বাড়ির সামনের অংশ, অর্ধেকটা ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে সংস্কারের জন্য
বাড়ির সামনের অংশ, অর্ধেকটা ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে সংস্কারের জন্য

আমার বান্ধবীর বিয়ে হয়েছে সুজানগর থানার তাঁতিবন্ধ গ্রামে। তো সুজানগরে পোষ্টিং সূত্রে ওর বাড়িতে গিয়েছি দু’তিনবার। চমৎকার এক ছোটখাট জমিদার বাড়ি। পাশেই আছে আর এক জমিদার বাড়ি। জমিদার বিজয়বাবুর বাড়িটি কিনেছিলেন আমার বান্ধবী হ্যাপির শশুর। তার পাশেই লাহিড়ী বাড়ি। শোনা যায় জমিদার বিজয়বাবু ও লহিড়ী সাহেব অর্থাৎ ভারতের বিখ্যাত গায়ক বাপ্পি লাহিড়ীর বাবার দাদু। কোলকাতা থেকে এখনো তারা পূজো দিতে এই বাড়িতে আসে। বাপ্পি লাহিড়ীর সম্পর্কে এক ফুফু এখনো ওখানে থাকে। দুই বন্ধু ঐ এলাকা গিয়ে বসতি গড়ে তোলে। বিশাল বড় এলাকা নিয়ে এক জমিদার বাড়ি। দোতলাবিশিষ্ট এই বাড়িটিতে ঝুল বারান্দা, এটাস্ট বাথরুম, গোসলখানা, পানি নিষ্কাশনের চমৎকার ব্যবস্থা, হাতি রাখার বিশাল জায়গা। ছোট বড় মিলে চার পাঁচটি দীঘি। একসময় ছিল এক বড় মঠ। এখন অবশ্য সে মঠ নেই। তবে হ্যাপির ঘরের পাশে একটা মঠ এখনো আছে। সেই মঠে এখনো নাকি এক বিশাল সাপ আছে। হ্যাপি নিজে তা দেখেছে। জমিদার বাড়িতে একটা পূজা ঘর ছিল। হ্যাপিরা যখন বাড়িটি কিনে সংস্কারের কাজ করে, তখন প্রচুর সোনা দানা ও মুদ্রা পেয়েছিল।

চুন সুড়কি দিয়ে এক চমৎকার পুরাতন নিদর্শন এই জমিদার বাড়ি। হ্যাপির বাড়ির পাশেই আছে এক দীঘি। কথিত আছে এই দীঘিতে জমিদার বিজয়বাবু মা দুর্গাকে উৎসর্গ করে এক জোড়া হাতের বালা গড়িয়ে দিয়েছিলেন। বিজয় বাবু ছিলেন নিঃসন্তান। তিনি ভগবানের কাছে এই নিয়ে খুবই কান্নাকাটি করতেন। তো এক রাতে সে স্বপ্নে দেখে, মা দুর্গা তাকে বলছে,” কেন কাঁদছিস, আমিই তো তোর মেয়ে এখানে আমি আছি।” তখন বিজয়বাবু মা দুর্গাকে উৎসর্গ করে ঐ দীঘিতে এক জোড়া বালা দেন। তবে ওখানকার লোকজনের এখনো বিশ্বাস, ঐ দীঘিতে তাই নাপাক শরীরে নামতে নেই। সপ্তাহের একটা বিশেষ দিন ছাড়া মাছ ধরা নিষেধ। ঐ দীঘি গুলির মাছ হয় বিশাল বড় বড়। এক একটা প্রায় দশ পনেরো কেজী।

লাহিড়ী বাড়ির পূজো ঘরটি নিয়ে আছে প্রচলিত গল্পঃ ওখানে দুইজন শিশু স্থানীয় শিশুদের সাথে খেলা করে। সন্ধ্যা হতে না হতেই তারা হাওয়ায় মিলায় যায়। ওরা শুধু ঐ লাহিড়ী বাড়ির পূজো ঘরের আশেপাশেই থাকে। এখানকার এই লোককাহিনীর উপর তখন থেকে এখন পর্যন্ত মেলার আয়োজন চলে আসছে।

আমাদের দেশে অনেক এমন ছোট বড় জমিদার বাড়ি আছে। এগুলো সংরক্ষণ করলে এর ইতিহাসগুলো মানুষ জানতে পারত।
আমরা জানি এই লৌকিক অলৌকিক কাহিনী দিয়েই তৈরী হয়েছে আমাদের লোকগল্প, লোক কাহিনী এবং অনেক পুঁথি। আমরা বাঙ্গালী আর এই লোক কাহিনীগুলোই আমাদের সংস্কৃতির মূল অংশ ও অহংকার।

সুজানগর লাহিড়ী বাড়ির কয়েকটি ছবি।

দুই বাড়ির ছাদ এক সাথে লাগানো, এটি লাহিড়ী বাড়ির ছাদ।
দুই বাড়ির ছাদ এক সাথে লাগানো, এটি লাহিড়ী বাড়ির ছাদ।
উদাস বাবুর পিছনে সবুজে ঘেরা পূজ্য ঘরের ছাদ
উদাস বাবুর পিছনে সবুজে ঘেরা পূজ্য ঘরের ছাদ

 

এই ভবন হচ্ছে হাতিশালা। হাতি রাখা হতো এখানে।
এই ভবন হচ্ছে হাতিশালা। হাতি রাখা হতো এখানে। 
১৩২৭জন ১৩২৭জন
0 Shares

২২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ