প্রবঞ্চনার তীর্থ

খাদিজাতুল কুবরা ১৭ জুলাই ২০২৩, সোমবার, ১২:৩৩:১০পূর্বাহ্ন গল্প ২ মন্তব্য

-হ্যালো!

 

-মাধবীলতা!

 

কেমন আছ তুমি?

 

-এইত চলে যাচ্ছে। তা তুমি হঠাৎ কি  মনে করে,পথ ভুল      করে নয়ত! তারপর বল, কেমন আছ?

 

-আমারও চলছে টেনেটুনে। প্রজেক্টের কাজ শেষ হল। আবার পুরোদমে অনলাইন ক্লাস নিব।

 

-মাধবী!

 

-হুম বলো

 

-আমি লেখায় ফিরতে চাই!

 

-অবশ্যই।

কবিতা লিখে আমাকে পাঠিও।

 

-কেউ যদি আমাকে জাগিয়ে তুলত, তাহলে ফেরাটা       সহজ হত।

 

_কি করি বলতো,তোমাকে আগেই বলেছি আমি নিজেই বিধ্বস্ত! তোমাকে বিনির্মাণের সাধ্য কোথায়? আমাদের পাঁচ বছরের বন্ধুত্ব, এতদিনে ও কি আমায় বুঝতে পারনি!

 

_একদম দিব্যি দিয়ে বলছি মাধবী! তোমার একফোঁটা প্রেম এই মৃত কবিকে পূণর্জন্ম দিবে। পাঁচ বছর ধরে বন্ধুত্ব হারানোর ভয়ে তোমাকে নিজের অনুভূতি জানাতে পারিনি।

 

-সেকি!

আমি কি বলছি তুমি বুঝতে পারছনা?

আমি বিদগ্ধ!

 

-না, তুমিই শক্তি, তুমিই দেবী!

দেবী তোমার আঙুলে আমার বর, দেবে তোমার আঁচল!

 

-সে তোমার জন্য আমার স্নেহ অফুরন্ত। বড্ড জ্বালাচ্ছ, মাইর খাবে, গাট্টা দিব একটা!

 

-বুঝেছি আমার আর ফেরা হবেনা।

 

-হবে, আলবৎ হবে। লিখে ফেল এখনই, এই আক্ষেপ অভিযোগ সব। ‘মাধবীলতা’ শিরোনাম দিও।

 

-আমি আর পারছিনা দেবী!

 

-সব ঠিক হয়ে যাবে।

 

_কিছু ঠিক হবেনা। আমি চোখ বন্ধ করলে…….

 

-কি?

 

-না, আর কিছু বলবোনা। তুমি স্বৈরাচারী।

 

-বল

 

-আমি লিখতে চাই তোমায় নিয়ে।

 

_বেশতো! লিখ।

আমি সম্মানিত মনে করব। তোমার লেখায় দারুণ   গভীরতা আছে।

 

-বলব?

 

_কি?

 

_চোখ বন্ধ করলে আমি……..

 

-হ্যাঁ, বল শুনছি।

 

-তোমার চোখ থেকে ঝর্ণার আছড়ে পড়ার শব্দ শুনি। তোমার পিঠে ছড়ানো চুলের ঢেউয়ে আমি ভাসি আর ডুবি। তোমার নাকের ডগার বিন্দু বিন্দু ঘামের মুক্তো ফোঁটাগুলো আমায় টানছে ক্রমশঃ! আমাকে তোমার নাকচাবি করে রাখ!

 

-শোন, তোমার ভুল হচ্ছে।

আমার চোখে এখন আর জল নেই, সব পাথর নুড়ি। আর পিঠে চুল নেই এখন, এককালে ছিল। নাকের ডগার ঘাম! সে প্রচুর, এমনকি কপোল ছুঁয়ে নামে লবণ।

 

-মাধবী!

 

-হুম, বল।

 

-তোমার থেকে ফেরা যায়না।

 

-কি রকম?

 

-বিশ্বাস কর, চেষ্টা করেছি অনেক কিন্তু পারিনা।

 

-চেষ্টা করোনা। তোমার অনুভূতির প্রতি আমার শ্রদ্ধা রয়েছে। সত্যি বলছি।

 

-হা হা হা

 

-বড় হাসলে যে!

তুমিতো জানো, প্রেম বলে কয়ে হয়না। সেটা ঝড়ের মত একধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়। ঝড় জ্বলোচ্ছ্বাস যেমন সবকিছু লণ্ডভণ্ড করে তেমনি ভূমিতে উর্বর পলি ও মেশায়।

 

-মাধবী!

আমি কিভাবে লেখায় ফিরব?

 

-তুমি লিখবে, তোমার নিবেদন, আবেদন সবটা। এমনকি আমার দণ্ড ও লিখতে পার।

 

-দেবী!

আমায় দয়া কর!

বুকের ভেতরের খাঁ খাঁ বালুচরে একফোঁটা প্রণয় দাও। একটি চারা গজিয়ে উঠুক,ফুল ফুটুক! ডালে বসে নাইটিঙ্গেল সুর তুলুক।

 

-আচ্ছা, একটা কথা বলি শোন। তুমি কবিতায় আমার প্রতিকৃতি আঁক আর উপন্যাসে চিত্রায়িত কর।

 

_দেবী!

তোমাতে ডুবতে দেবেনা তা-ও! আমার যে একটা ঘোর দরকার।

 

-তুমি কবি বলে কিছুটা ছাড় তোমায় দেওয়াই যায়!

অশরীরী আত্মাকে যেমন খুশি আঁকতে পার, যেহেতু তুমি শিল্পী। সৃষ্টিতেই সুখের সকল উৎস পাবে।

 

_মাধবী!

আমায় অনুগ্রহ কর!

 

-আমার চোখে বেদনার ছায়া দেখে কি মনে হয়? চাইলেই আমি সব পারি?

 

-দেবী!

তুমি বিষন্ন সুন্দর!

 

-হয়ত, কিন্তু আমি পালাতে চাই প্রেম বিরহের প্রটোকল থেকে।

 

-তোমার পানি পার্থনা করা কি আমার জন্য পাপ?

 

-আমি প্রেমে পাপ খুঁজিনা। সমস্যা হচ্ছে প্রেম খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর। আমি এটাও নিশ্চিত নই আদৌ এর অস্তিত্ব আছে কি নেই।

 

-মাধবী!

আমার পাশে এসে বস। প্রেম না হোক একটু বন্ধুত্ব কি পেতে পারিনা! আমি যে উন্মত্ত, আমায় একটিবার সামলে নাও।

 

-চোখ বন্ধ করে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা কর !

তিনি তোমার সহায় হবেন।

 

-দেবী!

তোমার পায়ে একটা চুমু খেতে দেবে!

 

-কি যা তা বকছ!

তার আগে আমার শিরচ্ছেদ হোক। আমার কাছে সে স্বশরীরে নেই কিন্তু তার আত্মার অস্তিত্ব আমি টের পাই। এমনকি আমি যখন নিরাশ হই, সে তখন চুপিচুপি বলে, ভয় কিসের? আমি আছি। এই যেমন এখনো বলছে। আপাত দৃষ্টিতে একা হলেও আমি মূলত একা নই। তার আমানত রক্ষণাবেক্ষণ করছি আমি , তার অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ হলেই আমার ডাক আসবে। সে আমার অপেক্ষায়….

 

-মাধবী!

এভাবে বলছ কেন? আমিত তোমার ঠোঁট চাইনি।

 

-এক কাজ কর, এই কথোপকথনটুকু টুকে নাও।

হতে পারে শৈল্পিক রুপ পাবে।

 

-তোমার গন্ধ?

 

-সেতো মাধবীলতায় পাবে।

 

-আমি যেন শূন্যে ভাসছি, একটু ছুঁয়ে দাও! নেমে আসি ধরায়।

 

-পরাগ রেনু মেখে নাও মেঘ চোখে। আর শান্ত হও। মনে রেখ আমি পাহাড়ের রুক্ষ দুপুর।

 

-আমাকে একটু জল হতে দাও।

 

-সেতো চুঁইয়ে নেমে যাবে ঝিরির ধারায়।

 

-শুষে নিও।

 

-পাহাড় তাতে অস্তিত্ব হারায়। ধসে পড়ে, খসে পড়ে লোকালয় ধ্বংস হয়।

 

-দেবী!

আর এড়িয়ে যেওনা। আমি আর পারছিনা।

 

-এড়িয়ে যাইনি। থেকে যেতে চাই শূণ্যতায়।

 

-মাধবী!

রাত শেষ হল প্রায়।

 

-ভোরকে জিজ্ঞেস করলে সে ঠিক বলবে, লৌকিকতার বেড়াজালে ঝুলে থাকে আমার কঙ্কাল!

 

-একটা অনুরোধ রাখ প্লিজ!

রাতের এই শেষ প্রহরটুকু আমার সঞ্চয়ে থাকুক। মিথ্যে  করে হলেও একবার বল, ‘ ভালোবাসি’!

 

-এই রাত, এই দিঘির জলের স্থির স্রোত,

সব তোমার,

তুমি শুধু তার দরদাম করোনা,

বিকিয়ে দাও অমূল বিনিময়ে!

 

-আমাকে কান্নাই দিলে প্রিয়তমা!

 

-যদি চোখের জল গড়ায়,

ভেজাতে দিওনা নগরীর পান্থপথ।

আদিম বাসনা সংরক্ষণ কর বিপুল বিক্রমে নিজ প্রাসাদের রাজ কোষাগারে।

 

-সাম্রাজ্য নয় আমি তোমাকে চাই!

 

-স্পর্শের বাইরে ছুঁয়ে ফিরে গেছে সে,

হৃদয়ে হেমলেট রচনা করেছিলেন যে।

 

-তোমার নিশ্বাসের শব্দ তীরের মত বিঁধছে! তুমি কি দয়া    করে ফোন রাখবে মাধবী!

 

-আমি যে শুধু ছায়া মাত্র,

এক নিরাসক্ত চণ্ডাল।

ক্ষমা কর কবি!

আমার অস্তিত্ব রবির কিরণময়,

আঁধারে নিরাকার।

 

-শেষ পর্যন্ত এড়িয়েই গেলে!

ভালো থেকো নতুন ভোরে।

 

-আমি এড়িয়ে যাইনি। একদিন বুঝতে পারবে তোমার লক্ষী, সরস্বতী ঘরেই রয়েছে। গয়া কাশী গিয়ে কাজ নেই। সুলেখার মত ভালো তোমায় কেউ বাসবেনা। হতে পারে সে আমার মত দশভুজা নয়। হতে পারে আমার মত সুহাসিনী নয়। শিল্প সাহিত্যে ও তেমন দখল নেই। তা-ও তোমার ক্লান্তির ঘাম তার আঁচলই মুছে দিবে। আজ থেকে বহুবছর পর আমার এ কথার সত্যতা তুমি পাবে। মিলিয়ে নিও।

খুব ভালো থেকো তোমরা।

৪৩৪জন ৩৭১জন
0 Shares

২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ