হয়তো আমরা হারতামই… হয়তো বলছি এই কারনে যে, ভারত টিম কোন যা তা টিম নয়। তাদের সাথে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলাটা অনেক উপভোগ্য হতে পারতো বাংলাদেশ টিমের জন্য। হয়তো ভারত জিতেই যেতো অল্প কিছু রান কম হতো তাদের। হয়তো তিন চার না হোক নিদেন এক রানের জন্য হলেও ভারত টিম হয়তো নিশ্চিত জিতেই যেতো। এটা অসম্ভব কোন ব্যাপারই ছিলো না। কারন তারা বাংলাদেশ টিমের থেকে অনেক অভিজ্ঞ দল।
আবার
হয়তো… বাংলাদেশ টিম এক রানের ব্যাবধানে হলেও জিতে যেতো। কারন, এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ টিম তাদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছে আগের খেলাগুলোতে। যেখানে এই বিশ্বকাপে গতকাল এর আগ পর্যন্ত কেবলমাত্র বাংলাদেশের ঝুলিতেই ছিল দুই দুইটা সেঞ্চুরির রেকর্ড। তাই তাদেরও গোনার খাতায় তুলে নিয়েছে বিশ্ব ক্রিকেট প্রেমীরা।
এটাই কি আইসিসি (ওরফে ইন্ডিয়ান চিটার্স কাউন্সিল) এর ভয়ের কারন ছিলো গতকালের ওই নির্লজ্জ পক্ষপাতিত্ত্ব আর বেহায়াপনা করে যে কোন মূল্যেই ভারতকে জিতিয়ে দেবার?!
খেলাটাকে খেলা না রেখে জুয়াচুরির আসর বানিয়ে ফেলার?
নিজেদের সবটুকু স্বামর্থ দিয়ে বাংলাদেশ টিম যখন লড়ে যাচ্ছিলো তখন দুই দুই বার তাদের সাথে প্রতারনা করে তাদের মনোবলকে খান খান করে দিয়েও শান্তি হয়নি আইসিসির। খেলা এখনো অনেক বাকি, ‘ক্ষোভে রাগে বাংলাদেশ টিম আরো ভালো খেলে যদি জিতে যায়’ এই ভয়েই কি খেলা চলাকালিন সময়েই স্কোর বোর্ডে বার বার ভারতিয় ‘জিতেঙ্গে ভাই জিতেঙ্গে’ টাইপের চিয়ার বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে আর সেমি ফাইনালে ভারতের সাথে এর পর কোন দেশ খেলবে এমন প্রশ্ন করে ভারতিয় খেলোয়াড়দের চাঙ্গা করছিলো নির্লজ্জভাবে?
হ্যা, বাংলাদেশ টিম মাঝখেলাতেই খেলা ছেড়ে দিয়েছিলো। বাজে রকম পারফর্মেন্স করেছে। তার জন্য কি তাদের দোষ দেওয়া যায়? আইসিসি/আম্পায়ারের নির্লজ্জ পক্ষপাতিত্ব দেখে তারা বুঝেই গিয়েছিলো খেলার পরিনাম কি হতে যাচ্ছে। সব দেখে শুনেই হয়তো তাই ‘অকারন পরিশ্রম করে কাজ কি?’ টাইপের মনোভাবে চলে গিয়েছিলো। মাঝপথেই হাল ছেড়ে দিয়েছিলো ‘এই খেলার কোনই অর্থ হয়না’ ভেবে।
যদি খেলাটা সত্যিকারের খেলাই থাকতো, যদি বাংলাদেশ টিম খারাপ খেলে হেরেও যেতো, তবুও আমরা ভারত টিমকে অভিনন্দিত করতে পারতাম ভালো খেলার জন্য আর বাংলাদেশ টিমকে সান্তনা দিতাম, ‘ব্যাপার না, এবার হয় নাই, পরের বার হবে। বেটার লাক নেক্সট টাইম’ বলে।
দূর্ভাগ্যক্রমে এসব কিছুই বলতে পারলাম না। এক রাশ বিবমিশা নিয়ে দেখে গেলাম একটি দলের জন্য আইসিসি নামক এক প্রতিষ্ঠানের নির্লজ্জ পক্ষপাতিত্ব আর প্রতারনা ! দেখলাম, ভদ্রলোকের খেলাটাকে কী করে তারা ইতরের খেলায় পরিনত করলো। পুরো বিশ্বও দেখেছে কিন্তু গতকাল কি হয়েছে। ওরা কি ভেবেছে বিশ্ব ক্রিকেট প্রেমীরা ১৯শে মার্চ ২০১৫ তারিখটাকে ভুলে যাবে একেবারের জন্য?!
ইতিহাসের পাতায় ক্রিকেট মোড়লরা অমোচনিয় কালি দিয়ে একটি কালো অধ্যায় লিখে ফেলেছে ইতঃমধ্যেই যা খুব সহজেই মুছে ফেলা যাবে না।
না, ভারতের খেলোয়াড়দের প্রতি কোনই ক্ষোভ বা অশ্রদ্ধা -রাগ নেই। তারা তাদের কাজ ঠিকমতই করে গেছেন নির্দেশানুয়ায়ি। তীব্র ঘৃনা কেবল ঐ আইসিসি নামক এক একচক্ষু দানবের জন্য।
——————-
অনেক খারাপ লাগার মধ্যেও ভালো লাগছে দেখে যে, এখনো ক্রিকেট অঙ্গনে কিছু মানুষ আছেন যারা এখনো দৃষ্টি প্রতিবন্ধি হয়ে যাননি। বিবেক বর্জিত হয়ে মিথ্যেকে সত্য বলে সায় দেন নাই। সত্যকে সত্য বলে স্বিকার করে নেবার মতন সৎ সাহস রাখেন। এবং আশা করছি, এইরকম আরো অনেকেই আছেন, যাদের জন্য ক্রিকেট খেলাটাকে ”মোড়লরা” একজোট হয়েও পুরোপুরি নোংরা করে ফেলতে পারবেনা। জয় হবে ক্রিকেটের, জয় হবে সাধুতার। খেলার সৌন্দর্য্যের।
——————
গতকালকের খেলার পরে কিছু ক্রিকেট বোদ্ধাদের মন্তব্য এরকম ছিলো –
”অবিশ্বাস্য! এক ম্যাচে এরকম দুটি সিদ্ধান্ত একটা দলকে ছিটকে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।”
– নাসের হুসেইন
”এটা কোনোভাবেই নো বল ছিল না। কোমরের নিচে ছিল বল। এটা ভয়ংকর সিদ্ধান্ত। ম্যাচের ভাগ্য ঠিক করে দিল।”
– শেন ওয়ার্ন
”আম্পায়ারদের কিছু ভুল সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশ হেরেছে। বাংলাদেশ-ভারত যদি ফের খেলা হয়, তাহলে বাংলাদেশ জিতবে।”
– রিকি পন্টিং
”গৌল্ডের সিদ্ধান্তটা একদমই বাজে। বলটা নিশ্চিতভাবেই কোমরের উপরে ছিল না। রোহিত সৌভাগ্যক্রমে আরেকটা জীবন পেল। এইটাই হয়তো আরও ২০ রান বেশি তুলে দেবে ভারতকে।”
– ভিভিএস লক্ষ্মণ
”খেলার ওরকম পর্যায়ে আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্ত একটি দলের
মানসিকতা ভেঙ্গে দেয়।”
– সৌরভ গাঙ্গুলি
(সাউথ আফ্রিকান ক্রিকেটার AB De Villiers’ও প্রতিবাদ করে টুইট করেছিলেন)
————–
বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ হয়তো ক্ষুদ্র একটা দেশ কিন্তু এই ক্ষুদ্র দেশের মানুষগুলো অনেক আবেগি হলেও তাদের মন সমুদ্রের সমান বিশাল। তারা শ্রদ্ধাভাজনদের শ্রদ্ধা করতে জানে। সত্যবাদিদের শাবাশি দিতেও ভোলে না।
তাই, তাদের পক্ষ থেকে তুচ্ছ একজন আমি ধন্যবাদ জানাই তাঁদেরকে, যারা সত্য বলার মতন সাহস দেখিয়েছেন। ধন্যবাদ- কৃতজ্ঞতা সত্য স্বিকারের জন্য।
১৮টি মন্তব্য
কৃন্তনিকা
ভালো বলেছেন।
খেলায় হারলেও মন জিতেছে আমাদের বাঘেরা। ভারতীয়দের জয় তাদের জন্য বরং লজ্জাই এনেছে…
ব্লগার সজীব
আমরা হয়ত জিততে পারতাম না,হয়ত পারতাম-তবে এই কারচুপি ক্রিকেটকে কলঙ্কিত করেছে।বিশ্ব দেখেছে কিভাবে ভারতকে icc ফেবার করেছে।
সঞ্জয় কুমার
icc বয়কট করা উচিত
সঞ্জয় কুমার
অনেকদিন পর লিখলেন দিদি ।ভাল থাকবেন
রিমি রুম্মান
সবকিছু সুন্দরভাবে শেষ হতে পারতো । হল না। বিশ্ব দেখেছে আমরা হারিনি। বেলা শেষে যা কিছু প্রাপ্তি, তা আমাদেরই …
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
এবার অষ্ট্রেলিয়া কোথায় যাবে দেখবো এবার -{@
স্বপ্ন
ক্রিকেট লিজেন্ডদের মন্তব্য এবং বিশ্ব বিবেক জানে যে আমাদের অন্যায় ভাবে পরাজিত করা হয়েছে।
জিসান শা ইকরাম
ক্রিকেট বিশ্বকে আমরা কাঁপিয়ে দিয়েছি
সবাই দেখেছে কি করা হয়েছে আমাদের সাথে
ভারতের এই জয় কলঙ্কিত হয়ে থাকবে।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
বাংলাদেশ হারেনি, বাংলাদেশ জিতেছে। সারাবিশ্ব আজ টাইগারদের হয়ে কথা বলছে। যাদের জোর করে জিতিয়ে দেয়া হয়েছে বিশ্ব দরবারে আজ তাদের মাথা নীচু।
জোর করে হারিয়ে দিলেও নৈতিক প্রাপ্তিটা কিন্তু আমাদেরই রয়ে গেলো।
খেয়ালী মেয়ে
ভারত ক্রিকেটে কলংঙ্কজনক অধ্যায়ের স্থাপন করেছে। ” – জন রাইট , সাবেক কিউই ক্যাপ্টেন
এটা নাটকীয় ম্যাচ, এই জয়ের কোন মূল্যই নেই।” – ম্যাথু হেইডেন , অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ওপেনার
আমায় যদি কেউ বলে বাংলাদেশ ম্যাচে লড়াই করেছে কি না..?? আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশ ভারত তথা সারাবিশ্বকে ক্রিকেট খেলাটা কি তা বুঝিয়ে দিয়ে গেল। আমার মনে হয় ম্যাচটিতে যেকোন তৃতীয় পক্ষের হাত রয়েছে — ব্রায়ন চার্লস লারা, সাবেক ওয়েস্ট ইন্ডিজ লিজেন্ড।
নুসরাত মৌরিন
হেরে গিয়েও আমরাই জিতেছি।
আর যারা সত্যের পক্ষে বলেছেন তাদের অবশ্যই ধন্যবাদ।
বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে কাল দেশে ফিরবে।আর ইন্ডিয়ানরা যদি কাপ জিতেও যায় তবু ওদের চুরির কলংক ঘুচবে না।
লীলাবতী
আমরাই আসলে জিতেছি।ফলাফল যাই হোকনা কেন।
আজিজুল ইসলাম
আসলেই, ক্রিকেটই পরাজিত হয়েছে ঐ ম্যাচে। আমাদের উপর অন্যায় করা হয়েছে, জোর করে আমাদেরকে হারিয়ে দেয়া হয়েছে, সবই সত্য, অতি নির্মম সত্য। না হলে আমরা অবশ্যই জিততাম বলে কেন যেন আমার মনে হচ্ছে। আইসিসি-র ফিফটি-ফিফটি তত্ব অধিকাংশ সময় বড় দলগুলির পক্ষেই যেতে দেখা গেছে, বিশেষ করে হাই-প্রোফাইল ম্যাচগুলোতে। আমাদের বেলাতেও সেটাই হয়েছে।
আমার সাথে অনেকে একমত হবেননা, তবুও বলতে হয়, এভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানো আমাদের ততটা উচিৎ হয়নি। বিশেষত: আইসিসি-প্রেসিডেন্ট মহোদয়ের। সেদিনও মনে হয়েছে, এটার সমালোচনা হবে। হলোও তাই। বিশ্বে আমাদের ভাবমূর্তি কিছুটা হলেও কমেছে।
ছাইরাছ হেলাল
আমরা হারিনি।
মোঃ মজিবর রহমান
হেরেছে বিশ্ব ক্রিকেট সংস্থা।
তাদের নিতীর কাছে।
মেহেরী তাজ
একটা গ্রহনযোগ্য খেলাই তো চেয়েছিলাম আর বেশি কিছু কি?
আমরা হেরে গিয়ে জিতেছি…….
স্বপ্ন নীলা
আমরা হারি নাই —
শুন্য শুন্যালয়
ক্রিকেট বোদ্ধাদের কমেন্টস গুলোর জন্য অনেক ধন্যবাদ তাদের। কিন্তু এ ধরনের চোখের আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া পক্ষপাতিত্বের বিচার হওয়া উচিত। নইলে এসব খেলার মানে কি।