
আজ আমার সাহিত্যাঙ্গনে প্রবেশের বা সাহিত্য প্রেমী হয়ে উঠার গল্প বলবো। আগেও হয়তো ফেইসবুকে লিখেছিলাম। আজ আবার লিখছি ব্লগে। যাঁকে দেখে আমি সাহিত্য প্রেমী হয়েছিলাম আগে উনার সম্পর্কে বলে নিই। উনি দুর্দান্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। অত্যন্ত শান্ত ভদ্র আর ঘরমুখো মানুষ। উনি কখনো পাড়ার ছেলেদের সাথে মিশতেন না, বাইরে আড্ডা পছন্দ করতেন না। সারাদিন নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত সময় কাটাতেন। স্কুল আর ঘর, ঘর আর স্কুল এই ছিল তাঁর পৃথিবী। দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলতেন। যে দলের হয়ে খেলতেন সেদল কোনোদিন হারতো না। পাশাপাশি ঘর তবুও কোনোদিন তাঁকে চিৎকার করে পড়তে শুনিনি।(মানে আমার উল্টো স্বভাবের) স্কুলের বেস্ট স্টুডেন্ট হওয়ায় সবার চোখের মণি ছিলেন। শিক্ষক শিক্ষিকা খুব ভালোবাসতেন। দেখতেও বেশ মিষ্টি ছিলেন। বাবা মা বেশ গর্বিত এমন ভদ্র শান্ত আর মেধাবী সন্তান পেয়ে। সারাপাড়ার ছাত্রদের আর্দশ ছিলো আমার বড় ভাইয়া। সবাই তাদের সন্তানদের বলতেন ফেরদৌসের মত হতে পারো না। আমার বড় ভাইয়ার নাম ফেরদৌস হোসেন।
২০০৩ সালে ভাইয়া এস এস সি পরীক্ষার্থী আর আমি ৫ম শ্রেণীতে। আমি বড় ভাইয়া আমার থেকে মাত্র ছয়/সাত বছরের বড়। যেদিন ভাইয়ার এস এস সি প্রথম পরীক্ষা সেদিন রাতে ভাইয়া ক্রিকেট খেলা দেখতে গিয়েছিলেন দেখে সবাই অবাক! কোথায় তার এখন পড়াশোনা করার সময় তা না খেলা দেখতে এসেছে। আগেই বলেছিলাম ভাইয়া খুব ক্রিকেট প্রেমী। ভাইয়াকে প্রশ্ন করা হলে বলেছিলেন ‘আজকে রাত জেগে পড়েই যদি পরীক্ষা দিতে হবে তবে সারাবছর কী করলাম?’
আগে আমি ভাইয়ার ঘরে খুব একটা যেতাম না। ভাইয়া ঘরে থাকতো বলেই হয়তো যাওয়া হতো না প্রয়োজন ছাড়া। পড়তে গিয়ে কোথাও আটকে গেলে তবেই যেতাম। ভাইয়া পরীক্ষা দিতে গেলে কিছু একটা খুঁজতে গিয়ে জাজিমটা তুলতেই চোখে পড়লো একটা সাদা কাগজে ‘সেই তুমি’ শিরোনামে কবিতা। কবিতার কথা গুলো মনে নেই এখন। পাঠ্য বইয়ের বাইরে সেই আমার প্রথম পড়া কবিতা। সেদিনের পর থেকে সুযোগ পেলেই ভাইয়ার ঘরে গিয়ে বিছানা হাতাতাম নতুন কোনো লেখা পাওয়া যায় কিনা! পেয়েও ছিলাম অনেক গুলো। ইশ্ এখন খুব আফসোস হয় কেনো সেগুলো সংরক্ষণ করিনি।
স্কুল থেকেই লাইব্রেরীর নিয়মিত পাঠক ছিলেন ভাইয়া। এজন্য পুরুস্কৃত হয়েছিল বেশ কয়েকবার।
ভাইয়ার রেজাল্ট বের হলো। স্কুলের মধ্যে সবচেয়ে ভালো রেজাল্ট করলেন। কলেজে ভর্তি হলেন, এইচএসসি পরীক্ষা দিলেন। এবারও কলেজ থেকে ভাইয়াই প্রথম হলেন। তারপর পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে চান্স পেয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হলেন।
ততোদিনে আমিও মোটামুটি অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। ভাইয়া বাইরে এই সুযোগে তাঁর ঘরে আমার অবাধ বিচরণ। আরে বাহ্ ভাইয়ার ঘরে বই আর বই। ভাইয়ার মতো মেধাবী ছাত্রী নই আমি কিন্তু আমারও পাড়ায় কারো সাথে মেশার অনুমতি ছিলো না। আর তাছাড়া ভাইয়ার মত ভালো রেজাল্ট করতে হলে আমাকে বেশি বেশি পড়াশোনা করতে হবে ভেবেই সারাদিন পড়াশোনা করতাম। এবার আমার আকর্ষণ পাঠ্য বই থেকে গিয়ে উপন্যাসে পড়লো। পাঠ্য বইয়ের ভিতরে লুকিয়ে উপন্যাস পড়তাম মায়ের চোখকে ফাঁকি দিয়ে। এতে কিন্তু আমার একাডেমিক লেখা পড়ায় কোনো প্রভাব পরেনি। আগে ক্লাসের পড়া করে তারপর উপন্যাস পড়তাম।(মা তো মহাখুশি মেয়ে তাঁর ছেলের মতো মেধাবী না হলেও সবসময় চেষ্টা করে পড়া লেখার) আমার প্রথম পড়া উপন্যাস দস্যু বনহুর তার পর মাসুদ রানা সিরিজ এর পাশাপাশি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস দেবদাস পড়ার সুযোগ হলো আমার কাজিনের বদৌলতে। আমার কাজিন বেশ রোমান্টিক উপন্যাস পড়তেন। তসলিমা নাসরিন, হুমায়ূন আহমেদ আরো অনেকের। কিন্তু আমি রহস্য উপন্যাসেই ডুবে থাকলাম। ২০০৮ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেবার পর ভেবেছিলাম এবার লুকিয়ে চুরিয়ে নয় সবার সামনে বসে বই পড়বো। কিন্তু সেগুরে বালি দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন অন্যের সংসারে। সংসার সামলে শুধু পাঠ্য বই পড়তে পারলাম। এইচএসসি পাশ করলাম তারপর বাংলায় যখন অনার্স ভর্তির সুযোগ পেলাম তখন থেকে আবার উপন্যাস কবিতা পড়া শুরু হলো। সেই থেকে এখনো পড়ছি। পাঠ্য বই পড়া ছেড়ে দিলেও উপন্যাস কবিতা পড়া ছাড়তে পারিনি এখনো।
(ভাইয়া এখন আর লেখালেখি করেন না। ক্রিকেটও খেলেন না। ইস্তফা দিয়েছেন প্রিয় শখের জিনিস গুলো)
২৮টি মন্তব্য
রোকসানা খন্দকার রুকু
ভালো লাগলো।ভাইয়া এখন কি করছেন জানা হল না।বেশ হ্যান্ডসাম তাই মন্তব্য করতে বসে গেলাম।
ভালোলাগার মানুষ থেকেই ভালোলাগা ছড়ায়।এটা ভালো সংক্রমন ব্যাধি। লিখতে থাকুন।
শুভ কামনা। শুভ রাত্রি।
সুরাইয়া পারভীন
তিনি এখন জব সংসার নিয়ে ব্যস্ত
কৃতজ্ঞতা সহ আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন আপু
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
বন্যা লিপি
জানলাম তোমার সাহিত্যাঙ্গনে প্রবেশের স্মৃতিকথা। ভালোলাগা থেকে ভালবাসা। কবিতায় ভালোলাগাটুকু তোমাকে লিখিয়ে প্রেমিকা বানিয়ে দিয়েছে। এখন তুমি নিজেই জাত কবি হয়ে উঠছো। এই পোষ্টের মাধ্যমে তুমি দুইশত পোষ্ট অতিক্রম করে ফেললে। তোমাকে আন্তরিক অভিনন্দন।
৩/৪ পোষ্টের জন্য বেশি সময় লাগবে বলে মনে হয়না। দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে যাও। শুভ কামনা।
সুরাইয়া পারভীন
ভালোলাগা থেকেই যে ভালোবাসা হয় এটা কিন্তু সত্যিই।
কৃতজ্ঞতা সহ আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন আপু
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
ছাইরাছ হেলাল
আপনার এমন ভাইয়া-ভাগ্য সবার হয়-না, আপনার হয়েছে।
তা উনি সব কিছু ছেড়ে দিলেন কেন!!
সুরাইয়া পারভীন
আমি ঠিক জানি না তাঁর এমন বদলে যাওয়া কারণ। কোম্পানির জব সাথে সংসার সামলাতেই হয়তো প্রিয় জিনিস গুলো থেকে দূরে আছেন/থাকছেন বাধ্য হয়ে।
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময় ভাইয়া
আলমগীর সরকার লিটন
সখের জিনিস গুলো এরকমী হয় একদিন শুধু স্মৃতিতে পড়ে থাকে ভাল লাগল আপু————
সুরাইয়া পারভীন
একদম সঠিক বলেছেন ভাইয়া
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আপনার ভাইয়ের গুণের কথা, মেধার কথা শুনে খুব ভালো লাগলো। তার জন্য শুভ কামনা রইলো। আপনার লেখক সত্তার জন্মদাতা হলেন সে, দারুন। এমন ভাইয়ের এমন বোন হওয়াটাই স্বাভাবিক। আপনার দুইশত পোষ্টের জন্য অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। আরো দ্রুত গতিতে এগিয়ে যান। পাঁচশত পোষ্টের অপেক্ষায় রইলাম। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা অবিরাম
সুরাইয়া পারভীন
ইনশাআল্লাহ চেষ্টা করবো দিদিভাই। আমি বুঝে গেছি আর কিছু থাক বা না থাক লেখাটা আমারই থাকবে আমৃত্যু। তাই আমি আমার সমস্তটা উজাড় করে দিতে চাই লেখাপড়াতেই।
কৃতজ্ঞতা সহ আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন দিদিভাই
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময় 💜💜
শামীম চৌধুরী
খুব ভাল লাগলো আপনার প্রিয় মানুষটিকে দেখে।
আমার সালাম দিবেন।
সুরাইয়া পারভীন
কৃতজ্ঞতা অশেষ ভাইয়া
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময়
অবশ্যই পৌঁছে দেবো আপনার সালাম
মোঃ মজিবর রহমান
@পনি অবশ্যই একজন ভাগ্যবতী এমন একজন ভাইয়ের সানিধ্য পেয়েছেন। যেখান থেকে উপলদ্ধি উঠে আজও আপনি বই পাগল থেকে লেখক হয়ে উঠেছেন।
আপনার আরো উন্নিতু হোক কামনা করি।
সুরাইয়া পারভীন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
আরজু মুক্তা
সবারি পিছনে একজন শুভাকাঙ্খী থাকে।
দুজনেই ভালো থাকুন।
শুভকামনা
সুরাইয়া পারভীন
একদম সঠিক বলেছেন আপু
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন
ভালো থাকবেন সবসময়
সুপায়ন বড়ুয়া
ভাইয়ারা মাঝে মাঝে প্রেরণার উৎস হয়ে উঠে।
তাইতো আজ আপুকে পেলাম।
দুইজনের জন্য শুভ কামনা রইলো।
সুরাইয়া পারভীন
ভাইয়ার লেখা কবিতার কথা গুলো মনে নেই ভেবে খুব আফসোস হচ্ছে। থাকলে অবশ্যই শেয়ার করতে পারতাম।
কৃতজ্ঞতা সহ আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন দাদা
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
শবনম মোস্তারী
লিখালিখির জগতে আপনার পথচলা দীর্ঘতর হোক এটাই প্রার্থনা আপু। শুভকামনা জানবেন।
সুরাইয়া পারভীন
কৃতজ্ঞতা সহ আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন আপু
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
তৌহিদ
আমারও এরকম একজন উৎসাহদাত্রী আছেন আর তিনি হচ্ছেন আপনার আপু। আপনার লেখায় উল্লেখিত ইনিও তেমনি একজন ব্যক্তি। যার প্রেরণায় আপনাকে আমরা লেখক হিসেবে পেয়েছি। আপনাদের দু’জনার জন্যই শুভকামনা রইলো আপু।
সুরাইয়া পারভীন
অথচ তিনি শুধু জানেন লেখালেখির জন্য তাঁর আদরের ছোট্ট বোনটাকে অনেক অপমানিত হতে হয়েছে। তাই তিনিও বারণ করেছিলেন লেখালেখি করতে। আমি সেই নিষেধাজ্ঞা মানতে পারিনি।
সাহিত্য প্রীতি যে আমার রক্তে মিশে গেছে ।
এসব কিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে বোনের এই সফলতা হয়তো জানবেন অনেক পরে।
কৃতজ্ঞতা সহ আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
হালিম নজরুল
চমৎকার স্মৃতিকথা,
ভাইয়ের প্রতি ভালবাসা রইল।
সুরাইয়া পারভীন
কৃতজ্ঞতা সহ আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
জিসান শা ইকরাম
আপনার ভাইয়াকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
নিজের অজান্তেই তিনি আপনাকে সাহিত্যের জগতে নিয়ে এলেন।
জাজিমের নীচে কবিতা না পেলে আপনারও লেখক হওয়া হতো না হয়ত।
আপনার এটি দুইশততম পোষ্ট, চোখের অসুখের কারনে সব সময় ব্লগে আসতে পারছিলাম না বলে পোষ্ট দেয়ার দিন মন্তব্য করা হয়নি। দুইশত তম পোষ্টের জন্য শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন আপনাকে। ।
শুভ কামনা।
সুরাইয়া পারভীন
ঐ একই যন্ত্রণায় আমি যে ভুগছি ভাইয়া। আজই ঘুরে এলাম ডাক্তারের কাছ থেকে। দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময়
কৃতজ্ঞতা সহ আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভাইয়া
রেজওয়ানা কবির
আপনার লেখা পড়ে আমারও ইচ্ছে করছে কার অনুপ্রেরণায় আমি ছোটবেলা থেকে এই জগতে আসি, লিখবো ভাবছি কিছুদিনের মধ্যে।আপনার ভাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।ভাই আপনার পরিবার নিয়ে ভালো থাকুন সবসময়।
সুরাইয়া পারভীন
লিখে ফেলুন আপু
আমরা পড়বো ইনশাআল্লাহ
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়