রাষ্ট্রযন্ত্রের সব চেয়ে দরকারি হল প্রশাসন ব্যবস্থা। যে দেশের প্রশাসন ব্যবস্থা ভাল না, সে দেশ বিশৃঙ্খলাপূর্ণ, নির্ঝঞ্ঝাট বসবাসের অনুপযোগী। সরকারের প্রধান কাজ হল রাষ্ট্রের নাগরিকদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করা আর তাদের যানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
কিন্তু এগুলা করবে কে ? সরকার বা রাষ্ট্রযন্ত্র তো নিজে তো কোন কাজ করতে পারে না। তার জন্য দরকার প্রশাসন। প্রশাসন এর আবার দুইটা দিক। একটা বিতরন- সম্পাদন আর অন্যটা নিরাপত্তা-নিয়ন্ত্রন। একদিকে যেমন সুসঠ বিতরণ ব্যবস্থা প্রয়োজন, তেমনি তার নিরাপত্তা বিধানের জন্য প্রয়োজন নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। কোন একটা ভেঙ্গে পড়লে অন্যটা ও ব্যাহত হয়।
আমাদের দেশের প্রশাসন হল সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিপরায়ণ। কিন্তু ওদের এখানে আনল কে ?
উত্তর একটাই, আমরা।
আমাদের দেশে সরকারের প্রশাসন এর সাথে কত লোক জড়িত ? আর আমরা আমজনতা কতজন ? সুতরাং, আমরা ভাল হয়ে গেলে ওরা কি করে খারাপ কাজ করবে ? এই আমিও অনেক ক্ষেত্রে দেখব, কি করে দুই টাকা ঘুষ দিয়ে আমার কাজটি আগে করিয়ে নিতে পারি ! ওরা যে সাধু, সেটা বলছি না। কিন্তু কারো কোনোকিছু বিচার করতে গেলে নিজের দিকটা ভাবা উচিৎ আগে। আসুন, আগে নিজেকে কিছু প্রশ্ন করি –
• কেন ঘুষ দেই ?
• বাবা-মা বা ভাই ঘুষ খাচ্ছে জেনেও কেন প্রতিবাদ করি না ?
• নিজের কাজটা আগে চাই, কিন্তু আমার আগের জন যে ওই একই কাজে বসে আছে, সেটা কেন ভাবি না ?
আসলে আমরা নিজের সুবিধা পেলে সব জায়েজ ভেবে নিই আর সুবিধা না পেলে গণ্ডগোল করি। তাই, আসুন, আগে আমরা পাল্টাই। ওরাও দেখবেন পাল্টে গেছে। ওরা ও মানুষ (যারা ঘুষ খায়), ওরা আমাদের সমাজ ছাড়া নয়। ওরা কেউ আমাদের ভাই, বাবা বা অন্যকিছু।
তারপরও কিছু কথা থেকে যায়। হ্যাঁ, তার জন্য আইন দরকার। আমাদের প্রচলিত আইনে সেটা সমাধান করা যাবে না। তাই কিছু নতুন আইনের সুপারিশ –
• প্রত্যেক সরকারি কর্মচারী- কর্মকর্তাকে চাকুরিতে ঢোকার সাথেই তার সম্পদের বিবরন দিতে হবে আর তা প্রতি মাসে দেয়া অব্যাহত রাখতে হবে।
• কর্মচারীরা তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার, আর কর্মকর্তারা তাদের অধস্তনদের ACR লিখবেন আর তা স্ব দায়িত্তে বিভাগীয় অফিসে জমা দেবেন। এবং প্রতি বিভাগের প্রতিটা স্তরে এটা করতে হবে।
• ACR এর ভিত্তিতেই পদোন্নতি হতে হবে (কোন প্রকার সুপারিশ সেই কর্মকর্তার অযোগ্যতা প্রমানিত হবে)।
• চাকরির বয়স কমিয়ে ৫২ বছর করতে হবে। (আমাদের গড় বয়সের হিসাব অনুযায়ী, ওই বয়সের পরে আর আমরা সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করতে পারি না)। কোন ক্ষেত্রে ২ বছর বাড়ানো যেতে পারে তবে যদি তার ACR ভাল থাকে আর বিকল্প না থাকে, তবেই)।
অতএব, আসুন, আগে আমরা পাল্টাই। ওরাও দেখবেন পাল্টে গেছে। ওরা ও মানুষ (যারা ঘুষ খায়), ওরা আমাদের সমাজ ছাড়া নয়। ওরা কেউ আমাদের ভাই, বাবা বা অন্যকিছু।
৮টি মন্তব্য
বনলতা সেন
ঘুষ এখন হালাল হয়ে গিয়েছে । ভালো একটি বিষয় নিয়ে লিখলেন । এমন লেখা খুব দরকার ।
ছাইরাছ হেলাল
শুভেচ্ছা জানালাম ।
এখানে আপনার প্রথম লেখার জন্য ।
আপনার সচেতন ভাবনা প্রশংসার দাবী করে ।
আসলে এই অব্যবস্থা যেমন একদিনে তৈরি হয়নি তেমনই আবার হঠাৎ করে চলে যাবে এমনও নয় ।
আপনার মত এমন করে সবাই ভাবতে শুরু করলে পাল্টে ফেলা শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র ।
আমি কিন্তু আশাবাদি ।
Aurun
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, পড়েছেন বলে।
জিসান শা ইকরাম
গুরুত্বপূর্ণ এবং শক্তিশালী চিন্তা
আমরা আসলে এসব নিয়ে কম ভাবি , আমাদের লেখায় এই প্রসঙ্গ আসে খুব কম।
বেশী বেশী লেখা এবং তার প্রচারনা দিয়ে জনমত নিয়ে আসতে হবে এমন একটি ঘুষ হীন ব্যবস্থার প্রতি।
শিশির কনা
আমরা সবাই এক হলে ঘুষ আসলে দেশ থেকে পালিয়ে যাবে।
লীলাবতী
মানসিক দিক দিয়ে আমরা একটি ঘুষ খোর জাতি হিসেবে পরিগনিত হয়েছি। ঘুষ মুক্ত প্রসাসন চাই।
প্রজন্ম ৭১
ভাংতে হবে এই চক্র
সোনিয়া হক
আমাদের দেশটি যে কবে ভালো হবে ?