
প্রিয় ঘুম,,
কেমন আছো?
ঘুম কাতুরে এই আমাকে একা ফেলে চলে গেছো অন্য কারো চোখে। ভালোই আছো জানি। যাযাবর এই তুমি ভালোই থাকো।
শুধু যদি জানতাম, কোথায় কার চোখে বসে আছো! সে চোখ কি আরো বেশি তৃষ্ণার্ত? কবে কোথায় যেনো পড়েছিলাম, চাওয়ার পাল্লা যেদিকে ভারি হয় সেদিকের ভাগেই পড়ে সবটা। সত্যিই কি আমি তোমাকে খুব বেশি চাইনি?
নতুন আরো কোন চোখ কাজল কালো করবে?
তোমার এ বড় বাজেরকম খেয়ালী খেলা,, প্রচণ্ডতায় ডুবিয়ে রাখো আর যখন চলে যাও কাজল কালো চোখই বলে দেয় তোমার অভাবে সে সেজেছে কাজলে। রাতজাগা চোখ তোমার অপেক্ষায় অপেক্ষায় ক্লান্ত হয়ে হয়ে কালি পড়েছে চারপাশ,, চিকিৎসা ভাষায় নাম তার ডার্ক সার্কেল,, অথচ তুমি নাম দিয়েছো,’কাজল কালো চোখ।’
কতো অপেক্ষায় কতো বেদনায় তোমাকে না পাওয়ার আকুলতায় সে কালো চোখ গভীর ভারী বর্ষণ জমিয়ে রাখে কালো মেঘের মতো।
দেখো কি মিল না? কাজল কালো চোখের সাথে ঐ মেঘের! দুটোর মাঝেই লুকানো অদেখা কতো কতো জলের ধারা।
প্রিয় ঘুম, তোমার আর মৃত্যুর দূরত্ব কি ঠোঁট আর নাকের মাঝের অতো টুকু?
মাঝে মাঝে স্বপ্নে যখন সুখের সব সাগরে ভাসাও তখন একচিলতে হাসি ওঠাও,, বুকের ভিতরে নিঃশ্বাসের ওঠানামা তখন স্পষ্ট। মৃত্যুর ঘুমে নিঃশ্বাসের ওঠানামা নেই। ঠোঁটের কোনায় এক চিলতে হাসির ঝলক নেই। নাক, বুক, ঠোঁট স্থির। আমি এখন তোমার সে ঘুম চাই। স্থির একদম। যে ঘুমে ঠোঁটের কোনায় হাসি ওঠে না।
আমার জীবনে তোমার চেয়ে সুখকর যেনো আর কিছু কোনোকালেই ছিলো না।
না সিনেমা দেখা না বেড়ানো। তিনটে বালিশের হেলানে বড্ড যাতোনা বসে যেতে আমার চোখে,
কোনো আয়োজন ছাড়াই অথচ এখন কতো আয়োজনে কতো অনুনয় বিনয়ে তোমাকে পেতে হয়। কতো কি আবিষ্কার! গাছ গাছালির তেল মেখে তোমাকে আনতে হয়।
আমার সেই একলা রুমের কথা তোমার মনে আছে? সযত্নলালিত আমার শৈশব, কৈশর ও যৌবনের মাত্র কিছুটা দিন বা বলতে পারো কিছু মুহূর্ত,
যেখানে আর কারো প্রবেশ বা ঘুমানোর পারমিশন ছিলো না।
পিছনে বিশাল জলরাশি,, তীরে তীরে বাতাসে বেলির ঘ্রাণ।
ক্যাসেট প্লেয়ারে মৃদু সুরে আমি বেঘোরে ঘুমোতাম।
যখন ইচ্ছে তখন ঘুম,,, বোনের আদরে, মায়ের স্নেহে আমায় ঘুমে জড়িয়ে রাখতে।
জানো? আজকাল বড্ড ক্লান্ত আমি। চারদিকের কিছু আমার ভালো নেই,, গোছাতে গোছাতে আমি যেনো আরো এলোমেলো হচ্ছি। জীবন আদর্শিক যা কিছু সব আমার রঙ হীন কুয়াশা ধনুর মতো মনে হয় যেখানে রঙধনুর সাতটা রঙ নেই। শুধু ধূসর একটা রঙ। অশান্তি জনক সমস্যাগুলো ভুলে থাকার জন্য আমি নানানরকম কাজ করতে থাকি। এখন যা করি তা কেবল নিজেকে ভোলাবার জন্য। কিন্তু তবু এড়ানো কঠিন। স্বাভাবিকভাবেই মনে যেসব প্রশ্ন ভেসে ওঠে, তার কোনো সন্তোষজনক উত্তর খুঁজে পাই না।
সেই নিজস্বতাবোধ কচ্ছপের খোলসের আবরণ ত্যাগ করে আমি পরিবার, সমাজ, দেশের তাৎক্ষণিক পথ চলাতে তাল মেলাতে না পেরে আমি হেরে যাই প্রতিমুহূর্তে।
সন্তানের মতো অক্ষর আকৃতির যে সকল আবেগ তা সবও হারিয়ে গেছে। ভালোই হয়েছে, ছাইপাশ অক্ষর অখাদ্য আমার চলে গেছে নাগালের বাইরে।
আজ জীবনবোধ যা কিছু সব আমার শূন্যের কোঠায়। ভুল জীবনবোধ শুধু শূন্যতায় ডুবে আছে।
আর একদিন শুধু এসো পাহাড়ের কোলে ঐ উপপ্রেম ভাব নিয়ে পঞ্চমীর চাঁদ ডুবে গেলে।
অথবা এসো
বাসন্তি পঞ্চমীতে,, বসন্তের প্রথম দিবসে যে কালে জন্ম আমার।
ভালবাসা বা ভালো লাগার আবেগে উপপ্রেম শব্দটা তোমার জন্য বড় বেশি মানানসই। ঘোর কেটে গেলে হাত ধুয়ে মুছে ফেলার মতো।
তবে কি তুমি সে সকল পুরুষের মতো? যৌবন ঢলে গেলে শেষ হয় যেমন চোখ ও মনের প্রেম? থেকে যায় শুধু দলিলিক দায়িত্ববোধ!
বার্ধক্যে যেমন তুমি আসো ওষুধ ডানায় ভর দিয়ে জোর করে আসতে হয় সেই আসার মতো।
তবে তুমি অতিমাত্রায় রঙপ্রিয়।
সত্যি বলছি তোমার এমন করুণাময়তা আমি আর চাই না। বড্ড বেঘোরে ঘুমতে চাই অন্ধকুটিরে। যে ঘরে তালা নেই। ভুল করে কেউ উঁকি মেরেও দেখে না কোনো কালে। মৃত শরীরের অস্থিমজ্জায় কারো আকর্ষণ থাকে বলো?
আরো অনেক কথা তোমাকে বলার আছে, আসলে সে সকল অভিমানের কথার ঝুড়ি। তাই বরং এখানেই থাক। ভালো থেকো তোমার ভুবনে,,,
ইতি
,,রিতু জাহান,, রংপুর
আজ শ্রাবণের ছাব্বিশ
আগস্টের বারো
শুক্লপক্ষ।
নোটঃ ছবিটা কার জানি না। আমার ফোন থেকে ছবি দিতেই পারছি না। নিজের ফোন হারিয়ে ছেলের ফোন ব্যবহার করছি। ব্লগে নিয়মিত হব ইনশাআল্লাহ।
২২টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
হায়রে ঘুম তুমি সুদুর পরবাসী
আমি তোমাররই আশায় থাকি
তুমি আবসা আলোয়াধারে দুচোখে
আমি অবচেতন যাব তোমার চাপে।
রিতু জাহান
অনেক অনেক ধন্যবাদ
হালিমা আক্তার
ঘুম আল্লাহর বিশেষ রহমত। কখনো অপেক্ষার প্রহর গুনতে হয়, আবার কখনো দু’চোখ ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আসে। শেষ বিদায়ের ঘুম কেউ না দেখে। শুভ কামনা অবিরাম।
রিতু জাহান
হুম, ঘুম মহাঔষধের নাম।
আমি দিনে এক ঘন্টা রাতে পর্যাপ্ত ঘুমাবই।
ভালো থাকবেন আপু
সাবিনা ইয়াসমিন
❝প্রিয় ঘুম, তোমার আর মৃত্যুর দূরত্ব কি ঠোঁট আর নাকের মাঝের অতোটুকু?❞
এই ভয়েই আমি ঘুমাতে চাই না। ঘুমিয়ে পড়লেই শব্দেরা ফিরে যাবে অন্য কোথাও, ফাঁকি দিবে বারংবার। তার চেয়ে জেগে থাকাই ভালো, এমন কিছু চিঠি আরও আসুক অঘুমের নিরালায়।
শুভ কামনা 🌹🌹
রিতু জাহান
যে ফিরে যাবার সে ফিরে যাবেই। যা থাকার তা থাকবে,,,,
পাহারা দিয়ে রাখা বস্তুগত সম্পদের পাহারাদার হতে রাজি নই।
যাক চলে দূরে বহুদূরে।
আরজু মুক্তা
তৃষ্ণার্ত, প্রচণ্ড, বর্ষণ, কৈশর, করুণা এই বানানগুলো আপু সম্পাদন করুন।
ঘুম মৃত্যুর সাথে তুলনা করলেও, মৃত্যুর পর তো আর ফেরত আসিনা। বরং মৃত্যুর মৃত্যু হয়। একটা খুব মানেই বিশ্রাম। মানসিক শান্তি। প্রতিকূল পরিবেশ কাটিয়ে উঠলে, আমরা আবার আগের মতো হবো। সন্ধ্যার ঐ গানটার মতো ” ঘুম ঘুম চাঁদ ঝিকিমিকি তারা ঐ মাধবী রাত। আসেনি তো কভু আর জীবনে আমার।” তেমনি এমন সুন্দর চিঠি পড়ে আমিও মুগ্ধ।
শুভ কামনা
রিতু জাহান
আমার পেজে বানান পরে ঠিক করেছি, কিন্তু ব্লগে করার সময় পাইনি, ধন্যবাদ
রিতু জাহান
আমার মেয়ে রাই এর প্রিয় গান এটা। আমার বুকের মধ্যে ঢুকে যায় গানটা গুনগুন করলে।
ধন্যবাদ,,,,
আরজু মুক্তা
★কৈশোর
ছাইরাছ হেলাল
ঘুম! সে যা কার চোখে মধু দিচ্ছে সেটি জানতে পারলে তো দফারফা করাই যেত।
কিন্তু সে তো নচ্ছার,
চিঠি আমার খুব পছন্দের বিষয়, আমি এখন বিখ্যাত জনের চিঠি পড়ি, আর ভাবি একটি সামান্য বিষয় নিয়ে লেখা চিঠি
কত কী বহন করে। কমল কুমার মজুমদার পড়ি। বলার লোভ সামলাতে পারলাম না।
রিতু জাহান
পড়ছি কিছু।
আজকে লাইব্রেরি রুম তন্নতন্ন করলাম। সিরিয়াল করেছি বইগুলো।
ধন্যবাদ কবি
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ঘুম নিয়ে এতো চমৎকার চিঠি আগে কখনো পড়িনি আপু। সত্যিই ঘুম কার চোখে যে মধু ঢালে? ঘুম আর মৃত্যুর দূরত্ব ঠোঁট আর নাকের দূরত্বের সমান কিনা জানিনা তবে মনে হয় আরো কাছে হবে। এমন চমৎকার চিঠি আরো লিখবেন আমাদের জন্য। অবিরাম শুভেচ্ছা ও শুভকামনা
রিতু জাহান
চিঠি আমার খুব প্রিয় বিষয়। একসময় ব্লগে আমরা চিঠি প্রতিযোগিতা করেছিলাম।।
এখন আসলে লিখা আসে না তেমন। সংসার নামক যান্তিকতা যেনো বেঁধে রাখে আষ্টেপৃষ্টে।
ভালবাসা রইলো,,,
মনির হোসেন মমি
চিঠি লেখায় আপনি আমাদের চেয়ে অনেকটা এগিয়ে তা পূর্ব চিঠি প্রতিযোগীতাই দেখেছি।
চমৎকার চিঠি লিখেন।
এমন সুন্দর সুন্দর শব্দ বাক্য রেখে চোখের পাতা পড়ে কী করে!
অসম্ভব ভাল লাগল।
রিতু জাহান
অনেক অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা ভাই।
পাশে ছিলেন থাকবেন জানি,,,
রোকসানা খন্দকার রুকু
ঘুম নিয়েও এমন চিঠি লেখা যায় না পড়লে জানতামই না। আরো এমন চিঠি লিখুন ধন্যবাদ।
রিতু জাহান
চিঠি আমার অনেক প্রিয় বিষয় আপু।
লিখব,,, অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু। শুভকামনা রইলো,, ভালো থাকবেন সব সময়।
সৌবর্ণ বাঁধন
অনেক সুন্দর লিখেছেন। নিদ্রাহীনতার কখনো কখনো ক্লান্তির আবার কখনো কখনো অন্যরকম পরাবাস্তবতার দ্বার উন্মোচন করে। যেখানে ক্যানভাসে ধরা দেয় পঞ্চমীর চাঁদ কিংবা মায়াবী বর্ষণ। নিদ্রা ব্যাপারটা আসলেই অদ্ভুত, কারো কারো কাছে সে পোষা পাখি আবার কারো কারো কাছে পুরোটাই বন্য। শুভেচ্ছা জানবেন।
রিতু জাহান
অনেক অনেক ধন্যবাদ,,,
পাশে থাকার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই।
শুভকামনা শতত।
রেজওয়ানা কবির
চিঠি ব্যাপারটাও আমাকে খুব টানে। লিখতে বসলে মনে হয় লিখতেই থাকি। ঘুম নিয়ে এই অসাধারন চিঠি পড়ে খুব ভালো লাগল।।।। শুভকামনা আপু,ভালো থাকবেন, শুভকামনা।
রিতু জাহান
আপনার জন্যও শুভকামনা আপু,,, চিঠি আমার সবচেয়ে প্রিয় বিষয়।।