
প্রিয়তমেষু!
পত্র প্রারম্ভেই মন উজার করিয়া ভালোবাসা জানাইয়া দিলাম। পরে যেন বলিতে না পারো বারংবার রসকষহীন পত্র দিয়া আমি তোমার ভালোবাসাকে খাটো করিতেছি। অবশ্য নারীর মন বুঝিতে কোন পুরুষই বা পাইয়াছে! কেমন আছ তুমি?
ভালো যে আছ তাহা পাশের বাড়ির নিমাইয়ের কথা হইতেই জানিতে পারিয়াছি। তোমাকে নিতাইগঞ্জার হাটে সদাই করিতে দেখিয়াছে নিমাই। ঠোঁট লাল করিয়া আলতারাঙা পায়ে পায়েলের ধ্বনিতে কোমর দুলাইয়া তোমার হাঁটাচলা অদ্যাপি আমি নিজেই শতভাগ চাক্ষুষ করিনাই অথচ নিমাই সেই সুযোগ আমার পূর্বেই পাইয়া গেলো! ইহাতে ভীষণ মনঃক্ষুণ্ণ হইয়াছি।
যাহা হউক, পরসামাচার হইতেছে তোমার অনুপস্থিতিতে দিনকাল সম্মুখবিচারে ভালো মনে হইলেও আমি কিন্তু মোটেও ভালো নাই। কার্যকারনহেতু আমি কথা বলিনা এইটা তুমি ভালো করিয়াই অবগত আছো। ছেলেমি করিয়া পত্র লিখিতে কিঞ্চিত লজ্জা পাইতেছি। মনের কথা দু’কলম না লিখিলে আজ রাত্রিতে নিদ্রা যাওয়া আমারপক্ষে এককথায় অসম্ভব।
দীর্ঘ পাঁচটি মাস তুমি মাতুতালয়ে অবস্থান করিতেছ কেন তাহা আমার সঠিক বোধগম্য হইতেছেনা। তুমি কি আপন শ্বশুরালয়ের পথ ভুলিয়া গিয়াছ? তোমার কি একবারও আমার কথা মনে পড়ে না প্রিয়ে! তুমিহীনা দিবারাত্রির এই পরিবর্তন আমার চউক্ষে রোদজ্বলা ধুসর মরুভূমির উপলক্ষ্য হইয়া ধরা দিয়াছে। তোমার পথপানে জানালার ধারে বসিয়া ধূলিময় মেটোপথের দিকে চাহিয়া থাকিতে থাকিতে আমার চোখে চশমা উঠিয়াছে তাহা বোধকরি তোমার জ্ঞাত হইবার কথা নয়। তুমি যেনো দিনকেদিন আমার কাছে মরীচিকার ন্যায় প্রতিভাত হইতেছো।
তোমার প্রাক্তন পাণিপ্রার্থী প্রেমিক সেই স্কুলমাস্টার গতকল্য আমাদিগের বাসায় আসিয়া তোমার খোঁজ করিতেছিলো। তাহাকে দেখিয়া তৎক্ষণাৎ আমার মাথায় খুন চড়িয়া গিয়াছে। অবশ্য মায়ের নিকট হইতে জানিতে পারিয়াছি মাষ্টার নাকি তোমায় আশির্বাদ করিতে আসিয়াছিলো। যদিও মানুষটাকে ভালোই মনে হইয়াছে তবুও আমার মনে খানিক কিন্তু রহিয়াই গিয়াছে। ভুলিয়া যাইওনা, আমি বনেদি ঘরের পুত্র। বাঘে ছাগলে একঘাটে পানি গলাধঃকরণ করাইতে সিদ্ধহস্ত। মাষ্টারকেও তাহা বুঝাইয়া দিও।
বোধকরি শুনিয়াছ ভিনদেশী করোনা নামক এক মারণব্যধি অনেকের প্রাণনাশের হেতু হইয়াছে। করোনাকালে আমি নরসুন্দরের নিকট যাইতে পাইনাই বলিয়া চুলদাড়ি লম্বা হইয়া জট পাকাইয়া যাইতেছে। চুলে না হয় কাঁচি চালাইলাম কিন্তু জানোইতো নিজের দাঁড়ি কামানো আমার পক্ষে খুবই ভীতিকর, গাল কাটিয়া রক্ত ঝরে। শাশুড়ি আম্মাকে বলিয়া দিও আরও কয়টা মাস এই দাড়িওয়ালা জামাইকেই মানিয়া লইয়া আদর আপ্যায়ন করিতে হইবে। ইহাতে তাহার কি অভিব্যক্তি তাহা লিখিয়া জানাইও।
তুমিও মাঠেঘাটে, বনেবাঁদারে অযথা ঘুরাফিরা বন্ধ করিয়া দিও। অবশ্যই বড় করিয়া ঘোমটা দিয়া নাক, মুখ ঢাকিয়া রাখিও। করোনার জীবানু নাক, মুখ দিয়াই ছড়ায় বলিয়া জ্ঞাত হইয়াছি। হাত বারেবারে সাবানপানি দিয়া ধৌত করিও। আর হ্যা, ইদানিংকালে এদেশে কিছু পথভ্রান্ত কুলাঙ্গার সমাজের নারী মাতৃগণকে খুবজোর অসম্মান করিতেছে। নারীদের নিরাপত্তা নিজেদেরকেই নিতে হইবে। কোথাও কেহ নিরাপদ নহে। পারিলে বগুড়ার মরিচগুড়ার একটা পুঁটলি সবসময় হাতের কাছে রাখিবে। যাহাতে সময়ে দুষ্টু পুরুষের চোখেমুখে উহা ব্যাবহার করিতে পারো।
আগামী শুক্লাদ্বাদশে তোমার জন্য পালকী পাঠাইয়া দিবো। সুন্দর মতন চলিয়া আসিও। আমি সেখানে আসিবো কিনা তাহা শাশুড়ি মায়ের দাড়ি বিষয়ক উত্তর পাওয়ার পরেই ভাবিয়া দেখিবো। আমি এক কন্যার এক জামাই। এখনো শ্বশুরমশাই ইলিশ আপ্যায়ন করেননাই দেখিয়া মর্মাহত হইয়াছি। ইহাও না আসার অন্যতম কারন বৈকি! নচেৎ আমি ওবাড়িমুখো হইবোনা এই বলিয়া দিলাম।
ইদানীন্তনকালে খুব চিন্তায় আছি তোমাকে নিয়া। আশাকরি পত্র পাওয়ামাত্র উত্তর জানাইয়া পত্র পাঠাইবে। বড়দের সবাইকে কদমবুসি আর ছোটদের আমার স্নেহ জানাইয়া দিও। দীর্ঘদিন তোমায় কাছে না পাইয়া আমিও মান্দারগাছের শুকনা ডালের মতন চুপসিয়া গিয়াছি। এই বক্ষে জল ঢালিবার ব্যবস্থাদি তড়িৎ করিতে তোমার মর্জির পথপানে দিনগুনিয়াচলা তোমারই-
ফণিমনসা
পুনশ্চঃ – পত্রবাহক মারফত বগুড়ার মরিচগুড়ার পুঁটলি আর তোমার পছন্দের বাতাসা পাঠাইলাম। বাতাসাগুলি আমাকে ভাবিতে ভাবিতে একা একা খাইও। নচ্ছার দুষ্ট শালা-শালীদের জন্য পাঁপর আর আমের আঁচারও পাঠাইয়াছি।
পুনঃপুনশ্চঃ – লেখায় পালকির ছবিখানি আমার প্রাক্তন প্রেমিকা নিজ হাতে আঁকাইয়া তোমাকে তাহার ভালোবাসার উপহারস্বরুপ পাঠাইয়াছে। তোমার মনে কোন প্রকার অমূলক সন্দেহ বা দ্বিধা না রাখিয়া ইহাকে তাহার সৎ পাত্রে ছবিদান হিসাবে গ্রহণ করিও।
৩৩টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
চিঠিখানা পড়ে হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে গেছে। এমন ভালোবাসা আর দেখিনি। দুজনের প্রাক্তন নিয়ে চমৎকার হিংসা বিদ্বেষ দেখানো হলো। শাশুড়ি আম্মা তাড়াতাড়ি একমাত্র মেয়ের জামাইকে ইলিশের দাওয়াত দিয়ে দাড়ি কামানোর ব্যবস্থা করুক। মান্দার গাছের মতো শুকনো জামাই কারোরই কাম্য নয়। রম্য চিঠি পড়ে অসম্ভব ভালো লেগেছে ভাইয়া। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা অবিরাম
তৌহিদ
পেট ভরে ইলিশ খেয়েছি কিন্তু!! চিঠি প্রকাশের ফল হাতেনাতে পেয়েছি
আপনিও ভালো থাকুন আপু।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
বাহ্ চমৎকার। আসলেই শক্তের ভক্ত নরমের যম। যাক ইলিশ একা খেলে পেট ব্যথা করবে কিন্তু। তাই সাবধান ভাইয়া। শুভ কামনা রইলো
তৌহিদ
মায়ের হাতের রান্না, সে অমৃত ☺
নাজমুল হুদা
চিঠিটা পড়ছিলাম আর মনে হচ্ছিলো রবীন্দ্র কিংবা শরৎচন্দ্র যুগে ছিলাম।
চিঠিতে বউকে ভালোবাসা জানানোর মাঝখানে বিশাল হুমকি ধামকি দেওয়া হয়েছে, শ্বাশুড়িকেও বাদ দেয় নাই জামাই। বউ ভয় পাইয়া হলেও চলে আসবে।
তৌহিদ
মাঝেমধ্যে হুমকি ধামকি না দিলে কাজ হয়না তাই আর কি!!
ভালো থেকো ভাই।
বন্যা লিপি
মান্দার গাছের শুকনা সেপাই জামাইবাবুকে উদ্দেশ্য করিয়া বলিতেছি, আপনার শাশুড়ির ঠিকানাখানা আমাকে পৌঁছাইয়া দিবেন। জাসাইবাবুর হইয়া সুপারিশখানা পত্রবিহিত আমিই তাহাকে প্রেরন করিব। শ্বশুড় মহাশয় একমাত্র কইন্যার এমন দাঁড়িযুক্ত জামাতাকে ইলিশ আপ্যায়ন না করবিার হেতুও জিজ্ঞাসিব।
সেয়ানে সেয়ানে জুটি ভালোই বাঁধিয়াছে বিধাতা তাহা নিশ্চিত করিয়া বলা যাইতেই পারে……. দারুন মজা পাইলাম ভাউ চিঠি পড়িয়া।
তৌহিদ
এই চিঠিতেই কাম হই গেছে। এমন খানাপিনা দিছে যেন আমি নতুন জামাই প্রথমবার শ্বশুরবাড়ি গিয়েছি। আপনাদের চিঠি প্রকাশের পরবর্তী প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্যই উত্তর দিতে দেরী হলো আপু।
ভালো থাকুন সবসময়।
সুপায়ন বড়ুয়া
পত্র লিখেন বউয়ের কাছে।
তাও আবার খোলা।
বন্ধু তুমি দিল দরিয়া
হৃদয়ে লাগে দোলা।
এই কথাটা বড় মনে ধরিল
তাই বগুড়ার মরিচের দাম বাড়িল।
“পারিলে বগুড়ার মরিচগুড়ার একটা পুঁটলি সবসময় হাতের কাছে রাখিবে। যাহাতে সময়ে দুষ্টু পুরুষের চোখেমুখে উহা ব্যাবহার করিতে পারো।”
উপভোগ্য। শুভ কামনা।
তৌহিদ
এই লেখার সুফল বয়ে গেছে দাদা। এক্কেরে সোনায় সোহাগা। ভালো থাকুন সবসময়।
ইঞ্জা
কিছুক্ষণ প্রাণ ভরে হাসিলাম ভাই, খুব সুন্দর লিখলেন।
তৌহিদ
ধন্যবাদ দাদা, চিরকাল হাসুন এটাই প্রার্থনা।
ইঞ্জা
ভালোবাসা অনিঃশেষ। ❤️
মনির হোসেন মমি
আহা আগের চিঠি চালাচালি কত সুখই না ছিলো।প্রিয়ার চিঠি হাতে পেলে কত আনন্দনই না মনে লাগত।এখন সব মরিচীকা। আপনার চিঠি পড়িয়া আনন্দিত হইলাম।এতো সুন্দর চিঠি আহা….।।
তৌহিদ
চিঠি লিখতে এবং পৌঁছাতে অনেক সময় লাগে। এর থেকে অনলাইনে চিঠি লিখলে ইনস্ট্যান্ট রিয়াকশন, কি বুঝলেন ?
ভালো থাকুন ভাইয়া।
ছাইরাছ হেলাল
পাল্টা চিঠিতে করোনা কালে পাশের বসে ভাবীর হাল হকিকত কেউ জানতে চাইলে পাঠকেরা
অবাক হলেও খুব বেশি বিস্মিত হবে বলে মনে হয় না।
তৌহিদ
ভাগ্যিস এই চিঠি লেখার পরে আমার কি অবস্থা সেই হাল-হকিকত জিজ্ঞাসা করেন নাই। বেঁচে গেলাম বাবা।
আপনিও ভালো থাকুন।
আলমগীর সরকার লিটন
সুন্দর চিঠি লেখেছেন সেই সময়ে গেয়েছিলাম দাদা
তৌহিদ
ধন্যবাদ ভাই, ভাল থাকুন সব সময়।
সুরাইয়া পারভীন
হা হা হা হা হা হা এমন হেংলা জামাই পাহিয়া শ্বাশুড়ি খুব একটা খুশি হইয়াছেন বলে আশা করা যাইতেছে না।
চিঠি পড়িতে পড়িতে শরৎ যুগে চলিয়া গিয়াছিলাম। চমৎকার চিঠি পাঠের সুযোগ করিয়া দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ মহাশয়কে
তৌহিদ
এসব কোনো বিষয়ই নয়, শুধুই মজা করা। ভালো থাকুন আপু। অনেকদিন আপনার খোঁজখবর নেই কেমন আছেন?
মোঃ মজিবর রহমান
নিমাই তো জানবেই সে ভালো করিয়ায় পরখ করিয়াছে! আর আপনি ঘর করেও অন্তরে না দেখিয়া থাকলে দোষ তো আসবেই ভাই।
পত্র দাও বউয়ের নিকট ভালোবাইসা
মনের খুটখুটানি দেখছি গেছে বাড়িয়া,
দরদ উঠিয়াছে বুক মাঝে না দেখিয়া
তাইতো লিখো পত্র তাঁরে বালোবাসিয়া।
তৌহিদ
এই পত্র লেখার পরে কী রিঅ্যাকশন হয়েছিল তাহা জানিতে চাহিয়া লজ্জা দিবেন না !
ভালো থাকুন ভাইজান।
শামীম চৌধুরী
পত্র পাঠে বুঝিলাম,
মাঝে মাঝে রস-কসহীন পত্র দেয়া হতো।
দারুন চিঠি পঠনের সুযোগে আপ্লুত হলাম।
তৌহিদ
রসকষহীন পত্রের মাঝেও রস থাকে কিন্তু ,বুঝে নিতে হয় ভাইজান। আপনি অভিজ্ঞ মানুষ, আপনাকে আর কি বলবো!
ভালো থাকুন সবসময়।
আরজু মুক্তা
আমি হাসি আর হাসি। এ কোন সর্বনেশে চিঠি। ভাবি, না জানি কি পাল্টা উত্তর দেয়। আবার সমসাময়িক বিষয়ও সুন্দর করে তুলে ধরেছেন। বিরহ প্রেম আহা কোনটাই বাদ নাই।
দারুণ চিঠি খানা পাইয়া আপনার প্রিয়তমা নিশ্চয় আবেগে আপ্লুত হবেন।
তৌহিদ
আবেগে আপ্লুত চিঠি লেখার পরবর্তী কি অবস্থা তাহা জানিতে চাহিয়া লজ্জা দিবেন না। তবে খাওন-দাওন বেশ হয়েছে সে ব্যাপারে নিশ্চিত।
ভালো থাকুন আপু।
রোকসানা খন্দকার রুকু
হা হা হা হা। মনটা ফুরুত করিয়া আপনার অসাধারণ চিঠিখানা পড়িবার পর ভালো হইয়া গেল। আশা রাথিতেছি প্রিয়তমার উত্তর পাইবার পর আমাদের সেখানাও পড়িবার একনা সুযোগ করিয়া দিবেন।
শুভ শুভ কামনা রইলো ভাইয়া।
তৌহিদ
চিঠি রাস্তায় আছে। পোস্টম্যানের মোবাইল নাম্বার বন্ধ। তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে চিঠি আসতে দেরি হচ্ছে। আসলেই পড়তে পারবেন ইনশাল্লাহ !
ভালো থাকুন।
প্রদীপ চক্রবর্তী
বাহ্, বাহ্।
বেশ বেশ হাস্যরসাত্মক লেখনী।
মুগ্ধ হয় পড়লাম।
এমন চিঠি পড়িয়া প্রিয়তমা নিশ্চয় মন্ত্রমুগ্ধ হইবেন।
.
ভালো লাগলো,দাদা।
তৌহিদ
ধন্যবাদ দাদা, ভালো থাকুন।
রেজওয়ানা কবির
সাধু ভাষার চিঠি অনেকদিন পর পড়লাম আর আমাদের বাংলা স্যার হরিহর স্যারের কথা মনে পড়ে গেল।সত্যি এই দু্র্দিনে এরকম মজার চিঠি পড়ে মনটাই ভালো হয়ে গেল। খুব বেশী ভালো লাগল।শুভকামনা।
তৌহিদ
আমাদেরও বাংলা টিচার এর নাম ছিল হরিহর। তবে আপনি যে হরিহর স্যারের কথা বলছেন তিনি আবার একই ব্যক্তি না তো?
ভালো থাকুন আপু।