খুবই সহজ-সংক্ষেপে দু’টি অতীব সাধারণ ঘটনা বলার চেষ্টা হবে,মহা-ব্যস্ত পাঠকের অতি মূল্যবান সময়-ক্ষেপণ না করে ধৈর্যচ্যুতির দায়ভার এড়িয়ে যাচ্ছি।
ঘটনা………১
সেবার হঠাৎ করে প্রস্তাব এলো বিশেষ কর্মের জন্য দূরগামী গন্তব্যের সাথী হতে হবে। ঘুরুক্কু মন (ঘোরতে ভাল্লাগে) বিনা পায়ে-ই এক বাক্যে রাজি, দেখি না কী কী হয়!
যেতে যেতে যেতে ক্লান্তিহীন, প্রায় জন-মানবহীন এক ছাড়া-ভিটেয় স্থাণু হলাম, সামান্য গাছ-গাছালি এলোমেলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে লক্ষ্মীছাড়া ভাব নিয়ে। সামান্য খোঁজাখুঁজির পর দারুণ পুষ্পিত এক শিমুল গাছের নীচে বসন্ত দাঁড়িয়ে পড়ল। উরু উরু ভাব নিয়ে,সামান্য দূরত্বে অবস্থান নিয়ে কাণ্ডকারখানা লক্ষ্য করছি। গাছের গোঁড়ায় বসে পড়ল ধপাস করে, প্রথমে ফোঁস-ফোঁস এরপর ফচফচ করে করে কান্না শুরু হলো, কান্না সুর তাল লয় ভঙ্গ করে ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতি লাভ করতে থাকল, শেষ-মেষ সেই শিমুল গাছ জড়িয়ে বিপুল কান্নাজজ্ঞ শুরু হলো। বিনা বিপত্তি বিনা উস্কানিতেই এক সময় কান্না থিতিয়ে এলো। ইতোমধ্যে সমূহ বিপদাশঙ্কায় নিকটবর্তী ঝোপাশ্রয় থেকে সব কিছু লক্ষ্য রেখেছি। পানি-পুনি মুখে মেখে বাতাসি ভাব ফিরে এলে কাছে এসে শানে-নজুল জানতে চাইলাম মিনমিনিয়ে,
কোন এক কালে এই দিকশূন্যপুর প্রান্তরে এক প্রবল বসন্ত প্রেমিকের ঘাড় মটকে তাজা রক্ত পান ও মাথা ভেঙ্গে ঘিলু ভক্ষণ করেছিলন, কথানুযায়ী কাম-কাইজ না করায়।
সেই স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই বেঘোর কান্নাকাটির পর্ব অনুষ্ঠিত হলো।
ঘটনা……২
একবার এক ফুলেল বাগানে ঘোরতে ঘোরতে আচমকা বসন্ত প্রস্তাব দিল……“চলো দু’জনে মিলে গলাগলি জড়াজড়ি করে কান্দি”
কাঁদা-কাঁটা কান্নাকাটি আমরা করি হরহামেশা, সত্যি/মিথ্যে ভাবে, প্রকাশ্যে/আড়ালে কারণে/অকারণে ভান-ভণিতা করে, আবার সত্যি সত্যিই-ও। বুঝতে পারছিলাম না, এই কান্না পর্বটি কী প্রকারের, আনন্দাশ্রু না বিষাদাশ্রু না কুম্ভীরাশ্রু! সেহেতু নিমরাজি বা গররাজি কোনটি-ই না হয়ে সরাসরি অপারগতা জানিয়ে দিলাম। তাতে এই মুহূর্তে কোন সমস্যার উদ্ভব হয়নি। কান্না তাঁর চাই-ই এবং এখুনি। পূর্ব প্রস্তুতি হয়ত নেয়াই ছিল, স্বর খুব-ই উচুগ্রামে বাঁধা ছিল। আর যায় কোথায়! মরা কান্না শুরু হয়ে গেল রম্ভোরু মেলে, এরাবিয়ান স্টাইলে! বুক থাবড়ে, মুখ চাপড়ে/খামচে (সত্যি সত্যি ভান না কোন)। লুকানোর কোন জায়গা না পেয়ে পায়ে শিকড় গজিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম শেষ অব্দি।
এ এক আশ্চর্য শিল্পিত শিল্প।
অফুরন্ত শব্দ গর্জনের মিহি বুদবুদ তুলে বসন্তের ঋতু-রক্তিম রূপ তরঙ্গের মুখমণ্ডল কাঁপা কাঁপা বিষাদ ভণ্ডুলে ভরে গেল।
দুর্বোধ্য দুর্ভেদ্য দহন ইন্ধনে ফুলে ফুলে উঠল। জ্বল-জ্বলে পোড়া জলে বাতাস ভারী হয়ে এলো।
কান্না-লহরি থিতিয়ে/মিইয়ে এলে উত্তেজনায় উত্তেজিত হয়ে হাঁটু গেড়ে ঘন হয়ে বসে পরিপূর্ণ দু’হাত ধরে চোখ-জিজ্ঞাসায় জানতে চাইলাম????????
আমার সাথে বসন্তের জনম-আড়ি!!
১৮টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
বসন্ত আসার আগেই আপনাকে কাফফারা দিতে অবে নয়তো বিপদ আছেনে।চমৎকার বর্ননা।ভাল লাগল।
ছাইরাছ হেলাল
খুবই ভয়ে আছি ভাই, দুয়া-ও চাই।
সাবিনা ইয়াসমিন
প্রথমেই বলছি একান্ত অনুভুতি এভাবে গল্প বলে চালিয়ে দেয়া ঠিক নয়। বলা যায়না ঘিলু ভক্ষণকারিনী এই লেখা পড়ে এবার কি ভক্ষণ করতে চড়াও হবেন !
আপনি তার কান্না সইতে পারেন নি তা বোঝা যাচ্ছে, যেভাবে বর্ণনা দিলেন তাতে ফোঁস-ফোঁস ফচফচ কান্না শিল্পে পরিনত হয়ে গেছে। অবশ্য আপনার বিশেষ দোষ নেই, এমন দৃশ্য সামনে পেলে শিল্পের কদর কে-ই-বা না করে !
( এটা প্রথম পর্বের কমেন্ট বাকিটা পরে লিখবো )
ছাইরাছ হেলাল
দেখুন গপ্পোই, তাকে অনুভুতি! তা আবার একান্ত! এতটা অনাচার প্রকৃতি
সইবে না বলেই মনে করি!
ভক্ষকেরা ভক্ষক, তারা তাদের কাজ চালুই রাখে, অন্যেরা পালিয়ে/টালিয়া জীবন রক্ষা করে।
তার কান্না সে কাঁদুক, কারো সহা না সাহায় কিছুই আসে যায় না, গন-পিটুনি থেকে রক্ষা পেতে
লম্বা দেয়া ছাড়া উপায় থাকে না।
আর কতটা অপেক্ষা করলে একযুগ হয় কে জানে!
সাবিনা ইয়াসমিন
আরব্য উপন্যাস দুই-চারটা পড়েছি, ছোটবেলায় আলিফ লায়লা টিভি সিরিয়ালটাও মন দিয়েই দেখতাম। চুল খামছে, আঙ্গুল কামড়েও মনে করতে পারছি না এরাবিয়ান স্টাইলে এমন করে কাউকে কাদতে দেখেছি কি না !
আপনার ঘুরতে যাওয়া সঙ্গী নানা ভাবে কাঁদতে পারে তা খুব ভালো করেই বুঝতে পারলাম। বেশি বেশি প্রশ্ন করলে আড়িতো জনমের মতোই হবে, এতো জানেন আর এটা জানেন না !
আপনি অপেক্ষা করে থাকবেন জানলে আমি একযুগ পরেই আসতাম। ভবিষ্যত গল্প-পড়ুয়ারা একটা নতুন চন্ডিদাশের গল্প পড়ার সুখ পেতো।
এক মহারাজ তার দুই পর্বের গল্প লিখেছিলো। এক হবু লেখক গল্প পড়িয়া অর্ধেক মন্তব্য দিয়ে কোথায় কোন দিবসে আটকে গেলো, বাকি মন্তব্য পাওয়ার অপেক্ষায় সেই মহারাজের একযুগ পার হয়ে গেলো ! ( গল্পটা এমন হতো )
উপন্যাস দারুন হয়েছে, পুরো বসন্ত জুড়ে এমন আরো আরো পড়তে চাই। বুকিং এখনই দিয়ে রাখলাম মহারাজ।
খুব ভালো থাকুন, ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা।
ছাইরাছ হেলাল
আপনার পড়া উপন্যাস-ই শেষ কথা নয়, অবশ্য বড় বেলার লায়লা-আলিফ হলে
আপনি কিছু না কিছু খুঁজে পেলেও পেতে পারতেন!
অনেক কিছুই নূতন নূতন করে শিখতে হবে দেখছি!
পুরোটা সময় জুড়ে চলাতে পারব কী না বুঝতে পারছি না, আপাতত চালু রইল।
লিখিয়েরা সব কিছুতেই গল্প খুঁজে পায়, সবাই তা পায় না, পারেও না।
আপনি অবশ্যই ভাল থাকবেন বাসন্তী আনুকূল্য নিয়ে ।
জিসান শা ইকরাম
আপনার বসন্ত দেখি কান্নাকাটি ছাড়া কিছুই পারেনা, এটি কেমন বসন্ত?
বসন্ত হবে আনন্দ উচ্ছ্বাসে পরিপুর্ণ,
সুনামগঞ্জ শিমুল বাগানে তার সাথে আমার দেখা হয়েছিলো, যাবেন নাকি?
ছাইরাছ হেলাল
এ বসন্ত অনেক কিছুই জানে কান্না তার সামান্য অংশ মাত্র,
আর এটি তার প্রকৃত কান্না না ভড়ং বা রং-ঢং তা একটু খেয়াল দিলেই বুঝতে পারা যাবে।
আপনি ইতোমধ্যেই দেখা -সাক্ষাৎ সেরে ফেলেছেন!! তা হলে আর সেথায় গিয়ে কী-ই-বা করার আছে!!
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
সুনামগঞ্জ শিমুল বাগানে তার সাথে আমার দেখা হয়েছিলো, যাবেন নাকি? জিসান ভাইজানের মন্তব্যে কেমন জানি বসন্ত পোড়ার গন্ধ পাচ্ছি।ঘটনা কি জাতি জানতে চায়।
ছাইরাছ হেলাল
আমিও কেমুন জানি ঘ্রাণ/ট্রাণ পাচ্ছি, আপনি ঠিকই ধরেছেন!
তৌহিদ
ঘটনা কি? কেমন যেন অন্যরকম অনুভুতির প্রকাশ। বসন্ত নিয়ে আসুক হাসিমুখ।
ছাইরাছ হেলাল
স্মৃতি রোমন্থন চালু আছে।
ধন্যবাদ।
রিতু জাহান
তাই না! এভাবে বুঝি মান ভাঙা ভাঙি হয়?
যাক, তবে সে কান্নাকাটির অবসান হলো। কুম্ভঅশ্রু!!
কতো কতো যে সে অশ্রু বেয়ে গেলো! যাক, গুরুজী কিছু শব্দ পাইলাম। সাহস দিলে লিখতে পারি।
ছাইরাছ হেলাল
মান আর ভাঙ্গলো কৈ!
জনম আড়ি চালু হয়ে ছিল।
এটি ঠিক-ই বলেছেন, কত যে অশ্রু কত ভাবে গড়ায়,
তার হিসাব কে কবে রেখেছে!
আপনি লিখতে শুরু করে দিন, সেই যে ‘আমরা তো আমরাই’ এই নিয়মে।
রিতু জাহান
ওকে, তবে তাই হোক। আমরা আমরাই তো।
ছাইরাছ হেলাল
অপেক্ষা অবিরত/অনবরত।
শাহরিন আক্তার মুক্তা
কেন জানি মনে হয় প্রথম কান্নারত ব্যাক্তি আপনি 😃
আর ২য় গল্প বুঝি নাই ভাল করে, আরেকটু বড় হতে হবে 🙄
ছাইরাছ হেলাল
উহ্, প্রথমটি আবার পড়ুন,
বসন্তের কান্নাকাটি ছাড়া তো আর কিছু দেখছি না।
দ্বিতীয়টি ও এই কান্নাকাটি, যুগলে নয় একাকী!!
বড় ছোট বোলে কিছু নেই, এটির মর্ম হলো সে কাঁদতে পছন্দ করে, বিনা কারণে।