একটা মানব শিশু প্রথম যখন পৃথিবীর বুকে আসে, তখন সে তার নিজস্ব সৌন্দর্য নিয়েই আসে। অবাক বিষ্ময়ে চোখ মেলে উপভোগ করে পৃথিবীর আলো, হাওয়া, সবুজ আর আকাশের নীল। সে ভাবে অপূর্ব সুন্দর এই পৃথিবীর সবকিছু নিশ্চই সুন্দর – মানুষ, মানুষের মন, প্রকৃতিসহ সবকিছু খুব সুন্দর। এই ধারনা নিয়ে বেড়ে উঠতে থাকে শিশুটি। একটা সময় তার ধারনার সাথে বাস্তবতার সংঘর্ষ হয়। সে জানতে শুরু করে পৃথিবীর বৈপরীত্য, বুঝতে শুরু করে নিষ্ঠুরতা, চিনতে থাকে পৃথিবীর আসল রূপ। তখন তার ধারনা বদলাতে থাকে, দূষিত বাতাসের ছোঁয়া লাগে হৃদপিণ্ডে, দূষিত অক্সিজেন পরিবহন করে দূষিত হয় ধমনী। চারপাশের মানুষের মনের বিষাক্ততা শিশুর মনকে বিষিয়ে তোলে, শিশু বেড়ে ওঠে আর বিষে নীল হয়। নীল হতে হতে একসময় তার ভেতরের সরল স্বত্বার অপমৃত্যু ঘটে। এভাবেই তৈরি হয় একটি বিষাক্ত মানুষ।
এই উত্থান পতনের ক্রান্তিলগ্নে সে বারবার ভাবে, “আমার হয়ত কোথাও ভুল হচ্ছে। পৃথিবী আসলে খুব সুন্দর। ” যতবার তেমনটা ভাবে ততবার ধাক্কা খায়। এমন একটা সময় থাকে যখন মনের সৌন্দর্যটা হারিয়ে যাবার ভয়ে হৃদয়ের গহীনে রূপোর কৌটায় বন্দী করে রাখে, আর আনমনে ভাবে “পৃথিবী সুন্দর। ” তখন সে যাই দেখে তাই সুন্দর লাগে। কিন্তু একটা সময় আসে যখন বন্দী থাকতে থাকতে তার ভেতরটা শুকিয়ে যায়, কৌটোর ভেতর ভোমরাটা মরে যায়। তখন হাজার মানুষ এসে বললেও সে আর বিশ্বাস করতে চায় না…
“পৃথিবী সুন্দর”
১৬টি মন্তব্য
তৌহিদ
পৃথিবী অবশ্যই সুন্দির। কিন্তু এই সুন্দরের মাঝে যে জরাজীর্ণতা তা আমাদের মানুষেরই সৃষ্টি। একটি শিশু প্রথম চোখ মেলে যাই দেখে তাতেই সৌন্দর্য খুঁজে পায় কারন শৈশবে তার মন সকল কলুষতা মুক্ত থাকে।
এরপরে সে বড় হয় যখন সেই দেখা জিনিসগুলোর সাথে বাস্তবতা মিলাতে গিয়েই সব জট পেকে যায়। এই দায় কিন্তু আমাদের নিজেদের। আমরাই নিজেদের সংশোধন করতে পারিনা। শিশুটিও ধীরে ধীরে পতিত হয় কলুষতার অতল গহ্বরে।
ভালো লিখেছেন। অনেকদিন পরে এলেন কিন্তু।
নীরা সাদীয়া
ঠিক বলেছেন। আমরাই পৃথিবীকে কলুষিত করি হররোজ। আমরাও কিন্তু এই কলুষতা পূর্বপুরুষ হতে পাই।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
তৌহিদ ভাই আমার কথাগুলোই বলেছেন।
সুরাইয়া পারভিন
কিন্তু একটা সময় আসে যখন বন্দী থাকতে থাকতে তার ভেতরটা শুকিয়ে যায়, কৌটোর ভেতর ভোমরাটা মরে যায়। তখন হাজার মানুষ এসে বললেও সে আর বিশ্বাস করতে চায় না…
“পৃথিবী সুন্দর”
চমৎকার উপস্থাপন। ধাক্কা খেতে খেতে পিঠ দেয়ালে ঠেকলে তখন আর কিছু সুন্দর লাগে না 👏👏
নীরা সাদীয়া
সত্যি বলেছেন। একটা সময় আসে যখন আর কিছুই সুন্দর মনে হয় না।
ছাইরাছ হেলাল
শিশু মন একবার বিভ্রান্তির বেড়াজালে আটকে গেলে উদ্ধারের সব চেষ্টা বৃথা।
নিয়মিত লেখা কিন্তু পাচ্ছি না।
নীরা সাদীয়া
ঠিক বলেছেন।
আমি নিয়মিত হতে পারছি না বলে দুঃখিত। তবে আপনাদের খুব মিস করি।
সুপায়ন বড়ুয়া
পৃথিবীটা সত্যিই সুন্দর !
শুভ কামনা !
নীরা সাদীয়া
শুভ কামনা জানবেন।
মনির হোসেন মমি
চমৎকার বলেছেন
তবে সত্যিটা হল সত্যিই পৃথিবী সুন্দর…এ উপলব্দিটা হয় ঠিক মৃত্যুর আগ মুহুর্তে তখন মৃত্যু পথযাত্রী ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে দেখে বাচার আকুতি যেন জানায় তবে যদি মৃত্যুটা হয় স্বাভাবিক।আবার কিছু মৃত্যু হয় অস্বভাবিক ভাবে এ সমাজের কিছু ঘৃণিত মানুষের সৃষ্টি তখন পৃথিবীটা মনে হয় জাহান্নাম।
সুন্দর উপস্থাপনা।ভাল থাকবেন।
নীরা সাদীয়া
মৃত্যুরআগে কতটা উপলব্ধি করতে পারবো তা জানিনে। ধন্যবাদ আপনাকে। শুভকামনা জানবেন।
জিসান শা ইকরাম
সুন্দর বলেই আমরা বেঁচে থাকতে চাই,
সংঘাত থাকবেই, তবে জগতের সৌন্দর্য নিজকে খুঁজে নিতে হয়।
ছোট লেখাটি চমৎকার হয়েছে।
নীরা সাদীয়া
সৌন্দর্য সবাই খুঁজে নিতে পারে না হয়ত।
শুভ কামনা জানবে৷
নীরা সাদীয়া
*জানবেন
সুপর্ণা ফাল্গুনী
সংঘাত আছে বলেই সৌন্দর্য আছে , সৌন্দর্য কে উপলব্ধি করতে পারি। ধন্যবাদ আপু একটা নিষ্পাপ শিশুর বিষাক্ত মানুষ হয়ে উঠার ভাবনা টা এমন সুন্দর করে উপস্থাপন করার জন্য
নীরা সাদীয়া
ধন্যবাদ আপনাকেও কষ্ট করে লেখাটি পড়ার জন্য। শুভকামনা জানবেন।