
হিমালয়ের কার্ণিশ ঘেঁষে দক্ষিণাত্যে ঝুলে থাকা জন্মভূমি মোর,
নবান্নের ঘ্রাণ ফুরাতেই এখানে নেমে আসে কুহেলি সকাল-
শীতের শুষ্কতায় আচ্ছন্ন আরো একবার এই অববাহিকায়-
আমরা দেখেছি আরো একটি “পোয়াতি-পৌষ” ।।
কোন এক কাল্পনিক মুসাফির গাজী-কালু’র হাঁক শুনে
দক্ষিনাত্যের কৃষকের ঘুম ভাঙ্গে কাকডাকা ভোরে-
শুরু হয় কৃষাণীর রসুই ঘরের ঝনঝন বাসনের সুরের আশীষ,
সেও নাকি এ বছর ন’মাসের গর্ভবতী-
এ যেন আরেকটি পোয়াতি’র পৌষ।।
পোয়াতি বধূ উঠে; সেই ভোরে শুরু হয়, ঢেঁকি ঘরে ধান ভানা তার,
কৃষাণ খেজুর রস পেড়ে নিয়ে এসে বলে –
“বিবি- খানিক ফিরনি যদি পারো রাঁধিবার”-
সুগন্ধি কালিজিরা চালে,
‘যা শীত, খুব আয়েশ হতো বুঝি- এই পৌষী- সকালে ।।
শ্বশুর তাহার উঠে, বলে- “কই গেলে গো বউ মা-
অজুর পানিটা- দিয়ে যাওনা এবার”,
বৃদ্ধা শ্বাশুড়ি বলে “জায়নামাজ টা কই গেলো যে.. পাই না খুঁজে আর”
এদিকে ননদী তার ঢেঁকি ঘরে ডাকে বার বার,
পোয়াতি কৃষাণি- যৌবন খানি যে তার পুড়ে অঙ্গার ।।
দু’বছরের ময়নার ও যে ভেঙে গেছে ঘুম আজ ভোরে-
দুধের শিশু যে সে, একটুখানি দুধ খাইয়ে দিতে হবে তারে,
অঙ্গেতে আঁচলখানি কোন মতে জড়িয়ে কৃষাণি-
পৌষের শীত ভুলে টেনে যায় কৃষকের সংসারের ঘানি ।।
এই পৌষ পার্বণে যে গৃহিণী হয়েছে পোয়াতি –
পৌষের শীত কি গো বোঝে আদৌ বেদনা তার আছে কতখানি?
বুঝবে কি সে তো হয়নি কখনো আর আশু গর্ভবতী,
কল্পনার আঁচড়ে তাই-
এবারের পৌষের নামটাই রেখেছি “পোয়াতি” ।।
২২টি মন্তব্য
রেহানা বীথি
পৌষের শীত কি গো বোঝে আদৌ বেদনা তার আছে কতখানি?
বুঝবে কি সে তো হয়নি কখনো আর আশু গর্ভবতী…
ভীষণ সুন্দর লিখেছেন।
অনন্য অর্ণব
অসংখ্য ধন্যবাদ আপু। ভালো থাকবেন সবসময় 😍
ফয়জুল মহী
মনোমুগ্ধকর প্রতিটি চারণের শব্দ I
অনন্য অর্ণব
অসংখ্য ধন্যবাদ দাদাভাই 😍
সুরাইয়া পারভীন
পৌষ পার্বণ সবার কাছে আনন্দের হয় না।
আবার হয়তো কৃষাণি বউ এর এতে আনন্দ, শান্তি।
একদম ব্যতিক্রমী লেখা। চমৎকার লিখেছেন 👏👏
অনন্য অর্ণব
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার সুচিন্তিত মতামতের জন্য। ভালো থাকবেন সবসময় 😍
সুরাইয়া পারভীন
আপনিও ভালো থাকবেন সবসময়
শুভ কামনা রইলো
অনন্য অর্ণব
ধন্যবাদ প্রিয় ❤️❤️❤️
তৌহিদ
কি সুন্দর কবিতা লিখেন আপনি! পৌষ সবার জন্য সুখকর নয়। কত আনন্দ বেদনার অশ্রু ঝরে কত জনের চোখে।
পৌষ সংক্রান্তি লেখা দেবার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাই। কবিতা ভালো লেগেছে।
অনন্য অর্ণব
অনেক অনেক ভালোলাগা দাদাভাই 😍 ভালোবাসা অনিমেষ ❤️
সুপায়ন বড়ুয়া
“কৃষাণ খেজুর রস পেড়ে নিয়ে এসে বলে –
“বিবি- খানিক ফিরনি যদি পারো রাঁধিবার”-
সুগন্ধি কালিজিরা চালে,
‘যা শীত, খুব আয়েশ হতো বুঝি- এই পৌষী- সকালে ।।“
খেজুর রসের পায়েস
কি মজাই না খেতে !
অনেক ভালো হলো। শুভ কামনা।
অনন্য অর্ণব
অনেক অনেক ভালোলাগা দাদাভাই 😍
জিসান শা ইকরাম
অনেক দিন পরে চমৎকার একটি কবিতা নিয়ে আসলেন,
ধন্যবাদ আপনাকে।
পাঠকদের কিন্তু বঞ্চিত করা ঠিক না।
নিয়মিত লেখা চাই।
শুভ কামনা।
অনন্য অর্ণব
অসম্ভব রকম ব্যস্ত সময় যাচ্ছে দাদাভাই। কিন্তু সোনেলার কোন নির্দিষ্ট ইভেন্ট মিস করতে ইচ্ছে করছিলো না। তাই একটু সময় বের করে দুকলম লেখার চেষ্টা এই আর কি। শুভাশীষ চির আরাধ্য।
নুরহোসেন
চমৎকার লিখেছেন, ভাল লাগলো।
অনন্য অর্ণব
অসংখ্য ধন্যবাদ দাদাভাই 😍
সঞ্জয় মালাকার
এই পৌষ পার্বণে যে গৃহিণী হয়েছে পোয়াতি –
পৌষের শীত কি গো বোঝে আদৌ বেদনা তার আছে কতখানি?
বুঝবে কি সে তো হয়নি কখনো আর আশু গর্ভবতী,
কল্পনার আঁচড়ে তাই-
এবারের পৌষের নামটাই রেখেছি “পোয়াতি” ।।
দারুণ লিখেছেন দাদা প্রতিটি শব্দ মনোমুগ্ধকর।
অনন্য অর্ণব
অনেক অনেক ভালোলাগা দাদাভাই 😍
সুপর্ণা ফাল্গুনী
শীতের কুয়াশামাখা ভোরে পোয়াতির আয়েশের পরিবর্তে সংসারের কাজে হাত লাগাতে হয়। শ্বশুর শাশুড়ি, স্বামী
সন্তান,ননদের সেবা করে নিজের শীতটুকু ভুলে যায়।এতো মর্মস্পর্শী লেখা উপহার দেয়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে। শুভ কামনা রইলো
ত্রিস্তান
অনেক অনেক ভালোলাগা প্রিয় বোন।
সন্তান ধারণ পৃথিবীর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ একটা কাজ। যার সম্মান মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারেও সুবিশাল। কোন নারীর যদি প্রসবকালীন মৃত্যু হয় তবে তার জন্য জান্নাত নির্ধারিত।
অন্যদিকে দারিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত আপামর বাংলার সমস্ত কৃষক পরিবারের অসহায় নারীরা যখন সংসারের ঘানি টানতে টানতে দম ফেলার ও সুযোগ থাকে না, ঠিক তখনই যদি সে হয় গর্ভবতী তারউপর আবার পৌষ মাসের প্রচণ্ড শীত তবে অবস্থা টা কি দাঁড়ায়?
ভাবতেই গা শিউরে উঠে !!! আহা কত কষ্টই না করে যাচ্ছেন নীরবে !!!
মোঃ মিজানুর রহমান সুমন
দাদা, কবিতা তো নয়, পুরাই আগুন…
আপনার লেখার লেখনিটা খুবি ভয়ংকর, কলমটা মারাত্বক। বেশি ভালো লেখেন আপনি
ত্রিস্তান
অনেক অনেক ভালোলাগা প্রিয়। এটা আমাদের অগণিত কৃষক পরিবারের অসহায় নারীদের গর্ভকালীন পৌষের চিত্র। তুমি ও শীতকাল নিয়ে লেখা জমা দাও। একটা ছোটগল্প লিখে ফেলো।