
ইংরেজি নামঃ Coppersmith Barbet.
বাংলা নামঃ ‘ছোট বসন্ত বাউরি’।
বৈজ্ঞানিক নামঃ Megalaima haemacephala
আকার ও বৈশিষ্টঃ প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য ১৬-১৭ সেন্টিমিটার। কপাল, বুক পরিষ্কার লাল। চোখের দু’পাশ থুতনি ও গলা হলুদ। মুখাবয়ব কালো। পিঠ ঘাসরঙা সবুজ। নিচের দিকে খাড়া খাড়া মোটা রেখা। ওড়ার পালক কালচে। বুক উজ্জ্বল লালের সঙ্গে সোনালি হলুদের পট্টি। লেজ খাটো। লেজের শেষপ্রান্ত সবুজাভ নীল। চোখের মনি কালচে-ধাতব। ঠোঁট শক্ত মজবুত, কালো। ঠোঁটের গোড়ায় ক’টি শক্ত লোম। পা বাদামি-লালচে। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম।
খাদ্যঃ ছোট ছোট বুনোফল। বট-পাকুড়, বকুল, দেবদারু, পেয়ারা, জাম, আতা, সফেদা, জামরুল ইত্যাদি ফলের প্রতি আসক্তি বেশি। ফল সংকটে পোকামাকড়েও ভাগ বসায়।
প্রজনন কাল ও বাসস্থানঃ ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল। অঞ্চলভেদে সময়ের হেরফের হয়। যেমন ভারত, শ্রীলঙ্কায় ভিন্ন সময়ে বাসা বাঁধে। তবে সব স্থানেই এরা গাছের খোড়লে বাসা বাঁধে। নিজেরাই খোড়ল করে নেয়। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ফুটতে সময় লাগে ১৪-১৫দিন। শাবক উড়তে শেখে ১৫-২০ দিনে।
বর্ণনাঃ এরা নানান নামে পরিচিত, যেমন বসন্ত বউরি, বসন্ত বাওড়ি, বসন্ত বৌরি ইত্যাদি। বসন্তকালে এদের দেখা মেলে। গ্রামের নির্জন রাস্তা ধরে হাঁটলে প্রজাতির ‘টুক্-টুক্-টুক..’ আওয়াজ কানে আসে। অনেক দূর থেকে শোনা যায় সে আওয়াজ। হঠাৎ আওয়াজটি কানে গেলে যে কেউ কামারের হাতুড়ি পেটার আওয়াজ মনে করতে পারেন। বিদঘুটে আওয়াজ হলেও সুরে রয়েছে চমৎকার তাল-লয়। শোনার আগ্রহ জাগে। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে এরা আকারে চড়ুই পাখির সমান হলেও অনেক উচ্চস্বরে ডাকতে পারে। পাখি দেখতে ভারী চমৎকার। প্রথম দর্শনেই ভালো লাগে। সাধারণত এরা বসন্তকালে জনসন্মুখে আসে। অন্য সময়ে চলে যায় আড়ালে অবডালে। তাই বলে এরা কিন্তু পরিযায়ী নয়। দেশি প্রজাতির পাখি। হরেক প্রজাতির দেখা মেলে দেশে। তারমধ্যে এরা অতি সুলভ দর্শন। ঢাকা শহরেও হরহামেশাই দেখা মেলে। চোখ-কান খোলা রাখলে রাজধানীর উদ্যানগুলোতে নজরে পড়তে পারে এদের। উঁচু উঁচু গাছে এদের বিচরণ। ঘন পাতার আড়ালে থাকতে পছন্দ করে। বৃক্ষচারী পাখি; পারতপক্ষে মাটিতে নামেনা এরা।
ছবিটি ঢাকার মিরপুরে জাতীয় উদ্ভিদ বাগান (বোটানিক্যাল গার্ডেন) থেকে ২০১৪ সালে তোলা।
“এই পাখি সহ সকল বণ্যপ্রাণী ও পাখি শিকার করা, মারা ও খাঁচায় পোষা বন্য আইনে আইনতঃ দন্ডনীয় অপরাধ। পাখিদের অবাধে প্রকৃতিতে বসবাসের সহযোগিতা করা আমাদের কর্তব্য। পাখি বাঁচলে প্রকৃতি বাঁচবে”।
সবাইকে ধন্যবাদ।
৩৭টি মন্তব্য
রাফি আরাফাত
পাখির সাথে আপনার ভালবাসার সম্পর্ক নাকি? এতো কথা পান কোথায়? হিহিহি
শামীম চৌধুরী
শুধুই কি ভালোবাসার সম্পর্ক? গভীর প্রেম আরাফাত ভাই। আর তথ্য বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করি। কিছুটা নিজেরও জানা। আপনিও পারবেন যদি এদের নিয়ে স্টাডি করেন। ভালো থাকবেন।
শুভ কামনা রইলো ভাই।
মোঃ বোরহান উল ইসলাম
আপনার পক্ষীপ্রেম খুবই প্রশংসনীয়। আশা করি খাচায় পোষেন না।
শামীম চৌধুরী
ধন্যবাদ বোরহান ভাই।
না ভাই খাঁচায় পাখি পালন করি না। খাঁচায় পোষা পাখিওয়ালাদের নিরুৎসাহিত করি। এরা প্রকৃতির অলংকার। নারীর গলায় যেমন মুক্তার হার শোভা পায়। তেমন পাখি ও বন্যপ্রানী প্রকৃতির শোভা বাড়ায়।
মোঃ বোরহান উল ইসলাম
আপনাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ।মহান সৃষ্টিকর্তা আপনার মঙ্গল করুন।
মোঃ মজিবর রহমান
পাখি প্রেমিক। শামীম ভাই। সুন্দর বর্ণনা দিয়ে জানার আগ্রহ জন্মাই। ভাল থাকুন।
শামীম চৌধুরী
ধন্যবাদ ও শুভ কামনা রইলো মজিবর ভাই। আপনিও ভালো থাকবেন আমার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা সাথে নিয়ে।
সাবিনা ইয়াসমিন
মন্তব্য কি লাগবে? পাখি নিয়ে প্রত্যেকটি পোস্টই খুব ভালো দিচ্ছেন। আমরা জানতে / চিনতে পারছি। ধন্যবাদ সুন্দর করে প্রতিটি পাখি নিয়ে বিস্তারিত লেখার জন্যে।
ভালো থাকুন, শুভ কামনা 🌹🌹
শামীম চৌধুরী
সাবিনা আপু,
আপনার জন্যও রইলো শুভ কামনা ও শুভেচ্ছা।
নাহ আপু, মন্তব্য লাগবে না। শুধু দোয়া ও ভালোবাসা লাগবে।
ভালো থাকুন নিরন্তর।
সাবিনা ইয়াসমিন
দোয়া সম্মান সবই পাবেন। সম্মানিত মানুষদের তার প্রাপ্য সম্মান দিতে সোনেলা কোনো কার্পন্য করে না। ☺
জিসান শা ইকরাম
বসন্ত বাউরী হিসেবেই এই পাখিকে জানি।
তবে এদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানিনি কখনো,
আপনি জানাচ্ছেন বলে কৃতজ্ঞ।
শুভ কামনা।
শামীম চৌধুরী
সোনেলার মাধ্যমের আপনাদের জানাতে পেরে নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হচ্ছে। ভালো থাকবেন ভাই।
জিসান শা ইকরাম
আপনি অত্যন্ত সামাজিক মানুষ শামীম ভাই, অন্য সবার লেখা পড়ে মন্তব্য করে তা প্রমান করলেন।
সবাইকে এমন ভাবে উৎসাহ দেয়াটা ভাল লাগলো।
এমন উৎসাহ সবাই দিতে পারেনা।
মনির হোসেন মমি
সোনেলায় আরো কিছু পাখি প্রেমি আছেন তবে আপনার মতন এতো গভীর প্রেম নয়।ভাল লাগছে ভাইয়া।
শামীম চৌধুরী
মমি আপু,
উনাদের নামগুলি কি জানতে পারি। জানলে উনাদের সাথেও প্রেমটা জমবে ভালো।
পোষ্টটি ভালো লাগার জন্য কৃতজ্ঞ। ভালো থাকবেন আপু।
মনির হোসেন মমি
হা হা হা গোপন কথা বলা যাবে না।
শামীম চৌধুরী
আচ্ছা। গোপন না হয় গোপনই থাকুক।
শুভ কামনা রইলো।
নীরা সাদীয়া
আমি একজন পাখিপ্রেমী। তাই আপনার দেয়া পাখির বর্ননা জেনে ভালো লাগলো। নতুন জানলাম এই দৃষ্টিনন্দন পাখির কথা। চোখ জুড়ানো রূপ আর সুন্দর বর্ননা মন কেড়ে নেবার মত।
শামীম চৌধুরী
অনেক অনেক ধন্যবাদ নীরা আপু। পোষ্টটি আপনাকে আনন্দ দিয়েছে বলে। সাথে থাকবেন সব সময় তবেই উৎসাহ পাবো।
আরজু মুক্তা
পাখিটা দেখেছি।কিন্তু বর্ণনা আরও ভালো লাগলো
শামীম চৌধুরী
শুভ কামনা রইলো মুক্তা আপু।
লীলাবতী
আপনাকে পাখি ভাইয়া বলে ডাকি? 🙂 পাখিটি সম্পর্কে জানলাম। আমার ওয়ালে শেয়ার দিয়েছি। ধন্যবাদ ভাইয়া।
শামীম চৌধুরী
জ্বী নির্ভয়ে পাখি ভাই ডাকতে পারেন। তবে আপু ঘটক পাখি ভাই নাহ। হা হা হা…!! দেখেছি আপনার ওয়ালে শেয়ার করেছেন। সে জন্য আমি গর্বিত। ভালো থাকবেন সাথে থাকবেন। তবেই আরো দূর্বার গতিতে অগ্রসর হতে পারবো।
ইলিয়াস মাসুদ
পাখিটাকে দেখেছি,কিন্তু নাম জানা ছিল নিয়া, নাম সহ বিস্তারিত জানলাম। অসাধারণ পোষ্ট
শামীম চৌধুরী
আমার মাধ্যমে আপনি নামটি জেনেছেন শুনে ভালো লাগলো। শুভ কামনা রইলো আপনার জন্য।
রাফি আরাফাত
আমি একদিন অনেক পাখি নিবো। আর সেদিন আপনাকে নিয়ে যাবো। মনে থাকে যেন হুম।
শামীম চৌধুরী
হুম। মনে আছে ও থাকবে। আপনার সঙ্গী হবার অপেক্ষায় রইলাম রাফি ভাই।
ছাইরাছ হেলাল
পাখিদের জানছি, ভালই লাগে,
পাখিদের নিয়ে লিখেছি তবে এভাবে জানিনি।
জানান আমাদের নিয়মিত।
শামীম চৌধুরী
যানপরনাই চেষ্টা চালিয়ে যাবো শুধু পাশে থাকবেন।
ইঞ্জা
বসন্ত বাউরী, কেমন যেন এক মাদকতা আছে এই নামে, আপনার লেখা এবং জানার জিবাব নেই ভাই।
শামীম চৌধুরী
ঠিকই বলেছেন ইঞ্জা ভাই। বসন্তের পাখি বলেই বসন্তের মাদকতায় ছোঁয়া। ভালো থাকবেন।
ইঞ্জা
শুভেচ্ছা ভাই
তৌহিদ
বসন্ত বাউরী, কি সুন্দর নাম!! ধন্যবাদ ভাই। আপনার লেখাগুলোর মাধ্যমেই পাখি সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারছি।
শামীম চৌধুরী
আপনাকেও ধন্যবাদ তৌহিদ ভাই।
সকাল স্বপ্ন
অনেক ভাল লাগলো জেনে
লিখা- ভাল লাগা ছুয়ে ছুয়ে
শামীম চৌধুরী
খুব খুশী হলাম। আমারও ভালো লাগলো আপনাকে ছুয়ে ছুয়ে ভালো লাগাতে পেরেছে জেনে। ভালো থাকবেন।
জাহিদ হাসান শিশির
এটাকে গ্রামে একটা গাছে দেখেছিলাম দুই বছর আগে। মনে হচ্ছে। নিশ্চিত না এটাই কিনা।