার এক প্রিয় মানুষ বালিকা ঝামেলায় বিপদে, তাঁর অনুরোধেই লিখতে চেষ্টা করলাম। করোনায় যতো বালিকা বউ হয়েছে সবার জন্য শুভকামনা)
ছবি- নেট থেকে
২০টি মন্তব্য
বোরহানুল ইসলাম লিটন
সুন্দর লেখা
অপ্রাপ্ত বয়সে চঞ্চলা মেয়ে বধু
সংসারের খুটিনাটিতে তাই ছড়িয়ে পড়েছে আবেশের মধু।
মুগ্ধতায় শুভ কামনা রেখে গেলাম চিরন্তন।
রোকসানা খন্দকার রুকু
এই আকালে প্রথম মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
ভালো থাকবেন সবসময়। শুভ কামনা
সুপর্ণা ফাল্গুনী
বালিকারা বধূ হলে যা হয় তা খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন। খুব ভালো লাগলো গল্পটি আপু। সব বালিকা বধূ দের জন্য শুভকামনা রইলো সাথে যারা বালিকা বধূ দের এমনসব কান্ড সহ্য করে সংসারটা বাঁচিয়ে রাখে তাদের জন্য ও অফুরন্ত ভালোবাসা। ভালো থাকুন নিরাপদে থাকুন
রোকসানা খন্দকার রুকু
আমাকে লিখতে বলেছে। চেষ্টা করেছি মাত্র। করোনায় যতো বাল্যবিয়ে হয়েছে রেকর্ড করলো।
ধন্যবাদ ও শুভকামনা দিদিভাই।
আলমগীর সরকার লিটন
বর্তমান সমাজকে নিয়ে ভাল লেখেছেন রুকু আপু অনেক শুভেচ্ছা রইল
রোকসানা খন্দকার রুকু
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ লিটন ভাই।
হালিমা আক্তার
খুব সুন্দর। কম বয়সী মেয়ে বিয়ে করলে যা হয় আরকি। শুভ কামনা অবিরাম।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আপনার জন্যও শুভকামনা। ভালো থাকবেন।
আরজু মুক্তা
বালিকা কেনো বধু? এ্যাকশন… ড্রামা।
হা হা। আসলেই করোনাকালীন কতো যে বিয়ে।
ভালো লাগলো।
শুভ কামনা
রোকসানা খন্দকার রুকু
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।আর আশেপাশে সাবধানে বাল্যবিয়ে নয়।
জিসান শা ইকরাম
চমৎকার এবং চমৎকার।
আপনার লেখা গল্প এক টানে পড়ে ফেলা যায়। প্রথম হতে শেষ পর্যন্ত টান টান আগ্রহ ধরে রাখার এমন কৌশল খুব কম লেখকেরই থাকে।
হলুদ দিয়ে আলু ভর্তা! হাসতে হাসতে শেষ।
বালিকা বধু থাকার বিরম্বনা এমনই।
শুভ কামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আপনার ভালোলাগলেই তো লেখার সাহস হয়। কিন্তু এতো দেরী দেরী উৎসাহ দিতে আসেন মন খারাপ হয়। অনেক অনেক ধন্যবাদ ।
ছাইরাছ হেলাল
করোনায় বালিকাকে সাবধান! করে দিবেন, যা যে ভাবে পথে ঘাটে শুরু হয়েছে!!
রোকসানা খন্দকার রুকু
হা হা হা বালিকার রক্ষাকর্তা যদি রাস্তা ঘাট না বোঝে তাহলে আর কি করার।
কৃতজ্ঞতা ও শুভকামনা ভাইয়া।
রেজওয়ানা কবির
পড়েছি আগে কমেন্ট করলাম দেরীতে, প্রথমেই বলি,
বালিকা তোমার প্রেমের পদ্ম দিও না এমন জনকে গানটি মাথায় ঘুরঘুর করছে। আর বালিকা হয় যখন বধু তখন তো কথাই নেই, এ যেন বধুয়া আমার চোখে জল এনেছে হায় বিনা কারনে। হায়রে! বালিকা হয় যখন বধু তার তখন হয় কত দুরাবস্থা। টপিকটা ভালো ছিল। ভাল লাগল, শুভকামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
বাপরে! অসাধারণ কমেন্ট। ধন্যবাদ ও ভালোবাসা রইলো।
নার্গিস রশিদ
সত্যি খুব দুঃখ লাগে মেয়েদের পরিণতি দেখে। করোনা কালে কত বাবা/ মা যে মেয়ে বিদায় করে নিজেদের দায়িত্ব শেষ করেছে। তার যে কি পরিণতি হতে পারে তা কখনো কি ভাবে?
রোকসানা খন্দকার রুকু
কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা নেবেন।
নার্গিস রশিদ
সত্যি খুব দুঃখ লাগে মেয়েদের পরিণতি দেখে। করোনা কালে কত বাবা/ মা যে মেয়ে বিদায় করে নিজেদের দায়িত্ব শেষ করেছে। তার যে কি পরিণতি হতে পারে তা কখনো কি ভাবে? লেখার প্রকাশ ভঙ্গি অসম্ভব সুন্দর।
রোকসানা খন্দকার রুকু
অনেক অনেক ধন্যবাদ ম্যাম। ভালো থাকুন, দোয়া রাখুন সবসময়।